বিষয়বস্তুতে চলুন

তিলা মুনিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তিলা মুনিয়া
Lonchura punctulata
পূর্ণবয়স্ক L. p. punctulata, মহারাষ্ট্র, ভারত
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: প্যাসারিফর্মিস
পরিবার: Estrildidae
গণ: Lonchura
প্রজাতি: L. punctulata
দ্বিপদী নাম
Lonchura punctulata
(লিনিয়াস, ১৭৫৮)
Map showing the breeding areas in Asia and Oceania
এশিয়া আর ওশেনিয়ায় তিলা মুনিয়ার বিস্তৃতি
প্রতিশব্দ

Loxia punctulata

তিলা মুনিয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Lonchura punctulata) বা তিলে মুনিয়া Estrildidae (ইস্ট্রিল্ডিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Lonchura (লঙ্কুরা) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির ছোট তৃণচর পাখি।[][][] তিলা মুনিয়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তিলা সুঁইলেজ (গ্রিক; lonkhe = সূঁচালো, ura = লেজ; লাতিন: punctulatus = তিলাযুক্ত)।[] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। এছাড়া কয়েকটি দেশে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৭১ লক্ষ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থির রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[] Lonchura গণের অন্যসব প্রজাতির মত এদের উৎপত্তিও সম্ভবত এশিয়ায়[] বিশ্বজুড়ে শখের পোষা পাখি হিসেবে এরা বেশ জনপ্রিয়।[]

শ্রেণীবিন্যাস

[সম্পাদনা]

ক্যারোলাস লিনিয়াস ১৭৫৮ সালে প্রকাশিত সিস্টেমা নেচারি (Systema Naturae) গ্রন্থের দশম খণ্ডে সর্বপ্রথম যে কয়টি পাখির দ্বিপদ নামকরণ করেছিলেন, তিলা মুনিয়া তার একটি। লিনিয়াস পাখিটির নাম দিয়েছিলেন Loxia punctulata। পরবর্তীতে ১৮২৩ সালে উইলিয়াম হেনরি সাইক্স পাখিটিকে Lonchura গণে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং নতুন নাম দেন Lonchura punctulata[]

উপপ্রজাতি

[সম্পাদনা]

এখন পর্যন্ত তিলা মুনিয়ার মোট ১১টি স্বীকৃত উপপ্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।[][১০] উপপ্রজাতিগুলো হল:

বিবরণ

[সম্পাদনা]
একদল মুনিয়া

তিলা মুনিয়া বাদামি রঙের ছোট ছটফটে পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১.৫ সেমি[১১], ডানা ৫.৬ সেমি, ঠোঁট ১.৩ সেমি, পা ১.৫ সেমি, লেজ ৩.৮ সেমি ও ওজন ১৩.৬ গ্রাম।[] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পুরো পিঠ জলপাই-বাদামি। কোমরে সাদা ডোরা থাকে। লেজ-উপরি ঢাকনি লালচে-কমলা। লেজ খাটো ও সূচালো এবং লালচে-কমলা রঙের। থুতনি কালচে। বুকের উপরের অংশ তামাটে এবং দেহতল সাদা। বগলে ও পেটে কালো আঁশের মত তিলা থাকে। এর ত্রিকোণাকার ঠোঁট স্লেট কালো। চোখ কমলা-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা স্লেট রঙের। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম; তবে পুরুষ পাখির দেহতল ও থুতনি স্ত্রী পাখির তুলনায় গাঢ়।[১২] অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি; দেহতল লালচে-পীত ও হালকা পীত বর্ণ। ঠোঁট শিঙ বাদামি ও চোখ বাদামি।[] অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের অনেকসময় অপ্রাপ্তবয়স্ক কালোমাথা মুনিয়া বলে মনে হয়।[১২]

স্বভাব ও প্রজনন

[সম্পাদনা]

