কাশ্মীর বিতর্কে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা
কাশ্মীর সংকট নিরসনে জাতিসংঘের রেজ্যুলুশান |
---|
নোটস |
১৯৪৮ |
১৯৫০ |
১৯৫১ |
১৯৫২ |
১৯৫৭ |
১৯৬৫ |
১৯৭১ |
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর যখন 'জম্মু ও কাশ্মীর' নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সংকট তৈরি হয় তখন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারত বিষয়টিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে যায়,যেখানে নিরাপত্তা পরিষদ রেজ্যুলিউশান ৩৯ (১৯৪৮) পাস করা হয়,এবং দুই দেশের সমস্যা নিরসনের জন্য 'জাতিসংঘের ভারত-পাকিস্তান কমিশন' (UNCIP) গঠন করা হয়।দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামলে, ভারত ও পাকিস্তানের 'যুুুদ্ধবিরতি রেখা' বা সীমানা পর্যবেক্ষণের জন্য 'জাতিসংঘের ভারত পাকিস্তান সামরিক পর্যবেক্ষক দল' (UNMOGIP) গঠন করা হয়।
সার্বিক অবস্থা
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে,ভারতের গভর্নর জেনারেল লুই মাউন্টব্যাটেন (ফার্স্ট আর্ল মাউন্টব্যাটেন অফ বার্মা), মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সাক্ষাৎ এর উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ এর ১লা নভেম্বর লাহোরে যান এবং এই প্রস্তাব দেন যে, যেসব রাজ্যশাসকেরা তখনো তার রাজ্যের সংখ্যাগরীষ্ঠের ইচ্ছার ভিত্তিতে ভারত বা পাকিস্তানে যুক্ত হয়নি (যেমন কাশ্মীর, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ বা এমন স্বশাসিত অঞ্চল), সেসব রাজ্যের মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে (গণভোট) যেকোন একটি দেশে যুক্ত করা হোক। জিন্নাহ প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।[১] দুই প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং লিয়াকত আলী খান ডিসেম্বরে দ্বিপাক্ষিক সাক্ষাৎ করেন,যেখানে নেহেরু দুই দেশের বিতর্কের ব্যাপারটি জাতিসংঘে জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন,যেহেতু জাতিসংঘ দলিলের (চার্টার) ৩৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী,আন্তর্জাতিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে এমন যেকোন বিষয়ে যেকোন সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।[২]
ভারত ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজ্যুলুশানের (সংকট নিরসনের বিধিবদ্ধ দলিল) আবেদন জানায়।[৩] জাতিসংঘের ভারত পাকিস্তান কমিশন (UNCIP) গঠনের পর, নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৮ সালের ২১ এপ্রিল রেজ্যুলুশান ৪৭ পাস করে।এই রেজ্যুলুশানটি তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারকে আহবান জানায়, কাশ্মীরে বসবাসরত মানুষ ব্যতীত সকল যোদ্ধাকে (সেনাবাহিনী,উপজাতিয়দের আধাসামরিক বিভিন্ন দল) অতিসত্ত্বর প্রত্যাহার করার জন্য। তাছাড়া,ভারত সরকারকেও আহবান জানানো হয় শান্তি শৃঙখলা রক্ষার্থে কিছু সেনা উপস্থিত রেখে বাকি সব সেনা প্রত্যাহার করতে যাতে কাশ্মীরে “ভারত বা পাকিস্তানে সংযুক্ত হবার প্রশ্নে” গণভোট এর আয়োজন করা যায়। পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল গ্রেসি ও ভারতের পক্ষে জেনারেল রয় বুচার স্বাক্ষরের পর ১৯৪৯ সালের ১লা জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি সংঘটিত হয়।[৪] যাইহোক, সামরিক উপস্থিতি কমানোর ব্যাপারে ভারত, পাকিস্তান দুপক্ষই কোন চুক্তিতে আসতে ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে শুরু করে যেমন, 'আজাদ কাশ্মীর বাহিনী' (তৎকালীন স্বাধীন কাশ্মীরের নিজস্ব বাহিনী)কোন সময়ে ভেঙে দেয়া উচিত -চুক্তির সময়েই নাকি গণভোটের সময়ে।[৫]
জাতিসংঘের ভারত পাকিস্তান কমিশন (UNCIP) ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালের মধ্যে উপমহাদেশে তিনবার আসে।এ সময়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাছে সন্তোষজনক হবে এমন একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করা হয়।[৬] ১৯৪৮ এর আগস্টে নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রতিবেদন দেয়া হয় যে, কাশ্মীরে পাকিস্তানি বাহিনীর উপস্থিতি এক পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি করছে।সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে দুইটি ধাপ প্রস্তাব করা হয়।প্রথম ধাপে,পাকিস্তান তার সেনাসহ সকল নাগরিক কাশ্মীর থেকে প্রত্যাহার করবে।দ্বিতীয় ধাপে,যখন UNCIP কমিশন ভারত সরকারকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানাবে তখন ভারত তার 'বেশিরভাগ' সেনা প্রত্যাহার করবে।দুই দেশের সেনা প্রত্যাহারের পর গণভোটের আয়োজন করা হবে।[৭]প্রস্তাবটিতে ভারত রাজী হলেও পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে।[৮]
