অধিকরণ কারক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ব্যাকরণ শাস্ত্রে, অধিকরণ কারক বলতে ক্রিয়া সম্পাদনের সময় এবং আধারকে নির্দেশ করে।[১] ক্রিয়াকে "কখন" ও "কোথায়" দ্বারা প্রশ্ন করলে উত্তরে অধিকরণ কারক পাওয়া যায়। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ '-এ' '-য়' '-তে' ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়।

উদাহরণ:
আধার (স্থান): আমরা রোজ স্কুলে যাই। এ বাড়িতে কেউ নেই।
কাল (সময়): প্রভাতে সূর্য ওঠে। বসন্তে কোকিল ডাকে।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথা-
১. কালাধিকরণ,
২. আধারাধিকরণ এবং
৩. ভাবাধিকরণ

কালাধিকরণ[সম্পাদনা]

যে সময় ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালাধিকরণ কারক বলে।[২]

উদাহরণ: শরতে (কখন? - শরৎ) শাপলা ফোটে।

আধারাধিকরণ[সম্পাদনা]

আধারাধিকরণ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:- ১. ঐকদেশিক, ২. অভিব্যাপক এবং ৩. বৈষয়িক।

ঐকদেশিক[সম্পাদনা]

বিশাল স্থানের যে কোনো এক অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। সামীপ্য অর্থেও ঐকদেশিক অধিকরণ হয়।

উদাহরণ:
পুকুরে মাছ আছে। (পুকুরের যে কোনো একস্থানে)
বনে বাঘ আছে। (বনের যে কোনো এক অংশে)
আকাশে চাঁদ উঠেছে। (আকাশের কোনো এক অংশে)
ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (ঘাটের কাছে)
'দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেহ তারে। (দুয়ারের কাছে)
রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা।

অভিব্যাপক[সম্পাদনা]

উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে।

উদাহরণ:
তিলে তৈল আছে। (তিলের সারা অংশব্যাপী)
নদীতে পানি আছে। (নদীর সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে)

বৈষয়িক[সম্পাদনা]

বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কারও কোনো দক্ষতা বা ক্ষমতা থাকলে সেখানে বৈষয়িক অধিকরণ হয়।

উদাহরণ:
রাকিব অঙ্কে কাঁচা, কিন্তু ব্যাকরণে ভালো।
আমাদের সেনারা সাহসে দুর্জয়, যুদ্ধে অপরাজেয়।

ভাবাধিকরণ[সম্পাদনা]

যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তবে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে একে 'ভাবে সপ্তমী' বলা হয়।

উদাহরণ:
সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়। হাসিতে মুক্তা ঝরে। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। (সপ্তমী বিভক্তি)

অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার[সম্পাদনা]

(ক) প্রথমা বা শুন্য বিভক্তি আমি ঢাকা যাব।
বাবা বাড়ি নেই।
আগামীকাল বাড়ি যাব।
আকাশ মেঘে ঢাকা।
সারারাত বৃষ্টি হয়েছে।
(খ) দ্বিতীয়া বিভক্তি মন আমার নাচে রে আজিকে
(গ) তৃতীয়া বিভক্তি খিলিপান (এর ভিতর) দিয়ে ওষুধ খাবে।
(ঘ) পঞ্চমী বিভক্তি বাড়ি/ ছাদ থেকে নদী দেখা যায়।
(ঙ) ষষ্ঠী বিভক্তি
(চ) সপ্তমী বা এ বিভক্তি কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।
'গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।'
আকাশে চাঁদ উঠেছে।
বনে বাঘ আছে।
ছাদে বৃষ্টি পড়ে।
ছেলেটি অঙ্কে কাঁচা।
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।
ঝিনুকে মুক্তা আছে।/ সব ঝিনুকে মুক্তা মেলে না।
তিনি ব্যাকরণে পণ্ডিত।
তার ধর্মে মতি আছে।
সরোবরে পদ্ম জন্মে।
সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেব কোথা?
সমুদ্রজলে লবণ আছে।
আমরা রোজ স্কুলে যাই।
প্রভাতে সূর্য ওঠে।
বসন্তে কোকিল ডাকে।
সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়।
ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে।
'দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেহ তারে।'
রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা।
তিলে তৈল আছে।
দেহে প্রাণ নেই।
তে বিভক্তি বাড়িতে কেউ নেই।
নদীতে মাছ/পানি আছে।
জমিতে সোনা ফলে।
ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।
য় বিভক্তি কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।
জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।

অধিকরণ কারকে অনুসর্গের ব্যবহার: ঘরের মধ্যে কে রে? তোমার আসন পাতিব হাটের মাঝে

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ
  2. বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, সপ্তম শ্রেণি, শিক্ষাবর্ষ ২০১৬, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, বাংলাদেশ