মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
মোহম্মদ বাজার হল একটা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; জায়গাটার অবস্থান হচ্ছে একটা শাসনতান্ত্রিক বিভাগ, সিউড়ি সদর মহকুমা, বীরভূম জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পর্যবেক্ষণ
[সম্পাদনা]বীরভূম জেলা অবস্থানগতভাবে অতীতের রাঢ় অঞ্চলগুলোর একটা অংশ। এই জেলার পশ্চিম অংশটা হল বাস্তবিকভাবে ছোটো নাগপুর মালভূমি অঞ্চলের একটা বর্ধিতাংশ। এই অঞ্চলের মাটি প্রধানত আলগা ধরনের লালাভ ল্যাটেরাইট প্রকৃতির, যে মাটির উর্বরা শক্তি কম। পূর্ব দিকে অজয়, বক্রেশ্বর, ময়ূরাক্ষি এবং ব্রাহ্মণী নদনদীগুলোর বন্যাপ্রবণ বিস্তীর্ণ অববাহিকা আছে, যেখানকার মাটি নরম ও পাললিক। পুরো জেলার মাত্র ৩.৫ শতাংশ ভূমিতে বনাঞ্চল আছে। যদিও জেলার মধ্যে কয়লাক্ষেত্র দেখা যায় এবং ২,০১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, তথাপি বীরভূম জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে মূলত পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক ভূমি সংস্কার চলতে থাকে। ভূমি সংস্কারের সময় জমির ঊর্ধ্বসীমার ওপরের বাড়তি জমি দখল করা হয়েছিল এবং সেই জমি চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। বীরভূম জেলায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১৯,৯৬৮ হেক্টর আবাদী কৃষি জমি ১৬১,৫১৫ জন সুবিধেভোগী চাষির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। যাই হোক, 'অপারেশন বর্গা' প্রকল্পে ৩৮ শতাংশের বেশি জমি গ্রাহকের অবস্থা ছিল প্রান্তিক অথবা ১ একরের কম জমিভোগী। বীরভূম জেলায় সকল কর্মীযূথের মধ্যে কৃষি শ্রমিকের অনুপাত হল ৪৫.৯ শতাংশ, যেটা পশ্চিমবঙ্গের সকল জেলার মধ্যে সর্বাধিক। বীরভূম হচ্ছে সংস্কৃতিতে উন্নত জেলা, যে জলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যেমন জয়দেব কেন্দুলি এবং চণ্ডিদাস নানুর; এখানে ঘরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন; যার সঙ্গে দু-দুজন নোবেল বিজেতার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অমর্ত্য সেন।
ভূবিজ্ঞান
[সম্পাদনা]মহম্মদ বাজার ব্লকের ভূবৈজ্ঞানিক অবস্থান হল [ ২৩ ডিগ্রি ৫৯'৩১" উত্তর ৮৭ ডিগ্রি ৩৪'১৯" পূর্ব]
মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ব্রাহ্মণী-ময়ূরাক্ষি নদীদ্বয়ের অববাহিকার মধ্যে আংশিকভাবে পড়ে, চারটে প্রায়-ক্ষুদ্র ভূবৈজ্ঞানিক অঞ্চলের মধ্যে একটা, যেটা উত্তরে ব্রাহ্মণী নদীর এবং দক্ষিণে ময়ূরাক্ষি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল দখল করে আছে। এই ব্লকটা বক্রেশ্বর উচ্চভূমির মধ্যে বিস্তৃত হয়ে আছে, যেটা আরো একটা প্রায়-ক্ষুদ্র ভূবৈজ্ঞানিক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে।
মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক উত্তরে রামপুরহাট এক নম্বর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্বে ময়ূরেশ্বর এক নম্বর এবং সাঁইথিয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণে সিউড়ি এক নম্বর এবং সিউড়ি দুই নম্বর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার রানীশ্বর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।
