ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ

السلطة الفلسطينية الوطنية
as-Sulṭa al-Waṭanīya al-Filasṭīnīya
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরের ১৬৭ টি ছিটমহল ও গাজা উপত্যকায় আংশিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। [১]
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরের ১৬৭ টি ছিটমহলগাজা উপত্যকায় আংশিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে। [১]
প্রশাসনিক কেন্দ্ররামাল্লাহ
৩১°৫৪′ উত্তর ৩৫°১২′ পূর্ব / ৩১.৯০০° উত্তর ৩৫.২০০° পূর্ব / 31.900; 35.200
বৃহত্তম নগরীগাজা
৩১°৩১′ উত্তর ৩৪°২৭′ পূর্ব / ৩১.৫১৭° উত্তর ৩৪.৪৫০° পূর্ব / 31.517; 34.450
সরকারি ভাষাআরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণফিলিস্তিনি
ধরনঅস্থায়ী স্ব-সরকার সংস্থা
সরকারঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসিত[২]
মাহমুদ আব্বাস
মুহাম্মদ শতায়েহ
আইন-সভালেজিসলেটিভ কাউন্সিল
বেসামরিক ক্ষমতার আংশিক প্রতিনিধি দল 
ইসরায়েল প্রশাসন থেকে
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩
১৯৯৪
১৯৯৫
২০০৭
• ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জাতিসংঘের একটি অ-সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়
২৯ নভেম্বর, ২০১২
মুদ্রা
সময় অঞ্চলইউটিসি+২ (ইইটি)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+৩ (ইইএসটি)
তারিখ বিন্যাসদিন/মাস/বছর
কলিং কোড+৯৭০
আইএসও ৩১৬৬ কোডPS
ইন্টারনেট টিএলডি.ps

ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ বা পিএ অথবা পিএনএ ( আরবি: السلطة الوطنية الفلسطينية ; as-Sulṭa al-Waṭanīya al-Filasṭīnīya) হল ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত একটি সরকারী সংস্থা, [৫][৬] যা পশ্চিম তীরের ওপর আংশিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ আছে।[৭] ১৯৯৩–১৯৯৫ অসলো চুক্তির ফলস্বরূপ এই সংস্থাটি গঠিত হয়। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নামেও পরিচিত। [৬] ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে সংঘটিত ফিলিস্তিনি নির্বাচনের আগে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করতো এবং ফাতাহহামাসের মধ্যে পরবর্তী দ্বন্দ্বে এটি হামাসের কাছে গাজার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল।

সংস্থাটি গাজা ভূখণ্ড দাবি করে চলেছে; যদিও হামাস কার্যত নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করে। জানুয়ারি, ২০১৩ সাল থেকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সরকারী নথিতে "ফিলিস্তিন রাষ্ট্র" নাম ব্যবহার করছে, যদিও জাতিসংঘ ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থাকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে চলেছে। [৮]

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিন মুক্তিসংস্থা এবং ইসরায়েল সরকারের মধ্যে গাজা-জেরিকো চুক্তি অনুসারে গঠিত হয়েছিল এবং তা একটি পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তী সংস্থা হওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল এবং এর চূড়ান্ত অবস্থা সম্পর্কে উভয় পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

অসলো চুক্তি অনুসারে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষকে ফিলিস্তিনি শহুরে এলাকায় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত এবং বেসামরিক উভয় সমস্যার জন্য একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল এবং তা এরিয়া এ(A) নামে পরিচিত হয়। এছাড়া গ্রামীণ ফিলিস্তিনি এলাকা জুড়ে শুধুমাত্র বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ ("এরিয়া বি" ) এর হাতে থাকবে এবং ইসরায়েলি বসতি, জর্ডান উপত্যকা ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বাইপাস রাস্তাসহ বাকি অঞ্চল ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে (এরিয়া সি)।

পূর্ব জেরুজালেম এই চুক্তি থেকে বাদ পড়ে যায়। বেশ কয়েকবার ইসরায়েলীয় সরকারের সাথে আলোচনার ফলে কর্তৃপক্ষ আরো কিছু এলাকার সামান্য নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। কিন্তু দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়ে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যখন বেশ কয়েকটি কৌশলগত অবস্থান পুনরুদ্ধার করে, তখন কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নিজের বসতিগুলি থেকে একতরফাভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। যার ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ সমগ্র অঞ্চলে প্রসারিত হয়। [৯] তখন ইস্রায়েল ক্রসিং পয়েন্ট, আকাশসীমা ও গাজা উপকূলে জল নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখে। [১০]

২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারী, ফিলিস্তিনের আইনসভা নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয় এবং ইসমাইল হানিয়াকে কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল এবং একটি জাতীয় ঐক্য ফিলিস্তিনি সরকার গঠন করা হয়। তবে হামাস ও ফাতাহর মধ্যে একটি সহিংস সংঘর্ষে কার্যকরভাবে জাতীয় ঐক্য সরকারের পতন ঘটে; বিশেষ করে গাজা উপত্যকায়

