অ্যালেক হার্ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যালেক হার্ন
১৯০৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে অ্যালেক হার্ন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যালেক হার্ন
জন্ম(১৮৬৩-০৭-২২)২২ জুলাই ১৮৬৩
ইলিং, মিডলসেক্স
মৃত্যু১৬ মে ১৯৫২(1952-05-16) (বয়স ৮৮)
বেকেনহাম, কেন্ট
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি স্লো
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কজর্জ হার্ন (পিতা)
জর্জ গিবন্স হার্ন (ভ্রাতা)
ফ্রাঙ্ক হার্ন (ভ্রাতা)
পরিবারের অন্যান্য সদস্য
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ৭৬)
১৯ মার্চ ১৮৯২ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৮৪–১৯০৬কেন্ট
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৮৮
রানের সংখ্যা ১৬,৩৪৬
ব্যাটিং গড় ৯.০০ ২১.৬৫
১০০/৫০ ০/০ ১৫/৭১
সর্বোচ্চ রান ১৯৪
বল করেছে ৬১,০৭০
উইকেট ১,১৬০
বোলিং গড় ১৯.৯৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ৫২
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৮/১৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/– ৪০৪/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ আগস্ট ২০১৮

অ্যালেক হার্ন (ইংরেজি: Alec Hearne; জন্ম: ২২ জুলাই, ১৮৬৩ - মৃত্যু: ১৬ মে, ১৯৫২) মিডলসেক্সের ইলিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার।

১৮৮৪ থেকে ১৯০৬ সময়কালে পেশাদারী পর্যায়ে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করার পাশাপাশি ডানহাতে স্লো বোলিং করতেন।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

সুপরিচিত হার্ন পরিবারের অন্যতম সদস্যরূপে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা জর্জ হার্ন ১৮৬০-এর দশকে মিডলসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জর্জফ্রাঙ্ক হার্ন ভ্রাতৃদ্বয়সহ কাকাতো ভাই জন টমাস হার্ন - প্রত্যেকেই ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

মিডলসেক্সের তৎকালীন ইলিং এলাকায় ২২ জুলাই, ১৮৬৩ তারিখে অ্যালেক হার্নের জন্ম। তার বাবা জর্জ হার্ন মিডলসেক্সের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও পরবর্তীকালে ক্যাটফোর্ডে অবস্থিত কেন্টের প্রাইভেট ব্যাংকস স্পোর্টস গ্রাউন্ডের মাঠকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[১] এছাড়াও, বড় দুই ভাই জর্জ ও ফ্রাঙ্ক - উভয়েই কেন্টের পক্ষে খেলেছেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৮৮৪ সালে লেগ ব্রেক বোলার হিসেবে কেন্টের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে অ্যালেক হার্নের। শুষ্ক গ্রীষ্মে ৪১ উইকেট কব্জা করে ক্লাবের বোলিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন তিনি।[২][৩] ১৮৮৪ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে কেন্টের পরাজয় সত্ত্বেও খেলায় তিনি ৬৬ রান দিয়ে ৭ উইকেট দখল করেন।[১] সফরকারী অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন তিনি। ১৮৮৪ থেকে ১৮৯৯ সালের মধ্যে দলটির বিপক্ষে সাত খেলার পাঁচটিতেই কেন্টের জয়ে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন।[৪] ক্রিকেটবোদ্ধারা ইংল্যান্ডের পক্ষে তাকে না খেলানোর কারণে ব্যাপক সমালোচনায় মুখরিত হয়।[১]

১৮৮৫ সালে তিনি পুনরায় নিজেকে বোলার হিসেবে উপস্থাপনায় সচেষ্ট হন। গড়ে ১৫-এর কম খরচায় ৬৪ উইকেট দখল করেন তিনি। তন্মধ্যে ব্রামললেনে অনুষ্ঠিত অত্যন্ত ভেজা উইকেটে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলায় ৪৮ রান খরচ করে ১৩ উইকেট পেয়েছিলেন।[১][৩] বিভ্রান্তিকর ফ্লাইট এবং বলের উপর চমৎকার নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক নিশানা বজায় রেখে বোলিং করতেন।[৫] খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করার পর থেকে অফ ব্রেক বোলার হিসেবে তার সম্যক পরিচিতি ছিল। কিন্তু লেগ ব্রেক বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পরার পর থেকে আঘাত তার নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়ে। ১৮৮৮ সালে তিনি প্রায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের বোলিং গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন। ১১ রানেরও কম গড়ে ৪১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[১] একই সময়ে তার ব্যাটিংয়েরও উত্তরণ ঘটতে থাকে আশাতীতভাবে যা তাকে কার্যকরী অল-রাউন্ডারে পরিণত করে। পনেরোটি প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি রয়েছে তার।[১][৫]

