গোরেশ্বর হত্যাকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড থেকে পুনর্নির্দেশিত)
গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড
গোরেশ্বর হত্যাকাণ্ড আসাম-এ অবস্থিত
গোরেশ্বর হত্যাকাণ্ড
স্থানগোরেশ্বর, কামরূপ জেলা (বর্তমানে বাক্সা জেলা), আসাম, ভারত
তারিখ১৮ই আষাঢ় ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ (৩রা জুলাই ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ) (UTC+5:30)
লক্ষ্যবাঙালি হিন্দু
হামলার ধরনগণহত্যা, জাতিবিদ্বেষ
ব্যবহৃত অস্ত্রGuns, spears, swords, scythes, bows and arrows
নিহতঅন্ততঃ ৯ জন পুরুষ ও ১ জন মহিলা
আহত১০০০ জনের অধিক
৫০,০০০ জন পশ্চিমবঙ্গে পলায়ন করেন
হামলাকারী দলউত্তেজিত অসমীয়া জনগোষ্ঠী

ভারতের অঙ্গরাজ্য আসামের কামরূপ জেলার গোরেশ্বরে (বর্তমানে বাক্সা জেলা) বাঙালি হিন্দুদের ওপর যে জাতিবিদ্বেষী গণহত্যা হয় তা গোরেশ্বর গণহত্যা নামে কুখ্যাত৷[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সময়কালীন ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আসাম রাজ্যে বিভিন্নভাবে শরণার্থী বাঙালি হিন্দুরা জাতিবিদ্বেষের শিকার হন৷ দেশভাগ চলাকালীন বিভিন্ন গণহত্যার পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক উল্লেখ্য আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি হলো আসামে বরাকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন৷ আসাম সরকার অসমীয়া ভাষাকে আসাম রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন, ফলস্বরূপ বহুবছর বসবাসকারী ভূমিপুত্র বাঙালি জাতির লোক এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে ও আন্দোলনে নামে৷ বাঙালি জাতি অধ্যুষিত দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকা অঞ্চল এই আন্দোলনের মুলকেন্দ্র হয়ে উঠলে অপরদিকে অসমীয়া জাতি অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা অঞ্চলে বাঙালিদের ওপর চরম দুর্ভোগ নেমে আসে৷

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা[সম্পাদনা]

পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী জানা যায় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে শিবসাগরে অসমীয়া শিক্ষক সম্প্রদায়ের দ্বারা বাঙালিদের ওপর আক্রমণ ও বিতাড়নের জন্য একটি গোপন বৈঠক করা হয়৷ বৈঠক সফল হওয়ার পরদিন থেকেই ছাত্র সংগঠনের সহায়তাতে যোরহাট, ডিব্রুগড় অঞ্চলে জমায়েত হয়৷[২]

হত্যাযজ্ঞ[সম্পাদনা]

১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই জুলাই শিবসাগরে বাঙালিদের দোকান ও বাসভবন লুন্ঠন শুরু হয়৷ নিম্ন আসামের কামরূপ বিভাগের নওগাঁ জেলা ও পরে গোয়ালপাড়া অঞ্চলে গণহত্যা শুরু হয়৷ গোরেশ্বরের ২৫ টি গ্রামে এই লুন্ঠন ও হত্যালীলা সর্বাধিক হয়৷[৩] আইনজ্ঞ গোপালজি মহোত্রার সরকারী নথি অনুযায়ী সমগ্র অঞ্চলে চিরুনি তল্লাশি করে ৪০১৯ টি কুটির, ৫৮ টি বসতভীটা নষ্ট করা হয়৷[২][৪][৫] পুলাশ কমিশনারের মতে অন্ততঃ ৯ জনের মৃৃত্যু হয় ও বহুজন আহত হম৷ মোটামুটি ১০০০ জন বাঙালি রাতারাতি ঐ অঞ্চল ত্যাগ করেন৷

পরবর্তী ঘটনা[সম্পাদনা]

আসাম থেকে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলাতে আগতদের আনুমানিক জনবিন্যাস[৬]
সময়ের ব্যাপ্তি আনুমানিক জনসংখ্যা
১৬ই জুলাই ১৯৬০ ৯,৩৬৫
১লা আগস্ট ১৯৬০ ১৮,৩৪০
২১শে আগস্ট ১৯৬০ ২৮,৩৮৩
২৫শে আগস্ট ১৯৬০ আনু. ৫০,০০০

সর্বাধিক ঘৃৃণ্য হিংস্রতা জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে দেখা যায়, এই সময় আশ্রয়ের খোঁজে প্রায় ৫০,০০০ বাঙালি আসাম-বাংলা সীমানা অতিক্রম করেন৷ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় মহাশয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ক পত্র লেখেন ও দ্রুত নিষ্পত্তি চান৷ পত্রানুসারে ৫ থেকে ১১ই জুলাইয়ের মধ্যে অন্ততঃ ৪০০০ বাঙালি হিন্দু ভূমিচ্যুত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসেন৷ ৩১শে জুলাইয়ের পর থেকে এর পরিমান বাড়তে থাকে ও তা আগস্টের শেষে ৪৫-৫০,০০০ এ পৌঁছে যায়৷[২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sharma, Suresh K. (২০০৬)। Documents on North-East India: Assam (1958 to modern times) (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। আইএসবিএন 9788183240918 
  2. Banerjee, Paula; Chaudhury, Sabyasachi Basu Ray; Das, Samir Kumar (২০০৫-০১-০৭)। Internal Displacement in South Asia: The Relevance of the UN's Guiding Principles (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9788132101987 
  3. Sharma, Suresh Kant; Sharma, Usha (২০১৫)। Discovery of North-East India (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। আইএসবিএন 9788183240390 
  4. Bhaumik, Subir (১০ ডিসেম্বর ২০০৯)। Troubled Periphery: The Crisis of India's North East। SAGE Publishing India। আইএসবিএন 9789352801817। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. Dutta, Uddipan (৩১ ডিসেম্বর ২০১২)। "Chapter 4: Communal Riots on Language Issues"। The Role of Language Management and Language Conflict in the Transition of Post Colonial Assamese Identity (পিডিএফ) (PhD)। Gauhati University। পৃষ্ঠা 98-99। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৮ 
  6. Roy, Jagabandhu (জানুয়ারি ২০১৭)। "Demographic Change in North Bengal in 19th and 20th century" (পিডিএফ)North Asian International Research Journal of Social Science & Humanities। Pulwama: North Asian International Research Journal Consortium। 3 (1): 11। আইএসএসএন 2454-9827। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৭