কেরালায় সাপের কামড়ে হত্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেরালায় সাপের কামড়ে হত্যার ঘটনা
ভেন্যুকোল্লাম, কেরল
অবস্থানআঁচল, কোল্লাম, কেরালা, ভারত
ধরনহত্যা মামলা
মৃত
তদন্তকেরালা পুলিশ
সন্দেহভাজনসূরজ এস. কুমার
অভিযোগহত্যা

কেরালায় সাপের কামড়ে হত্যা হল এমন একটি ঘটনা যেখানে নিপীড়িত ব্যক্তি, উথ্রা, পঁচিশ-বছর-বয়সী মহিলা, ২০২০ সালের ৭ই মে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে অবস্থিত আঁচলে নিজের পিতামাতার বাড়িতে ছিলেন।

এই ঘটনাকে কে খুন সন্দেহ করে, তাঁর স্বামী, সূরজ এস. কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ছিলেন একজন সাতাশ বছর বয়সী ব্যাঙ্ক কর্মচারী।[১][২] পরে, তিনি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন যে তিনি একটি কোবরা কিনেছিলেন এবং নিজের স্ত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সাপটিকে তাঁদের শয়ন কক্ষে নিয়ে আসেন।[৩][৪][৫] কেরালা পুলিশ শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তৈরি করেছিল, যা থেকে হত্যার অভিযোগ সমর্থিত হয়।[৬] কোল্লাম দায়রা আদালতে, ২০২১ সালের ১৩ই অক্টোবর, সূরজ এস কুমার তাঁর স্ত্রীকে একটি জীবন্ত কোবরা দ্বারা কামড়াতে বাধ্য করে হত্যা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। বিচারক এম. মনোজ তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং তার সাথে দ্বিগুণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করেন।[৭]

ঘটনা[সম্পাদনা]

উথ্রা ছিলেন একজন প্রতিবন্ধী।[৮] তিনি এক অল্পবয়সী গৃহবধূ ছিলেন। তাঁর দুই বছর বিয়ে হয়ছিল, এবং তিনি এক বছরের ছেলের মা ছিলেন।[৯] সেই সময়ে, উথ্রা আগের কামড়ানো একটি চন্দ্রবোড়ার আঘাত থেকে সেরে উঠছিলেন।[১০] দুই মাস আগে, ২০২০ সালের ২রা মার্চ, আদুরের কাছে তাঁর স্বামীর বাড়িতে চন্দ্রবোড়াটি তাঁকে কামড়েছিল। বর্তমানে তিনি সেই আঘাতের সুস্থতার উদ্দেশ্যে নিজের বাবা-মায়ের বাড়িতে বসবাস করছিলেন।[২][৯] চন্দ্রবোড়ার কামড়ের কারণে তাঁকে প্রায় ৫২ দিন সম্পূর্ণভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল এবং শারীরিক ক্ষতি মেরামত করার জন্য তাঁকে প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হয়েছিল।[১১]

সকালে তাঁর মা তাঁকে ডাকতে এলে তাঁকে তার বাবা-মায়ের বাড়ির শয়ন কক্ষে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। দেখা যায় যে ২০২০ সালের ৬ই মে এর রাতে তাঁকে একটি সাপে কামড়েছে। উথ্রা পরের দিন, ৭ই মে মারা যান। শয়ন কক্ষে একটি বড় খৈয়া গোখরা পাওয়া গিয়েছিল, এই কক্ষে তিনি তাঁর স্বামীর সাথে শয়ন করেছিলেন।[২][৯]

উথ্রার মা মানিমেগালাইয়ের মতে,[২] তাঁর মেয়ে এবং সূরজ রাতের খাবারের পর শুতে যান। পরের দিন সকালে সূরজ, অস্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে বাইরে চলে যান, যদিও তিনি সাধারণত দেরীতে উঠতেন। যাইহোক, উথ্রা তাঁর স্বাভাবিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠেননি। তাঁর মা তাঁর ঘরে গিয়ে উথ্রাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে, ঘর তল্লাশি করে সেই সাপ আবিষ্কার হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়।[১০][১২]

