ইসমাইল হানিয়া
ইসমাঈল হানিয়া | |
---|---|
إسماعيل هنية | |
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী (হামাস সমর্থিত গাজা সরকার এর) এবং হামাস এর প্রধান | |
কাজের মেয়াদ ২৯ মার্চ ২০০৬ – ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | |
রাষ্ট্রপতি | মাহমুদ আব্বাস আজিজ দুয়াইক |
পূর্বসূরী | আহমেদ কুরেই |
উত্তরসূরী | ইয়াহিয়া সিনওয়ার |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৮ মে ১৯৬৩ আল-শাতি, গাজা উপত্যকা |
মৃত্যু | ৩১ জুলাই ২০২৪ তেহরান, ইরান | (বয়স ৬১)
রাজনৈতিক দল | হামাস |
ধর্ম | ইসলাম |
|
ইসমাইল হানিয়া[ক] (৮ মে ১৯৬৩ - ৩১ জুলাই ২০২৪) ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ, যিনি হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের নির্বাচনে হামাস জয়লাভের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১৪ জুন রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস তাকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু ইসমাইল হানিয়া আদেশ মেনে নেননি এবং গাজায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে থাকেন।[১]
হানিয়ার জন্ম ১৯৬২ বা ১৯৬৩ সালে আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে[২][৩][৪][৫], যা সে সময় মিশরের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা উপত্যকায় ছিল। তার বাবা-মা ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় আশকেলন থেকে বিতাড়িত বা পালিয়ে আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন[৬][৭]। সেখানেই তিনি প্রথম হামাসের সাথে যুক্ত হন, যা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদা চলাকালে গঠিত হয়েছিল। তার অংশগ্রহণের কারণে তাকে তিনবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কারাবন্দি করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে মুক্তির পর, তাকে লেবাননে নির্বাসিত করা হয় এবং এক বছর পরে ফিরে এসে গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়র ডিন হন। ১৯৯৭ সালে তাকে হামাসের একটি অফিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে তিনি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসেন।[৮]
হানিয়া হামাসের সেই তালিকার প্রধান ছিলেন যা ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল। এই তালিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রচারে কাজ করেছিল এবং তাই তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ১৪ জুন ২০০৭ সালে হানিয়াকে পদ থেকে বরখাস্ত করেন। সেই সময় চলমান ফাতাহ-হামাস সংঘর্ষের কারণে, হানিয়া আব্বাসের আদেশ মেনে নেন নি এবং গাজা উপত্যকায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসন চালিয়ে যান।[৯]
৬ মে ২০১৭ সালে, হানিয়া খালেদ মাশালকে প্রতিস্থাপন করে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন, সেই সময় হানিয়া গাজা উপত্যকা থেকে কাতারে স্থানান্তরিত হন[১০][১১]। তার মেয়াদকালে, হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়, যা তিনি দোহায় থাকা অবস্থায় উদযাপন করেন[১২]। ২০২৩ সালের শেষের দিকে হামাসের হামলার পর, ইসরায়েল সকল হামাস নেতাকে হত্যা করার ইচ্ছা ঘোষণা করে।[১২] মে ২০২৪ সালে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান ঘোষণা করেন যে তিনি ফিলিস্তিনে আইসিসির তদন্তের অংশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য হানিয়া এবং অন্যান্য হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করতে চান।[১৩][১৪][১৫] ইরানের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য তার সফরের দুই মাস আগে ৩১ জুলাই ২০২৪ সালে, হানিয়া তেহরানে একটি বাসায় বিস্ফোরণে নিহত হন।[১৬][৪]
প্রারম্ভিক ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]
দপ্তর বিতর্কিত ব্যক্তিদের ইটালিক অক্ষর দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে |
ইসমাইল হানিয়া মিশর অধিকৃত গাজা উপত্যকার আল-শাতি উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় তার বাবা মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের নিকটস্থ বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হন।[৬] যৌবনকালে হানিয়া তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য ইসরায়েলে কাজ করতেন। তিনি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন।[৬][৭] বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন।[৬] ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন।[৭] ইসলামিক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন।[৭] গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িক কালে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।[৬]
প্রাথমিক সক্রিয়তা
