ফুলন দেবী
এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে উপস্থাপন করছে না। (মার্চ ২০২০) |
ফুলন দেবী | |
---|---|
![]() | |
সংসদ সদস্য (১১তম লোকসভা) | |
কাজের মেয়াদ ১৯৯৬ – ১৯৯৮ | |
সংসদীয় এলাকা | মির্জাপুর |
সংসদ সদস্য (১৩তম লোকসভা) | |
কাজের মেয়াদ ১৯৯৯ – ২৬ জুলাই ২০০১ | |
সংসদীয় এলাকা | মির্জাপুর |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ঘুরা কা পুরয়া, জালৌন জেলা, উত্তর প্রদেশ, ভারত | ১০ আগস্ট ১৯৬৩
মৃত্যু | ২৫ জুলাই ২০০১ নতুন দিল্লি, ভারত | (বয়স ৩৭)
মৃত্যুর কারণ | গুলি করে হত্যা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | সমাজবাদী পার্টি |
পেশা | ডাকাত, রাজনীতিবিদ |
ফুলন দেবী (ইংরেজি: Phoolan Devi, হিন্দি: फूलन देवी) একজন ভারতীয় নারী অধিকারকর্মী, পরবর্তীতে ডাকাত এবং একজন রাজনীতিবিদ। "দস্যু রানী" নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ভারতের নিচু বর্ণ হিসেবে পরিচিত মাল্লা বর্ণের এক পরিবারে ১৯৬৩ সালে জন্ম নেন ফুলন। তিনি একাধিক বার পুরুষ নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছিলেন। পুলিশের নিকট থেকেও তিনি ন্যায় পান নি যার জন্য তিনি বাধ্য হয়ে ডাকাত জীবন গ্রহণ করেছিলেন। উত্তর প্রদেশের বেহমাই গাও নামক স্থানের কয়েকজন ঠাকুর সম্প্রদায়ের জমিদার ফুলন দেবীকে ২৩দিন যাবৎ ধর্ষন করে। ১৯৮১ সনে সেই গ্রামের ২২জন ঠাকুরকে ডাকাতরা হত্যা করে। হত্যার জন্য ফুলন দেবীকে অভিযুক্ত করা হয়। বেশীরভাগ অপরাধ তিনি নির্যাতিত মহিলা ও বিশেষকরে নিম্ন শ্রেণির মহিলাকে ন্যায় প্রদানের জন্য সংঘটিত করেছিলেন। ২০ বছরের কম বয়সের এক নিম্ন শ্রেণির প্রায় নিরক্ষর কিশোরী হয়েও তিনি সমগ্র ভারতে আলোড়নের সৃষ্টি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আত্ম-সমর্পন করেন ও ভারতীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।[২]
শৈশব জীবন[সম্পাদনা]
উত্তর প্রদেশের জালৌন জেলার অন্তর্গত ঘুরা কা পুরয়া নামক স্থানে এক মাল্লা সম্প্রদায়ে ফুলন দেবী জন্মগ্রহণ করেন।[৩] মাল্লা সম্প্রদায়কে নিম্ন বর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। মাল্লা সম্প্রদায় লোকের পেশা হচ্ছে নৌকা চালানো বা এককথায় মাঝি । ফুলনের পিতার এক একর জমি জুড়ে নিমের বাগান ছিল। তার পিতার আশা ছিল যে এই মূল্যবান গাছ বিক্রয় করে দুই কন্যার বিয়ের যৌতুক দিবেন। [৪] ফুলনের মাত্র ১১ বৎসর বয়সে তার ঠাকুরদার মৃত্যু হয় ও তার পিতার বড়ভাই (জেঠা) ছলনায় নিজেকে পৈতৃক সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। তার জেঠার মায়াদিন নামক এক পুত্র ছিল। মায়াদিন বাগানের গাছগুলি কেটে বিক্রি করা আরম্ভ করে।[৫] ফুলন এর ঘোর বিরোধিতা করে। মায়াদিনকে চোর বলে নিন্দা করা হয় ও ফুলন এবং তার পিতা সেই মাটিতে উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ করেন। হিংসার আশ্রয় নিয়েও মায়াদিন ফুলনের কোন ক্ষতি করতে পারে না। অবশেষে মায়াদিন, পুত্তিলাল নামক এক ৩০ বৎসরের ব্যক্তির সহিত ফুলনের বিবাহের আয়োজন করে। সেই সময়ে ফুলনের বয়স ছিল মাত্র ১১ বৎসর।[৬] ফুলনে নিজের আত্মজীবনীতে লেখেছেন যে পুত্তিলাল একজন অসৎ চরিত্রের লোক ।