অভিযোগ এবং প্রমাণ[সম্পাদনা]

মেয়ের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর, উথ্রার বাবা, বিজয়সেনন,[২] পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি বলেন যে, তিনি তাঁর মেয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড সন্দেহ করেছেন।[৯] তিনি ২১শে মে কেরালা পুলিশের কাছে এটিকে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন যে, উথ্রা এবং তাঁর স্বামী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন, তাই কারো চোখে না পড়ে সাপের সেই ঘরে প্রবেশ করা কঠিন ছিল।[৯]

উথ্রা ইতিমধ্যেই তাঁর বাবা-মাকে বিষধর সাপ ঘাঁটাঘাঁটিতে সূরজ কুমারের দক্ষতার কথা জানিয়েছিলেন।[১০] কোবরার কামড়ে তাঁর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস আগে, উথ্রা একটি চন্দ্রবোড়া দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন।[১০] দুটি ঘটনার সংমিশ্রণে পুলিশ এই মামলায় সূরজ কুমারের জড়িত থাকার সন্দেহ করেছিল।[১০]

প্রখ্যাত সর্প বিশেষজ্ঞ ভাভা সুরেশ এই ঘটনায় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। উভয় বাড়িতে পরিদর্শন করার পর, তিনি উথ্রার পরিবারকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে ভাভা সুরেশ পুলিশের কাছে তাঁর বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য ও জবানবন্দি দেন। উথ্রার প্রথম সাপের কামড়ের ঘটনায়, তিনি বলেছিলেন যে একটি চন্দ্রবোড়ার পক্ষে উথ্রার স্বামীর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ঘরে পৌঁছোনো অসম্ভব ছিল, যেখানে তিনি প্রথম সাপের কামড় খেয়েছিলেন। দ্বিতীয়, মারাত্মক কামড়ের বিষয়ে, ভাভা সুরেশ আরও উল্লেখ করেছেন যে উথ্রার বাবা-মায়ের বাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বিনা সহায়তায় আপের প্রবেশ করা কঠিন ছিল। তিনি অনুমান করেছিলেন যে সাপটিকে ঘুমন্ত মহিলাকে কামড়াতে বাধ্য করার জন্য প্রাণীটি "আহত" হয়েছিল।[১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Kerala snake bite murder: Investigation team to extract DNA of animal as evidence"। indiatoday.in। ২৭ মে ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "Kerala snake-bite murder case: Two more arrested, police interrogates victim's mother-in-law"Mumbai Mirror। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. "Kerala snakebite murder: Accused Sooraj publicly confesses to killing wife Uthra"। newindianexpress.com/। ১৪ জুলাই ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. "Sooraj confesses to killing Uthra"। thehindu.com। ১৪ জুলাই ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "Death by snakebite: new murder weapon of choice in India"। South China Morning Post। ১৩ অক্টোবর ২০২১। ১৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২১ 
  6. "Uthra murder case: Strong scientific evidence goes against 'greedy' Sooraj"The New Indian Express। ১২ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২১ 
  7. "Uthra murder case: Sooraj awarded double life sentence for killing wife using cobra"The New Indian Express। ১৩ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২১ 
  8. "Uthra's relatives depose in snakebite murder case"OnManorama। ২২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. "Two more arrested in Kerala's snake bite murder case"। hindustantimes.com। ২২ আগস্ট ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  10. "Kerala woman's 'killer' snake exhumed for forensic probe"। newindianexpress.com। ২৬ মে ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  11. "'A brutal, rare murder using two snakes', says chargesheet in Uthra's death"। thenewsminute.com। ৭ মে ২০২০। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  12. "When a cobra became a murder weapon in India"। BBC News। ১৯ অক্টোবর ২০২১। ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২১ 
  13. "Uthra might have been forcefully bitten by snake, says Vava Suresh"Mathrubhumi। ১৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০