দ্বিতীয় মুবারাক আলী খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় সাইয়্যেদ মুবারক আলী খান
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাবসুবাহদার
হুমায়ুন জাহ (সুপ্রসন্ন মর্যাদাবান)
সুজাউল মুলক (দেশের নায়ক)
ইহতিশাম উদ-দৌলা (যুদ্ধজয়ী)
ফিরোজ-এ-জং (বীর যোদ্ধা)
দ্বিতীয় সাইয়্যেদ মোবারক আলী খান
১৫ শতাব্দী
রাজত্ব৩১ অক্টোবর ১৮২৪ - ৩ অক্টোবর ১৮৩৮
রাজ্যাভিষেক২৩ ডিসেম্বর ১৮২৪
পূর্বসূরিআহমাদ আলী খান
উত্তরসূরিমনসুর আলী খান
জন্ম২৯ সেপ্টেম্বর ১৮১০
মৃত্যু৩ অক্টোবর ১৮৩৮ (২৮ বছর বয়সে)
সমাধি
বংশধর
  • মনসুর আলী খান
  • ওয়াহিদ হুসসাইব খান বাহাদুর
  • সুলতানা ঘটেরিয়া বেগম এবং
  • একজন কন্যা শিশু যে ১৮৩৭ সালে মৃত্যুবরণ করে।
পিতাআহমদ আলি খান
মাতানাজিব-উন-নিসা বেগম
ধর্মশিয়া ইসলাম

দ্বিতীয় সৈয়দ মুবারক আলী খান (১৮১০ - ১৮৩৮), যিনি হুমায়ূন জাহ নামেই বেশি পরিচিত, ১৮১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আহমদ আলী খান এবং মাতার নাম নাজিব আন-নিসা বেগম। তিনি ১৮২৪ সাল থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত বাংলার নবাব ছিলেন। তাঁর সিংহাসনে স্থলাভিষিক্ত হন মনসুর আলী খান। তিনি মুর্শিদাবাদে হাজার দুয়ারী প্রাসাদ এবং মোবারক মঞ্জিল নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৩৮ সালের ৩ অক্টোবর নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহ মারা যান। [১][২]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

মুবারক আলী খান ছিলেন আহমদ আলী খানের একমাত্র পুত্র। তিনি ১৮২৪ সালে তিনি বেশ কয়েকটি উপাধি লাভ করেন। এগুলি হল-

  • হুমায়ুন জাহ (সুপ্রসন্ন মর্যাদাবান)
  • সুজাউল মুলক (দেশের নায়ক)
  • ইহতিশাম উদ-দৌলা (যুদ্ধজয়ী) এবং
  • ফিরোজ-এ-জং (বীর যোদ্ধা)

তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিতার স্থলাভিষিক্ত হন এবং যোগ্য শাসক হিসাবে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন।[১]

রাজ্য শাসন[সম্পাদনা]

১৮২৬ সালে তিনি দেওয়ান পদ পরিবর্তনের জন্য পাটনায় যান। সেখানে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে সুলতান তখন রাজা গঙ্গারধরকে বরখাস্ত করে তাকে নিজামত দেওয়ান প্রদান করেন।

মুবারক মঞ্জিলের কালো সিংহাসনের একটি অতি পুরাতন ছবি

ফিন্দাল বাগে (বর্তমানে মোবারক মঞ্জিল নামে পরিচিত) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ন্যায়বিচার আদালত স্থাপন করা হয়েছিল। তবে আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসন কলকাতায় সরিয়ে নেওয়া হলে আদালতটির গুরুত্ব কমতে থাকে। সদর দেওয়ানি আদালত (আদালত বা দরবার) কলকাতায় সরিয়ে নেওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত এখানে নিয়মিত বিচারসভা বসত। কিন্তু কলকাতায় শাসন কাজ পুরোপুরি চালু হলে ফিন্দাল বাগ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। আবার পরবর্তীকালে লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে সুপ্রিম কোর্টকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেছিলেন। এই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতটি ব্রিটিশ শাসনের বহুকাল আগ থেকেই মোবারক মঞ্জিলে অবস্থিত ছিল। ফলে এককালের জৌলুশ হারিয়ে ফেলে ফিন্দাল বাগ। মুবারক আলী খানের ওফাতের পর এই বিশাল সহায়-সম্পত্তি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। এই সুবিশাল জায়গায় তিনটি দালান-কোঠা ছিল যা বর্তমানে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

রাতে আলোকিত হাজার দুয়ারী রাজপ্রাসাদ

১৮৩০ সালের মে মাসে নবাব হুমায়ুন রাজা কিসেন চাঁদ বাহাদুর এবং কুমার চাঁদের কাছ থেকে এই সম্পত্তি কিনে নেন। নাসিপুরের এই বিস্তর জায়গা জমি মাত্র তিনি ৩৫ হাজার (রূপি) দিয়ে কিনে নেন। তিনি সম্পত্তিটিকে একটি নান্দনিক বাগানে রূপান্তরিত করেছিলেন এবং এখানে মতি মহল (যা রেড বাংলো নামেও পরিচিত) তৈরি করেছিলেন। মুবারক খানের স্মরণে তিনি দালানের নাম মোবারক মঞ্জিল রেখেছিলেন। [১][৩][৪]

মতি মহলের সামনের আঙিনায় বাংলার নবাব নাজিমের ব্যবহৃত একটি কালো রাজকীয় সিংহাসন ছিল। এটি মোঘল সুলতান শাহ সুজার সময় থেকে নবাব নাজিম হুমায়ূন জাহ এর রাজ্যকাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রাজকীয় সিংহাসনটি ছিল গোলাকার এবং কালো পাথর দিয়ে তৈরি। সিংহাসনটির ফুট ব্যাস ৬ ফুট বা ৭২ ইঞ্চি এবং এটি ১.৫ ফুট বা ১৮ ইঞ্চি উচু। সিংহাসনটি ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিহারের মঙ্গয়েরের বিখ্যাত কারিগর বোখারার খাজা নজর তৈরি করেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভ মীর জাফরকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এর পরে মনসুরগঞ্জে এই সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। নবাব নাজিম উদ্দিন আলী খান এর দেওয়ানি লাভের পর মতিঝিলে তার সিংহাসন অধিগ্রহণ অনুষ্ঠানে লর্ড ক্লাইভ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দেন। সে সময় তিনিও এই সিংসাহনে বসেছিলেন। বর্তমানে সিংহাসনটি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। [১]

মৃত্যু এবং উত্তরসূরি[সম্পাদনা]

জাফরগঞ্জ গোরস্থানে হুমায়ুন জাহের সমাধি

১৮৩৮ সালের ৩ অক্টোবরে নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহ মারা যান এবং তাঁর পুত্র মনসুর আলী খান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। [১][৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Information on Nawab Nazim Humayun Jah"। Murshidabad.net। ১০ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২ 
  2. Indian records (১৮৭০)। Indian records, with a commercial view of the relations between the British government and the nawabs nazim of Bengal, Bihar and Odisha। G. Bubb। 
  3. Humayun Mirza (১ আগস্ট ২০০২)। From Plassey to Pakistan। University Press of America। পৃষ্ঠা 68। আইএসবিএন 9780761823490। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২ 
  4. Sir William Wilson Hunter (১৯০৮)। Imperial Gazetteer of India ...। Clarendon Press। পৃষ্ঠা 57। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২ 
  5. John Henry Tull Walsh (১৯০২)। A history of Murshidabad District (Bengal)। Jarrold। পৃষ্ঠা 261। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]