ফুলনের সঙ্গে তার স্বামী বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন ও শারীরিক অত্যাচার করত। অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে ফুলন নিজ পিতার গৃহে ফিরে যান যদিও পরিবারের সদস্যরা তাকে পুনরায় স্বামীর গৃহে দিয়ে আসেন। অবশেষে তার স্বামীর-কার্য কলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে নিজ পিতৃগৃহে ফিরে আসেন। ভারতীয় গ্রাম্য সমাজে স্বামীর ঘড় ছেড়ে আসা নারীদের কু-নজরে দেখা হয়। ফুলনকেও সমাজের দৃষ্টিতে একজন অসৎ চরিত্রের নারীতে পরিণত হন। ফুলনে আদালতে মায়াদিনের বিরুদ্ধে পিতার সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করার অভিযোগ দেন। কিন্তু তিনি আইনের লড়াইয়ে পরাজিত হন। [৫]
১৯৭৯ সনে মায়াদিন চুরির অভিযোগে ফুলনকে গ্রেপ্তার করান। ফুলনের তিনদিন কারাবাস হয়। কারাবাসে তিনি আইনরক্ষকের হাতে ধর্ষনের শিকার হন।[৫] কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে পরিবার ও গ্রাম থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ডাকাত রূপে ফুলন[সম্পাদনা]
ডাকাতের দল ফুলন দেবীকে অপহরণ করে; অন্য মতে তিনি স্বেচ্ছায় ডাকাতের দলে যোগদান করে।[৫] সেই ডাকাতের দলনেতা গুজ্জর সম্প্রদায়ের লোক, নাম- বাবু গুজ্জর। বাবু গুজ্জর ছিল নিষ্ঠুর ও কামুক স্বভাবের লোক। বাবু গুজ্জরের কামুক দৃষ্টি ফুলনের দেহের প্রতি আকৃষ্ট হয় কিন্তু দ্বিতীয় দলনেতা বিক্রমের জন্য ফুলন, বাবু গুজ্জরের কামনার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পান। একদিন রাত্রে দলনেতা বাবু গুজ্জর ফুলনকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্রম মাল্লা, বাবু গুজ্জরকে হত্যা করে ও নিজেই দলের নেতা হয়। ফুলন তার সম্মান রক্ষা কারী বিক্রম মাল্লার প্রতি প্রেম অনুভব করেন। অবশেষে বিক্রম তাকে বিবাহ করে পত্নীর মর্যদা দেন। ডাকাত দলটি ফুলনের প্রথম স্বামী পুত্তিলালের বসবাসকৃত গ্রামে লুন্ঠন করে। ফুলন পুত্তিলালকে টেনে নিয়ে এসে জনসমক্ষে শাস্তি দেন ও খচ্চরের পিঠে উল্টো করে বসিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে বন্দুক দিয়ে প্রহার করেন। তিনি প্রায় মৃত অবস্থায় পুত্তিলালকে ফেলে চলে যান। যাওয়ার সময় কম বয়সের বালিকা মেয়ে বিবাহ করা পুরুষদের জন্য সাবধানবাণী স্বরূপ একটি পত্র রেখে যান।
ফুলন দেবী বিক্রম মাল্লা থেকে বন্দুক চলানোর প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন ও উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশ বসবাসকারী উচ্চ বর্ণের লোকদের গ্রামে লুন্ঠন, ভূস্বামীদের অপহরণ, রেল ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছিলেন। প্রত্যেকবার অপরাধ করার পর ফুলন দুর্গাদেবীর মন্দির দর্শন করিতেন ও তার প্রাণ রক্ষার জন্য দেবীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেন।.[৩] চম্বল উপত্যকা এই ডাকাত দলের আত্মগোপনের স্থল ছিল।
বেহমাই হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]
