মাখন চা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাখন চা
তিব্বতি ভিক্ষু মাখন চা মন্থনরত অবস্থায়
অন্যান্য নামপো চা, চা সুমা, গোর গোর চা, চা সুস্কান
ধরনপানীয়
উৎপত্তিস্থলভারত, তিব্বত এবং চীন
প্রধান উপকরণচা পাতা, চমরীগাইয়ের মাখন, লবণ

মাখন চা, যা পো চা নামেও পরিচিত (তিব্বতি: བོད་ཇ་ওয়াইলি: bod ja, "তিব্বতি চা"), চা সুমা (তিব্বতি: ཇ་སྲུབ་མ་ওয়াইলি: ja srub ma, "মন্থন চা"), চীনা মান্দারিন: sūyóu chá () বা লাদাখি ভাষায় গোর গোর, হচ্ছে এক ধরনের পানীয় যা নেপাল, ভুটান, ভারত (বিশেষ করে লাদাখ, সিক্কিম) এবং, সর্বাধিক পরিচিত, তিব্বতীয় লোকেদের দ্বারা ব্যবহৃত।

ঐতিহ্যগতভাবে, এটা চা পাতা, চমরীগাইয়ের মাখন, পানি এবং লবণ দিয়ে তৈরি করা হয়, যাদিও ব্যাপকভাবে সহজপ্রাপ্যতা এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য গরুর দুধ থেকে উৎপন্ন মাখন দিয়েও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রথা[সম্পাদনা]

একটি বাটিতে মাখন চা
তিব্বতের তাশিলুনপো মঠের একজন ভিক্ষু মাখন চা ঢালছেন

নিয়মিত মাখন চা পান করা তিব্বতীয় জনজীবনের একটা অংশ। কাজের পূর্বে, তিব্বতীয়রা সাধারণত মাখন চা কয়েক বাটি পান করে থাকে, এবং অতিথি আপ্যায়নে এটা সর্বদা পরিবেশন করা হয়। যেহেতু মাখন হচ্ছে এর প্রধান উপাদান, ফলে মাখন চা প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিক শক্তির যোগান দিয়ে থাকে এবং বিশেষত অতি উচ্চতায় উপযুক্ত। এই মাখন ঠোঁট ফাটা থেকেও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।[১]

তিব্বতীয় রীতি অনুযায়ী, মাখন চা বার বার চুমুকের মাধ্যমে পান করা হয়, এবং প্রতিটি চুমুকের পরে অতিথিসেবক বাটিটি আবার পূর্ণ করে দেন। এইভাবে অতিথি তার বাটিটি শেষ না করে রেখে দেন; বরং, বারবার বাটিটি পূর্ণ করে দেয়া হয়। অতিথি যদি আর পান করতে না চান, তাহলে তার উচিত হচ্ছে যাবার সময় না হলে বাটিটি আর স্পর্শ না করে রেখে দেয়া এবং পরে খালি করে দেয়া। এভাবে শিষ্টাচার বজায় রাখা হয় এবং অতিথিসেবকও অসন্তুষ্ট হবেন না।[২]

মাখন চা সাম্পার উপর ঢেলে খাওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয়, বা মাখন চার মধ্যে সাম্পাকে ডুবিয়ে, এবং ভালমতো মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।

চা পাতাকে বারং বার ফুটিয়ে উৎপন্ন ঘনীভবন, কয়েক দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়, এবং এটা সাধারণত শহর এলাকায় ব্যবহৃত হয়। অতঃপর এই চাকে লবণ এবং মাখনের সাথে মিশ্রিত করা হয় বিশেষ একধরনের চা-মন্থন পাত্রে (তিব্বতি: མདོང་མོ་ওয়াইলি: mdong mo), এবং গরম গরম পরিবেশনের পূর্বে সবলে মন্থন করা হয়। বর্তমানে বৈদ্যুতিক মিশ্রণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তিব্বতের সেরা নামক মঠে দুধ-পাত্রে মাখন চা মন্থন হচ্ছে

তিব্বতে চায়ের ইতিহাস ৭ম শতাব্দীর তাং রাজবংশের সময়কাল থেকে চলে আসছে। যদিও, ১৩শ শতকের সক্যা শাসনামল এবং ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজার আমলের আগে এটা তার বৈশ্বিক মর্যাদা পায়নি ।

