খৈরাবাড়ী হত্যাকাণ্ড
খয়রাবাড়ি গণহত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | খয়রাবাড়ি, দরং জেলা, আসাম, ভারত |
তারিখ | ২৪শে মাঘ ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ (৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ) রাত (UTC+5:30) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
হামলার ধরন | গণহত্যা |
ব্যবহৃত অস্ত্র | বন্দুক, বর্শা, তলোয়ার, কাস্তে, তীর-ধনুক ইত্যাদি [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
নিহত | ৩০০-৫০০ |
আহত | ১০০০+ |
হামলাকারী দল | বিক্ষুব্ধ অসমীয়া |
৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে আসামের খয়রাবাড়িতে বাঙালি হিন্দুদের ওপর নৃৃসংশ গণহত্যা খয়রাবাড়ি গণহত্যা নামে কুখ্যাত৷[১][২] এই বাঙালি হিন্দুরা ছিল মূলত: দেশভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত শরণার্থী৷ অনুমান করা হয় যে, ৩০০ থেকে ৫০০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। যদিও সরকারি কোনো সঠিক হিসাব নেই৷ [১][৩][৪][৫]
প্রাক-নির্বাচন কার্যাবলী হিসাবে আসামের চর্চিত প্রাদেশিক রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে বাঙালি হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি ঘিরে ফেলে ও সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা ও বহিঃসংযোগ ছিন্ন করে৷ এই বাঙালি হিন্দুরা ছিল মূলত: দেশভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত শরণার্থী৷ অসমীয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই সমস্ত শরণার্থী উপনিবেশ ও বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামগুলিকে আক্রমণের জন্য রাত্রবেলাকে বেছে নিয়েছিল৷ আশ্চর্যজনকভাবে দু'সপ্তাহ ব্যাপী সমস্ত সংবাদমাধ্যম এই গুঢ় খবরটি প্রকাশ করেনি বা করতে দেওয়া হয়নি৷[৬] সাংবাদিক শেখর গুপ্তার সংবাদতথ্য থেকে জানা যায়, আসাম পুলিশ কর্মকর্তাদের বয়ানে গোহপুরের অসমীয়া গণহত্যার ক্ষতিকারক প্রভাবের কথা মাথায় রেখে পুলিশ প্রশাসন সময় থাকতে খয়রাবাড়ি হত্যাকাণ্ডকে বিফল করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি, যা পুলিশি গাফিলতিকে প্রকাশ করে৷[৬]
পটভূমি
[সম্পাদনা]দরং জেলার মঙ্গলদৈ মহকুমার অন্তর্গত মঙ্গলদৈ শহরের ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত খয়রাবাড়ি হলো একটি বাঙালি হিন্দু অধ্যুষিত স্বাধীনতা-পরবর্তী উপনিবেশ৷[৭][৭] ভারতের স্বাধীনতার পূর্বে খয়রাবাড়ি অঞ্চলটি বাংলাভাষী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো, যারা প্রত্যেকেই পূর্ববঙ্গমুল বা পূর্ববঙ্গ থেকে আগত ছিলেন৷ দেশভাগের পরবর্তীকালে এই অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা বাঙালি হিন্দুরা মুসলিমদের দ্বারা পরিত্যক্ত জায়গাগুলিতে নিজেদের নতুন বসতি গড়ে তোলে৷[১] যদ্যপি বাঙালি হিন্দুদেরকে ঐ জমির দলিলপত্র ও মালিকানা সরকারীভাবে প্রাপ্ত হয় না৷[৮] এভাবে শরণার্থী আগমনের ফলে অবস্থা কিছুটা এরকম হয় যে মঙ্গলদৈ অঞ্চলের অসমীয়া গ্রামগুলির মাঝে মাঝে বেশকিছু জায়গা বাঙালি প্রধান হয়ে ওঠে৷ কিছুক্ষেত্রে বাঙালি-অসমীয়ার মতানৈক্য ও বিরোধ দেখা যায়৷[১]
হত্যা-পরবর্তী ঘটনা
[সম্পাদনা]হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর হিন্দু জনপ্রতিনিধি গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আইনজ্ঞ গুপ্তার থেকে সমগ্র তথ্য ও অসমীয়া হিন্দু ও বাঙালি হিন্দুর অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণ জানার চেষ্টা করেন৷[৯] সংঘের নেতৃৃবৃৃন্দ বাঙালি হিন্দুদেরকে অসংরক্ষিত বলে আখ্যায়িত করেন ও অসমীয়া হিন্দুদের স্বধর্মীয়দের ওপর আক্রমণের তীব্রনিন্দা করেন৷ আইনজ্ঞ এই ঘটনাকে ধর্মের উপরে জাতিগত বিদ্বেষ হিসাবে চিহ্নিত করেন ও বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলিমের মধ্যে অগভীর পার্থক্যকে এই গণহত্যার ঠুনকো প্রধান কারণ হিসাবে তুলে ধরেন৷[৯]