শ্রী রাম নামক এক ঠাকুর সম্প্রদায়ের ডাকাত ছিল বিক্রম মাল্লার অপরাধ জগতের গুরু। শ্রী রাম ও তার ভাতৃ লালা রাম কারারুদ্ধ থাকার সময় বিক্রম তাদের জামিনের জন্য ৮০,০০০ টাকা জমা করেছিল। শ্রী রাম মুক্তি পাওয়ার পর বিক্রম তাকে দলের নেতৃত্ব বহন করার জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু এই কথায় দলের মাল্লা সম্প্রদায়ের সদস্যরা সন্মত ছিলনা। ফলস্বরুপ দল দুইভাগে বিভক্ত হয়। ঠাকুর সম্প্রদায়ের সদস্যরা শ্রী রাম ও মাল্লা সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিক্রমের প্রতি অনুগামী ছিল। শ্রী রাম ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির ব্যক্তি। শ্রী রাম বিক্রেমকে হত্যা করা সুযোগের সন্ধানে ছিল। একবার এক বিবাহ অনুষ্ঠানে বিক্রম নিমন্ত্রন রক্ষা করা যাওয়ার সময়ে অপরিচিত ব্যক্তি বিক্রমকে গুলি মারে। বিক্রম আহত হয় কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে বিক্রম সুস্থ হয়ে উঠে। কিছুদিন পর শ্রী রাম বিক্রমকে হত্যা করে ও ফুলনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
শ্রী রাম ফুলনকে উলঙ্গ-প্রায় অবস্থায় এক গ্রামে নিয়ে যায় ও ঘোষণা করে যে ফুলন দেবী বিক্রমকে হত্যা করেছে। ফুলনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের আদেশ করে। শাস্তিস্বরুপ প্রথমে শ্রী রাম ফুলনকে ধর্ষণ করে। তারপর এক এক করে বহু ঠাকুর তার উপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালায়। শ্রী রাম তাকে অনেকবার মাল্লা বেশ্যা নামে গালা গালি করেন। ৩ সপ্তাহের অধিক সময় তার উপর অমানুষিক অত্যাচার করা হয়। ২৩দিন পর ফুলন নিজেকে ঠাকুর সম্প্রদায়ের গ্রাম বেহমাই-এ নিজেকে আবিষ্কার করে। অবশেষে এক ব্রাহ্মণ ব্যক্তির সাহায্যে ফুলন গরুর গাড়ি করে বেহমাই থেকে পলায়ন করেন।
নির্যাতিত ফুলনের দুঃখের কাহিনী শুনে বাবা মুস্তাকিন নামক এক ডাকাতের নেতা তাকে নতুন একটি ডাকাতের দল গঠন করতে সাহায্য করেন। মান সিং ছিল তার দলের দ্বিতীয় নেতা। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফুলন রাম ভ্রাতৃদ্বয়ের সন্ধান আরম্ভ করেন । অবশেষে সন্ধান হয় যে শ্রী রাম বেহমাই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। ফুলনকে নির্যাতন করার ১৭মাস পর, ১৯৮১ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফুলন রাম ভাতৃদ্বয়কে হত্যা করার জন্য বেহমাই গ্রামে প্রবেশ করে। সেই সময়ে বেহমাইবাসীরা এক বিবাহে ব্যস্ত ছিল। ফুলন ও দলের সদস্যরা সম্পূর্ণ গ্রাম খুঁজেও ভ্রাতৃদ্বয়ের সন্ধান পায়না। ফুলন রামভ্রাতৃদ্বয়কে তার নিকট অর্পণ করার জন্য গ্রামবাসীকে আদেশ করেন। ফুলনের মতে গ্রামবাসীরা ভ্রাতৃদ্বয়কে গোপনে পালিয়ে রেখেছে। কিন্তু গ্রামবাসীরা এই কথা অস্বীকার করেন। ডাকাতের দল ক্রোধে গ্রামের যুবককে গুলি মারে ফলে ২২জন গ্রামবাসী নিহত হয়।[৭] অবশ্যে এর বেশীরভাগ ব্যক্তি ধর্ষনের সহিত জড়িত ছিলনা। পরে ফুলন দেবী দাবী করেন যে তিনি নিজহাতে কাউকে গুলি করেন নাই।[৩] এটিই হচ্ছে কুখ্যাত বেহমাই হত্যাকাণ্ড বা বেহমাই গণহত্যা।
বেহমাই হত্যাকাণ্ডের জন্য সেই সময়ের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ভি.পি সিং পদত্যাগ করার জন্য বাধ্য হয়েছিলেন। ফুলনদেবী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দস্যুরাণী নামে। যদিও ফুলন ডাকাত ছিলেন কিন্তু তার মন ছিল মায়া, মমতায় ভরা। সেই সময়ে উত্তর প্রদেশের শহরগুলিতে দুর্গাদেবীর বেশে ফুলনের মূর্তি বিক্রয় হয়েছিল।
