বিমল চট্টোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিমল চট্টোপাধ্যায়
জন্ম(১৯১২-০৪-২১)২১ এপ্রিল ১৯১২
মৃত্যু৮ অক্টোবর ১৯৯৪(1994-10-08) (বয়স ৮২)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামবিমলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পেশাসমাজসেবা, অভিনেতা
পরিচিতির কারণপশ্চিমবঙ্গ প্যারা-সাইকোলজিক্যাল সোসাইটি
দাম্পত্য সঙ্গীরেবাদেবী (স্ত্রী)
সন্তানমীনাক্ষি চট্টোপাধ্যায় (কন্যা)
শিবাজি চট্টোপাধ্যায় (পুত্র)
চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (পুত্র)

বিমল চট্টোপাধ্যায় বা 'বিমলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়' (২১ এপ্রিল ১৯১২ - ৮ অক্টোবর ১৯৯৪) ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ভারতীয় বাঙালি অভিনেতা। সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, সমাজসেবাসহ নানাক্ষেত্রে বিশেষ গুণের অধিকারী তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্যারা-সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। [১]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

বিমলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল (১৩১৯ বঙ্গাব্দের ৮ বৈশাখ ) ব্রিটিশ ভারতের ভবানীপুরে। পিতা ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মাতা শৈলবালা। তাদের পাঁচ পুত্র সন্তানের মধ্যে বিমলচন্দ্র ছিলেন কনিষ্ঠ। জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন ঐতিহাসিক, প্রথিতযশা ব্যরিস্টার সাংসদ নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ছিলেন ভারতের লোকসভার চতুর্দশ অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পিতা। সেই অর্থে বিমলচন্দ্র ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাকা। বিদ্যাসাগর কলেজে বি.এ পড়ার সময় তিনি অগ্রজ নির্মলচন্দ্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন।[১][২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীতচর্চা করতে থাকেন। প্রখ্যাত তবলিয়া মজিদ খাঁ'র কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন। বাজাতে শেখেন সবরকমের বাদ্যযন্ত্র। গুরুপুত্র কেরমতুল্লা খাঁ'র সখ্যতায় জড়িয়ে পড়েন সুরের জগতে। দিলীপকুমার রায় কলকাতায় গাইতে এলে সঙ্গত করতে হত বিমলচন্দ্রকে। বাড়িতেও গানবাজনার নিয়মিত যে আসর বসত তাতে আলাউদ্দীন খাঁ, রবিশঙ্কর, আলি আকবর, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ধীরু গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বহু প্রখ্যাত ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেন। এছাড়াও সমাজসেবার মধ্য দিয়ে তিনি সর্বভারতীয় অনুরাগীমণ্ডল গড়ে তোলেন। তার সদ্য ছিল কাজী নজরুল ইসলাম,দাদাঠাকুর, মধু বসু, ধীরাজ ভট্টাচার্য প্রমুখের সাথেও। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের তিনিই ৩৬ বৎসর বয়সে প্রথম কলকাতার হাজরা পার্কে অরবিন্দ আবির্ভাব মহোৎসব প্রবর্তন করেন। [১] 'জাতিস্মর' তথা জন্মান্তরবাদ এর গবেষক, জয়পুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যারা-সাইকোলজিস্ট ডা হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রশান্তবিহারী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিমলচন্দ্র তার লালমোহন ভট্টাচার্য রোডের বাড়িতে গড়ে তোলেন 'ওয়েস্ট বেঙ্গল প্যারা-সাইকোলজিক্যাল সোসাইটি'। তিনিই হন প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। প্রথমদিকে সোসাইটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমারসত্যজিৎ রায় ছিলেন সোসাইটির আজীবন সদস্য। অনুমিত হয়, সত্যজিৎ রায় এখান থেকেই পেয়ে যান সোনার কেল্লার' উপাদান।[৩]আকস্মিক ভাবেই জহুরীর চোখে ধরা পড়ে যান বিমলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শেষ বয়সে সত্তরের দশকে সত্যজিৎ রায়ের জন্যই চলচ্চিত্রে যুক্ত হন। মৃণাল সেনের ছবিতেও তার অভিনয় উল্লেখযোগ্য। অভিনয়ের বাইরে তার বহুমুখী পরিচয় - গ্রন্থপ্রেমী, সঙ্গীতজ্ঞ ও সংগ্রাহক।

অভিনীত ছায়াছবি-
বছর ফিল্ম পরিচালক ভূমিকা
১৯৭৪ সোনার কেল্লা সত্যজিৎ রায় নকল মুকুলের দাদু
১৯৭৫ জন অরণ্য সত্যজিৎ রায় আদক
১৯৭৯ জয়বাবা ফেলুনাথ সত্যজিৎ রায় ক্যাপ্টেন স্পার্কের র‍্যাক্সিট
১৯৮০ হীরক রাজার দেশে সত্যজিৎ রায়
১৯৮২ খারিজ মৃণাল সেন
১৯৮৪ ঘরে বাইরে সত্যজিৎ রায়

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

বিমলচন্দ্রের বিবাহ হয় উত্তরপাড়ার রাজবাড়ির রেবাদেবীর সঙ্গে। তাদের তিন সন্তান। (এক কন্যা ও দুই পুত্র)। কন্যা মীনাক্ষি চিত্রশিল্পী। জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবাজি চট্টোপাধ্যায় এবং কনিষ্ঠ চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিমল চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর (১৪০১ বঙ্গাব্দের মহাচতুর্থীর দিন) পরলোক গমন করেন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

দেশ-বিদেশের দুষ্প্রাপ্য জিনিস, বই ও নানা বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি ও তাদের চিঠিপত্র তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ অক্টোবর তার কনিষ্ঠ পুত্র চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সকলই বিমল' [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৬৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "ক্যাপ্টেন স্পার্কের র‍্যাক্সিট"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৩ 
  3. "সোনার কেল্লার খোঁজে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২ 
  4. চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ (সম্পাদক) (২০২৩)। সকলই বিমল। পত্রভারতী, কলকাতা। আইএসবিএন 978-93-9563-534-9