[সম্পাদনা]হানিয়া প্রথম ইন্তিফাদায় প্রতিবাদে অংশ নেন এবং বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে তিনি ইসরায়েলে স্বল্পকালীন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[৬] ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় ইসরায়েল কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাস কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[৬] ১৯৮৯ সালে তিনি তিন বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হন।[৬] ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ইসরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ তাকে সিনিয়র হামাস নেতা আবদুল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার, আজিজ দুওয়াইক ও আরো ৪০০ কর্মীর সাথে ইসরায়েল তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেয়।[৬] তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে।[৬] এক বছর পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন।[৬]
রাজনৈতিক কর্মজীবন
[সম্পাদনা]হামাসে অবস্থান
[সম্পাদনা]১৯৯৭ সালে আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হানিয়া তার দপ্তর পরিচালনের দায়িত্ব পান।[৬] ইয়াসিনের সাথে সম্পর্কের কারণে হামাসে তার খ্যতি বৃদ্ধি পায় এবং তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষে নিয়োগ পান।[৬] ইয়াসিনের সাথে তার সম্পর্ক এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হামাসের অনেক নেতার হত্যাকান্ডের ফলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় হামাসে তার অবস্থান আরো মজবুত হয়। ইসরায়েলি বাহিনী তাকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে আত্মঘাতি বোমা হামলার পর হামাস নেতৃত্বকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিনি হাতে আহত হন। ডিসেম্বর ২০০৫ সালে, হানিয়া হামাসের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন যা পরের মাসে আইন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হানিয়া খালেদ মাশালের স্থলাভিষিক্ত হয়ে হামাসের প্রধান নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।[১৭]
প্রধানমন্ত্রীত্ব
[সম্পাদনা]২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি হামাস নির্বাচনে জয়ী পয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেন এবং ২৯ মার্চ শপথ নেন।
পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]নির্বাচনের পর ইসরায়েল অর্থনৈতিক অবরোধসহ ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কিছু পদক্ষেপ নেয়। ইসরায়েলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এরপর ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পক্ষে ইসরায়েল কর্তৃক সংগৃহিত প্রায় ৫০মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাসিক কর ইসরায়েল হস্তান্তর করবে না। হানিয়া অবরোধ উপেক্ষা করে বলেন যে হামাস নিজেকে নিরস্ত্র করবে না এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। তিনি এসকল পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেন যে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রদর্শিত গণতান্ত্রিক মতামতের প্রতি ইসরায়েলের ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত ছিল।
৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উদ্বৃত্ত বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। ফিলিস্তিনি অর্থমন্ত্রী মাজেন সুনুকরুত এই দাবি মেনে নেন।[১৮] যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে বৈদেশিক সাহায্য হারানোর পর হানিয়া মন্তব্য করেন যে পশ্চিমারা ফিলিস্তিনি জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সবসময় অনুদানকে ব্যবহার করছে।[১৯]
২০০৬ সালের নির্বাচনের কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশকে লেখা একটি চিঠিতে হানিয়া নির্বাচিত সরকারের সরাসরি আলোচনার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান করেন। তিনি ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সন্ধির প্রস্তাব করেন এবং ১৯৬৭ সালের পূর্বের ফিলিস্তিনি সীমানা মেনে নেন এবং আন্তর্জাতিক বয়কট প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি এবং বয়কট বহাল রাখে।[২০]
আব্বাসের সঙ্গে বিবাদ
[সম্পাদনা]২০০৭ সালের ১৪ জুন মাহমুদ আব্বাস হানিয়াকে পদচ্যুত করে সালাম ফাইয়াদকে নিয়োগ দেন। এর ফলে হামাসের সামরিক শাখা ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। ইতিপূর্বে তা ফাতাহ ফাতাহর মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।[২১] এই নিয়োগকে বেআইনি হিসেবে ধরা হয়েছিল কারণ ফিলিস্তিনি মৌলিক আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোনো প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারলে আইন পরিষদের সম্মতি ব্যতীত নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন না। আইন অনুযায়ী নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ফাইয়াদের নিয়োগ আইন পরিষদে অনুমোদিত না হওয়ায় হানিয়া গাজায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে থাকেন। সেসাথে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি তাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করতে থাকে। ফাইয়াদের অনুমোদনকে প্রকাশ্যে অবৈধ ঘোষণা দানকারীদের মধ্যে মৌলিক আইনের খসড়া প্রণয়নকারী ফিলিস্তিনি আইনজীবী আনিস আল-কাসিম অন্যতম।[২২]
গাজায় পুনঃপ্রবেশ নিষিদ্ধ
