গোরেশ্বর হত্যাকাণ্ড
গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | গোরেশ্বর, কামরূপ জেলা (বর্তমানে বাক্সা জেলা), আসাম, ভারত |
তারিখ | ১৮ই আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ (৩রা জুলাই ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ) (UTC+5:30) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
হামলার ধরন | গণহত্যা, জাতিবিদ্বেষ |
ব্যবহৃত অস্ত্র | Guns, spears, swords, scythes, bows and arrows |
নিহত | অন্ততঃ ৯ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা |
আহত | ১০০০ জনের অধিক ৫০,০০০ জন পশ্চিমবঙ্গে পলায়ন করেন |
হামলাকারী দল | উত্তেজিত অসমীয়া জনগোষ্ঠী |
ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের কামরূপ জেলার গোরেশ্বরে (বর্তমানে বাক্সা জেলা) বাঙালি হিন্দুদের ওপর যে জাতিবিদ্বেষী গণহত্যা হয় তা গোরেশ্বর গণহত্যা নামে কুখ্যাত৷[১]
পটভূমি
[সম্পাদনা]ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সময়কালীন ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আসাম রাজ্যে বিভিন্নভাবে শরণার্থী বাঙালি হিন্দুরা জাতিবিদ্বেষের শিকার হন৷ দেশভাগ চলাকালীন বিভিন্ন গণহত্যার পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক উল্লেখ্য আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি হলো আসামে বরাকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন৷ আসাম সরকার অসমীয়া ভাষাকে আসাম রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন, ফলস্বরূপ বহুবছর বসবাসকারী ভূমিপুত্র বাঙালি জাতির লোক এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে ও আন্দোলনে নামে৷ বাঙালি জাতি অধ্যুষিত দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকা অঞ্চল এই আন্দোলনের মুলকেন্দ্র হয়ে উঠলে অপরদিকে অসমীয়া জাতি অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চলে বাঙালিদের ওপর চরম দুর্ভোগ নেমে আসে৷
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা
[সম্পাদনা]পরিকল্পনা
[সম্পাদনা]বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী জানা যায় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে শিবসাগরে অসমীয়া শিক্ষক সম্প্রদায়ের দ্বারা বাঙালিদের ওপর আক্রমণ ও বিতাড়নের জন্য একটি গোপন বৈঠক করা হয়৷ বৈঠক সফল হওয়ার পরদিন থেকেই ছাত্র সংগঠনের সহায়তাতে যোরহাট, ডিব্রুগড় অঞ্চলে জমায়েত হয়৷[২]
হত্যাযজ্ঞ
[সম্পাদনা]১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই জুলাই শিবসাগরে বাঙালিদের দোকান ও বাসভবন লুন্ঠন শুরু হয়৷ নিম্ন আসামের কামরূপ বিভাগের নওগাঁ জেলা ও পরে গোয়ালপাড়া অঞ্চলে গণহত্যা শুরু হয়৷ গোরেশ্বরের ২৫ টি গ্রামে এই লুন্ঠন ও হত্যালীলা সর্বাধিক হয়৷[৩] আইনজ্ঞ গোপালজি মহোত্রার সরকারী নথি অনুযায়ী সমগ্র অঞ্চলে চিরুনি তল্লাশি করে ৪০১৯ টি কুটির, ৫৮ টি বসতভীটা নষ্ট করা হয়৷[২][৪][৫] পুলাশ কমিশনারের মতে অন্ততঃ ৯ জনের মৃৃত্যু হয় ও বহুজন আহত হম৷ মোটামুটি ১০০০ জন বাঙালি রাতারাতি ঐ অঞ্চল ত্যাগ করেন৷
পরবর্তী ঘটনা
[সম্পাদনা]আসাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলাতে আগতদের আনুমানিক জনবিন্যাস[৬] | |||||||
সময়ের ব্যাপ্তি | আনুমানিক জনসংখ্যা | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
১৬ই জুলাই ১৯৬০ | ৯,৩৬৫ | ||||||
১লা আগস্ট ১৯৬০ | ১৮,৩৪০ | ||||||
২১শে আগস্ট ১৯৬০ | ২৮,৩৮৩ | ||||||
২৫শে আগস্ট ১৯৬০ | আনু. ৫০,০০০ |
সর্বাধিক ঘৃৃণ্য হিংস্রতা জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে দেখা যায়, এই সময় আশ্রয়ের খোঁজে প্রায় ৫০,০০০ বাঙালি আসাম-বাংলা সীমানা অতিক্রম করেন৷ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় মহাশয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ক পত্র লেখেন ও দ্রুত নিষ্পত্তি চান৷ পত্রানুসারে ৫ থেকে ১১ই জুলাইয়ের মধ্যে অন্ততঃ ৪০০০ বাঙালি হিন্দু ভূমিচ্যুত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসেন৷ ৩১শে জুলাইয়ের পর থেকে এর পরিমান বাড়তে থাকে ও তা আগস্টের শেষে ৪৫-৫০,০০০ এ পৌঁছে যায়৷[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- মান্দাই গণহত্যাকাণ্ড
- বাগবের গণহত্যা
- খয়রাবাড়ি গণহত্যাকাণ্ড
- শিলাপাথর গণহত্যাকাণ্ড
- উত্তর কামরূপ গণহত্যাকাণ্ড
- হোজাই গণহত্যাকাণ্ড
- নিচলামারি গণহত্যাকাণ্ড
- তিনসুকিয়া গণহত্যা
- কমলনগর হত্যাকাণ্ড
- বোরোল্যান্ড গণহত্যাকাণ্ড ২০১৪
- কোকড়াঝাড় গণহত্যাকাণ্ড ২০১২
- নেলি হত্যাযজ্ঞ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Sharma, Suresh K. (২০০৬)। Documents on North-East India: Assam (1958 to modern times) (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। আইএসবিএন 9788183240918।
- ↑ ক খ গ Banerjee, Paula; Chaudhury, Sabyasachi Basu Ray; Das, Samir Kumar (২০০৫-০১-০৭)। Internal Displacement in South Asia: The Relevance of the UN's Guiding Principles (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9788132101987।
- ↑ Sharma, Suresh Kant; Sharma, Usha (২০১৫)। Discovery of North-East India (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। আইএসবিএন 9788183240390।
- ↑ Bhaumik, Subir (১০ ডিসেম্বর ২০০৯)। Troubled Periphery: The Crisis of India's North East। SAGE Publishing India। আইএসবিএন 9789352801817। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ Dutta, Uddipan (৩১ ডিসেম্বর ২০১২)। "Chapter 4: Communal Riots on Language Issues"। The Role of Language Management and Language Conflict in the Transition of Post Colonial Assamese Identity (পিডিএফ) (PhD)। Gauhati University। পৃষ্ঠা 98-99। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ Roy, Jagabandhu (জানুয়ারি ২০১৭)। "Demographic Change in North Bengal in 19th and 20th century" (পিডিএফ)। North Asian International Research Journal of Social Science & Humanities। Pulwama: North Asian International Research Journal Consortium। 3 (1): 11। আইএসএসএন 2454-9827। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৭।