ফিল নিউপোর্ট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফিল নিউপোর্ট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামফিলিপ জন নিউপোর্ট
জন্ম (1962-10-11) ১১ অক্টোবর ১৯৬২ (বয়স ৬১)
হাই ওয়েকম্ব, বাকিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
সম্পর্কএনএ নিউপোর্ট (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৩৫)
২৫ আগস্ট ১৯৮৮ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ টেস্ট১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮২ - ১৯৯৯ওরচেস্টারশায়ার
১৯৮৭ - ১৯৯৮বোল্যান্ড
১৯৯২ - ১৯৯৩নর্দার্ন ট্রান্সভাল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ২৯০ ২৭৭
রানের সংখ্যা ১১০ ৬,০১০ ৯৭০
ব্যাটিং গড় ২৭.৫০ ২৪.১৩ ১১.৮২
১০০/৫০ ০/০ ০/২২ ০/১
সর্বোচ্চ রান ৪০* ৯৮ ৫৭
বল করেছে ৬৬৯ ৪৬,৩৫২ ১২,৬০৬
উইকেট ১০ ৮৮০ ৩২৬
বোলিং গড় ৪১.৭০ ২৬.৯৭ ২৫.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩৫
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৪/৮৭ ৮/৫২ ৫/২২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ৭৯/– ৫৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

ফিলিপ জন নিউপোর্ট (ইংরেজি: Phil Newport; জন্ম: ১১ অক্টোবর, ১৯৬২) বাকিংহ্যামশায়ারের হাই ওয়েকম্ব এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিক থেকে ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বোল্যান্ড ও নর্দার্ন ট্রান্সভাল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন ফিল নিউপোর্ট

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ফিল নিউপোর্টের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। সিমসুইং সহযোগে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন তিনি। ১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ওরচেস্টারশায়ার দলের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে কাউন্টি দলটির উত্থানে প্রধান ভূমিকা রাখেন।

১৯৮২ সালে ওরচেস্টারশায়ারের দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে কয়েকটি খেলায় অংশ নেন। এর পরপরই ঐ বছরের জুলাই মাসে নিউ রোডে ইংল্যান্ডে সফররত পাকিস্তানি একাদশের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ফিল নিউপোর্টের। তবে, এ স্তরের ক্রিকেটের শুরুটায় তেমন প্রতিশ্রুতিশীলতার ছাঁপ রাখতে পারেননি তিনি। কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হন ও এগারো ওভারে ৬৪ রান খরচের ন্যায় ব্যয়বহুলতার পরিচয় দেন। সফরকারী দল ৪৬৭/৪ তুলে ইনিংস জয় করে। এরপর তিনি দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর, এজাবস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে স্থানীয় খেলায় অংশ নেয়ার জন্যে তার ডাক পড়ে। ঐ খেলায় ডেনিস অ্যামিসের উইকেট লাভ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও একটি উইকেট পান।

ধীরে ধীরে তিনি কাউন্টি দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিতে সচেষ্ট হন। ১৯৮৬ সালে নিজেকে মেলে ধরেন। কাউন্টি ক্যাপ লাভ করেন তিনি। পাঁচবার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পান। এ মৌসুমে সব মিলিয়ে ৮৫ উইকেট পেয়েছিলেন ফিল নিউপোর্ট। এছাড়াও, একই মৌসুমে নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। সবমিলিয়ে তার সংগৃহীত ২২টি অর্ধ-শতরানের এটি ছিল প্রথম। তবে, কোনটিকেই তিন অঙ্কের কোটায় নিয়ে যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ৯৮ রান। ১৯৯০ সালে ওরচেস্টারে সফররত নিউজিল্যান্ডীয় একাদশের বিপক্ষে এ সাফল্য পান।

স্বর্ণালী সময়[সম্পাদনা]

১৯৯৭ সালে মাঝারিমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪১-এর অধিক গড়ে রান সংগ্রহ করেন। পঁচিশ ইনিংসের মধ্যে বারোটিতেই অপরাজিত থেকে এ গড় পান। তবে, একদিনের ক্রিকেটে তিনি সুন্দর খেলেন। ১৬.৭০ গড়ে ৩৪ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, নিজস্ব সেরা ব্যক্তিগত বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন ৫/২২। ঐ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিতে বোল্যান্ডের সদস্য হন। সেখানে তিনি গড়পড়তা সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ব্যাট হাতে ২৫ গড়ে রান তুলেন ও বল হাতে ১৯ গড়ে উইকেট পান।

