ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন
১৯৩৩ সালের গৃহীত স্থিরচিত্রে ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামব্রায়ান হার্বার্ট ভ্যালেন্টাইন
জন্ম(১৯০৮-০১-১৭)১৭ জানুয়ারি ১৯০৮
ব্ল্যাকহিদ, কেন্ট, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩(1983-02-02) (বয়স ৭৫)
অটফোর্ড, কেন্ট, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
সম্পর্কক্যারল ভ্যালেন্টাইন (ভগ্নী)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৭২)
১৫ ডিসেম্বর ১৯৩৩ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১৪ মার্চ ১৯৩৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৭–১৯৪৮কেন্ট
১৯২৮–১৯২৯কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৯৯
রানের সংখ্যা ৪৫৪ ১৮,৩০৬
ব্যাটিং গড় ৬৪.৮৫ ৩০.১৫
১০০/৫০ ২/১ ৩৫/৯০
সর্বোচ্চ রান ১৩৬ ২৪২
বল করেছে ১,৯৩৩
উইকেট ২৭
বোলিং গড় ৪১.৬৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/৫৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/– ২৮৯/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ব্রায়ান হার্বার্ট ভ্যালেন্টাইন (ইংরেজি: Bryan Valentine; জন্ম: ১৭ জানুয়ারি, ১৯০৮ - মৃত্যু: ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩) কেন্টের ব্ল্যাকহিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।[১][২] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

রেপটন স্কুল ও কেমব্রিজের পেমব্রোক কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন।[৩] সহজাত প্রকৃতির ক্রীড়াবিদ ছিলেন ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন। অধিকাংশ খেলাতেই তার দক্ষতা ছিল। রেপটনে থাকাকালে এইচ. ডব্লিউ. অস্টিনের সাথে জুটি গড়ে পাবলিক স্কুল লন টেনিসের শিরোপা লাভ করেন। কেমব্রিজের পক্ষে ফুটবল খেলায় ফরোয়ার্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর তিনি সুদক্ষ গল্ফার হন। তন্মধ্যে, ক্রিকেটের প্রতিই তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। রেপটন একাদশে তিন বছর খেলেন। ১৯২৫ সালে বিস্ময়কর ক্রীড়াশৈলী উপহার দিলেও শেষের বছরটি অসুস্থতা ও আঘাতের কবলে নিপতিত হতে হয়েছিল ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইনকে।

১৯২৮ ও ১৯২৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও, ফুটবলে অংশ নিয়ে ব্লু লাভ করেন। এক বছর পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকার পর ১৯২৮ সালে কেমব্রিজে ফ্রেশম্যানের খেলায় ৭৫ মিনিটে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন। ১৯২৯ সালে ব্লু লাভ করেন। তবে, ফেনার্সে অনুষ্ঠিত শেষ খেলায় তাকে রাখা হবে কি-না, তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এম. জে. সি. অলম, আর. জে. ও. মেয়ার, সি. এস. ম্যারিয়ট, এম. ফ্যালকন ও এ. জি. ডগার্টের ন্যায় তারকা বোলারসমৃদ্ধ ফ্রি ফরেস্টার্সের বিপক্ষে ৮৫ মিনিটে ১০১ রানের দূর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন তিনি।

কাউন্টি ক্রিকেট[সম্পাদনা]

কেন্টে ক্লাব দীর্ঘদিনের খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৪৮ সময়কালে কেন্টের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দুই দশকের অধিক সময় ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও মাঝেমধ্যে মিডিয়াম পেসারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন।

১৯২৭ সাল থেকে কেন্টের পক্ষে খেলতে শুরু করে। তবে মাঝারীমানের সফলতা পান। ১৯৩১ সালে দলে নিজ স্থান নিশ্চিত করেন। এ বছরই কেন্টের পক্ষ থেকে ক্যাপ পান। এ সময়ে তিনি প্রতিশ্রুতিশীল কাউন্টি ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৩৮ সালে ওকহামে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ২৪২ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ প্রথম-শ্রেণীর রান তুলেন।

