আবদুল হক চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল হক চৌধুরী
জন্ম২৪ আগস্ট, ১৯২২,
নোয়াজিষপুর, রাউজান, চট্টগ্রাম
মৃত্যু২৬ অক্টোবর, ১৯৯৪
চট্টগ্রাম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পেশাগবেষক
পরিচিতির কারণচট্টগ্রাম, সিলেট এবং আরাকান-এর ইতিহাস নিয়ে গবেষণা
দাম্পত্য সঙ্গীজুবাইদা বানু চৌধুরী
সন্তান৭ ছেলে, ২ মেয়ে

আবদুল হক চৌধুরী (জন্ম: ২৪ আগস্ট, ১৯২২ - মৃত্যু: ২৬ অক্টোবর, ১৯৯৪)[১] চট্টলবিদ নামে পরিচিত ইতিহাসবিদ। তিনি আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের অনুসারি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম, সিলেট এবং আরাকানের ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। [২] আবদুল হক চৌধুরীর স্মৃতি রক্ষার্থে গনপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্র্ণালয় কর্তৃক নোয়াজিষপুরে স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা নির্মানাধীণ।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাউজান হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তার পিতার মৃত্যুর পর বিষয় সম্পত্তির ঝামেলায় জড়িয়ে পরায় আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার ইতি ঘটে তার। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নোয়াজিষপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।প্রথীতযশা এই গবেষক "চন্দ্রাবতী" কাব্যের রচয়িতা কবি কোরেশী মাগণ-এর সপ্তম অধস্তন পুরুষ। তার পিতা আলহাজ্জ্ব সরফুদ্দিন ইঞ্জিনিয়ার রেঙ্গুন পোর্ট কমিশন-এ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইতিহাস চর্চায় অভূতপুর্ব অবদান রাখেন। আমৃত্যু তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্য ছিলেন।

  • সদস্য: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর ট্রাস্ট ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমৃত্যু।
  • সদস্য: একুইযিশন সাব কমিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর চট্টগ্রাম
  • সদস্য: পরিচালনা পর্ষদ কুণ্ডেশ্বরী কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি)।
  • প্রাক্তন সদস্য:পরিচালনা পরিষদ- গহিরা, এ. জে .ওয়াই. এম ইনি ইনস্টিটিউশন, রাউজান, চট্টগ্রাম।
  • প্রতিষ্ঠাতা/সভাপতি, পরিচালনা পর্ষদ, নোয়াজিশপুর প্রাইমারি স্কুল, রাউজান, চট্টগ্রাম।
  • উপদেষ্টা: “গণমুখী” সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ,নোয়াজিশপুর, রাউজান, চট্টগ্রাম।
  • উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য: চট্টগ্রাম সংস্কৃতি পরিষদ, চট্টগ্রাম।
  • উপদেষ্টা: রাউজান ক্লাব।
  • সভাপতি: আবুল ফজল নাগরিক শোক সভা কমিটি, চট্টগ্রাম। ১৯৮৬ খ্রি.।
  • কার্যকরী সংসদ সদস্য: বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি ।
  • বিশেষজ্ঞ বক্তা রেডিও বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম।
  • সম্মানিত আজীবন সদস্য: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি।
  • সম্পাদনা পরিষদ সদস্য: যোগেশ চন্দ্র সিংহ স্মারক গ্রন্থ।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

আগে মনে করা হত চট্টগ্রাম পানিতে নিমজ্জিত ছিল এবং এই অঞ্চলের বিশেষ কোন ইতিহাস নেই। কিন্তু আব্দুল হক চৌধুরী প্রমাণ করেছিলেন চট্টগ্রামের সুপ্রাচীনকালের ইতিহাস। ছোটবেলা থেকেই পুঁথি সংগ্রহে তাঁর তুমুল আগ্রহ ছিল। এখান থেকেই মূলত চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে তার আগ্রহ শুরু হয়। তিনি তার জন্মস্থান রাউজানের পার্শবর্তী উপজেলা যেমন হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ইত্যাদি অঞ্চল নিয়েও গবেষণা করেন। চট্টগ্রামের নামের উৎপত্তির সবরকম উৎস তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছিলেন।[৩]

  • চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ - ১ম সংস্করণ (১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে) ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬
  • চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ - ২য় সংস্করণ ১৯৮০
  • চট্টগ্রামের চরিতাভিধান- ডিসেম্বর ১৯৭৯
  • চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি – ডিসেম্বর ১৯৮০
  • সিলেটের ইতিহাস প্রসঙ্গ – ১ম সংস্করণ ১৯৮১, ২য় সংস্করণ ১৯৯০
  • শহর চট্টগ্রামের ইতিকথা – এপ্রিল ১৯৮৫
  • চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা- বাংলা একাডেমী , মে ১৯৮৮
  • চট্টগ্রাম আরাকান – জুন ১৯৮৯
  • চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ – নভেম্বর ১৯৯২
  • প্রাচীন আরাকান, রোহিঙ্গা , হিন্দু ও বড়ুয়া, বৌদ্ধ অধিবাসী – বাংলা একাডেমী , জানুয়ারী ১৯৯৪
  • বন্দর শহর চট্টগ্রাম – বাংলা একাডেমী, ঢাকা, বাংলাদেশ, মে ১৯৯৪
  • প্রবন্ধ বিচিত্রাঃইতিহাস ও সাহিত্য- বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯৫ ইং ।

আবদুল হক চৌধুরী রচিত “ চট্টগ্রামের ইতিহাস” প্রসঙ্গ (১ম ও ২য় খণ্ড) এবং চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি” গ্রন্থ দুটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে পাঠ্যক্রমভুক্ত। তার রচনা দেশে বিদেশে লাভ করেছে অনেক খ্যাতি এবং সম্মাননা।

গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধঃ

  • সাহিত্যিক বাংলা গবেষণা সংসদ, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশিত প্রবন্ধঃ কবি শ্রীমতী রহিমুন্নিসার সময়কাল বিচার।

  • ইতিহাস- ইতিহাস পরিষদ পত্রিকা- ঢাকা।

প্রকাশিত প্রবন্ধঃ বারভূঁইয়া ঈশা খান সম্পর্কে নতুন তথ্য। ডঃ আহম্মদ শরীফকে লিখিত পত্রাবলী প্রকাশিত।

তাঁর জীবন, কর্ম ও গবেষণা সংক্রান্ত প্রকাশিত গ্রন্থাবলীঃ

  • গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর কর্মকৃতি মূল্যায়ন।

সম্পাদনায়ঃ অমিত চৌধুরী, চট্টগ্রাম। প্রকাশকালঃ ৩০/০৯/৯৫

  • আবদুল হক চৌধুরী স্মারক গ্রন্থ।

সম্পাদকঃ ডঃ মুহম্মদ মজির উদ্দিন মিয়া। ডঃ তশিকুল ইসলাম। প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রকাশকালঃ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬

  • আবদুল হক চৌধুরী ও তাঁর গবেষণা কর্ম।

ডাঃ আবদুল করিম। প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮।

আবদুল হক চৌধুরী রচনাবলীঃ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস ডঃ আবদুল করিমের সম্পাদনায় “আবদুল হক চৌধুরী রচনাবলী” এর প্রথম খণ্ড ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের অপেক্ষায়।


মুক্তিযুদ্ধে অবদান[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মহান জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদান, খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে এই মহান মানুষটি ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ পাক বাহিনীর হাতে তার তৃতীয় পুত্রসহ গ্রেফতার এবং নির্মমভাবে নির্যাতিত হন। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তিলাভ করেন।

পদক ও সংবর্ধনা[সম্পাদনা]

