মিহরিমাহ সুলতান (শাহজাদা জিয়াউদ্দিনের কন্যা)
মিহরিমাহ সুলতান | |
---|---|
জন্ম | হায়দারপাশা ভিলা, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক | ১৪ এপ্রিল ১৯২৩
মৃত্যু | ৩০ মার্চ ২০০০ আম্মান, জর্ডান | (বয়স ৭৬)
সমাধি | পঞ্চম মেহমেদ সমাধিসৌধ, ইস্তাম্বুল |
দাম্পত্য সঙ্গী | যুবরাজ নায়েফ বিন আব্দুল্লাহ (বি. ১৯৪০; মৃ. ১৯৮৩) |
বংশধর |
|
রাজবংশ | উসমানীয় (জন্মসূত্রে) হাশিম (বিবাহের মাধ্যমে) |
পিতা | শাহজাদা মেহমেদ জিয়াউদ্দিন |
মাতা | নেসেমেন্ড হানিম |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
মিহরিমাহ সুলতান (উসমানীয় তুর্কি: مھرماہ سلطان; ১৪ এপ্রিল ১৯২৩ – ৩০ মার্চ ২০০০) ছিলেন একজন উসমানীয় শাহজাদী। তিনি শাহজাদা মেহমেদ জিয়াউদ্দিনের কন্যা, যিনি পঞ্চম মেহমেদের পুত্র ছিলেন। তিনি ট্রান্সজর্ডান আমিরাতের প্রথম আবদুল্লাহর পুত্র যুবরাজ নায়েফ বিন আব্দুল্লাহর স্ত্রী ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মিহরিমাহ সুলতান ১৯২৩ সালের ১৪ এপ্রিল তুরস্কের হায়দারপাশায় অবস্থিত তার বাবার ভিলায় জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতা ছিলেন শাহজাদা মেহমেদ জিয়াউদ্দিন। যিনি সুলতান পঞ্চম মেহমেদ এবং কামুরেস কাদিনের পুত্র ছিলেন। তার মা ছিলেন নেসেমেন্ড হানিম। তিনি ছিলেন তার পিতার অষ্টম সন্তান এবং কনিষ্ঠ কন্যা এবং তার মায়ের একমাত্র সন্তান।[২]
তার চোখের মণি সবুজ রঙের ছিল।[৩] তিনি তার মায়ের সাথে তার বাবার ভিলায় দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। তার বাবা তার মাকে তালাক দেওয়ার পরে, ভিলাটি তার মা দখল করেছিলেন।[৪] ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। যার ফলে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ খিলাফত বিলুপ্ত করা হয় এবং রাজকীয় পরিবারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।[৫] রাজকন্যা তার পরিবারের সাথে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় বসতি স্থাপন করেন।[২] ১৯৩৪ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান[৬] এবং ১৯৩৮ সালে পনেরো বছর বয়সে তার বাবাকে হারান।[২][৭] তিনি প্যারিস এবং কায়রোতে পড়াশোনা করেছিলেন।[৮]
বিবাহ
[সম্পাদনা]১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জর্ডানের রাজা প্রথম আবদুল্লাহর কনিষ্ঠ পুত্র যুবরাজ নায়েফ বিন আব্দুল্লাহকে বিয়ে করেছিলেন।[১][৯] ১৯৪০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের বিবাহের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৪০ সালের ৭ অক্টোবর মিহরিমার বড় বোন লুৎফিয়ে সুলতানের ভিলায় বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।[১০] বিবাহটি জর্ডানে একটি প্রধান জাতীয় অনুষ্ঠান ছিল। যা সাত দিন এবং সাত রাত স্থায়ী ছিল।[৮]
বিয়ের পর তারা জর্ডানের রাজধানী আম্মানে চলে যান। জর্ডানে তাকে "রাজকন্যা মিহরিমাহ নাইফ" বলে ডাকা হত।[৩] ১৯৪১ সালের ১০ আগস্ট তার প্রথম সন্তান যুবরাজ আলী বিন নায়েফের জন্ম হয়। অতঃপর ১৯৪৮ সালের ২৭ এপ্রিল তার আরেক পুত্র যুবরাজ আসেম বিন নায়েফ জন্মগ্রহণ করেন।[২][১১] তিনি অন্যান্য মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীন ছিলেন এবং অন্যান্য মহিলারা কালো ওড়নার আড়ালে তাদের মুখ লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু তিনি তার অর্ধেক মুখ ঢেকে রাখার জন্য কেবল একটি হালকা স্বচ্ছ পর্দা ব্যবহার করতেন।[৮]
বাদশাহ আবদুল্লাহ জেরুজালেমে নিহত হওয়ার পর তার বড় ছেলে তালাল ১৯৫১ সালে জর্ডানের বাদশাহ হন এবং তার স্বামী নায়েফ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। কিন্তু রাজা তালাল তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাকে পদচ্যুত করা হয় এবং ১৯৫২ সালে ইস্তাম্বুলে প্রেরণ করা হয়, যেখানে তিনি বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন। অতঃপর যুবরাজ নায়েফ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বলেছিলেন "আমি রাজনীতিতে আগ্রহী নই"। এরপর তালালের বড় ছেলে হুসাইন সিংহাসনে আরোহণ করেন। মিহরিমাহ এবং যুবরাজ নায়েফ রাজবংশের সিনিয়র সদস্য হিসাবে আম্মানে বসবাস করতেন।[৩]
পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯৮৩ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর পর, তিনি কিছু সময়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং জর্ডানে ফিরে আসেন।[৩] তিনি সাতাত্তর বছর বয়সে ২০০০ সালের ৩০ মার্চ আম্মানে মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ ছিল ব্লাড ক্যান্সার।[১][৩] তার শেষকৃত্যে তুরস্কে বসবাসরত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ২০০০ সালের ২ এপ্রিল ইস্তাম্বুলের আইয়ুপে তার দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।[১][২][৩]
বংশধর
[সম্পাদনা]মিহরিমাহ সুলতানের দুইজন পুত্র ছিল:[১২]
- যুবরাজ সুলতানজাদে আলী বিন নায়েফ (জন্ম: ১০ আগস্ট ১৯৪১)। তিনি ১৯৬৬ সালের ১১ এপ্রিল উইজদান মুহানাকে (জন্ম: ১৯৩৯, বাগদাদ) বিয়ে করেন। তাদের তিনজন কন্যা এবং একজন পুত্র রয়েছে:
- রাজকন্যা নাফা বিন আলী (জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৬৬)
- রাজকন্যা রাজওয়া বিন আলী (জন্ম: ২৯ জুন ১৯৬৮)
- রাজকন্যা বাসমা ফাতিমা বিন আলী (জন্ম: ২৪ মার্চ ১৯৭০)
- যুবরাজ মুহাম্মদ আব্বাস বিন আলী (জন্ম: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩)
- যুবরাজ আসেম বিন নায়েফ (জন্ম ২৭ এপ্রিল ১৯৪৮)। তিনি দুইবার বিয়ে করেন:
- ফিরোজেহ ভখশৌরি। তাদের তিনজন কন্যা রয়েছে:
- রাজকন্যা ইয়াসমিন বিন আসেম (জন্ম: ৩০ জুন ১৯৭৫), ২ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
- রাজকন্যা সারা বিনতে আসেম (জন্ম: ১২ আগস্ট ১৯৭৮), ২০০৮ সালের ২৬ জুন আলেজান্দ্রো গ্যারিডোকে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
- রাজকন্যা নূর বিনতে আসেম (জন্ম: ৬ অক্টোবর ১৯৮২), ২৯ আগস্ট ২০০৩ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত হামযাহ বিন হুসাইনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৮ সালের ২২ জুন আমর জেদানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই ছেলে রয়েছে।
- রাজকন্যা সানা আসেম। তাদের দুইজন কন্যা এবং একজন পুত্র রয়েছে:
- রাজকন্যা সালহা বিনতে আসেম (জন্ম: ১৪ জুন ১৯৮৭), ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল মোহাম্মদ হাশিম হাজ-হাসানকে বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।
- রাজকন্যা নেজলা বিনতে আসেম (জন্ম: ৯ মে ১৯৮৮), ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর নাসের ওসামা তালহুনিকে বিয়ে করেন। তাদের দুইজন সন্তান রয়েছে।
- যুবরাজ নায়েফ বিন আসেম (জন্ম: ২২ জানুয়ারি ১৯৯৮), ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল শরিফা ফারাহ আল-হুওয়াইমাকে বিয়ে করেন।
- ফিরোজেহ ভখশৌরি। তাদের তিনজন কন্যা রয়েছে:
পূর্বপুরুষ
[সম্পাদনা]মিহরিমাহ সুলতান (শাহজাদা জিয়াউদ্দিনের কন্যা)-এর পূর্বপুরুষ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থসূত্র
[সম্পাদনা]- Brookes, Douglas Scott (২০১০)। The Concubine, the Princess, and the Teacher: Voices from the Ottoman Harem [উপপত্নী, শাহজাদী এবং শিক্ষক: উসমানীয় হারেমের কণ্ঠস্বর]। University of Texas Press। আইএসবিএন 978-0-292-78335-5।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ Brookes 2010, পৃ. 284।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Adra, Jamil (২০০৫)। Genealogy of the Imperial Ottoman Family 2005 [উসমানীয় পরিবারের বংশতালিকা ২০০৫]। পৃষ্ঠা 32।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Prenses Mihrimah'ın son yolculuğu" [রাজকন্যা মিহরিমার শেষ যাত্রা]। Hürriyet। ২ এপ্রিল ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ Brookes 2010, পৃ. 264–265।
- ↑ Brookes 2010, পৃ. 264 n. 61।
- ↑ Brookes 2010, পৃ. 286।
- ↑ Brookes 2010, পৃ. 291।
- ↑ ক খ গ Shumsky, Adaia; Shumsky, Abraham (১৯৯৭)। A Bridge Across the Jordan: The Friendship Between a Jewish Carpenter and the King of Jordan [জর্ডান জুড়ে একটি সেতু: একজন ইহুদি ছুতার এবং জর্ডানের রাজার মধ্যে বন্ধুত্ব]। Arcade Pub.। পৃষ্ঠা 103–104। আইএসবিএন 978-1-55970-391-8।
- ↑ Farah, Caesar E. (২০০৮)। Abdülhamid II and the Muslim World [দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ও মুসলিম বিশ্ব]। Publications of Yıldız Yayıncılık, Reklamcılık। Foundation for Research on Islamic history, Art and History। পৃষ্ঠা 398। আইএসবিএন 978-975-7874-31-7।
- ↑ "MAADI'S OTTOMANS" [মাদির উসমানীয়]। egy.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ "The Royal Jordanian Family Tree" [রাজকীয় জর্ডানি পরিবার বৃক্ষ]। ৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০২০।
- ↑ Adra, Jamil (২০০৫)। Genealogy of the Imperial Ottoman Family 2005 [উসমানীয় পরিবারের বংশতালিকা ২০০৫]। পৃষ্ঠা 32–33।