কাশ্মীরের রাজা হরিসিং এর স্বাক্ষরকৃত “সংযুক্তির দলিলের” কারণে ভারত সরকার কাশ্মীরকে ভারতের বৈধ অংশ মনে করে।পাকিস্তান কর্তৃক কাশ্মীরের বিদ্রোহীদের সহায়তা ও সশস্ত্র পাখতুন উপজাতিয়দের কাশ্মীর সংঘর্ষে পাঠানোকে ভারত 'শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ' মনে করে এবং কাশ্মীরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে ভারতীয় ভূখণ্ড আক্রমণের সমান ধরা হয়। ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে,গণভোট হবে ভারতে কাশ্মীরের সংযুক্তির শেষ ধাপ এবং সংযুক্তির দলিল না থাকায় পাকিস্তান এ ব্যাপারে ভারতের সমকক্ষ হতে পারেনা।[৯]
ভারতীয় দাবির মূল ভিত্তিকে অনেক সময় সমালোচনা করা হয়, যেখানে ভারত 'সংযুক্তির দলিল' দেখিয়ে পাকিস্তানকে কাশ্মীরে আক্রমণকারী হিসেবে দেখাতে চায়। এ ব্যাপারে যুক্তি দেখানো হয়, জুনাগড়ের মুসলিম শাসক পাকিস্তানের পক্ষে সংযুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করাকে ভারত মেনে নেয়নি।এই ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।[১০][১১] করবেল মনে করেন,ভারত জাতিসংঘের রেজ্যুলুশানের মাধ্যমে সংকট নিরসনে রাজী হওয়ায় কাশ্মীরে “পাকিস্তান আক্রমণকারী” এই যুক্তি আর ব্যবহার করতে পারেনা।[১২]
পাকিস্তান সরকার মনে করে, জম্মু ও কাশ্মীর এমন এক সময়ে ভারতের সাথে সংযুক্তি চুক্তি করেছে যখন এর শাসকের চুক্তি করার কোন অধিকারই ছিল না।যেহেতু কাশ্মীরের মানুষের বিদ্রোহের ফলে মহারাজা হরিসিংকে রাজধানী ছেড়ে পালাতে হয়েছে সেহেতু সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে রাজা কোন সংযুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করতে পারেন না।তাছাড়া,বিদ্রোহ ও সশস্ত্র উপজাতীয়দের কাশ্মীরে অবস্থান সবটাই হয়েছিল স্থানীয়দের সমর্থনে।তাই তাদের সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানকে সমালোচনা করা যায় না।[১৩]
ভারত কাশ্মীর সমস্যা নিরসনে এমন একটি সমাধান খুঁজছিল যেখানে সৈন্য প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে আক্রমণকারী হিসেবে দেখা হবে।অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি ছিল সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে দুই দেশকেই সমতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে ও একই সাথে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারীরা মূলত 'সমতার' দিকেই যেতে চাচ্ছিল যার কারণে ভারত এই প্রক্রিয়াতে সন্তুষ্ট ছিল না।[১৪] শেষ পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার সম্ভব হয়নি।ভারতের যুক্তি এই যে,চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানকে আগে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে,অন্যদিকে পাকিস্তানের যুক্তি হচ্ছে ভারত যে আদৌ পরে সেনা প্রত্যাহার করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।[১৫] সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে দুইদেশ এখনো একমতে পৌছাতে পারেনি।[১৬]
গবেষকরা মনে করেন,নিরাপত্তা পরিষদের 'কাশ্মীর মধ্যস্থতায় ব্যর্থ' হবার অন্যতম কারণ তারা বৈধতার বিষয়গু্লোকে গুরুত্ব না দিয়ে সমস্যাটিকে একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছে।[১৭][১৮][১৯][২০]
জাতিসংঘের মধ্যস্ততার বিভিন্ন ধাপ
[সম্পাদনা]ম্যাকনটন প্রস্তাব
[সম্পাদনা]১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জেনারেল ম্যাকনটনকে (যিনি একজন কানাডিয়ান) দুই দেশের মধ্যকার সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়।ম্যাকনটন, ২২শে ডিসেম্বর ভারত ও পাকিস্তানকে তার প্রস্তাবটি পাঠান এবং সভাপতি হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণের দুই দিন আগে, ২৯ ডিসেম্বর,তিনি নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।এরপর,জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাকে মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলে,এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাকনটন ১৯৫০ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন।[২১]