২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে আসামে গণআন্দোলন করে খয়রাবাড়ি গণহত্যা ও ১৯৮৩ তে গোরেশ্বর গণহত্যাতে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি হিন্দুদের ঐ সমস্ত ক্ষতিপুরণের জন্য বরাদ্দ অর্থসাহায্য বাতিল করে দেওয়া হয়৷[১০][১১] ২০১৮ র নভেম্বরে রঙ্গিয়ার প্রশাসনিক বিচারকমন্ডলীর প্রধান ভবেশ কলিতা গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পুনরায় চালু করার ব্যবস্থা করেন৷[১০][১১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- মান্দাই গণহত্যাকাণ্ড
- বাগবের গণহত্যা
- গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড
- শিলাপাথর গণহত্যাকাণ্ড
- উত্তর কামরূপ গণহত্যাকাণ্ড
- হোজাই গণহত্যাকাণ্ড
- নিচলামারি গণহত্যাকাণ্ড
- তিনসুকিয়া গণহত্যা
- কমলনগর হত্যাকাণ্ড
- বোরোল্যান্ড গণহত্যাকাণ্ড ২০১৪
- কোকড়াঝাড় গণহত্যাকাণ্ড ২০১২
- নেলি হত্যাযজ্ঞ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Rammohan, E. N. (২০০৫)। Insurgent Frontiers: Essays from the Troubled Northeast (ইংরেজি ভাষায়)। India Research Press। আইএসবিএন 9788187943808।
- ↑ Sarma, Diganta। ১৯৮৩-ৰ অসমত নিপীড়িত বাঙালি (Assamese ভাষায়)। Jorhat: Ekalabya Prakashan।
- ↑ Gupta, Shekhar (১৯৮৪)। Assam: A Valley Divided। New Delhi: Vikas Publishing House। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 9780706925371। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Barpujari, H. K. (১৯৯৮)। North-East India: Problems, Policies, and Prospects : Since Independence। Spectrum Publication। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 9788185319810। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Gupta, Shekhar (১৯৮৪)। Assam: A Valley Divided। New Delhi: Vikas Publishing House। পৃষ্ঠা 14–15। আইএসবিএন 9780706925371। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ Gupta, Shekhar (১৯৮৪)। Assam: A Valley Divided। New Delhi: Vikas Publishing House। পৃষ্ঠা 14–15। আইএসবিএন 9780706925371। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ Rammohun, E. M. (২৯ ডিসেম্বর ২০১২)। Countering Insurgencies in India: An Insider's View (ইংরেজি ভাষায়)। Vij Books India। পৃষ্ঠা 36। আইএসবিএন 9789381411667। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Rammohan, E. N.। Simply Khaki। Indialog Publications। পৃষ্ঠা 98–99। আইএসবিএন 9788187981787। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ Gupta, Shekhar (৪ আগস্ট ২০১৮)। "Amit Shah & Modi are playing with a fire that doesn't distinguish between Muslim & Hindu"। ThePrint.in। ThePrint। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ "'Bengalis are also a part of greater Assamese society'"। The Sentinel। Omega Printers and Publishers। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ "Compensation for Hindu Bengali martyrs of Assam Movement demanded"। The Assam Tribune। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। ৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮।