উত্তর কামরূপ সহিংসতা
উত্তর কামরূপ গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | বরিকাডাঙা, নলবাড়ি জেলা, আসাম, ভারত |
তারিখ | ১৮ই পৌষ ১৩৮৬ বঙ্গাব্দ (৩রা জানুয়ারী ১৯৮০ বঙ্গাব্দ) (UTC+5:30) |
লক্ষ্য | বাঙালি |
হামলার ধরন | গণহত্যা, জাতিবিদ্বেষ |
ব্যবহৃত অস্ত্র | বন্দুক, বর্শা, তলোয়ার, কাঁটা, ধনুক ও তীর |
হামলাকারী দল | অসমীয়া |
উত্তর কামরূপ সহিংসতা (অসমীয়া: উত্তৰ কামৰূপৰ গণহত্যা) আদতে আসামে বাঙালি বিতাড়নের বঙাল খেদা-এরই অংশ৷[১][২] ৩রা জানুয়ারী ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে নলবাড়ি জেলার সদর নলবাড়ি থেকে ১০ মাইল উত্তরে বরিকাডাঙা গ্রামে (বর্তমানে বাক্সা জেলা) প্রথম হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে৷ এই হিংস্রতার মুল উদ্দেশ্য ছিলো আসামে ভাষাগত ও ভাষাভিত্তিক ধর্মগত সংখ্যালঘু[১] বাঙালিদের ওপর আক্রমণ[১][১][২] ও বিতাড়ন৷ এই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতিতে যখন সংঘর্ষের ফলে বরিকাডাঙার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বাঙালিবিদ্বেষী সদৌ অসম ছাত্র সন্থার মূলচক্রী সদস্য দিলীপ হুজুরীর মৃত্যু হয় তখন পরিস্থিতি আগুনে ঘি ঢালে৷ এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে আশেপাশের গ্রামগুলিতে ও উত্তর কামরূপের বিভিন্ন জায়গাতে হেনস্থা ও হত্যাকাণ্ডের খবর আসতে থাকে৷[৩]
বাঙালিবিদ্বেষী আন্দোলন
[সম্পাদনা]ভারত বিভাগ তথা বাংলা ভাগের সময় ভারতে বিভিন্ন জায়গাতে জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ ও গণহত্যা চরম পর্যায়ে পৌছায়৷ উত্তর কামরূপ গণহত্যাকাণ্ড তার মধ্যেই উল্লেখ্য বঙাল খেদা আন্দোলনের অংশ বলা যেতে পারে৷ আসামের বিশেষ করে বরাক উপত্যকা অঞ্চলে অসমীয়াদের দ্বারা বাঙালি হিন্দুদেরকে চরম ভাষাভিত্তিক ও সংস্কৃতিগত হিংস্রতার শিকার হতে হয়৷[৩]
বিক্ষিপ্তভাবে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে কামরূপ জেলার উত্তরাংশে (বর্তমানে মুলতঃ বাক্সা জেলা ও নলবাড়ি জেলাতে অবস্থিত) একাধিকবার ভাষাগত ও ধর্মগত সংখ্যালঘুদের গণহত্যা করা হয় যার সঠিক গণনা করা সম্ভব হয়নি৷[৪] একই ভাবে শিলাপাথর ও খয়রাবাড়ি গণহত্যাকাণ্ড ঘটে যা ছিলো সম্পুর্ণভাবে একটি বাঙালিবিদ্বেষী আন্দোলন৷
পটভূমি
[সম্পাদনা]আসাম প্রদেশে প্রায়শই বাংলাভাষীরা বহিরাগত বলে উপেক্ষিত হন ও বাংলাবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠেন৷[৫] আন্দোলনের শুরুতে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত মুসলমান ছাত্র সম্প্রদায় ও এই আন্দোলনে যোগদান করেছিলো৷[৬] তারা নিজেদেরকে অসমীয়া বলে দাবী করেন ও অসমীয়াদের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য নিজেদের নও অসমীয়া বলা শুরু করে, এর অর্থ নতুন অসমীয়া৷ ভারত বিভাজনের পর থেকে তারা নিজেদের বাঙালি অস্তিত্ব ভুলে অসমীয়া পরিচিতি নিতে থাকে৷ এভাবে নও অসমীয়াদের প্রভাবে আসামে ঐ অঞ্চলে অসমীয়া সংখ্যা নথি অনুযায়ী বৃদ্ধি পায় ও তারা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি পরিচিতিযুক্তদের বিরূদ্ধে হিংস্রতা ছড়াতে থাকে৷[৭] বিদ্রুপ হলো, সেই নও অসমীয়াদের সাথে মুলভাষী অসমীয়ারা যখন বিরূপ আচরণ করা শুরু করে তখন তারা বাঙালীবিদ্বেষী আন্দোলনের বিরোধীতা শুরু করে ও অসমীয়াদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করে দেয়৷ [৬]