তার প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে একই সাথে সকল সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে একটি সমাধান প্রস্তাব করা হয় (কাশ্মীরের শান্তি শৃঙখলা রক্ষার্থে অল্প কিছু ভারতীয় সেনা ব্যতীত) যে পদ্ধতিতে আজাদ কাশ্মীর বাহিনীসহ কাশ্মীরের সশস্ত্র সকল বাহিনী ভেঙে দেয়া হবে এবং সেনা প্রত্যাহারের সময়ে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উত্তরাঞ্চলের (গিলগিত) প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে।পাকিস্তান প্রস্তাবটি মেনে নেয়, কিন্তু ভারত প্রত্যাখান করে।[২২][২৩]
প্রস্তাবটিতে,সংকট নিরসন প্রক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানকে সমান অংশীদার ধরা হয় যা ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাশ্মীরে শুধুমাত্র ভারতীয় সেনার উপস্থিতি বৈধ, আর পাকিস্তানি সেনারা সেখানে অবৈধভাবে উপস্থিত থাকার পরেও প্রস্তাবটিতে উভয়কে সমান অংশীদার বিবেচনা করা হয়েছে।ম্যাকনটন প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করার মাধ্যমে ভারত পরপর তিনবার নিরাপত্তা পরিষদের নিরপেক্ষ কমিশনের কোন প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতকে সতর্ক করে ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবার আহ্বান জানায়। এ কারণে নেহেরু,যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে,এমন অভিযোগ করেন। ভারতের 'ম্যাকনটন প্রস্তাব' প্রত্যাখানকে মার্কিন নীর্তিনির্ধারকরা 'একগুয়েমি' হিসেবে বিবেচনা করেন।[২৪][২৫]
কোল্ড ওয়ার (সুপারপাওয়ারদের স্নায়ুযুদ্ধ) বিষয়ক ঐতিহাসিক রবার্ট ম্যাকমোহন বলেন, মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মনে ক্রমেই এই ধারণা বদ্ধমূল হতে শুরু করে যে, ভারতীয়রা 'গণভোট' এড়ানোর জন্যই জাতিসংঘের পাঠানো কমিশনের (UNCIP) সকল প্রস্তাব তথাকথিত “বৈধ বিভিন্ন কারণ” (যা অনেকক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ) দেখিয়ে বাতিল করে দিচ্ছে।ম্যাকমোহন সাথে এটাও যোগ করেন যে,ভারতীয়দের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল তার কারণ কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যাগরীষ্ঠ হবার জন্য গণভোটের ফলাফল ভারতের বিপক্ষে যাবার সম্ভবনাই ছিল বেশি,তাই গণভোটে দেরি হলে তা ভারতের জন্য সুবিধাজনক।ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তা মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেন,কাশ্মীরে গণভোট করার চেয়ে রাজ্যটিকে বিভক্ত করাকেই তারা শ্রেয় মনে করেন।[২৬]
মার্কিন রাষ্ট্রদূত লয় হেন্ডারসন ভারতীয় কর্মকর্তাদের এটিও জানান যে,দুইপক্ষের আলোচনা ভিত্তিতে একটি সন্তোষজনক সমাধানে আসার মনোভাব ভারতের মধ্যে না দেখা যাওয়ায় মার্কিনদের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে ভারতীয়রা ইচ্ছাপূর্বকভাবেই গণভোট এড়িয়ে যাচ্ছে।[২৭]
ম্যাকনটন প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এবং নিরাপত্তা পরিষদ একটি রেজ্যুলুশান পাসের মাধ্যমে দুই দেশকে পাঁচ মাস সময়সীমা দেয় সেনা প্রত্যাহারের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে।ভারত রেজ্যুলুশানটি ১৯৫০ সালের ১৪ই মার্চ গ্রহণ করে।এরপর,নিরাপত্তা পরিষদ 'স্যার ওয়েন ডিক্সন'কে ভারত-পাকিস্তানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করে;তাকে ম্যাকনটন প্রস্তাবে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহারের তদারকি ও সাহায্যপ্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়।[২৮][২৯][৩০]
ডিক্সন মিশন
[সম্পাদনা]স্যার ওয়েন ডিক্সন,'অস্ত্রবিরতি রেখার' পাকিস্তানি পাশকে ভারত-পাকিস্তান কমিশনের (UNCIP) তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা শাসনের প্রস্তাব করেন(সংকট পূর্ববর্তী প্রথা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে)।ভারত এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে এই যুক্তিতে যে,স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাত করার সম্ভবনা থাকায় তা ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে।যদিও,এর বিকল্প হিসেবে ভারত কোন প্রস্তাব দিতে পারেনি।[৩১]
যুদ্ধবিরতি রেখার ভারতীয় পাশে ডিক্সন প্রস্তাব করেন প্রতিটি জেলা প্রশাসকের সাথে জাতিসংঘ মনোনিত একজন কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হবে যিনি প্রশাসকের কার্যাবলী পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রতিবেদন পেশ করবেন।এতে ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হবে – এমন দাবি করে নেহেরু এ প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেন। এ ব্যাপারেও ভারত কোন বিকল্প ব্যবস্থা প্রস্তাব করেনি।[৩১]