দ্বারকা নদের ওপর দেউচা নদীবাঁধের ধারণ ক্ষেত্র ১,৭০০,০০০ কিউবিক মিটার (১,৪০০ একর.ফুট)।
মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ৩১৫.৬৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে আছে। এখানে আছে একটা পঞ্চায়েত সমিতি, ১২ গ্রাম পঞ্চায়েত, ৮৬ গ্রাম সংসদ (গ্রাম পর্ষদ), ১৫৮ মৌজা এবং ১৩৮ মানুষ বসবাসকারী গ্রাম। মহম্মদ বাজার পুলিশ থানা এই ব্লকের সেবায় নিয়োজিত। এই সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান কার্যালয় হল অঙ্গার গড়িয়া।
মহম্মদ বাজারের ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলো হল: অঙ্গার গড়িয়া, ভারকাটা, ভূতুরা (শেহারাকুড়ি), চারিচা, দেউচা, গণপুর, হিঙ্গলো, কাপসিট, মহম্মদ বাজার, পুরোনোগ্রাম, রামপুর এবং সেকেন্দা।
জনপরিসংখ্যান
[সম্পাদনা]জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]ভারতের জনগণনা ২০১১ অনুযায়ী মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা হল ১৬৪,৫৭০, যার মধ্যে সবটাই হল গ্রাম্য। এখানে ৮৩,৫৯০ (৫১ শতাংশ) পুরুষ এবং ৮০,৯৮০ (৪৯ শতাংশ) মহিলা আছে। ছ-বছরের নিচে শিশুর মোট সংখ্যা ২৩,৩৪৬। তফশীলি জাতির মোট জনসংখ্যা ৪৩,৮১৪ (২৬.৬২ শতাংশ) এবং তফশীলি উপজাতির মোট জনসংখ্যা ৩১,১৫২ (১৮.৯৩ শতাংশ)।
২০১১ জনগণনা মোতাবেক মহম্মদ বাজার ব্লকের মোট জনসংখ্যা হল ১৩৯,৪৭৮, যার মধ্যে ৭১,৪৩০ জন হল পুরুষ এবং ৬৮,০৪৮ জন হল মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশক সময়কালে মহম্মদ বাজার ব্লকের নথিভুক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯.৯১ শতাংশ ছিল। ওই একই দশক সময়কালে বীরভূম জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৮৮ শতাংশ। উল্লিখিত দশক সময়কালে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৮৪ শতাংশ।
মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলোর জনসংখ্যা ( যেগুলোতে ৪,০০০ জনের বেশি) হল নিম্নরূপ (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া): হাটগাছা (৫,৫৫৭), হরিদাসপুর (৪,৪৯৪), সোন্থসল (৪,৬৮৭), দিঘলগ্রাম (৬,২৮৪), বালুটি (৪,৩০৪) এবং অঙ্গার গড়িয়া (৪,২৩২)।
মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্যান্য গ্রামের জনসংখ্যা এখানে দেওয়া হল (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া): মহম্মদ বাজার (৩,০৯০), ভূতুরা (৪১৬), দেউচা (১,৭৭২), কাপসিট (১,৪০১), সেকেন্দা (৩,০১৬), রামপুর (৯৩০), হিঙ্গলো (৭২১), পুরোনোগ্রাম (১,৯২৪), এবং গণপুর (২,৭০৬)।
সাক্ষরতা
[সম্পাদনা]২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনগণের সংখ্যা ছিল ৯২,০৪৫ (৬ বছরের বেশি মোট জনগণের ৬৫.১৮ শতাংশ), যার মধ্যে মোট পুরুষের সংখ্যা ৫১,৮৯২ (৬ বছরের বেশি মোট পুরুষ জনগণের ৭২.২৬ শতাংশ) এবং মোট মহিলার সংখ্যা ৪০,১৫৩ (৬ বছরের বেশি মোট মহিলা জনগণের ৫৭.৮৫ শতাংশ)। এক্ষেত্রে লিঙ্গ অসমতা (মহিলা এবং পুরুষের মধ্যে সাক্ষরতার হারের পার্থক্য) ছিল ১৪.৪১ শতাংশ।
আরও দেখুন - পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর সাক্ষরতার হারের পর্যায়ক্রমিক তালিকা
ভাষা ও ধর্ম
[সম্পাদনা]জনগণনার বর্ণনা বলছে, মাতৃভাষা হচ্ছে সেই ভাষা, মানুষের শিশুকালে তার মা তার সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে। মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহারের হার বীরভূম জেলায় ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৯০.৫ শতাংশ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বৃদ্ধি পেয়ে ৯১.৯ শতাংশ হয়েছে। সাঁওতালি ব্যবহারের হার ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৬.৯ শতাংশ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে কমে ৫.৯ শতাংশ হয়। অন্যান্য মাতৃভাষায় কথা বলার হার ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের হিসেবে: হিন্দি ১.২ শতাংশ, খোরঠা/খোট্টা ০.৩ শতাংশ, কোডা/কোরা ০.২ শতাংশ, তেলুগু ০.১ শতাংশ এবং কুরুখ/ওরাওঁ ০.১ শতাংশ।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা মোতাবেক মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১১০,৫০৬ জন ব্যক্তি হিন্দু ধর্মবলম্বী, শতাংশের হিসেবে ৬৭.১৫ ছিল। মুসলমান ধর্মাবলম্বী ৫১,৪৮৭ জন, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩১.২৯ শতাংশ। খ্রিস্টান ধর্মবলম্বী ১,২৬৬ জন, মোট জনসংখ্যার ০.৭৭ শতাংশ। অন্যান্য ধর্মের মানুষ আছেন ১,৩১১ জন, যা মোট জনসংখ্যার ০.৮০ শতাংশ।
বীরভূম জেলায় মোট জনগণের নিরিখে হিন্দুদের অনুপাত ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭২.২ শতাংশের তুলনায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কমে ৬২.৩ শতাংশ হয়েছে। সেই তুলনায় একই সময়কালে মুসলমানদের অনুপাত ২৭.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭.১ শতাংশ হয়েছে। খ্রিস্টানদের অনুপাত ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ০.৩ শতাংশ।
গ্রামীণ দারিদ্র্য
[সম্পাদনা]২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে দারিদ্র্য সীমার নিচে (বিপিএল) যে পারিবারিক সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দারিদ্র্য সীমার নিচে (BPL) পারিবারিক অবস্থান ছিল ৩৫.৩ শতাংশ, যখন বীরভূম জেলায় ছিল ৪২.৩ শতাংশ। মুরারই দুই, নলহাটি দুই, রামপুরহাট এক, রামপুরহাট দুই, সিউড়ি দুই এবং মুরারই এক - এই ছ-টা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে অনুপাতে ৫০ শতাংশের বেশি পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল। রাজনগর, সিউড়ি এক এবং লাভপুর - এই তিনটে সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে অনুপাতে ৩০ শতাংশের কম পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল। বীরভূম জেলার অন্য দশটা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এই অনুপাতগুলোর মাঝামাঝি ছিল। জেলার মানব সম্পদ উন্নয়নের রিপোর্ট মোতাবেক বলা হয় যে, "যদিও দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা বেশির ভাগ কৃষি শ্রমিক পরিবার সম্পর্কে কোনো আভাস নেই, একটা পরিষ্কার ধরন দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, বেশির ভাগ ব্লকে, অসুবিধেয় থাকা সাধারণ জনগণ, বিশেষত মুসলমান জনগণ।" (অসুবিধেয় থাকা জনগণের মধ্যে আছে তফশীলি জাতি, তফশীলি উপজাতি এবং মুসলমান)।
অর্থনৈতিক অবস্থা
