নিজাম উদ্দিন আজমী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিজামউদ্দীন আজমি
نظام الدین اعظمی
প্রধান মুফতি, দারুল উলুম দেওবন্দ
কাজের মেয়াদ
১৯৯৬ – ২০০০
নিয়োগদাতাদারুল উলুম দেওবন্দ
চ্যান্সেলরমাহমুদ হাসান দেওবন্দি
পূর্বসূরীমাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী
উত্তরসূরীপদবী বিলুপ্ত
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মনভেম্বর, ১৯১০
আজমগড়, উত্তরপ্রদেশ, ভারত
মৃত্যু২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০০(2000-02-26) (বয়স ৮৯)
নাগরিকত্বভারত
জাতীয়তাভারতীয়
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদারুল উলুম দেওবন্দ
পেশাশিক্ষক, মুফতি, ফতোয়া লেখক
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • মুহাম্মদ রফি (পিতা)
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহফিকহ, শরিয়া
উল্লেখযোগ্য কাজমুনতাখাবাত-ই-নিজাম আল-ফাতাওয়া
শিক্ষকশুকরুল্লাহ মুবারকপুরী, হুসাইন আহমদ মাদানি, আসগর হুসাইন দেওবন্দি, ইজাজ আলী আমরুহী, ইবরাহিম বলিয়াবি, মুফতি মুহাম্মদ শফি
ঊর্ধ্বতন পদ
এর শিষ্যশাহ ওয়াসিকুল্লাহ এলাহাবাদী

নিজাম উদ্দীন আজমী ( উর্দুআরবি: نظام الدین اعظمی‎‎; নভেম্বর, ১৯১০–২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০০) হলেন একজন ইসলামি পন্ডিতমুফতি, যিনি দারুল উলূম দেওবন্দের দ্বাদশ ও শেষ গ্র্যান্ড মুফতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ইসলামী আইনশাস্ত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন এবং তাঁর অন্যতম কাজ ছিল মুনতাখাবাত-ই-নিজাম আল-ফাতাওয়া, যা দেওবন্দে অবস্থানকালে তিনি নিজের নির্বাচিত ফতোয়াগুলির একটি সংগ্রহ হিসেবে রচনা করেছিলেন।

জীবনের প্রথমার্ধ[সম্পাদনা]

নিজাম উদ্দিন আজমীর জন্ম ১৯১০ সালে আজমগড় জেলার উন্দ্রায়। তিনি প্রসিদ্ধ পণ্ডিতদের একটি বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ছোট বেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল। আজমীর পিতা মুহাম্মদ রফি একজন জমিদার ছিলেন এবং আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক উৎসাহ সত্ত্বেও তিনি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আজমগড়ের মুবারকপুরে ইহইয়াউল উলুম মাদ্রাসায় তিনি নিজের পড়াশোনা শুরু করেছিলেন এবং সেখানে তিনি শাহ ওয়াসিউল্লাহসহ অনেক বিখ্যাত শিক্ষকের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর নিজাম উদ্দিন বিহার শরীফের মাদ্রাসায়ে আজিজিয়া এবং তারপর দিল্লির মাদ্রাসায়ে আলিয়া ফতেহপুরীতে পড়াশোনা চালিয়ে যান। অবশেষে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে যোগদান করেন, যেখানে তিনি ১৯৩৩ সালে দাওরা-ই-হাদীস সমাপ্ত করেন। সেখানে তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শুকরুল্লাহ মুবারকপুরী, হুসাইন আহমেদ মাদানী, আসগর হুসাইন দেওবন্দী, ইজাজ আলী আমরোহী, মুহাম্মদ ইব্রাহিম বালিয়াবী ও মুহাম্মদ শফি দেওবন্দী[১][২][৩][৪][৫]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষা সমাপ্ত করার পর নিজাম উদ্দিন আজমী বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি যতীনপুরের মাদ্রাসা জামিউল উলূম আজমগড়ে পাঁচ বছর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিন বছর গোরখপুরের মাদ্রাসায়ে জামিউল উলূম ধামালে শিক্ষকতা করেন। এর পরে তিনি নিজের আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক শাহ ওয়াসিউল্লাহর সুপারিশে দারুল উলূম মউ-য়ে যান এবং সেখানে দীর্ঘ পঁচিশ বছর শিক্ষকতা ও ফতোয়ার (আইনি মতামত) কাজ করেন।[৬][৭]

১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে নিজাম উদ্দিন দারুল উলূম দেওবন্দে একজন মুফতি ( ফতোয়া জারি করার যোগ্য একজন পণ্ডিত ) হিসাবে যোগ দেন এবং ২০০০ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখান দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিয়াস (সাদৃশ্য যুক্তি) এবং ইজতিহাদের (স্বাধীন আইনী যুক্তি) মাধ্যমে সমসাময়িক সমস্যাগুলি সমাধান করেন এবং ইসলামী নীতি প্রয়োগে দক্ষতার জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন। তার ছাত্রের মধ্যে আব্দুল হক আজমি, মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমি, নিজামুদ্দিন আসির আদ্রাভি ও মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি উল্লেখযোগ্য ছিলেন।

অবদানসমূহ[সম্পাদনা]

সমসাময়িক বিভিন্ন ইসলামি বিষয়াবলীতে তিনি প্রায় ৭৫,০০০ প্রশ্নের উত্তর লিখে ১২৫টি বিশাল রেজিস্টার খাতা সংরক্ষিত করেন।[৮] এটি একটি ভিন্ন রকমের সম্পাদনা ছিল, যা এসব বিষয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফতোয়া সংকলনের জন্য নিবেদিত কাজ ছিল। তাঁর সবচে' উল্লেখযোগ্য কাজ হল মুনতাখাবাত-ই-নিজাম আল-ফাতাওয়া সংকলন, যা দারুল উলূম দেওবন্দে অবস্থানকালে তিনি লিখেছিলেন এমন ফতোয়াগুলির একটি নির্বাচিত ফতোয়া-সম্ভার এবং এটির প্রকাশনা তদারকি করেছেন মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমী। দিল্লির ইসলামিক ফিকহ একাডেমি কর্তৃক তার নতুন দুইটি ফতোয়া খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরে 'ইসলামিক ফিকহ একাডেমি প্রকাশনা' তিনটি খণ্ডে একটি বর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করেন। তিনি আব্দুল হক দেহলভির ফাতহুল-রাহমান ফি ইসবাত মাজহাবুল নু'মান বইটি সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। এছাড়াও আজমী হাদিস, ফিকাহ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর বেশ কিছু রচনা লিখেছেন, যার মধ্যে আকসামুল আহাদিস, ওসূলুল হাদিস, আসান ইলমুস-সরফ, আসান ইলমুন-নাহু, সিরাজুল ওয়ারিসিন শারহে সিরাজী, মাজায়া ইমাম আজম প্রমুখ।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ghāzi Qāsmi, Aftāb; Haseeb Qāsmi, Abdul (February 2011). Fuzala-e-Deoband Ki Fiqhi Khidmat [Services of the Graduates of Deoband in Islamic Jurisprudence] (in Urdu). Deoband: Kutub Khana Naimia. p. 305. Archived from the original on 18 February 2023. Retrieved 22 February 2023. 
  2. "Mufti Nizamuddin Ajmi" (পিডিএফ) 
  3. Admin (২০১৮-০৯-১৪)। "Darul Uloom aur Deoband ki Tareekhi Shakhsiyaat - دارالعلوم اور دیوبند کی تاریخی شخصیات"Best Urdu Books (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  4. Ullah, Mohammed (2018). The Contribution of Deoband School to Hanafi Fiqh A Study of Its Response to Modern Issues and Challenges (PhD thesis). India: Centre for Federal Studies, Jamia Hamdard. p. 127. hdl:10603/326073. 
  5. Barni, Khalilur Rahman Qasmi (2016). The caravan of knowledge and excellence (in Urdu). Bangalore: Idara-e Ilmi Markaj. p. 115. 
  6. Rizwi, Syed Mehboob (1981). "Maulana Mufti Nizam al-Din". Tarikh Darul Uloom Deoband [History of the Dar al-Ulum Deoband]. Vol. 2. Translated by Murtaz Husain F Quraishi. Deoband: Darul Uloom Deoband. p. 195 
  7. Qasmi, Mohammad Islam (2019). Darakhshan Sitaren (in Urdu). India: Maqtaba Al-Noor. p. 150. 
  8. Qasmi, Muhammadullah (2020). Darululoom Deoband ki Jame o Mukhtasar Tareekh (in Urdu). India: Sheikh Ul Hind Academy. p. 655. Archived from the original on 29 March 2023. Retrieved 31 May 2023.