এরপর,ডিক্সন দুইদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেখ আব্দুল্লাহ ও গোলাম আব্বাসের একটি জোট সরকার গঠন অথবা দুইপক্ষের মধ্যে মন্ত্রণালয় ভাগাভাগির প্রস্তাব করেন। ডিক্সনের দ্বিতীয় পরামর্শ ছিল,গণভোটের ছয় মাস আগে থেকে কোন অরাজনৈতিক ও সম্মানীয় ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ সরকার স্থাপন করা যে সরকার জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে চলবে এবং সরকারে হিন্দু ও মুসলিমদের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকবেন। ডিক্সনের তৃতীয় পরামর্শ ছিল জাতিসংঘ মনোনিত প্রতিনিধিদের দিয়ে একটি সাময়িক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠনের। নেহেরু এই তিনটি পরামর্শই প্রত্যাখান করেন,এবং স্যার ওয়েন ডিক্সন সেনাপ্রত্যাহারের ব্যাপারে ভারতের 'নেতিবাচক' মনোভাবের সমালোচনা করেন।[৩২] এছাড়া, স্যার ডিক্সন সেনাপ্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সকল প্রস্তাব ও বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ভারত সরকারকে কঠোরভাষায় তিরস্কার করেন। [৩৩]
ডিক্সন এরপরে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নেহরুকে জিজ্ঞাসা করেন, এলাকাভেদে গণভোটের আয়োজন করে প্রতিটি এলাকাকে (ফলাফল অনুযায়ী) কোন দেশে সংযুক্ত করার ব্যাপারে তার সম্মতির আছে কিনা।এ ব্যাপারে নেহেরু আগ্রহপ্রকাশ করেন।[৩৪] ভারতীয় বিশ্লেষক রাঘাভানের মতে, নেহেরুই প্রথম কাশ্মীরকে বিভক্ত করে গণভোটের প্রস্তাব দেনঃ এ পরিকল্পনা অনুযায়ী,জম্মু আর লাদাখ ভারতে যাবে, উত্তরাঞ্চল আর আজাদ কাশ্মীর যাবে পাকিস্তানে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় গণভোট করা হবে।ডিক্সন এ পরিকল্পনা সমর্থন করেন (এই পরিকল্পনায় আজও তার নাম জড়িয়ে আছে)।[৩৫] ডিক্সন এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন যে, জম্মু আর লাদাখের মানুষ ভারতকে সমর্থন করে;অন্যদিকে পরিষ্কারভাবেই আজাদ কাশ্মীর আর উত্তরাঞ্চল (গিলগিত) এর মানুষ পাকিস্তানকে সমর্থন করে। ফলে, শুধুমাত্র মুজাফারাবাদের আশেপাশের কিছু জায়গা ও কাশ্মীর উপত্যকাই শুধুমাত্র অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থায় পড়ে থাকে।যাইহোক,এই প্রস্তাবটি (ডিক্সনের মতে) পাকিস্তান সরাসরি প্রত্যাখান করে যেহেতু পাকিস্তান বিশ্বাস করে, গণভোট সমস্ত রাজ্যে একসাথে হওয়া উচিত অন্যথায় ধর্মীয় রেখা অনুযায়ী রাজ্যটি বিভক্ত হওয়া উচিত।[৩৬] পাকিস্তানের মতে,জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত রাজ্যে একই সাথে গণভোট করার ব্যাপারে ভারত যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল - তা থেকে পিছু হটা উচিত নয় ।[৩৪][৩৭][৩৮]
ডিক্সনের আরো একটি উদ্বেগ ছিল কাশ্মীরীদের নিরপেক্ষভাবে ভোট দেয়ার অবস্থা নিয়ে।তার মতে, কাশ্মীরীরা রাজনৈতিক অসচেতনতা ও পরিস্থিতির কারণে ভয় দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দিতে পারে।[৩৯] পাকিস্তানের আপত্তির কারণে ডিক্সন গণভোটের সময়ে, শেখ আব্দুল্লার সরকারকে ‘সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয়' রাখার প্রস্তাব দেন। ভারত তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। রাঘাভানের মতে,এইপর্যায়ে ডিক্সন ধৈর্যচ্যুত হন এবং ব্যর্থতা স্বীকার করেন। [৩৫]
ডিক্সনের প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখানের পেছনে একটি কারণ এই যে, ভারত চেয়েছিল গণভোটের সময় কাশ্মীরে 'নিরাপত্তাজনিত কারণে' সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রাখতে এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সরাতে যা ডিক্সনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে যাচ্ছিল যেহেতু ডিক্সনের পরিকল্পনা অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তান কেউই গণভোটের সময় সৈন্য রাখতে পারবে না।[৪০]
ডিক্সন এটা অনুভব করছিলেন যে, গণভোটের সময় প্রভাববিস্তার বন্ধ করতে প্রণীত আইন ও সেনাপ্রত্যাহার এর কোনটিতেই ভারত রাজী হবেনা।[৪১][৪২] ভারত সেনাপ্রত্যাহার করতে রাজী না হওয়ায় পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীর বাহিনী তাদের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে।এই ব্যাপারে ডিক্সনের শেষ মতামত ছিল ভারত ও পাকিস্তানকেই তাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে দেয়া হোক।[৪৩]