প্রস্তুতপ্রণালী[সম্পাদনা]

অর্ধ দিবস পানিতে চা পাতা ফুটানোর মাধ্যমে সর্বোৎকৃষ্ট মানের চা তৈরি করা হয়, এতে ঘন বাদামী রং পাওয়া যায়। অতঃপর এর গাদ ফেলা হয়, এবং টাটকা চমরী গাইয়ের মাখন ও লবণ সহ মিশিয়ে চোঙে রাখা হয় এবং যা পরবর্তীতে নাড়াচাড়া করা হয়। এর ফলে এটা বেগুনি বর্ণের তরলে পরিণত হয়, যা প্রায় ভাপে সিদ্ধ মাংস[২] বা ঘন তেলের মতো হয়। তারপর এটাকে চীনামাটির চা-পাত্রে, বা বয়ামে রাখা হয়, যেটা দেখতে জাপানী চাপাত্রের মতো।[৩]

অন্য পদ্ধতিটি হচ্ছে পানি গরম করা, এবং মুঠ ভর্তি চা পানিতে মেশানো, যা পুরোপুরি কালো না হওয়া পর্যন্ত নাড়া। তারপর কিছু লবণ যুক্ত করা, প্রয়োজন হলে সামান্য সোডা মিশানো। অতঃপর এই চাকে কাঠের মাখন মন্থন-পাত্রে অশ্বকেশর বা নলাকার ছাঁকনি দিয়ে ছাঁকা, এবং একটা দীর্ঘ মাখন দণ্ড এটাতে মিশানো। এরপর এটাকে মন্থন করতে থাকা যতক্ষণ না এটা উপযুক্ত ঘনত্বে আসে এবং উষ্ণ রাখার জন্য জ্বলন্ত কাঠকয়লায় রাখা তামার পাত্রে নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত। মন্থন-পাত্র পাওয়া না গেলে, কাঠের গামলা এবং দ্রুত নাড়াচাড়ার মাধ্যমে কাজ চালানো হয়।[৪]

বর্তমানে, যখন চা পাতা, চমরী গাইয়ের মাখন এবং কাঠের মাখন মন্থন-পাত্র মিলে না, লোকজন তখন প্রায় সময় টি-ব্যাগ ব্যবহার করে মাখন চা বানায়, বিভিন্ন ধরনের মাখন এবং মন্থন করার জন্য মিশ্রণকারী যন্ত্র বাজারে পাওয়া যায়।[৫][৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. Mayhew, Bradley and Kohn, Michael. (2005) Tibet. 6th edition, p. 75. আইএসবিএন ১-৭৪০৫৯-৫২৩-৮.
  2. Chapman, F. Spencer. (1940). Lhasa the Holy City, pp. 52-53. Readers Union Ltd., London.
  3. Kawaguchi, Ekai (1909): Three Years in Tibet, pp. 325-326. Reprint: Book Faith India (1995), Delhi. আইএসবিএন ৮১-৭৩০৩-০৩৬-৭.
  4. Tibetan Marches. André Migot. Translated from the French by Peter Fleming, pp. 102-3. (1955). E. P. Dutton & Co. Inc. New York.
  5. "Sherpa Butter Tea"। ২৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. "Yak Butter Tea"। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ 

উৎস[সম্পাদনা]

  • Forbes, Andrew ; Henley, David (2011). 'Tibetan Butter Tea' in: China's Ancient Tea Horse Road. Chiang Mai: Cognoscenti Books. ASIN: B005DQV7Q2.
  • Richtsfeld, Bruno: Tee und Teekultur in Tibet. In: Markus Mergenthaler (ed.): TeeWege. Historie / Kultur / Genuss. Dettelbach 2013. p. 28-77.
  • Waddell, L. Austine. 1895. Tibetan Buddhism: With Its Mystic Cults, Symbolism and Mythology, and in Its Relation to Indian Buddhism. W. H. Allen & Co., London. Reprint 1972: Dover Publications, New York. আইএসবিএন ০-৪৮৬-২০১৩০-৯. For a good description of how tea was served in monasteries, see pp. 191–192; 214-217 (with illustration).
  • Tibetan Tea and Its Tradition

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]