খাসিয়া পুঞ্জি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাফলংয়ের একটি খাসিয়া পুঞ্জি

খাসিয়ারা যেসব গ্রামে বসবাস করে, সেগুলোকে খাসিয়া পুঞ্জি বলে।[১] একেকটি পুঞ্জিতে গড়ে ৫০টির মতো খাসিয়া পরিবার বসবাস করে থাকে।[২]

পুঞ্জি কাঠামো[সম্পাদনা]

মেঘালয়ের একটি ঐতিহ্যবাহী ঘর

খাসিয়ারা পুঞ্জিভিত্তিক বাসস্থান গড়ে তোলে। প্রত্যেক খাসিয়া পুঞ্জি একেকজন নির্বাহী প্রধান কর্তৃক পরিচালিত হয়, খাসিয়া পুঞ্জি প্রধানকে মন্ত্রী বলা হয়।[৩]

পুঞ্জিগুলোতে রয়েছে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের ঘর। প্রতিটি বাড়িতে আছে পানবরজ। কেননা খাসিয়াদের ঐতিহ্য হচ্ছে পানসুপারির চাষ। পুঞ্জির বুক চিরে যাওয়া রাস্তা দিয়ে গেলে পান-সুপারির সারি সারি বাগান দেখা যায়। খাসিয়াদের বাড়িঘর মাচাংয়ের মতো, দোতলা ধাঁচের বাড়ি। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা দিনভর গাছ থেকে পান আহরণ করেন, যা মহিলারা কুচি করে থাকেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার পান উৎপন্ন হয়ে থাকলেও খাসিয়া পান উৎপাদিত হয় শুধুমাত্র পাহাড়ী এলাকার খাসিয়া পুঞ্জিতে।[৪] পানবরজ ছাড়াও খাসিয়া পল্লীতে দেখা যায় কমলা বাগান।[৫]

পর্যটন আকর্ষণ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

মাধবকুন্ডের খাসিয়া উপজাতি গ্রাম

এক সময় খাসিয়া উপজাতিরা যাযাবর হলেও প্রায় পাঁচ শতাধিক বছর আগে তারা আসাম থেকে বাংলাদেশে আসে।[১] ১৯৫৫ সালে কিছু খাসিয়া উপজাতি সিলেটের হবিগঞ্জের পাহাড়ী এলাকায় তাদের বসতি স্থাপনের মাধ্যমে গড়ে তুলে তাদের খাসিয়া পুঞ্জি।[৬] মৌলভীবাজারে ৬১টি, সিলেট জেলায় ৭টি এবং হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার সীমান্তে ৫টি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে।[১] তন্মধ্যে বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর নামে জাফলংয়ে খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাঁচটি পুঞ্জি রয়েছে।[৫] জাফলংয়ের পাশেই অবস্থিত একটি খাসিয়াপল্লীতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সংগ্রামপুঞ্জি। যা মূলত সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার জন্য জনপ্রিয়।[৭] শ্রীমঙ্গল–কমলগঞ্জ সড়কের পাশে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া পুঞ্জি অবস্থিত।[৮][৯] সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া কালাপাহাড়ে বেগুনছড়া, পুঁটিছড়া, লবণছড়া পুঞ্জিসহ আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি বা গ্রাম রয়েছে।[১০][১১] শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নাহার খাসিয়া পুঞ্জির অভ্যন্তরে থাকা লাসুবন গিরিখাত একটি প্রাচীন গিরিপথ। যেখানে স্থানীয় খাসি ভাষায় ক্রেম ক্লু, ক্রেম কেরি ও ক্রেম উল্কা নামে বড় আরো তিনটি গিরিখাত রয়েছে। পাশাপাশি ছোট-বড় অনেকগুলো পাথুরে ছড়া আছে এলাকাটিতে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "খাসিয়া"বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "খাসিয়াপুঞ্জির বর্ষবরণে"দৈনিক প্রথম আলো। ১ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২২ 
  3. শ্রীপ্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তী (২০০০)। "ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ইতিহাসের আলোকে বড়লেখা"। কালী প্রসন্ন দাস, মোস্তফা সেলিম। বড়লেখা: অতীত ও বর্তমান (প্রিন্ট) (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড। পৃষ্ঠা ৪৮৪। আইএসবিএন 984-31-0841-8 
  4. "আগ্রহ হারাচ্ছেন জুড়ীর পান চাষিরা"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১২ জুন ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২২ 
  5. "জাফলংয়ের সংগ্রামপুঞ্জিতে"সমকাল। ২৬ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২২ 
  6. "সিলেটের খাসিয়া নৃগোষ্ঠীর মাতৃতান্ত্রিক পরিবার"দৈনিক জনকণ্ঠ। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২২ 
  7. "মায়াবী ঝর্ণা 'সংগ্রামপুঞ্জি'"এনটিভি। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২২ 
  8. Lewis, J.C.। "List of Bangladeshi Villages"Travel Tips - USA Today। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২২ 
  9. International Resources Group (অক্টোবর ২০০৬)। "Management Plans for Lawachara National Park" (পিডিএফ)USAID। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২২ 
  10. "সিলেটের কালাপাহাড়"। সমকাল। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২২ 
  11. "রোমাঞ্চকর কালা পাহাড় ভ্রমণ"জাগো নিউজ। এপ্রিল ৮, ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২২