ডিক্সন মিশনের ব্যর্থতা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত লয় হেন্ডারসনের ভারতের প্রতি অবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেয়। হেন্ডারসন নিজে কাশ্মীর উপত্যকায় ভ্রমণকালে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষই ভারতে থাকার চেয়ে পাকিস্তানে যুক্ত হবার জন্য ভোট দিতে ইচ্ছুক।অবশ্য তিনি এটাও খেয়াল করেছেন, যদি কাশ্মীরীদের সুযোগ দেয়া হয় তবে তারা তৃতীয় একটা পথ বেছে নেবে – তা হল 'স্বাধীনতা'।তবে নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতীয়রা বারবার অভিযোগ করে আসছিল 'মার্কিনরা পাকিস্তানিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট',তাই হেন্ডারসন মনে করতেন বিষয়টি থেকে মার্কিনদের দূরে থাকা উচিত, এবং ১৯৫০ সালে ওয়াশিংটন ঠিক সেটাই করেছিল।[৪৪] হেন্ডারসন প্রথম মার্কিন ব্যক্তি ছিলেন যিনি কাশ্মীর সফর করেন ও পর্যবেক্ষণ করেন,কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষ গণভোটে ভারতের বদলে পাকিস্তানকেই বেছে নেবে,এবং তাদেরকে তৃতীয় একটি বিকল্প দেয়া হলে তারা উভয় দেশকেই বাদ দিয়ে, স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেবে।[৪৪]
ফ্র্যাংক গ্রাহামের মধ্যস্থতা
[সম্পাদনা]ডিক্সনের উত্তরসূরী,ডক্টর ফ্র্যাংক গ্রাহাম,যখন উপমহাদেশে আসেন তখন তিনি গণভোটের আগে সেনাপ্রত্যাহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু কাশ্মীরে কত সেনা রাখা যাবে এই ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তান একমতে পৌছাতে পারেনি।[৪৫]
১৯৫১ সালের ৩০শে এপ্রিল ডঃ ফ্র্যাংক গ্রাহামকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ,ভারত ও পাকিস্তানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করে।ডঃ গ্রাহাম উপমহাদেশে ১৯৫১ সালের ৩০শে জুন পৌছান।গ্রাহাম মিশনের অন্যতম দায়িত্ব ছিল সেনাপ্রত্যাহারের ব্যাপারে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে একটি চুক্তিতে আসা।পূর্বের জাতিসংঘ প্রতিনিধির মতই,গ্রাহামের প্রথম 'সেনাপ্রত্যাহার প্রস্তাবটি' পাকিস্তান কর্তৃক গৃহীত ও ভারত কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়।এরপর গ্রাহাম একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন,যেটি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান ধাপে ধাপে সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে, ১৯৪৯ সালের ১লা জানুয়ারির অবস্থায় ফিরে যাবে।এই প্রস্তাবটিও পাকিস্তান গ্রহণ করে এবং ভারত প্রত্যাখান করে।[৪৬]
১৯৫২ সালের ১৬ই জুলাই,ডঃ গ্রাহাম নতুন কয়েকটি প্রস্তাব আনেন।এই প্রস্তাবনাগুলো অনুযায়ী,পাকিস্তান তার সৈন্যসংখ্যা ৩০০০-৬০০০ এর মধ্যে নামিয়ে আনবে এবং ভারত তার সৈন্যসংখ্যা ১২০০০-১৬০০০ এর মধ্যে নামিয়ে আনবে,কিন্তু এই সংখ্যার মধ্যে ভারতীয় নানা সশস্ত্র বাহিনী,পাকিস্তানি গিলগিত বাহিনী বা উপজাতীয় নানা সশস্ত্র দলগুলোকে বিবেচনা করা হয়নি।গণভোটের ব্যাপারে আশাবাদী পাকিস্তান এই প্রস্তাবও মেনে নেয়,তবে অনিয়মিত বাহিনীগুলোর ব্যাপার মীমাংসা না হওয়ায় ভারতীয়দের রাজী করানো যায়নি।গ্রাহাম প্রস্তাবটিতে কিছু পরিবর্তন করেন এবং,নতুন প্রস্তাবে সব বাহিনী মিলিয়ে পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ ৬০০০ সেনা ও ভারতকে সর্বসাকুল্যে ১৮০০০ সেনা মোতায়েনের সীমানির্ধারণ করে দেয়া হয়।এর উত্তরে ভারত পাল্টা প্রস্তাব দেয়। সেখানে বলা হয়,ভারতীয়রা সর্বমোট ২১০০০ সেনা রাখবে (রাজ্যের নানা সশস্ত্র বাহিনীসহ) এবং পাকিস্তান একটি বেসামরিক বাহিনী রাখতে পারবে যার আকৃতি হবে সর্বোচ্চ ৪০০০। ডঃ গ্রাহাম তার ব্যর্থতার কথা নিরাপত্তা পরিষদে জানান,এবং এরপর নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৫১ সালের ডিসেম্বরে ভারত ও পাকিস্তানকে সেনাপ্রত্যাহারের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে আসতে বলে একটি রেজ্যুলুশান পাস করে।রেজ্যলুশানে, পাকিস্তানকে ৩০০০ থেকে ৬০০০ এর মধ্যে ও ভারতকে তার সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে ১২০০০ থেকে ১৮০০০ এর মধ্যে নিয়ে আসতে অনুরোধ করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদ,সেনাপ্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ১৯৫১ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে আনা ডঃ গ্রাহামের প্রস্তাবটি পুনরার বিবেচনা করার জন্য দুই দেশকে আহ্বান জানায়। পাকিস্তান এতে সম্মত হলেও,ভারত এতে সাড়া দেয়না।তদোপরী,ভারত প্রস্তাবটি প্রত্যাখানের কোন কারণ দেখাতেও অস্বীকৃতি জানায়। [৪৭]