[সম্পাদনা]ফাতাহ-হামাস সংঘাতের উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে, হানিয়াকে মিশর থেকে গাজার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমির পেরেটজের আদেশে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা হয়। হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম সরকারি বিদেশ সফর শেষে গাজায় ফিরছিলেন। তিনি আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নগদ বহন করছিলেন, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পরিশোধের জন্য ছিল। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ পরে জানায় যে, হানিয়াকে সীমান্ত পার হতে দেওয়া হবে, যদি তিনি অর্থ মিশরে রেখে যান, যা আরব লীগের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে বলে জানানো হয়।
এই ঘটনায় রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে হামাস যোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের মধ্যে গোলাগুলি হয়। সীমান্ত ক্রসিং পরিচালনাকারী ইইউ মনিটরদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।[২৩] পরে হানিয়া সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করলে গোলাগুলিতে একজন দেহরক্ষী নিহত এবং হানিয়ার বড় ছেলে আহত হয়। হামাস এই ঘটনাটিকে ফাতাহর দ্বারা হানিয়ার জীবনের উপর হামলার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করে, যার ফলে পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় হামাস ও ফাতাহ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হানিয়া বলেছিলেন যে তিনি অভিযুক্ত অপরাধীদের চেনেন, তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন এবং ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের জন্য আহ্বান জানান। মিশর পরিস্থিতির মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেয়।[২৪]
ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্য সরকার মার্চ ২০০৭
[সম্পাদনা]হানিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে হামাস এবং ফাতাহের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পদত্যাগ করেন। তিনি ১৮ মার্চ ২০০৭ সালে একটি নতুন মন্ত্রিসভার প্রধান হিসেবে একটি নতুন সরকার গঠন করেন, যেখানে ফাতাহ এবং হামাসের রাজনীতিবিদরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
১৪ জুন ২০০৭ সালে, গাজার যুদ্ধে, রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস মার্চ ২০০৭ সালের ঐক্য সরকার ভেঙে দেওয়ার এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা ঘোষণা দেন। হানিয়া বরখাস্ত হন এবং আব্বাস রাষ্ট্রপতির ডিক্রির মাধ্যমে গাজা এবং পশ্চিম তীর শাসন করতে থাকেন।
গাজার যুদ্ধের পর
[সম্পাদনা]প্রায় ২০১৬ সালের দিকে, হানিয়া গাজা থেকে কাতারে চলে যান। তিনি দোহায় একটি অফিস চালু করেন।
১৩ অক্টোবর ২০১৬ সালে, ফিলিস্তিন আইন পরিষদের (পিএলসি) আইনি কমিটি হানিয়ার সরকারের গাজা উপত্যকায় ফেরার জন্য একটি অনুরোধকে সমর্থন করে, যা ২ জুন ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেছিল। পিএলসি সদস্যদের দ্বারা জমা দেওয়া একটি গবেষণার পর্যালোচনার পর এই সমর্থন প্রদান করা হয়, যেখানে হানিয়ার পদত্যাগের পরে সরকারের ব্যর্থতার জন্য ক্রুদ্ধ ছিল। হামাসের নিজস্ব ভাষায়, "হামাস এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার বিভিন্ন দলের মধ্যে ২০১৪ সালের ঐক্য সরকার গঠনের অভ্যন্তরীণ সমঝোতার উপর হামাসের সম্মতিকে বাতিল করা এবং একাধিক মন্ত্রীকে ফাতাহ নেতাদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করা – এটিকে একটি ফাতাহ সরকারে রূপান্তরিত করা" বলে সমালোচনা করে। পিএলসির সুপারিশ এবং হামাসের অনুরোধ সত্ত্বেও, ঐক্য সরকার এবং ফাতাহ উভয়ই এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে, একটি প্রেস রিলিজে এর অবৈধতা এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে আরও বিভাজনের ঝুঁকি উল্লেখ করে।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]৩১ জুলাই ২০২৪-এ, হামাস এক বিবৃতিতে জানায় যে তাদের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিজের বাসস্থানে "জায়নবাদীদের" বিশ্বাসঘাতক অভিযানে নিহত হয়েছেন।[২৫] তাকে জায়নবাদীদের দ্বারা "গুপ্তহত্যা" করা হয়েছে বলে বলে অভিযোগ করা হয়।[২৬] ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড নিশ্চিত করে যে তিনি এবং তার দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। [২৭] এ সময় তিনি ইরানের ৯ম প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে তেহরানে গিয়েছিলেন এবং এ অনুষ্ঠান সমাপ্তির পরই তাকে হত্যা করা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয় যে ইসমাইল হানিয়ার বাসভবনে নিহতের দুই মাস পূর্বেই একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, হানিয়া সেই ঘরে প্রবেশ করার পরই সেই বোমাটি রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরিত হয়। [২৮][২৯]
টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Abbas sacks Hamas-led government"। BBC News। ১৪ জুন ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৭।
- ↑ Vinall, Frances (৩১ জুলাই ২০২৪)। "What to know about Ismail Haniyeh, the Hamas leader killed in Iran"। The Washington Post। ৩১ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৪।
Haniyeh was born in January 1963, according to the Hamas media office [...]
- ↑ "Ismail Haniyeh"। Encyclopædia Britannica। ৩১ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৪।
born 1962?