[সম্পাদনা]জীবনযাত্রা
[সম্পাদনা]২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট শ্রমিকের শ্রেণিবিভাগ এই রকম: ৯,৬৯২ জন কৃষক, অর্থাৎ ১৫.৪৩.শতাংশ, কৃষি শ্রমিক ২৮,১৯৭ জন, অর্থাৎ ৪৪.৮৯ শতাংশ, কুটির শিল্পে নিয়োজিত ১,৫৩৪ জন, অর্থাৎ ২.৪৪ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক ২৩,৩৯৩ জন, অর্থাৎ ৩৭.২৪ শতাংশ। সর্বমোট শ্রমিক ৬২,৮১৬ জন, যা হল ব্লকের মোট জনসংখ্যার ৩৮.১৭ শতাংশ, এবং মোট অ-শ্রমিক সংখ্যা ১০১,৭৫৪ জন এবং মোট জনসংখ্যার ৬১.৮৩ শতাংশ।
জ্ঞাতব্য বিষয় : জনগণনার নথিতে কোনো ব্যক্তিকে কৃষক বলা হয়, যদি সেই ব্যক্তি নিজের/সরকারের/প্রতিষ্ঠানের জমিতে চাষ/তদারকি করে। যখন কোনো ব্যক্তি অন্যের জমিতে নগদ অথবা একই রকম অথবা অংশভাগের বিনিময়ে কাজ করে তাকে কৃষি শ্রমিক বলে। কোনো শিল্পকে কুটির শিল্প বলা হয় যদি এক বা পরিবারের একাধিক ব্যক্তি গ্রামের মধ্যে কাজ করে এবং সেটা শিল্প আইন মোতাবেক নথিভুক্ত শিল্প না-হয়। অন্যান্য শ্রমিক বলতে বোঝায় যারা কৃষক, কৃষি শ্রমিক এবং কুটির শিল্প ছাড়া অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত। এই সব কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: খনির কাজ, গাছ লাগানো, পরিবহন এবং বিভিন্ন কার্যালয়ে কাজ, যারা ব্যবসা ও বাণিজ্যে যুক্ত, শিক্ষক, মনোরঞ্জনের শিল্পী এবং এই ধরনের নানা কাজ।
পরিকাঠামো
[সম্পাদনা]বীরভূম জেলার জনগণনা পুস্তিকায় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের রিপোর্ট অনুযায়ী মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মধ্যে মানুষের বসবাসের ১৩৮টা গ্রাম আছে। ১০০ শতাংশ গ্রামেই বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। ১৩৬ গ্রামে (৯৮.৫৫ শতাংশ) পানীয় জলের সরবরাহ আছে। ২৯টা গ্রামে (২১.১ শতাংশ) ডাকঘর আছে। ১৩২টা গ্রাম (৯৫.৬৫ শতাংশ) দুরভাষের যোগাযোগে যুক্ত (যার মধ্যে আছে ভূমিদূরভাষ, জনদূরভাষ পরিষেবা এবং চলভাষের মতো যোগাযোগ ব্যবস্থা)। ৩৫টা গ্রামে (২৫.৩৬ শতাংশ) আছে পাকা (পিচরাস্তা) এবং ৬১টা গ্রামের (৪৪.২০ শতাংশ) সঙ্গে পরিবহনের মাধ্যমে যোগাযোগ আছে (যাতে অন্তর্ভুক্ত হল বাস, রেলপথের সুবিধে এবং জলপথ পরিবহন ব্যবস্থা)।৮টা গ্রামে (৫.৮ শতাংশ) কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি আছে এবং ৭টা গ্রামে (৫.৭ শতাংশ) ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু আছে।
কৃষি
[সম্পাদনা]ভূমি সংস্কার করার ফলস্বরূপ জমির মালিকানার ধরনেও অনেকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ২০০৪-০৫ খ্রিষ্টাব্দে (কৃষি শ্রমিক তথ্য হল ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের জন্যে), মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে কৃষিতে নিয়োজিত ব্যক্তির সংখ্যাকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়: বর্গাদার ৪,০৬৯ জন (৮.২৫ শতাংশ), পাট্টা (দলিল) ধারী ১৫,২৭৪ জন (৩০.৯৬ শতাংশ), ক্ষুদ্র চাষি (১ থেকে ২ হেক্টার জমি চাষ করে) ৪,০০৫ জন (৮.১২ শতাংশ), প্রান্তিক চাষি (১ হেক্টার পর্যন্ত জমি চাষ করে) ৪,৬৭৫ জন (৯.৪৮ শতাংশ) এবং কৃষি শ্রমিক ২১,৩১১ (৪৩.২০ শতাংশ)।