১৯৩০-এর দশকে নিয়মিত অধিনায়ক পার্সি চ্যাপম্যানের অনুপস্থিতিতে মাঝে-মধ্যেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৩৭ সালে রনি ব্রায়ানের সাথে যৌথভাবে অধিনায়কত্ব করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেরি চকের জীবনাবসানের পর ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন দলের নেতৃত্বে থেকেছেন। তার পূর্বে ও পরে ডেভিড ক্লার্ক অধিনায়কত্ব লাভ করেন।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সাতটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ লাভ করেছিলেন ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে মাত্র দুইটি টেস্ট সিরিজ খেলতে পেরেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ভারত গমন করেন। ঐ সফরে তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। বোম্বেতে অভিষেক ঘটা ঐ টেস্টে তিন ঘণ্টারও কম সময় নিয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৩৬ রানের মনোরম ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ঐ সিরিজে দুই টেস্টে অংশ নিয়ে ১৭৯ রান তুলেছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪৫.৩৮ গড়ে রান তুলেছেন। কেপটাউনের দ্বিতীয় টেস্টে দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় নিয়ে ১১২ রান তুলেন। সাত টেস্টে অংশগ্রহণ করলেও তার ব্যাটিং গড় বেশ ঈর্ষনীয় পর্যায়ের। নয় ইনিংসে ৬৪.৮৫ গড়ে দুইটি সেঞ্চুরি ও একটি অর্ধ-শতকের ইনিংস রয়েছে তার।[৪][৫] সে তুলনায় প্রথম-শ্রেণীর ব্যাটিং গড় মাত্র ৩০.১৫ যা টেস্টের তুলনায় দ্বিগুণেরও কম। ৩৯৯টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ১৫ সেঞ্চুরি ও ৯০টি অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলেন।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক, সুন্দর ইনিংস খেলা ও লেগের দিকে নিয়মিত রান তোলার জন্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তবে, প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরিতে ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। মধ্য-ত্রিশে তিনি নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে নেন। বাঁকানো বলের দিকে সতর্ক দৃষ্টিপাত ঘটান ও ইংরেজ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় আসীন হন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ঘণ্টা প্রতি ৫০ রানের কাছাকাছি তুলতেন বলে জানা যায়। সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩০.১৫ গড়ে ৩৫ সেঞ্চুরি সহযোগে ১৮,৩০৬ রান তুলেন।

আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যান হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান নিয়ে প্রয়োজনে রক্ষণাত্মক ঢংয়েও খেলতেন তিনি। সচরাচর লেগের দিকেই তার ব্যাট সচল ছিল। কিন্তু, ঐ সময়ে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী দল থাকায় টেস্ট অংশগ্রহণে তার সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। বোলিংয়ে কম অংশ নিতেন। তবে, মাঠে উইকেটের কাছাকাছি কিংবা কভার অঞ্চলে দক্ষতার সাথে চমৎকার ফিল্ডিং করে ক্যাচ তালুবন্দী করতেন।

বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন। রয়্যাল ওয়েস্ট কেন্ট রেজিম্যান্টের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি ও উত্তর আফ্রিকায় দক্ষতার সাথে যুদ্ধকার্যে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ মিলিটারি ক্রস প্রাপক হন।[৬] যুদ্ধে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। তাসত্ত্বেও যুদ্ধশেষে পুনরায় ক্রিকেট খেলার জগতে ফিরে আসেন।

অবসর পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালে কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অনেকগুলো বছর ঐ ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে ৭৫ বছর বয়সে কেন্টের অটফোর্ড এলাকায় ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইনের দেহাবসান ঘটে। তার সহোদরা বোন ক্যারল ভ্যালেন্টাইন ক্যারল ভ্যালেন্টাইন ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন (ইংরেজি)
  2. "Bryan Valentine - profile"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  3. "Freshmen's Match At Cambridge" (ইংরেজি ভাষায়) দ্য টাইমস (লন্ডন)। 3 May 1928। (44883),
  4. MacPherson, Deidre (১ অক্টোবর ২০০২)। The Suffragette's Daughter: Betty Archdale: Her Life of Feminism, Cricket, War And Education। Rosenberg Publishing Pty, Limited। পৃষ্ঠা 93। আইএসবিএন 978-1-877058-09-7। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Bryan Valentine - profile"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ 
  6. "নং. 36180"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩। 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
জিওফ্রে লেগ
কেন্টে কাউন্টি ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৩১–১৯৩৭
যৌথভাবে - ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত পার্সি চ্যাপম্যানের সাথে
১৯৩৬ সালে ইয়ান অ্যাকার্স-ডগলাসের সাথে ও ১৯৩৭ সালে রনি ব্রায়ানের সাথে
উত্তরসূরী
জেরি চক
পূর্বসূরী
জেরি চক
কেন্টে কাউন্টি ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৪৬–১৯৪৮
উত্তরসূরী
ডেভিড ক্লার্ক