- ↑ ক খ Livni, Ephrat; Abdulrahim, Raja (৩১ জুলাই ২০২৪)। "Ismail Haniyeh, a Top Hamas Leader, Is Dead at 62"। The New York Times। ৩১ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৪।
Mr. Haniyeh was born in 1962 [...]
- ↑ Fischbach, Michael R.। "Haniyeh, Ismail"। encyclopedia.com। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৪।
Haniyeh was born in 1962 (some sources say January 1963) [...]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড "Profile: Hamas PM Ismail Haniya"। BBC। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬।
- ↑ ক খ গ ঘ Donald Macintyre (৩ জানুয়ারি ২০০৯)। "Hamas PM Ismail Haniyeh at war with Israel – and his own rivals"। The Belfast Telegraph।
- ↑ "Who was Ismail Haniyeh, the Hamas political leader killed in Tehran?"। CNN।
- ↑ "Abbas sacks Hamas-led government"। BBC News। ১৪ জুন ২০০৭। ২৭ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৪।
- ↑ "Ex-Gaza leader Haniyeh reportedly to replace Mashaal as Hamas head"। The Times of Israel। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬। ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৪।
- ↑ Akram, Fares (৭ মে ২০১৭)। "Hamas says Ismail Haniyeh chosen as Islamic group's leader"। Yahoo News। Associated Press। ৬ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৭।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;:1
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Khan, Karim A.A. (২০ মে ২০২৪)। "Statement of ICC Prosecutor Karim A.A. Khan KC: Applications for arrest warrants in the situation in the State of Palestine"। icc-cpi.int। International Criminal Court। ২০ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২৪।
- ↑ Ray, Siladitya (২০ মে ২০২৪)। "ICC Seeks Arrest Warrants For Benjamin Netanyahu And Hamas Leader Yahya Sinwar"। Forbes। ২২ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২৪।
- ↑ Kottasová, Ivana (২০ মে ২০২৪)। "EXCLUSIVE: ICC seeks arrest warrants against Sinwar and Netanyahu for war crimes over October 7 attack and Gaza war"। CNN। ২০ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২৪।
- ↑ "Hamas leader Ismail Haniyeh killed in raid on Iran residence, says Palestinian group"। The Guardian। ৩১ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৪।
- ↑ Lieber, Dov (১৫ জুন ২০১৬)। "Khaled Mashaal to step down as Hamas leader – report"। The Times of Israel। ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৪।
- ↑ "PNA agrees to return 50-million-dollar fund to US", Xinhua, 19 February 2006
- ↑ "Hamas dismisses Israeli sanctions", BBC, 20 February 2006
- ↑ "In 2006 letter to Bush, Haniyeh offered compromise with Israel"। Haaretz। ১৪ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ David Rose, The Gaza Bombshell, Vanity Fair, April 2008
- ↑ Opinion of lawyer who drafted Palestinian law ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, Reuters, 8 July 2007
- ↑ "Palestinian PM denied Gaza entry"। BBC। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬। ৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৪।
- ↑ "Egypt seeks to ease Gaza tensions"। BBC। ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬। ৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৪।
- ↑ bdnews24.com। "হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত"। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-৩১।
- ↑ "হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে 'গুপ্ত হামলায়' নিহত"। বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০৭-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-৩১।
- ↑ "Hamas chief Ismail Haniyeh assassinated in Iran"। Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৭-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-৩১।
- ↑ Bergman, Ronen; Mazzetti, Mark; Fassihi, Farnaz (২০২৪-০৮-০১)। "Bomb Smuggled Into Tehran Guesthouse Months Ago Killed Hamas Leader"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৩।
- ↑ ডেস্ক, স্টার অনলাইন (২০২৪-০৮-০২)। "ক্ষেপণাস্ত্র নয়, কক্ষে লুকিয়ে রাখা রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন হানিয়া"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৩।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "Profile: Ismail Haniya"। Al Jazeera। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
- "'We Do Not Wish to Throw Them Into the Sea'"। The Washington Post। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
- "SPIEGEL Interview with Palestinian Prime Minister Ismail Haniyeh: "We Want Peace and Stability""। Der Spiegel। ১২ জুন ২০০৬।
- David Margolick (সেপ্টেম্বর ২০০৬)। "The Most Dangerous Job in Gaza"। Vanity Fair।
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী আহমেদ কুরেই |
ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী ২০০৬–২০১৪ |
উত্তরসূরী রামি হামদাল্লাহ |
- ১৯৬৩-এ জন্ম
- গাজা ভূখণ্ডের ব্যক্তি
- ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিম
- হামাস সদস্য
- ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী
- ফিলিস্তিনি আইন পরিষদের সদস্য
- ফিলিস্তিনি যোদ্ধা
- ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু
- ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী
- ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ
- গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ২০২৪-এ মৃত্যু
- গুপ্তহত্যার শিকার ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ
- গুপ্তহত্যার শিকার হামাস সদস্য