হিংস্রতা ও ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]একটি সূত্রে জানা যায়, আসাম ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে তিনদিন ব্যাপী বাংলা-বিরোধী আন্দোলনের তদারকি করতে আসে বরিকাডাঙার বাগানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে৷[৫][৭] অন্য সূত্রে, আসাম ছাত্র সংগঠন বরিকাডাঙাতে বাংলাবিরোধী আন্দোলনের জন্য অর্থসাহায্য তুলতে আসে৷[৭] বরিকাডাঙা গ্রামটি বাঙালী হিন্দু ও মুসলিম অধ্যুষিত, যার অধিকিংশ হিন্দুরাই ছিলেন শরণার্থী, ফলে স্বভাবতঃই তারা ছাত্র সংগঠনের ওপর ক্ষিপ্ত হয় ও সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে৷
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]- মান্দাই গণহত্যাকাণ্ড
- গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড
- খয়রাবাড়ি গণহত্যাকাণ্ড
- বাগবের গণহত্যা
- শিলাপাথর গণহত্যাকাণ্ড
- হোজাই গণহত্যাকাণ্ড
- নিচলামারি গণহত্যাকাণ্ড
- তিনসুকিয়া গণহত্যা
- কমলনগর হত্যাকাণ্ড
- বোরোল্যান্ড গণহত্যাকাণ্ড ২০১৪
- কোকড়াঝাড় গণহত্যাকাণ্ড ২০১২
- নেলি হত্যাযজ্ঞ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Desai, Akshayakumar Ramanlal (১৯৮৬)। Violation of Democratic Rights in India (ইংরেজি ভাষায়)। Popular Prakashan। আইএসবিএন 9780861321308।
- ↑ ক খ Dutta, Nandana (২০১২-০৯-১১)। Questions of Identity in Assam: Location, Migration, Hybridity (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9788132117001।
- ↑ ক খ Samaddar, Ranabir (২০০৪-০৭-০১)। Peace Studies: An Introduction To the Concept, Scope, and Themes (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9788132102878।
- ↑ Rammohun, E. M. (২০১১-১২-২৯)। Countering Insurgencies in India: An Insider's View (ইংরেজি ভাষায়)। Vij Books India Pvt Ltd। আইএসবিএন 9789381411667।
- ↑ ক খ Bakshi, Shiri Ram; Sharma, Sita Ram; Gajrani, S. (১৯৯৮)। Contemporary Political Leadership in India: Sharad Pawar, the Maratha legacy (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। আইএসবিএন 9788176480086।
- ↑ ক খ Kimura, Makiko (২০১৩-০৯-০৩)। The Nellie Massacre of 1983: Agency of Rioters (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publications India। আইএসবিএন 9788132116561।
- ↑ ক খ গ Mohanty, P. K. (২০০৬)। Encyclopaedia of Scheduled Tribes in India: In Five Volume (ইংরেজি ভাষায়)। Gyan Publishing House। আইএসবিএন 9788182050525।