আমার মন খারাপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আমার মন খারাপ উদ্ধৃতিটি বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর ছুটির আবেদনপত্রের বিষয় ছিল যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।[১] তবে তার আগে থেকে আমার মন খারাপ অনলাইনে পোস্ট দিলে শাস্তি হবে এরকম একটি গুজব ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও ট্রোল।[২]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

আবেদনপত্র[সম্পাদনা]

নিজের মন খারাপ থাকায় স্কুলে অনুপস্থিতির আবেদন করে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। যা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

রাজধানী ঢাকা শহরের ভাষা প্রদীপ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আবেদনপত্রে উল্লেখ্য করে,

জনাব
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার মন খারাপ থাকার কারণে আমি গত ৩/১১/২০২২ তারিখে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি।
অতএব বিনীত প্রার্থনা এই যে, আমাকে উক্ত একদিনের ছুটি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।[৩]

অনলাইন পোস্ট[সম্পাদনা]

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন রেগুলেশন-২০২১ নামে একটি খসড়া প্রবিধান প্রকাশ করে। খসড়াটি তৈরি হয়ে গেলে জনসাধারণের মতামতের জন্য বিটিআরসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। প্রবিধানটি নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত মতামত প্রদানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও পরে তা বর্ধিত করে ৫ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত করা হয়। যা নোটিশের মাধ্যমে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়া হয়।[৪]

এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত খসড়া প্রবিধানটির উপর মতামত প্রদানে এক ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি নামের একটি সংগঠন। যেখানে শিক্ষক, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ বক্তারা সেমিনারে খসড়া প্রবিধানের পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম মত দেন।[৫] এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদও প্রকাশ করে। তবে বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম সমকাল এ বিষয়ে ‘আজ আমার মন খারাপ’ স্ট্যাটাস দিলেও শাস্তি হতে পারে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে তা মুহুর্তেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হতে থাকে। প্রকৃত অর্থে সমকাল সংবাদ পত্রের যে অংশবিশেষের ছবি ভাইরাল হয়, সেটি যে নীতিমালার কোন অংশ নয়, বরং বক্তাদের মন্তব্যের একটি অংশ তা সুস্পষ্ট হয়নি বলে ভুল বুঝাবুঝির কারণে জনসাধারণের মাঝে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।[৬]

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য যে রেগুলেশন তৈরি করে বিটিআরসি তার কয়েকটি ধারা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। যদিও বিটিআরসি বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে কমিশন একটি নীতিমালা তৈরি করছে।[৭] ২০২২-এর ৩ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের খসড়া নীতিমালা—রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস-২০২১ সংবাদ সম্মেলনে বলে, নীতিমালার খসড়ার কয়েকটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী। খসড়ার বেশ কয়েকটি ধারা বাকস্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে।[৮]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

ছুটি প্রসঙ্গে[সম্পাদনা]

মন খারাপের কথা উল্লেখ করে শিশুশিক্ষার্থীর ছুটির আবেদনটিকে সাহসী কাজ হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক।[৯] ওই শিক্ষার্থীর ছুটির আবেদনের ভাইরাল ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী যদি এ আবেদন সত্যিই করে থাকে তা খুব প্রশংসনীয়। সে খুব সাহসী কাজ করেছে। শিক্ষকদের উচিত ছিল এই শিক্ষার্থীকে কাছে এনে তার সমস্যাটা কী বুঝতে চেষ্টা করা। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতা, বিষণ্নতার কারণেও ছুটি পেয়ে থাকে। এই শিক্ষার্থীও একই কারণে ছুটি পেতে পারে।[১]

শিশুদের মন খারাপের কথা শোনা ও তাদের কথা বলার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি আরো জানান, আমাদের সমাজে বাচ্চাদের কথা বলার সুযোগ খুব কম দেওয়া হয়। সবাই বলে চুপ থাকো, চুপ থাকো। তারা কথা বলতে না পারলে তাদের মনের মধ্যে অন্যকিছু কাজ করে। তাদের মনের মধ্যেও হতাশা, বিষণ্নতা থাকে। শারীরিক অসুস্থতার আগেও অনেকের মন খারাপ থাকতে পারে। এজন্য শিশুদের মন খারাপের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।[১০]

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়[সম্পাদনা]

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, নীতিমালায় কোথাও দেখাতে পারবেন না এমন কথা লেখা আছে। বিষয়টি নিয়ে অপব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। নীতিমালায় এমন কোনো বিষয় নেই যে মন খারাপের মতো স্ট্যাটাসে বাধা সৃষ্টি করবে[৬] এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিটিআরসি-কে ওটিটি বিষয়ক একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সেই আলোকে বিটিআরসি খসড়া তৈরি করেছে।[৮] মূলত বিটিআরসি’র খসড়া প্রবিধানের উপর মতামত দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক সুপন। যা পরবর্তীতে বিটিআরসির নতুন বিধিমালা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করে ছড়িয়ে পড়ে। ‘আজ আমার মন খারাপ’ স্ট্যাটাস দিলে শাস্তি হতে পারে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও খসড়া নীতিমালায় এমন কোনো বাক্য নেই বলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান মোস্তাফা জব্বার।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'আমার মন খারাপ', ঢাবি শিক্ষক বললেন ছেলেটি সাহসী কাজ করেছে"জাগো নিউজ। ৭ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২৩ 
  2. "'আমার মন খারাপ' পোস্ট নিয়ে যা বললেন মোস্তাফা জব্বার"দৈনিক যুগান্তর। ১৮ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "মন খারাপ থাকায় স্কুলে আসেনি ছাত্র, আবেদনের ছবি ভাইরাল"। thedailycampus.com। ৭ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  4. "নোটিশ"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. "'আজ আমার মন খারাপ' স্ট্যাটাস দিলেও শাস্তি হতে পারে"দৈনিক সমকাল । ১৬ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  6. "মন খারাপের স্ট্যাটাস নিয়ে অপব্যাখ্যা চলছে: মোস্তাফা জব্বার"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এপ্রিল ১৮, ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  7. "'আজ আমার মন খারাপ' প্রসঙ্গ খসড়া নীতিমালায় নেই"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  8. "খসড়া নীতিমালায় নেই 'আজ আমার মন খারাপ' প্রসঙ্গ"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৭ এপ্রিল ২০২২। ৮ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩ 
  9. "'আমার মন খারাপ', ঢাবি শিক্ষক বললেন ছেলেটি সাহসী কাজ করেছে"। amadershomoy.com। ৮ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  10. "'মন খারাপ' হওয়ায় ছুটির আবেদন: সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন"রাইজিংবিডি.কম। ৯ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
  11. "'আমার মন খারাপ' পোস্ট দিলে শাস্তি, খবরটি জঘন্য মিথ্যাচার'"। jagonews24। ১৮ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৩