গ্রাহাম এরপরেও আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন এবং এমন এক প্রস্তাব আনেন যেখানে পাকিস্তানি সেনা আনুপাতিক হারে না বাড়িয়ে ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হয়।এটিও ব্যর্থ হয়। সেনাপ্রত্যাহার চুক্তির ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার কথা জানিয়ে ডঃ গ্রাহাম ডিসেম্বরে জাতিসংঘে দ্বিতীয় একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।১৯৫২ সালের মার্চ মাসে দুই দেশই তাদের সেনাপ্রত্যাহার শুরু করলে, এপ্রিল মাসে পাঠানো তার তৃতীয় প্রতিবেদনে কিছু আশার আলো দেখা যায়। কিন্তু ১৯৫২ সালের অক্টোবরে নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো তার চতুর্থ প্রতিবেদনে দেখা যায়,মধ্যস্থতা আবারো বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে দুইপক্ষের মধ্যে সৈন্যসংখ্যা নিয়ে দ্বিমত হওয়ায়।এরপর নিরাপত্তা পরিষদ দুইদেশকে সরাসরি এ বিষয়ে আলোচনা করতে বলে একটি রেজ্যলুশান পাস করে।১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা শুরু হয় জেনেভাতে কিন্তু গ্রাহাম বুঝতে পারেন এই আলোচনাও ব্যর্থ হবে।১৯৫৩ সালের ২৭শে মার্চ ডঃ গ্রাহামের শেষ প্রতিবেদন পেশের মাধ্যমে তার মধ্যস্থতাকরণের সমাপ্তি ঘটে।তার মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যেদুটি বিষয়ে একমত হতে পারেনি তা হল-বেসামরিকীকরণ বা সেনাপ্রত্যাহারের পর শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য কাশ্মীরে কত সেনা থাকবে এবং গণভোট পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা কখন দায়িত্বগ্রহণ করবে। [৪৭]
ভারত-পাকিস্তানে জাতিসংঘ সামরিক পর্যবেক্ষক দল
[সম্পাদনা]জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রেজ্যুলুশান ৪৭ (১৯৪৮) ভারত পাকিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘ কমিশনের সদস্য (UNCIP) সংখ্যা বাড়িয়ে পাঁচজনে নিয়ে আসে।১৯৫১ সালের মার্চে ভারত ও পাকিস্তান 'করাচী চুক্তিতে' স্বাক্ষর করে যেখানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে একটি 'যুদ্ধবিরতি রেখা' টানা হয়।কমিশনটি বাতিল করার পর, নিরাপত্তা পরিষদ রেজ্যুলুশান ৯১ পাস (১৯৫১) করে এবং দুইপক্ষের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন আটকাতে 'ভারত-পাকিস্তানে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক দল' (UNMOGIP) গঠন করে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ১৯৭১ যুদ্ধের পর,দুইদেশ ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মাধ্যমে কাশ্মীরে 'লাইন অফ কন্ট্রোল' বা নিয়ন্ত্রণরেখা আঁকা হয়। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের ভূমিকা বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তান দ্বিমত পোষণ করে কারণ ভারতের মতে,সিমলা চুক্তি 'পর্যবেক্ষক দল UNMOGIP গঠনকারী' জাতিসংঘের রেজ্যুলুশানকে প্রতিস্থাপিত করেছে কারণ পর্যবেক্ষক দলকে 'যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের' দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শুধুমাত্র 'করাচী চুক্তি' অনুসারে।
যাইহোক,জাতিসংঘের মহাসচিবের মতে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলটি (UNMOGIP) এখনো সক্রিয় থাকা উচিত যেহেতু একে বাতিল করা হয়নি।তবে, ভারতের মতে যেহেতু UNMOGIP বা পর্যবেক্ষক দলের মিশন ইতোমধ্যে সিমলা চুক্তি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে,তাই নিয়ন্ত্রণরেখার ভারতীয় প্রান্তে জাতিসংঘের ৪৫তম ডিভিশনের(নিরস্ত্র) পর্যবেক্ষকদলের কার্যক্ষমতাকে অনেকাংশে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] [৪৮][৪৯]
মানচিত্র সমস্যা
[সম্পাদনা]-
জাতিসংঘ ব্যবহৃত 'দক্ষিণ এশিয়ার' মানচিত্র
-
জাতিসংঘ ব্যবহৃত পাকিস্তানের মানচিত্র
অন্যান্য বিতর্কিত ভূখণ্ডের মত কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সরকার মানচিত্রে (নিজ নিজ দাবি অনুযায়ী) সম্পূর্ণ কাশ্মীরকে তাদের ভূখণ্ড হিসেবে দেখিয়েছে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে না ভেবেই)। ভারতে,কোন মানচিত্রে কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে না দেখানো অবৈধ।এছাড়া, পাকিস্তানে কাশ্মীরকে 'বিতর্কিত ভূখণ্ড' হিসেবে না দেখানো অবৈধ। নিরপেক্ষরা সাধারণত 'নিয়ন্ত্রণরেখা'কে সীমানা ধরে নিয়ে মানচিত্র তৈরি করে থাকে যেমন, সিআইএ (মার্কিন গোয়েন্দাবিভাগ) এর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক বা বিশ্বের নানা তথ্য সংবলিত বইতে ব্যবহৃত মানচিত্র। তাছাড়া অনেকক্ষেত্রে এই স্থানকে 'হ্যাশচিহ্ন' দিয়ে চিহ্নিত করা হয়,যদিও ভারত সরকার এই ধরনের কাজের কঠোর বিরোধিতা করে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]. যখন মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫ এবং ম্যাপপয়েন্ট ২০০২ এ ব্যবহৃত মানচিত্রটি ছাড়ে তখন একটি বিতর্কের জন্ম হয় যেহেতু সেখানে সম্পূর্ণ কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়নি।অবশ্য,সকল নিরপেক্ষ ও পাকিস্তানি সংস্থা বর্তমানে জাতিসংঘের মানচিত্রটি ব্যবহার করে থাকে এবং ৯০% মানচিত্রে 'কাশ্মীরকে' বিতর্কিত ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়।[১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Noorani 2014, পৃ. 13-14।