১৯৮৮ সালে নিজ দেশেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। কয়েকটি দর্শনীয় ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। তন্মধ্যে, সমারসেটের বিপক্ষে খেলায় দশ উইকেট নিয়ে ওরচেস্টারশায়ারকে ইনিংস ব্যবধানের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। এরপর, জুনের শুরুতে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে নয় উইকেট পান। পরের খেলাতেই তিনি তার ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৮/৫২ দাঁড় করান। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় মিডলসেক্সের বিপক্ষে এ সাফল্য পান। এছাড়াও, গ্রাহাম গুচঅ্যালান বর্ডারের ন্যায় বিশ্বমানের খেলোয়াড়সমৃদ্ধ শক্তিধর এসেক্সের বিপক্ষে নয় উইকেট নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, উভয় ইনিংসেই অ্যালান বর্ডার তার শিকারে পরিণত হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন ফিল নিউপোর্ট।[১] ২৫ আগস্ট, ১৯৮৮ তারিখে লর্ডসে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। তাকে কোন ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুন্দর খেলা প্রদর্শনের কারণে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে খেলার জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। গ্রীষ্মের আগস্টে সফররত শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে তাকে খেলানো হয়। খেলায় তিনি বেশ ভালো খেলেন। ১৬৪ রান খরচায় সাত উইকেট পান। এরফলে, ইংল্যান্ড দলে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সাত উইকেটের বিজয়ে সহায়তা করেন তিনি। তবে, তাকে ভারত গমনার্থে ইংল্যান্ড দলে রাখা হয়নি ও পরবর্তীতে ঐ সফরটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

তিনি নিজেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। ৯৩টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পান তিনি। এ সংগ্রহটিই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ছিল। তারচেয়েও বড় বিষয় ছিল ১৯৭৪ সালের পর ওরচেস্টারশায়ারের প্রথম কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে তার ভূমিকা রাখা।

অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালের শুরুটা ফিল নিউপোর্টের জন্যে বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতায় ভরপুর ছিল। সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে ওরচেস্টারশায়ারের সদস্যরূপে নিম্নমূখী রানের খেলায় এগারো উইকেট নেন। প্রথম দিনেই তিনি দশ উইকেট পান। ঐ খেলায় তার দল জয় পায়। ফলশ্রুতিতে, হেডিংলিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার জন্যে তাকে রাখা হয়। এ স্তরের ক্রিকেটে নিজস্ব দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ইংল্যান্ডে স্টিভ ওয়াহ তার প্রথম সফরে ১৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। নিউপোর্টের ন্যায় সিমারদেরকে একচোট নেন। ঐ ইনিংসে তিনি ২/১৫৩ পান। এরপর তাকে বোলিং করার সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি মাত্র পাঁচ ওভার বোলিং করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড দল থেক বাদ পড়েন ও গ্রীষ্মকালীন অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের দূরাবস্থার সূচনা হয়। আবারও তিনি ঘরোয়া পর্যায়ের খেলায় নিজেকে সরব রাখেন। ওরচেস্টারশায়ারের চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখতে ভূমিকা পালন করেন।

এরপর, ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনি আর মাত্র একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ফিল নিউপোর্ট। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে এ-দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। পার্থ টেস্টের পূর্বে আঘাতপ্রাপ্ত অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের পরিবর্তে তাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[১] ঐ টেস্টে ৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও তার দল পরাজিত হয়েছিল। দলের সংগ্রহ ১১৮/৬ থাকা অবস্থায় তিনি ক্রিজে নামেন। তবে, বল হাতে তেমন সফল হননি। একটি উইকেট পান। চৌদ্দ ওভারের মধ্যে ছয়টি নো-বল করেছিলেন তিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে তিনি বেশ ভালোমানের সুইং বোলার ছিলেন। তাসত্ত্বেও, এরপর আর তাকে ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলতে দেখা যায়নি। এরফলে, সব মিলিয়ে তিনটি টেস্ট খেলেন তিনি ও নিজ নামের পার্শ্বে কোন ওডিআই খেলায় সম্পৃক্ত থাকা হয়নি।

আরও একটি শীতকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিবাহিত করেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নর্দার্ন ট্রান্সভালের পক্ষে খেলেন তিনি। এ দলটির সাথে খেলা বাদে ফিল নিউপোর্টের বাদ-বাকী খেলোয়াড়ী জীবনে ওরচেস্টারশায়ারকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রত্যেক মৌসুমেই অর্ধ-শতাধিক উইকেট পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রথম একাদশে খুব কমই ভূমিকা রাখতে থাকেন। তাসত্ত্বেও ১৯৯৭ সালে শেষ হাসি হাসেন। লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ড্র হওয়া খেলায় ৭/৩৭ পান। ১৯৯৯ সাল শেষে অবসর গ্রহণ করেন। ন্যাশনাল লীগের খেলায় অংশ নেন। বোলিংয়ের মান বেশ দূর্বল ছিল। ব্যাট হাতে মাঠে নামেননি বা কোন উইকেট পাননি। কেবলমাত্র একটি ক্যাচ তালুবন্দী করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 125আইএসবিএন 1-869833-21-X 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]