বীরভূম জেলা সর্বাধিকভাবে ধান চাষভিত্তিক জেলা হিসেবে জানা যায়। ২০১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে এখানে ২৪৯,০০০ হেক্টর জমিকে ধান চাষের আওতায় আনা হয়েছিল। ধান চাষের জমি সুনা এবং শালি জমি হিসেবে আছে। জমিতে বছরে দুই থেকে তিনবার ধান ফসল ফলানো হয়। বীরভূম জেলায় অন্যান্য শস্যের মধ্যে: ছোলা, মসুরি, মটর কড়াই, গম, তিসি, তিল, খেসারি, আখ এবং কখনো কখনো তুলো উৎপন্ন হয়। ১৯২,৪৭০ হেক্টর চাষযোগ্য জমিকে বিভিন্ন উপায়ে সেচের অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যেমন পুকুর, খাল, নদী থেকে জল তোলার সেচ ব্যবস্থা এবং নানা ধরনের গভীর ও অগভীর নলকূপ। ২০০৯-১০ খ্রিষ্টাব্দে ১৫৮,৩৮০ হেক্টর জমিকে খালের জল থেকে সেচসেবিত করা হয়েছিল। ময়ূরাক্ষি এবং হিজলি নদীতে বড়ো ধরনের সেচ প্রকল্প চালু আছে। অন্যান্য নদনদীগুলো, যেমন অজয়, ব্রাহ্মণী, কুশকুর্ণি, দ্বারকা, হিঙ্গলা এবং কোপাই - এগুলোও বীরভূম জেলায় সেচের কাজে যথেষ্ট সহায়ক হয়ে থাকে।
কয়লা
[সম্পাদনা]বীরভূম কয়লাক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত দেউচা পচমি কয়লা ব্লক ভোগ বরাদ্দ করা হয়েছে যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গ (২৮ শতাংশ অংশীদারত্ব), বিহার, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, তামিল নাডু এবং সাতলুজ জল বিদ্যুৎ নিগমের মধ্যে। বেঙ্গল বীরভূম কোলফিল্ডস লিমিটেড নামে একটা নতুন কোম্পানি গঠন করা হয়েছে নতুন ব্লক থেকে কয়লা তোলার জন্যে। এই ব্লক ২০০ কোটি টন জমা কয়লার হিসেব দিয়েছে, কিন্তু অনুমান করা হয়েছে যে, জমা কয়লার পরিমাণ বেড়ে ২০০০ কোটি টনও হতে পারে। খবরের কাগজের রিপোর্ট বলছে, এই ব্লক ৭০-৮০ মাইল পুরু একটা আগ্নেয় শিলাস্তর ১,২৩০ হেক্টার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত কয়লা স্তরকে ঢাকা দিয়ে রেখেছে এবং তার ফলে এই অঞ্চল থেকে কয়লা একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে যেতে পারে। যাই হোক, এটা যে জায়গায় পড়েছে সেগুলো চাষের অযোগ্য পতিত জমি।
অন্যান্য বিভাগসমূহ
[সম্পাদনা]শিল্পোন্নয়নের নিরিখে বীরভূম জেলাকে সব থেকে অনগ্রসর জেলাগুলোর মধ্যে ধরা হয়ে থাকে; ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের জেলার মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত রিপোর্টে এই তথ্য জানা যায়। ১৯৯১ এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালে পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্প প্রকল্পের রূপরেখায় বীরভূমে এসেছিল মাত্র ১.২৩ শতাংশ। বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হল জেলার একমাত্র বড়ো মাপের শিল্প এবং যেখানে প্রায় ৫,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। জেলায় ৪টে মাঝারি মাপের শিল্প এবং নথিভুক্ত ৪,৭৪৮টা ক্ষুদ্রায়তন শিল্প স্থাপিত হয়েছে।
বীরভূম জেলায় কৃষি কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই জেলার মানব সম্পদ উন্নয়নের রিপোর্ট অনুযায়ী, "বেশির ভাগ মানুষ এখন কৃষি ছাড়া অন্যান্য কাজ কর্মের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, যেমন মাছ ধরা, খুচরো বিক্রি, আনাজ বিক্রি, দুধ বিক্রি, এবং অন্যান্য নানা কাজ। এই সমস্ত কাজে খুব অল্পই বিপণনের কর্মকুশলতা লাগে, সেই কারণেই এই কাজগুলোকে পেশা হিসেবে মানুষ বেছে নেয়; তবে এই ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ আছে যে, এই কাজকর্ম থেকে তারা তাদের পরিবারের যথেষ্ট পুষ্টিসাধন করতে সক্ষম কিনা।"