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 67-68।
- ↑ Wellens, Karel (১৯৯০), Resolutions and Statements of the United Nations Security Council: (1946 - 1989) ; a Thematic Guide, BRILL, পৃষ্ঠা 322–, আইএসবিএন 978-0-7923-0796-9
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 68-69।
- ↑ "Plebiscite Conundrum"। Kashmirlibrary.org। ৫ জানুয়ারি ১৯৪৯। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 70।
- ↑ Varshney 1992, পৃ. 211।
- ↑ Korbel 1953, পৃ. 502।
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 70-71।
- ↑ Howley, James (১৯৯১)। "Alive and Kicking: The Kashmir Dispute Forty Years Later"। Penn State International Law Review। 9 (1): 96।
- ↑ Howley, James (১৯৯১)। "Alive and Kicking: The Kashmir Dispute Forty Years Later"। Penn State International Law Review। 9 (1): 97।
- ↑ Josef Korbel (৮ ডিসেম্বর ২০১৫)। Danger in Kashmir। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 180–181। আইএসবিএন 978-1-4008-7523-8।
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 71-72।
- ↑ Schofield 2003, পৃ. 82-85।
- ↑ Varshney 1992, পৃ. 212।
- ↑ Korbel 1953, পৃ. 506–507।
- ↑ Korbel 1953, পৃ. 507।
- ↑ Subbiah 2004, পৃ. 180।
- ↑ Ankit 2013, পৃ. 276।
- ↑ Ankit 2013, পৃ. 279।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 153–155। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 154। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Victoria Schofield (৩০ মে ২০১০)। Kashmir in Conflict: India, Pakistan and the Unending War। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 101–। আইএসবিএন 978-0-85773-078-7।
Although Pakistan agreed to his proposals, India did not.
- ↑ Robert J. McMahon (১ জুন ২০১০)। The Cold War on the Periphery: The United States, India, and Pakistan। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 60–। আইএসবিএন 978-0-231-51467-5।
- ↑ Howard B. Schaffer (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Limits of Influence: America's Role in Kashmir। Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা 28–। আইএসবিএন 978-0-8157-0370-9।
U.S. policymakers considered India's rejection the worst example yet of its intransigence
- ↑ Robert J. McMahon (১ জুন ২০১০)। The Cold War on the Periphery: The United States, India, and Pakistan। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 34–। আইএসবিএন 978-0-231-51467-5।
- ↑ Howard B. Schaffer (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Limits of Influence: America's Role in Kashmir। Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা 26–। আইএসবিএন 978-0-8157-0370-9।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 156–। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Josef Korbel (৮ ডিসেম্বর ২০১৫)। Danger in Kashmir। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 168–। আইএসবিএন 978-1-4008-7523-8।
- ↑ Victoria Schofield (৩০ মে ২০১০)। Kashmir in Conflict: India, Pakistan and the Unending War। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 101–। আইএসবিএন 978-0-85773-078-7।
- ↑ ক খ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 159। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 160। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 160–। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
He summed up his impressions in very strong language, sharply taking India to task for its negative attitude towards the various alternative demilitarization proposals.