আত্মসমর্পণ ও বন্দী জীবন[সম্পাদনা]
বেহমাই হত্যাকাণ্ড সমগ্র ভারতবর্ষকে কম্পিত করে দিয়েছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে তার উপর মানসিক চাপ দেওয়া আরম্ভ করে। পুলিশ তার মাতা-পিতাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ হামলায় তার দলের বহুসংখ্যক সদস্যের মৃত্যু হয়। ফুলন দেবী আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আত্মসমর্পণ করার সময় তিনি ভারত সরকারের নিকট কয়েকটি শর্ত রেখেছিলেন। শর্তসমূহ হচ্ছে:[৮]
- ফুলন ও তার অন্যান্য সঙ্গীরা কেবল মধ্যপ্রদেশে আত্মসমর্পণ করিবেন, বিচারের জন্য তাদের উত্তরপ্রদেশে নেওয়া হবেনা
- ফাঁসী দিতে পারিবেন না ও ৮ বৎসরের অধিক সময় কারাবাস হবেনা
- সম্পর্কীয় ভাতৃ মায়াদিন অবৈধভাবে দখল করা জমি ফুলনের পিতাকে ফেরত দিতে হবে
- ফুলনের পিতৃ-মাতৃকে মধ্যপ্রদেশে সংস্থাপিত করতে হবে
- সরকার ফুলনের ভাতৃকে চাকুরি দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে
সরকার তার সবকয়েকটি শর্তে সম্মত হয়। বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বৎসর পর ১৯৮৩ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৮০০০ জন দর্শকের উপস্থিতিতে ফুলন আত্মসমর্পণ করেন। সেসময় ফুলন পরিধান করেছিলেন একটি খাকী পোশাক। শরীরে ছিল একটি লাল চাদর। মাথায় ছিল একটি লাল কাপড় যা বেহমাই গ্রামে চলানো যৌন অত্যাচার ও নির্যাতনের পর প্রতিশোধের প্রতীক রূপে তিনি মাথায় বেধেছিলেন। কাঁধে ছিল একটি বন্দুক। হাতজোড় করে তিনি জনসাধারণকে নমস্কার জানান। দেবী দুর্গা ও মহাত্মা গান্ধীর ছবির সম্মুখে তিনি বন্দুকটি রেখে আত্মসমর্পণ করেন।[৮][৯]
সরকারে ফুলনের সঙ্গে করা শর্ত মেনে নিলেও একটি শর্ত ভঙ্গ করেছিল। বিনা বিচারে তাকে ১১বৎসর কারাবাসে থাকতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৯৪ সনে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
চলচ্চিত্র, নাটক ও গ্রন্থ[সম্পাদনা]
১৯৯৪ সনে ফুলন দেবীর জীবনের উপর নির্মীত ব্যাণ্ডিট কুইন নামক চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ছায়াছবিটির পরিচালক হচ্ছেন শেখর কাপুর ও প্রযোজক চেনেল-৪। মালা সেনের ইণ্ডিয়া'জ ব্যাণ্ডিট কুইন নামক গ্রন্থের আধারে চিত্রনাট্যটি রচনা করা হয়।[১০] কিন্তু তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগে ফুলন দেবী চলচ্চিত্রটি ভারতে নিষিদ্ধ করার দাবী করেন। অবশেষে প্রযোজক তাকে ৪০,০০০ পাউণ্ড প্রদান করায় তিনি অভিযোগ তুলে নেন।[১০] ছবিটি ফুলনকে আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত করে তুলেছিল। লেখিকা অরুন্ধতী রায় তার দা গ্রেট ইণ্ডিয়ান রেপ ট্রিক নামক এক লেখায় প্রশ্ন করেন যে, কি অধিকারে এক জীবিত নারীর ধর্ষণের দৃশ্য তার কোন অনুমতি ছাড়া পুনমঞ্চায়ন করা হয়? তিনি পরিচালক শেখর কাপুরকে ফুলন দেবী ও তার জীবনকে ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্য দায়ী করেন।[১১]
এর আগে ১৯৮৫ সালে অশোক রায়ের পরিচালনায় বাংলা চলচ্চিত্র ফুলন দেবী প্রকাশিত হয়। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুরেশ ওবেরয়, রীতা ভাদুড়ি, জয় মুখার্জী প্রমুখ।[১২]
অসমের ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার অপ্সরা থিয়েটার ফুলন দেবীর আত্মসমর্পণের পর দস্যুরাণী ফুলন দেবী নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। কোন তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াই নাটকটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সাম্প্রতিক বিষয়-বস্তুর উপর রচিত এইটিই ছিল ভ্রাম্যমাণ থিয়েটারের একমাত্র জনপ্রিয় নাটক। ফুলন দেবী অতি সামান্য লেখা-পড়া জানতেন[১৩] কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি লেখক মেরী থেরেশ কানী ও পল রামবালীর সহযোগিতায় আই ফুলন দেবী: দা অটোবায়োগ্রাফী অফ ইণ্ডিয়াস ব্যাণ্ডিট কুইন নামক আত্মজীবনী প্রণয়ন করেন। এই গ্রন্থটি ইংল্যান্ডের লিটল ব্রাউন এণ্ড কম্পানী ১৯৯৬ সনে প্রথম প্রকাশ করে। এই দুইজন লেখকের সহযোগীতায় ফুলন দেবীর প্রণয়ন করা অন্য আরেকটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম দা ব্যাণ্ডিট কুইন অফ ইণ্ডিয়া: এন ওমেনস্ এমাজিং জার্নি ফ্রম প্রিজেন্ট টু ইন্টারনেশনেল লিজেন্ড। মালা সেন লিখেছিলেন যে ইণ্ডিয়াস ব্যাণ্ডিট কুইন একটি জীবনীমূলক গ্রন্থ।[১৪]
রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]
ফুলন দেবীর রাজনৈতিক জগতের গুরু ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদব। উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর সংসদীয় অঞ্চলে অধিকাংশই ঠাকুর সম্প্রদায়ের ভোটার ছিল যদিও নিম্নবর্নের মাল্লা ও জুলাহা সম্প্রদায়ের সন্মিলিত সংখ্যার বিপরীতে তাদের সংখ্যা কম। স্বাভাবিকভাবে এই আসনটি দখল করার জন্য ১৯৯৬ সনে সমাজবাদী পার্টি ফুলনকে মির্জাপুর আসনের জন্য টিকেট প্রদান করে। ভারতীয় জনতা পার্টি ও বেহমাই হত্যাকাণ্ডে নিহত হওয়া ঠাকুরের পত্নীদের ঘোর বিরোধিতা সত্বেও তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন।[১৫] ১৯৯৮ সনের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফুলন পরাজিত হলেও ১৯৯৯ সনে মির্জাপুর লোকসভা নির্বাচনে তিনি পুনরায় আসন দখল করতে সক্ষম হন।[১৬]
হত্যা[সম্পাদনা]
২০০১ সনের ২৫ জুলাই তারিখে নতুন দিল্লীতে ফুলন দেবীকে হত্যা করা হয়। এসময় তার দেহরক্ষীও আহত হয়। সেই সময়ে তিনি সংসদ থেকে বের হয়ে আসছিলেন। হত্যাকারীরা তাকে গুলি করে অটোরিক্সায় উঠে পালিয়ে যায়। হত্যাকারীরা ছিল শ্বের সিং রাণা, ধীরাজ রাণা ও রাজবীর।[১৭] শ্বের সিং রাণা দেরাদুনে আত্মসমর্পণ করে। হত্যাকারীরা প্রকাশ করে যে বেহমাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই হত্যা করা হয়েছে। ২০০৪ সনে শ্বের সিং তিহার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলায়ন করে কিন্তু ২০০৬ সনে পুনরায় কলকাতা পুলিশের হাতে বন্দী হয়। সেই সময়ে ক্ষত্রিয় স্বাভিমান আন্দোলন কমিটি নামক একটি সংগঠন ক্ষত্রিয়ের মর্যদা অক্ষুণ্ণ রাখা ও বেহমাই হত্যাকাণ্ডের বিধবাদের অশ্রুর মর্যদা দেওয়ার জন্য শ্বের সিং কে সন্মানিত করার করার সিদ্ধান্ত নেয়।[১৮]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Manju Jain (২০০৯)। Narratives of Indian cinema। Primus Books। পৃষ্ঠা 164। আইএসবিএন 978-81-908918-4-4।
