ভারতে যৌতুক প্রথা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতের দিল্লির ইমামের ছেলের জন্য বিয়ের উপহার

ভারতে যৌতুক প্রথা[১] বলতে কনের পরিবার দ্বারা বর, তার বাবা-মা এবং তার আত্মীয়দের বিয়ের শর্ত হিসেবে দেওয়া দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারযোগ্য পণ্য, নগদ টাকা এবং ভূসম্পত্তি বা অস্থাবর সম্পত্তিকে বোঝায়।[২][৩] যৌতুককে হিন্দিতে দহেজ এবং উর্দুতে জাহেজ বলা হয়।[৪]

যৌতুক প্রথা কনের পরিবারের উপর বড় আর্থিক বোঝা চাপাতে পারে।[৫] কিছু ক্ষেত্রে, যৌতুক প্রথাটি নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের দিকে নিয়ে যায়, যার ফলে মানসিক নির্যাতন, শারীরিক আঘাত থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।[৬] যৌতুক প্রদান দীর্ঘকাল ধরে নির্দিষ্ট ভারতীয় আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে, ভারতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইন ১৯৬১ এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪খ ও ৪৯৮ক ধারা।[৭] যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইন ১৯৬১ দ্বারা যৌতুককে এইভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে: "যৌতুক মানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জমানত - (ক) বিবাহের এক পক্ষ বিবাহের অন্য পক্ষকে; অথবা (খ) বিবাহ পক্ষের যে কোন একজনের পিতামাতার দ্বারা অন্য পক্ষকে বা বিবাহের যে কোন এক পক্ষের অন্য যে কোন ব্যক্তির দ্বারা দেওয়া; বিয়ের আগে বা পরে উল্লিখিত পক্ষগুলির বিবাহের বিবেচনা হিসাবে। কিন্তু মুসলিম ব্যক্তিগত আইন প্রযোজ্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যৌতুক বা মোহর এর অন্তর্ভুক্ত নয়।" [৮]

একটি আদালতের রায়[৯] যৌতুকের আইনগত সংজ্ঞাকে ব্যাখ্যা করে

যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইনের দ্বারা পরিকল্পিত অভিব্যক্তির অর্থে "যৌতুক" হল মূল্যবান জমানতযুক্ত সম্পত্তির দাবী যার সাথে বিবাহের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে, অর্থাৎ, এটি কনের পিতামাতা বা আত্মীয়দের পক্ষ থেকে বর বা তার পিতামাতা এবং / অথবা অভিভাবকের পক্ষের কাছে কনেকে বিয়ে করার চুক্তির জন্য একটি বিবেচনা।

যৌতুক নিষেধাজ্ঞা আইন, ১৯৬১ এর ধারা ৩ সুনির্দিষ্ট করে যে যৌতুক দেওয়া বা নেওয়ার শাস্তি বর বা কনেকে বিয়ের সময় দেওয়া উপহারগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, যখন সেগুলির জন্য কোনও দাবি করা হয়নি৷[১০]

যদিও যৌতুকের বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনগুলি কয়েক দশক ধরে কার্যকর রয়েছে, তবুও সেগুলিকে অকার্যকর বলে সমালোচনা করা হয়েছে।[১১] যৌতুকের জন্য মৃত্যু এবং হত্যার অনুশীলন ভারতের অনেক অংশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে, যা আইন প্রয়োগকারীদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।[১২]

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ক ধারায় বর এবং তার পরিবারকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রেফতার করতে হবে যদি কোনো স্ত্রী যৌতুকের জন্য হয়রানির অভিযোগ করেন। ব্যাপকভাবে এই আইনটির অপব্যবহার করা হয়েছিল এবং তাই ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন ছাড়া এই গ্রেপ্তার করা যাবে না।[১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

 

সাধারণ সম্পর্কিত:

 

ভারত সম্পর্কিত:

 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "- Moneycontrol.com"। ৮ মার্চ ২০০৭। ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Rani Jethmalani & P.K. Dey (১৯৯৫)। Dowry Deaths and Access to Justice in Kali's Yug: Empowerment, Law and Dowry Deaths। পৃষ্ঠা 36, 38। 
  3. Paras Diwan and Peeyushi Diwan (১৯৯৭)। Law Relating to Dowry, Dowry Deaths, Bride Burning, Rape, and Related Offences। Universal Law Pub. Co.। পৃষ্ঠা 10 
  4. Waheed, Abdul (ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Dowry among Indian muslims: ideals and practices": 47–75। ডিওআই:10.1177/097152150801600103 
  5. Anderson, Siwan (২০০৭)। "The Economics of Dowry and Brideprice": 151–174। ডিওআই:10.1257/jep.21.4.151 
  6. Anita Rao and Svetlana Sandra Correya (২০১১)। Leading Cases on Dowry। New Delhi: Human Rights Law Network। 
  7. Rao, C.N. Shankar (২০১৯)। Indian Social Problems। S. Chand। পৃষ্ঠা 238। আইএসবিএন 978-93-848-5795-0 
  8. "The Dowry Prohibition Act, 1961"। ১৫ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. "The Dowry Prohibition Act, 1961"। ২৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. Manchandia, Purna (২০০৫)। "Practical Steps towards Eliminating Dowry and Bride-Burning in India": 305–319। 
  11. Spatz, Melissa (১৯৯১)। "A "Lesser" Crime: A Comparative Study of Legal Defenses for Men Who Kill Their Wives": 597, 612। 
  12. "No arrests under anti-dowry law without magistrate's nod: SC"The Times of India। ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • "যৌতুক ও উত্তরাধিকার" সম্পাদনা শ্রীমতি বসু, উইমেন আনলিমিটেড অ্যাণ্ড কালী ফর উইমেন, নিউ দিল্লি ২০০৫।