  • নতুন চন্দ্র সিংহ পদক -১৯৮৪
  • চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার সমন্বয় পরিষদ প্রদত্ত পদক ও সংবর্ধনা – ১৯৮৬
  • এক্স-ক্যাডেট এ্যাসোসিয়েশন – চট্টগ্রাম ইউনিট প্রদত্ত পদক ও সংবর্ধনা -১৯৮৭
  • চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি প্রদত্ত আজীবন সদস্য পদ, পদক ও সংবর্ধনা -১৯৮৭
  • চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ প্রদত্ত সংবর্ধনা – ১৯৮৭
  • খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৮৮
  • নোয়াজিশপুর অদুদ সংঘ প্রদত্ত গুণীজন সংবর্ধনা -১৯৮৯ইং।
  • চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯১
  • চট্টগ্রাম রোটারি ক্লাব প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯২
  • রোটারি ক্লাব অব ইসলামাবাদ , চট্টগ্রাম প্রদত্ত সংবর্ধনা -১৯৯৩
  • আইনজীবী সহকারী সমিতি , চট্টগ্রাম প্রদত্ত সংবর্ধনা –১৯৯৩
  • বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র প্রদত্ত গুণীজন সংবর্ধনা -১৯৯৩
  • চট্টগ্রাম সম্মিলিত ১লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ প্রদত্ত ১৪০১ বাংলা বিদায়,১৫০০ শতাব্দীর বরণ উপলক্ষে ১৪০০ শতাব্দীর বরণীয় মানুষদের সংবর্ধনা ও পদক এপ্রিল ১৫,১৯৯৪।
  • অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক-১৯৯৮, মরণোত্তর (৯/৫/১৯৯৮) প্রয়াত বরেণ্য গুণীজন ।
  • মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ-১৯৯৮, চট্টগ্রাম বিজয় মঞ্চ ১৪/১২/১৯৯৮ (মরণোত্তর) সাহিত্য পদক ও সম্মাননা।
  • গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা রাউজান আর.আর.এ.সি. হাইস্কুল শতবর্ষ উদ্‌যাপন পরিষদ,১লা এপ্রিল ২০০০,রাউজান, চট্টগ্রাম।
  • চট্টগ্রাম লোক সংস্কৃতির গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য মরণোত্তর “মহান একুশে সম্মাননা পদক প্রদান” চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন,২০ শে ফেব্রুয়ারি ২০০১
  • ঘাসফুল গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা- ৫ সেপ্টেম্বর ২০০২সরকারি বাণিজ্য কলেজ মিলনায়তন। চট্টগ্রাম।
  • হিলালি স্মৃতি স্বর্ণপদক –ডঃ সৈয়দ গোলাম মকসুদ হিলালি স্মৃতি সংসদ, রাজশাহী, ২ রা এপ্রিল ২০০৬
  • লোকসংস্কৃতি কৃতি সম্মাননা ২০০৭(মরনোত্তর) লোক উৎসব ও পুরাতনী মেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম।
  • উদয়ন সংঘ , নোয়াপাড়া, রাউজান ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতিহাসবিদ ( মরণোত্তর) সম্মাননা প্রদান। ২২ জানুয়ারি ২০১০,রাউজান, চট্টগ্রাম।
  • বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত মরণোত্তর একুশে পদক (২০১১), গবেষণায়, পদক প্রদান করেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০শে ফেব্রুয়ারি ২০১১, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, ঢাকা।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর, চট্টগ্রামে তার মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মুহম্মদ মজিরউদ্দীন মিয়া (২০১২)। "চৌধুরী, আবদুল হক"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. মুহম্মদ মজিরউদ্দীন মিয়া (২০১২)। "চৌধুরী, আবদুল হক"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. চৌধুরী, সুজয়। "ইতিহাসের আলপথে অবাধ বিচরণ"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১১ 
  • আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ, চট্টগ্রাম

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]