- ↑ "দস্যুরাণী নিহত"। সংগ্রহের তারিখ April 01, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ গ "Phoolan Devi, India's Bandit Queen"। ২০০৫-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-১১।
- ↑ Jan Stradling (২০১১)। "12: Phoolan Devi - 'Bandit Queen', freedom fighter, politcian"। Good Girls Don’t Make History। Pier। আইএসবিএন 978-1-74266-623-5।
- ↑ ক খ গ ঘ John Arquilla (২০১১)। Insurgents, Raiders, and Bandits। 9781566638326। পৃষ্ঠা 245–251।
- ↑ "Phoolan Devi: Champion of the poor"। BBC News। ২০০১-০৭-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-১১।
- ↑ Mala Sen (১৯৯৩)। India's Bandit Queen।
- ↑ ক খ "www.trutv.com"। জুন ২১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "web.archive.org"। ডিসেম্বর ২৮, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ "Obituaries: Mala Sen"। The Telegraph। ২০১১-০৫-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৮।
- ↑ The Great Indian Rape-Trick ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে @ SAWNET -The South Asian Women's NETwork , Retrieved 25 November 2011
- ↑ "Phoolan Devi (1985)"। imdb.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "Phoolan Devi Autobiography"। সংগ্রহের তারিখ April 04, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "India's Bandit Queen by Mala Sen"। মার্চ ৫, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ April 04, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "www.frontlineonnet.com"। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "web.archive.org/"। ডিসেম্বর ২৮, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "www.guardian.co.uk"। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Kshatriya Samaj to honour Phoolan's killer"। সংগ্রহের তারিখ April 05, 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- A collection of links related to Phoolan Devi (the page is quite old, and many of the links are broken).
- Biography in short
- The Phoolan Devi Murder
- Crime Library article on Phoolan Devi
- Wikipedia articles without coherent topic
- ১৯৬৩-এ জন্ম
- ২০০১-এ মৃত্যু
- ১৯৭৯-এর অপরাধ
- ২০০১-এ ভারতে খুন
- ভারতীয় ডাকাত
- গুপ্তহত্যার শিকার ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- মৃত্যু অনুযায়ী ভারতের আগ্নেয়াস্ত্র
- ভারতীয় রাজনীতিবিদ অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত
- হত্যার অপরাধী
- ভারতীয় বন্দী এবং আটকরা
- অপরাধের ভারতীয় নারী
- রাজনীতিতে ভারতীয় নারী
- উত্তর প্রদেশ থেকে মানুষ
- মির্জাপুর থেকে মানুষ
- ভারতের মানুষ খুন
- ১১-তম লোকসভার সদস্য
- ১৩-তম লোকসভার সদস্য
- জালাউন জেলা থেকে মানুষ
- ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে নারী