- ↑ ক খ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 161–। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ ক খ Raghavan, War and Peace in Modern India 2010, পৃ. 188–189।
- ↑ Snedden, Christopher (২০০৫), "Would a plebiscite have resolved the Kashmir dispute?", South Asia: Journal of South Asian Studies, 28 (1): 64–86, ডিওআই:10.1080/0085640050005614 (নিষ্ক্রিয় ২০১৯-০২-০৭)
- ↑ Josef Korbel (৮ ডিসেম্বর ২০১৫)। Danger in Kashmir। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 173–। আইএসবিএন 978-1-4008-7523-8।
- ↑ Hilal, A.Z. (১৯৯৭)। "Kashmir dispute and UN mediation efforts: An historical perspective"। Small Wars & Insurgencies। 8 (2): 75।
- ↑ Snedden, Christopher (২০০৫)। "Would a plebiscite have resolved the Kashmir dispute?"। South Asia: Journal of South Asian Studies। 28: 64–86। ডিওআই:10.1080/00856400500056145।
- ↑ Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। পৃষ্ঠা 161–162। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- ↑ Bradnock, Robert W. (৯৯৮), "Regional geopolitics in a globalising world: Kashmir in geopolitical perspective", Geopolitics, 3 (2): 11, ডিওআই:10.1080/14650049808407617
- ↑ Schofield, Kashmir in Conflict 2003, পৃ. 83।
- ↑ Victoria Schofield (২০০০)। Kashmir in Conflict: India, Pakistan and the Unending War। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 83–। আইএসবিএন 978-1-86064-898-4।
- ↑ ক খ Howard B. Schaffer (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Limits of Influence: America's Role in Kashmir। Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা 30–। আইএসবিএন 978-0-8157-0370-9।
- ↑ Schofield, Kashmir in conflict 2003, পৃ. 83-86।
- ↑ Hilal, A.Z. (১৯৯৭)। "Kashmir dispute and UN mediation efforts: An historical perspective"। Small Wars & Insurgencies। 8 (2): 76।
- ↑ ক খ Hilal, A.Z. (১৯৯৭)। "Kashmir dispute and UN mediation efforts: An historical perspective"। Small Wars & Insurgencies। 8 (2): 77।
- ↑ "Archived copy"। ২০১৭-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-২৯।
- ↑ Shucksmith, Christy; White, Nigel D. (২০১৫), "United Nations Military Observer Group in India and Pakistan (UNMOGIP)", Joachim Alexander Koops; Norrie MacQueen; Thierry Tardy; Paul D. Williams, The Oxford Handbook of United Nations Peacekeeping Operations, Oxford University Press, পৃষ্ঠা 139–, আইএসবিএন 978-0-19-968604-9 অজানা প্যারামিটার
|chapter-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
অন্যান্য সূত্র
[সম্পাদনা]- Ankit, Rakesh (২০১৩), "Britain and Kashmir, 1948: "The Arena of the UN"", Diplomacy & Statecraft, 24 (2): 273–290, ডিওআই:10.1080/09592296.2013.789771
- Bose, Sumantra (২০০৩)। Kashmir: Roots of Conflict, Paths to Peace। Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-01173-1।
- Bradnock, Robert (১৯৯৮)। "Regional geopolitics in a globalising world: Kashmir in geopolitical perspective"। Geopolitics। 3 (2)।
- Hilali, AZ (১৯৯৭)। "Kashmir dispute and UN mediation efforts: An historical perspective"। Small Wars & Insurgencies। 8 (2): 61–86।
- Howard B. Schaffer (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Limits of Influence: America's Role in Kashmir। Brookings Institution Press। আইএসবিএন 978-0-8157-0370-9।
- Howley, James (১৯৯১)। "Alive and Kicking: The Kashmir Dispute Forty Years Later"। Penn State International Law Review। 9 (1)।
- {{cite book|author=Josef Korbel|title=Danger in Kashmir|ইউআরএল=ht
- Howard B. Schaffer (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। The Limits of Influence: America's Role in Kashmir। Brookings Institution Press। আইএসবিএন 978-0-8157-0370-9।
- Howley, James (১৯৯১)। "Alive and Kicking: The Kashmir Dispute Forty Years Later"। Penn State International Law Review। 9 (1)।
- Josef Korbel (৮ ডিসেম্বর ২০১৫)। Danger in Kashmir। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-1-4008-7523-8।
- Jyoti Bhusan Das Gupta (৬ ডিসেম্বর ২০১২)। Jammu and Kashmir। Springer। আইএসবিএন 978-94-011-9231-6।
- Korbel, Josef (১৯৫৩), "The Kashmir dispute after six years", International Organization, 7 (4): 498–510, জেস্টোর 2704850, ডিওআই:10.1017/s0020818300007256
- Noorani, A. G. (২০১৪) [first published in 2013 by Tulika Books], The Kashmir Dispute, 1947-2012, Oxford University Press, আইএসবিএন 978-0-19-940018-8
- Panigrahi, D. N. (২০০৯), Jammu and Kashmir, the Cold War and the West, Routledge, আইএসবিএন 978-1-136-51751-8
- Rai, Mridu (২০০৪)। Hindu Rulers, Muslim Subjects: Islam, Rights, and the History of Kashmir। C. Hurst & Co। আইএসবিএন 978-1850656616।
- Robert J. McMahon (১৩ জুন ১৯৯৬)। The Cold War on the Periphery: The United States, India, and Pakistan। Columbia University Press। আইএসবিএন 978-0-231-51467-5।
- Schofield, Victoria (২০০৩) [First published in 2000], Kashmir in Conflict, London and New York: I. B. Taurus & Co, আইএসবিএন 978-1860648984
- Snedden, Christopher (২০১৩) [first published as The Untold Story of the People of Azad Kashmir, 2012], Kashmir: The Unwritten History, HarperCollins India, আইএসবিএন 978-9350298985
- Subbiah, Sumathi (২০০৪), "Security Council Mediation and the Kashmir Dispute: Reflections on Its Failures and Possibilities for Renewal", Boston College International and Comparative Law Review, 27 (1): 173–185
- Varshney, Ashutosh (১৯৯২)। "Three Compromised Nationalisms: Why Kashmir has been a Problem" (পিডিএফ)। Raju G. C. Thomas। Perspectives on Kashmir: the roots of conflict in South Asia। Westview Press। পৃষ্ঠা 191–234। আইএসবিএন 978-0-8133-8343-9।