পিছিয়েপড়া অঞ্চলগুলোর অনুদান তহবিল
[সম্পাদনা]বীরভূম জেলা একটা পিছিয়েপড়া অঞ্চল হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে এবং পিছিয়েপড়া অঞ্চলগুলোর অনুদান তহবিল থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়ে থাকে। আঞ্চলিক উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রাখার সমন্বয় পরিকল্পনার কর্মসূচি হিসেবে এই তহবিল ভারত সরকার প্রস্তুত করেছিল। এই প্রকল্পে সারা ভারতে এরকম ২০,১২,২৭২টা জেলাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের ১১টা জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।
পরিবহন
[সম্পাদনা]১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এই ব্লকের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং ১১ নম্বর রাজ্য সড়ক মহম্মদ বাজার থেকে রানাঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত, যেটা মহম্মদ বাজার থেকেই শুরু হয়েছে।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]২০১১ জনগণনা অনুযায়ী, মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১৩৮টা জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে, ২৪টা গ্রামে একটাও বিদ্যালয় নেই, ৫১টা গ্রামে একটার বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ৪৫টা গ্রামে অন্তত একটা প্রাথমিক এবং একটা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে; ২২টা গ্রামে অন্তত একটা উচ্চ প্রাথমিক এবং একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। ১৫টা গ্রামে আছে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
টুরকু হাঁসদা-লাপসা হেমব্রম মহাবিদ্যালয় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে গণপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া গণপুরে আছে বাসন্তিকা পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্যরক্ষা
[সম্পাদনা]২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনা মোতাবেক মহম্মদ বাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটা গ্রামে ছিল একটা সমষ্টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৭টা গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল, ২২টা গ্রামে প্রাথমিক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল, ৬টা গ্রামে প্রসূতি ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ছিল, ৩টে গ্রামে প্রাণী হাসপাতাল ছিল, ১৮টা গ্রামে ওষুধের দোকান ছিল এবং এই ব্লকের ১৩৮টা জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে ৭৩টা গ্রামে কোনো রকম চিকিৎসার সুবিধে পাওয়া যেতনা।
মহম্মদ বাজার গ্রামীণ হাসপাতাল, ডাকঘর প্যাটেলনগর, এটা ৩০ শয্যাবিশিষ্ট। ভারকাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১০ শয্যাবিশিষ্ট, পুরোনোগ্রাম ৬ শয্যাবিশিষ্ট, রামপুর ১০ শয্যাবিশিষ্ট এবং সেকেন্দা, ডাকঘর দীঘলগ্রাম, ৬ শয্যাবিশিষ্ট।