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৮৯১-৯২ মৌসুমে ওয়াল্টার রিড একাদশের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়। একই সময়ে ডব্লিউ জি গ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের আরেকটি দল অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যস্ত ছিল। ঐ সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে একটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলা অনুষ্ঠিত হয় ও খেলাটিকে স্মরণীয় করে রাখতে টেস্ট খেলার মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল। খেলায় তিনি মাত্র নয় রান তুলতে পেরেছিলেন।[৬] কেপ টাউনে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে সহোদর জর্জ ও কাকাতো ভাই হার্নের সাথে একযোগে অংশ নেন। তার অন্য ভাই ফ্রাঙ্ক হার্ন পূর্বে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে খেলেছিলেন।[৫][৭][৮]

অর্জনসমূহ[সম্পাদনা]

১৮৯৯ সালে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে জ্যাক ম্যাসনের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৩২১ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। কাউন্টির ইতিহাসে এ জুটির সংগ্রহটি সর্বোচ্চ সংগ্রহরূপে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত টিকেছিল। এছাড়াও, কেন্টের এ রেকর্ডটি ২০০৫ সাল তৃতীয় উইকেট জুটিরূপে পর্যন্ত টিকেছিল।[৯][১০][১১] ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ সংগ্রটি কেন্টের ইতিহাসে যে-কোন উইকেটে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ জুটিরূপে স্বীকৃত।

কেন্ট থেকে খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ক্লাবের ইতিহাসে তিনি শীর্ষ রান সংগ্রহকারী ও সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী ছিলেন। কেন্টের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০০০ রান ও ১০০০ উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল পেয়েছেন। অন্য আরেকজন হিসেবে ফ্রাঙ্ক ওলি এ নজির স্থাপন করেছিলেন।[১২]

সর্বমোট ২৩ মৌসুম প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন অ্যালেক হার্ন। ১৯০৬ সালে সর্বশেষ কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঐ মৌসুমে কেন্ট কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় দলের বিপক্ষে পাঁচটি খেলাসহ ১৯০৮ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে চার খেলায় অংশ নিয়েছেন। সর্বমোট ৫১বার এমসিসি, ১২বার সাউথ ও ৪বার প্লেয়ার্সের পক্ষে খেলেছেন তিনি।[১৩]

ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

পরিচ্ছন্ন ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন অ্যালেক হার্ন। কাট শটের পাশাপাশি কার্যকর হুক শটে সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি।[১] পিছনের পায়ের উপর ভর দিয়ে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। প্রায়শঃই বলকে কাট করে স্লিপ অঞ্চলের উপর দিয়ে মারতেন।[৫]

অবসর[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কাউন্টির অন্যতম খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কেন্টেরর টনব্রিজ নার্সারিতে কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯২৫ সালে অপর কাকাতো ভাই ওয়াল্টার হার্নের কাছ থেকে কেন্টের স্কোরারের দায়িত্বভার লাভ করেন ও ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯১৬ সালে স্বীয় ভ্রাতা জর্জ হানের পত্নী মেরি শ্যারনের মৃত্যুর পর অ্যালেক হার্ন তার অবিবাহিতা কন্যা মাবেলকে বিয়ে করেন।[১৪] ১৬ মে, ১৯৫২ তারিখে বেকেনহামে ৮৮ বছর বয়সে অ্যালেক হার্নের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hearne, Alec, Obituaries in 1952, Wisden Cricketers' Almanack, 1953. Retrieved 6 April 2016.
  2. Pardon CF (ed) Wisden Cricketers’ Almanack, 1885 p.200
  3. Alec Hearne – Cricketer of the Year 1894, Wisden Cricketers' Almanack, 1895. Retrieved 6 April 2016.
  4. A Brief History, Kent County Cricket Club. Retrieved 6 April 2016.
  5. Liverman D (2003) A profile of Alec Hearne, CricketArchive, 2003. Retrieved 8 April 2016.
  6. The English team in South Africa 1891–92, Wisden Cricketers' Almanack, 1893. Retrieved 6 April 2016.
  7. Williamson M, Miller A (2006) Identity crisis, CricInfo, 10 October 2006. Retrieved 2016-04-05.
  8. Findall B (2010) The Wisden Book of Test Cricket, 1877–1977. (Available online, retrieved 6 April 2016).
  9. Foot D (2005) Surrey docked eight points for ball tampering, The Guardian, 28 May 2005. Retrieved 2016-04-06.
  10. Families of former players receive club caps in ceremony, Kent County Cricket Club, 28 June 2015. Retrieved 2016-04-06.
  11. Mason, Mr John Richard, Obituaries in 1958, Wisden Cricketers' Almanack, 1959. Retrieved 2016-04-07.
  12. Moseling M, Quarrington T (2013) A Half-Forgotten Triumph, p.5. Cheltenham: Sportsbooks.
  13. First-class batting and fielding for each team by Alec Hearne, CricketArchive. Retrieved 6 April 2016.
  14. Ambrose D (2003) Brief profile of GG Hearne, CricketArchive. Retrieved 2017-10-29.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]