তিলা মুনিয়া ফসলের খেত, মাঠ, নলখাগড়ার বন, বাগান ও ঝোপে ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করে। মাঝে মাঝে ১০০ বা তারও বেশি পাখির ঝাঁক দেখা যায়। মাটি, ঘাস বা ধানের মধ্যে এরা খাবার খোঁজে। এদের ঠোঁট খাটো ও বেশ শক্ত। ধান বা অন্যান্য শস্যদানা মুখে রেখেই তা থেকে শক্ত খোসা ছাড়িয়ে নিতে পারে। এছাড়া ঘাসবীচি, রসালো ফল ও কীটপতঙ্গও খায়।[][১১] অন্যান্য মুনিয়া ও বাবুইয়ের সাথে দল বেঁধে এরা ঝোপ, আখখেত বা ঘাসবনে রাত কাটায়। সচরাচর শ্রুতিকটু স্বরে ডাকে: কিটি-কিটি-কিটি....., কিটি-ইইইইই...., কি-কি-কি-কি-কি-টিইই...., চিক্, ট্র্যাট-ট্র্যাট। মে-সেপ্টেম্বর প্রজননকাল। খেজুরগাছের পাতার আড়ালে, লতার ঝোপে, বাবলা, ঝাউ, কেয়া, কান্তা, দেবদারু বা অন্যান্য ঝোপাকৃতির গাছে ২ থেকে ৫ মিটার উঁচুতে গোলাকৃতির বাসা বোনে। ঘাস-লতা-ধানের পাতা, পালক ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর, নরম ও তুলট বাসার ভিত্তি রচনা করে। কাশফুল দিয়ে চারপাশটা মুড়ে নেয়। বাসার ভেতরে থাকে কাশফুলের গদি। বাসায় ঢোকার জন্য গোপন সরু পথ বানায়, যেন শত্রুরা না দেখে। এছাড়া কার্নিশের নিচে বা খালি কার্টনেও বাসা করে। স্ত্রী মুনিয়া চার থেকে দশটি ধবধবে সাদা ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ১.৬ × ১.১ সেমি। স্বামী-স্ত্রী মিলে ১৩ থেকে ১৬ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।[][১১]

Lonchura punctulata

পোষা পাখি মুনিয়া

[সম্পাদনা]

শহুরে মানুষের কাছে পোষা পাখি হিসেবে তিলা মুনিয়া বেশ জনপ্রিয়। খাঁচাবন্দী মুনিয়া রাস্তাঘাট ও পোষা পশুপাখির দোকানে বিক্রি হয়। ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিক্রেতারা এদের গায়ে নীল, হলুদ, সবুজ বা উজ্জ্বল রং লাগিয়ে দেয়, যা গোসল করালেই উঠে যায়। বাংলাদেশে গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এদের জাল দিয়ে ধরে টঙ্গী, ঢাকার কাঁটাবন ও অন্যান্য স্থানে প্রচুর সংখ্যায় বিক্রি করা হয়। সেজন্য বর্তমানে বাংলাদেশে এদের অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Lonchura punctulata"। Home Page The IUCN Red List of Threatened Species। ২০১২-১১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১০  line feed character in |প্রকাশক= at position 10 (সাহায্য)
  2. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ২৬৪। আইএসবিএন 9840746901 
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৫৪৭–৮। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  4. শরীফ খান (২০১২)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ১১২–৩। আইএসবিএন 9844833310 
  5. "Scaly-breasted Lonchura punctulata"। BirdLife International। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১২ 
  6. Arnaiz-Villena, A (২০০৯)। "Estrildinae Finches (Aves, Passeriformes) from Africa, South Asia and Australia: a Molecular Phylogeographic Study" (পিডিএফ)The Open Ornithology Journal2: 29–36। ডিওআই:10.2174/1874453200902010029। ২১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৩  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  7. Burton, M., R. Burton (২০০২)। International Wildlife Encyclopedia। New York, NY: Marshal Cavendish। 
  8. Linnaeus, Carl (১৭৫৮)। Systema Naturae per Regna Tria Naturae, Secundum Classes, Ordines, Genera, Species, cum Characteribus, Differentiis, Synonymis, Locis. Tomus I. Editio decima, reformata (Latin ভাষায়)। Holmiae (Stockholm, Sweden): Laurentius Salvius। পৃষ্ঠা 145। 
  9. Collar, N; Ian Newton; Peter Clement & Vladimir Arkhipov (২০১০)। del Hoyo, Josep, Andrew Elliott, David Christie, সম্পাদকগণ। Handbook of the birds of the world. Volume 15. Finches। Barcelona: Lynx Edicions। আইএসবিএন 978-84-96553-68-2 
  10. "Scaly-breasted Munia (Lonchura punctulata)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৩ 
  11. আ ন ম আমিনুর রহমান (১৪-১০-২০১১)। "গানের পাখি তিলা মুনিয়া"। ঢাকা। দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  12. Rasmussen PC and JC Anderton (২০০৫)। Birds of South Asia. The Ripley Guide. Volume 2। Smithsonian Institution and Lynx Edicions। পৃষ্ঠা 673। আইএসবিএন 84-87334-66-0 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]