২০০৭ সালের ১৪ জুন গাজা উপত্যকা হামাসের হাতে আসার পর এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস হামাসের নেতৃত্বাধীন ঐক্য সরকারকে বরখাস্ত করেন। হানিয়াহকে বরখাস্ত করে সালাম ফায়াদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তার এই পদক্ষেপটি হামাস দ্বারা স্বীকৃত হয়নি এবং এভাবে দুটি পৃথক প্রশাসন–পশ্চিম তীরে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও গাজা উপত্যকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস সরকার–গঠিত হয়। এরপর ফিলিস্তিনি সরকার দুটিকে একত্র করার জন্য পুনর্মিলন প্রক্রিয়া কয়েক বছর যাবত চলার পর কিছু অগ্রগতি অর্জিত হলেও পুনরায় একত্রীকরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে এবং সংসদ নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের ফলে ২০০৬ সালের ৭ ই এপ্রিলে সমস্ত প্রত্যক্ষ সাহায্য স্থগিত করা হয়েছিল। [১১] [১২] এর কিছুদিন পরেই, সাহায্য প্রদান আবার শুরু হয়; কিন্তু সাহায্য সরাসরি পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের অফিসে পাঠানো হয়। [১৩]

২০০৯ সালের ৯ই জানুয়ারীতে যখন রাষ্ট্রপতি হিসাবে মাহমুদ আব্বাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং নির্বাচনের আহ্বান করা হয়েছিল, তখন হামাস সমর্থক ও গাজা উপত্যকায় অনেকেই তার রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং তার পরিবর্তে ফিলিস্তিনের স্পিকার আজিজ দুইককে বিবেচনা করা হয়। দেশের আইন পরিষদ নতুন নির্বাচন না অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলে গৃহীত হয়। [১৪]

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি ১৩৮টি জাতি দ্বারা স্বীকৃত। নভেম্বর, ২০১২ থেকে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। [১৫] [১৬] [১৭] ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হল একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন, যা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন করেনি। এছাড়া এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যও সমালোচিত হয়েছে। যার মধ্যে আছে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও এর ভিন্নমতালম্বীদের দমন। [১৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Thrall 2017, পৃ. 144; Peteet 2016, পৃ. 268
  2. "The Palestinian Authority"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২০ 
  3. "Article IV: Monetary and Financial Issues", Gaza-Jericho Agreement Annex IV - Economic Protocol, Israeli Ministry of Foreign Affairs, ২৯ এপ্রিল ১৯৯৪, ৭ আগস্ট ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২০  templatestyles stripmarker in |chapter= at position 9 (সাহায্য)
    ১৯৯৪ সালের প্যারিস চুক্তির ৪র্থ খণ্ড অনুযায়ী ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত মুদ্রা অবলম্বন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে]। বর্তমানে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি শেকেল জর্ডানীয় দিনার-এর পাশাপাশি ব্যবহৃত, ও গাজা ভূখণ্ডে মিশরীয় পাউন্ড-এর পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়।
  4. "The World Factbook: Middle East: Gaza Strip"cia.gov। Central Intelligence Agency। ১২ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৪ 
  5. Rudoren, Jodi। "The Palestinian Authority"The New York Times 
  6. "The Palestinian government"। CNN। ৫ এপ্রিল ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২ 
  7. "Palestine: What is in a name (change)?"। Al Jazeera। ৮ জানুয়ারি ২০১৩। ২১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২০ 
  8. "Status of Palestine in the UN - Non-member observer State status - SecGen report"Question of Palestine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৩ 
  9. Kumaraswamy, P. R. (২০০৯)। The A to Z of the Arab-Israeli Conflict। The A to Z Guide Series (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা xl। আইএসবিএন 978-0-8108-7015-4 
  10. "Israel completes Gaza withdrawal"BBC News। ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১৬ 
  11. "US suspends aid to Palestinians", BBC News, ৭ এপ্রিল ২০০৬, সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০০৬ 
  12. "Abbas warns of financial crisis", BBC News, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬, সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ 
  13. Akiva Eldar, "U.S. to allow PA funds to be channeled through Abbas office", Haaretz 
  14. Patrick Martin (১৮ জুলাই ২০০৯), "Fancy that, a moderate in Hamas", The Globe and Mail, Toronto, ২৩ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০০৯ 
  15. Gharib, Ali (২০ ডিসেম্বর ২০১২)। "U.N. Adds New Name: "State of Palestine""The Daily Beast। ১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  16. "Permanent Observer Mission of Palestine to the United Nations."। United Nations। ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৩**Please note that since Thursday's Historic Vote in the United Nations General Assembly which accorded to Palestine Observer State Status, the official title of the Palestine mission has been changed to The Permanent Observer Mission of the State of Palestine to the United Nations.** 
  17. "A/67/L.28 of 26 November 2012 and A/RES/67/19 of 29 November 2012"। United Nations। ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১২ 
  18. Multiple sources: