ক্রিকেট পরিসংখ্যানসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ক্রিকেট এমন একটি খেলা যা বড় রকমের পরিসংখ্যান তৈরী করে।

খেলা চলাকালে একজন খেলোয়াড়ের প্রতিটি পরিসংখ্যান রেকর্ড করা হয়, যা প্রতিনিয়ত উক্ত খেলোয়াড়ের জীবনের সমষ্টিগত পরিসংখ্যান তৈরী করে। পেশাদার পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের পরিসংখ্যান আলাদাভাবে রেকর্ড করা হয়, তবে, টেস্ট ম্যাচগুলি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটর একটি ফর্ম হওয়ায়, খেলোয়াড়দের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটর পরিসংখ্যান তাদের টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যানের সাথে অন্তভূক্ত করবে, এরা বিপরীত নয়। আজকাল সীমিত ওভারের খেলা লিস্ট এ ম্যাচ এবং টুয়েন্টি২০ খেলার পরিসংখ্যানও রাখা হয়। এই খেলাগুলো সীমিত ওভারে জাতীয় পর্যায়ে দেশীয় ভাবে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর সাথে খেলা হয়ে থাকে। যেহেতু একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো লিস্ট এ ম্যাচের তালিকার সীমিত ওভারের একটি ফর্ম, তাই খেলোয়াড়দের লিস্ট এ পরিসংখ্যান ওডিআই পরিসংখ্যানের সাথে একীভূত হবে, কখনো বিপরীত হবে না।

সাধারণ পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

  • ম্যাচ (ম্যা / ম) : খেলা হয়েছে এমন ম্যাচের সংখ্যা (এছাড়াও খেলা হয়েছে (প্ল))
  • ক্যাচেজ(ক্যা): ধরা ক্যাচের সংখ্যা
  • স্ট্যাম্পিং (স্ট): উইকেট-রক্ষক হিসাবে স্ট্যাম্পিং এর সংখ্যা।

ব্যাটিং পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

  • ইনিংস (ই): ব্যাটসম্যান কর্তৃক প্রকৃতপক্ষ ব্যাট করা ইনিংস এর সংখ্যা।
  • অপরাজিত (অপ): ব্যাটসম্যান কর্তৃক ব্যাট করা ইনিংস যেখানে ম্যাচ শেষ হওয়া অবধি ব্যাটসম্যান অপরাজিত (আউট হয়নি এমন) ছিলেন তার অবস্থা বুঝায়।
  • রান : অর্জিত রানের সংখ্যা।
  • ৪: ব্যাটসম্যানদের অর্জিত ৪ এর সংখ্যা।
  • ৬: ব্যাটসম্যানদের অর্জিত ৬ এর সংখ্যা।
  • সর্বোচ্চ স্কোর (সেরা/স.স্কো) : ব্যাটসম্যানদের দ্বারা অর্জিত সর্বোচ্চ স্কোর।
  • ব্যাটিংয়ের গড় (গড়) : ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়া ইনিংসের মোট সংখ্যাগুলো দিয়ে মোট রানকে ভাগ করে প্রাপ্ত সংখ্যা। (গড়= রান/ইনিংস-অপরাজিত)।
  • শতক (১০০) : ব্যাটসম্যানের শততম রান বা বেশি রান করা ইনিংসের সংখ্যা।
  • অর্ধ-শতক (৫০) : ব্যাটসম্যান যে সকল ইনিংস এ পঞ্চাশ থেকে নিরানব্বই পর্যন্ত রান অর্জন করেছে তার সংখ্যা (শতক-এর রান অর্ধ-শতকে গণনা করা হয় না)।
  • বল মুখোমুখি (ব.এফ): একজন খেলোয়াড়ের নো বোল সহ মুখোমুখি হওয়া বলের সংখ্যা। ওয়াইড বল গণ্য নয়।
  • স্ট্রাইক রেট (এসআর): প্রতি ১০০ বলের স্কোর কৃত রানের গড় সংখ্যা। (স্ট্র.রে = [১০০ * রান]/ব.এফ)
  • রান রেট (আরআর): (ব্যাটিং সাইড) ৬ বলের একটি ওভারে একজন ব্যাটসম্যান কর্তৃক স্কোর করা রানের গড়।
  • নেট রান রেট (এনআরআর): সীমিত ওভারের খেলায় সমান পয়েন্ট অর্জিত টীমের র‍্যাংকিং এর জন্য একটি পদ্ধতি।

ব্যাটসম্যানদেরকে যদি কোন নির্দিষ্ট ইনিংসে (জয় বা ঘোষণা ঘোষণার কারণে) ব্যাট করতে না হয়, তবে তারা "অপরাজিত" বলে বিবেচিত হবে না। কেবল মাত্র যারা খেলা চলাকালে ক্রিজে ছিলেন এবং ইনিংস শেষ হওয়া পর্যন্ত আউট হয়নি, তাদেরকেই স্কোর বোর্ডে "অপরাজিত" চিহ্নিত করা হয়। পরিসংখ্যান গত উদ্দেশ্য আঘাত প্রাপ্ত বা অসুস্থতার কারণে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাটসম্যানদেরকেও এই বিবেচনায় আনা হয় না,[১] অন্য কোন কারণের জন্য অবসর গ্রহণকারী ব্যাটসম্যানরা ব্যতিক্রম[২] বলে বিবেচিত হয়(১৯৮৩ সালে গর্ডন গ্রীনিজ, ১৫৪ রানে আউট নয়),[৩] টেস্ট ম্যাচ চলাকালে তার কন্যা অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ায় ম্যাচ ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয়, পরবর্তীতে তার কন্যা মারা যান। এটাই ছিল ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত বিবেচিত হয়।

বোলিং পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

  • ওভারস (ও): বোলিং করা ওভারের সংখ্যা।
  • বল (বি): বোলার কর্তৃক করা মোট বলের সংখ্যা। ওভার হল আরো প্রথাগত, কিন্তু বল হচ্ছে পরিসংখ্যানের ইতিহাসে অধিক কার্যকরী, কারণ বলের সংখ্যা বিভিন্ন ওভারে ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • ম্যাডেন ওভার (এম): যে সকল ওভার কোন রান না দিয়ে বোলার সম্পন্ন করে। (ওভারে শূন্য রান)।
  • রান (আর): মোট উৎপাতিদ রানের সংখ্যা।
  • উইকেট (উই): উইকেটের সংখ্যা বুঝায়।
  • বোলিং বিশ্লেষণ (বিএ বা ওএমআরউই) : সংক্ষিপ্ত হিসাবে পর্যায়ক্রমে একজন বলারের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে ওভারস, ম্যাডেন, রানস এবং প্রাপ্ত উইকেটকে বুঝায়। সাধারণত একজন বোলারের একটি ইনিংসের পরিসংখ্যান বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যবর্তী পরিসংখ্যানকে বুঝায়। উদাহরণ স্বরূপ : ১০-০৩-২৭-২ এটি বুঝায় বোলার ১০টি ওভার করে ৩ ওভার ম্যাডেন, ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছে।
  • নো-বল (এনবি) : কোন বোলারের করা নো বলের সংখ্যা।
  • ওয়াইড (ওড): সর্বমোট ওয়াইড বলের সংখ্যা।
  • বোলিং গড় (গড়) : প্রতি উইকেটে গড় রানের সংখ্যা (গড় = রান/উই)
  • স্ট্রাইক রেট (এসআর): প্রতি উইকেটে বোলিংয়ের গড় সংখ্যা নেওয়া। (এসআর=বল/উই)
  • ইকোনমিক রেট (ইকন) : ওভারে প্রদত্ত রানের গড় (ইকন = রান/ওভার বোল্ড)
  • সেরা বোলিং (বিবি): বোলারের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স, প্রথমত সর্বশ্রেষ্ঠ উইকেট হিসাবে সংজ্ঞায়িত, দ্বিতীয়ত সেই সংখ্যক উইকেটের জন্য প্রদত্ত সবচেয়ে কম রান। (যেমন, ১০২ রানের জন্য ৭ উইকেট এর পারফরম্যান্স এর তুলনা ১৯ রানের জন্য ৬ উইকেট কে ভাল বলে মনে করা হয়।)
    • বিবিআই বলতে শুধুমাত্র একটি ইনিংসের জন্য সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ব্যাখ্যা করে।
    • বিবিএম একটি ম্যাচের এক বা দুই বা ততোধিক ইনিংসের সম্মিলিত স্কোরকে নির্দেশ করে। (সীমিত ওভারের ম্যাচের ক্ষেত্রে প্রতি ইনিংসে স্কোরটি বিবিআই বা বিবি এর সমান)।
  • এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট (৫উই): কোন বোলার একটি ইনিংসে ৫টি উইকেট নিয়েছে এমন ইনিংস এর সংখ্যাকে বুঝায়। এক ইনিংসে ৪ উইকেট (৪উই)ও একইভাবে কোন বোলারের ৪ উইকেট নেয়া ইনিংসের সংখ্যাকে বুঝায়।
  • এক ম্যাচে ১০ উইকেট (১০উই): বোলারের পক্ষে কমপক্ষে ১০ উইকেট নেয়া ম্যাচগুলির সংখ্যা বুঝায়, এটি কেবল টেস্ট ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাচের রেকর্ডগুলোর পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত হয়।

উপস্থাপন : বোলার < ওভারের সংখ্যা> - <ম্যাডেন সংখ্যা> - <প্রদত্ত রান> - <প্রাপ্ত উইকেট>

গতিশীল এবং গ্রাফিক্যাল পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

পেশাদার ক্রিকেটের টেলিভিশন সম্প্রচারে দর্শকদের জন্য পরিসংখ্যানগত তথ্য উপস্থাপনের জন্য নতুন এবং আকর্ষনীয় বিভিন্ন উপায় সম্পৃক্ত করেছে। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিসংখ্যান উপস্থাপনের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন উপায় আবিষ্কার করেছে।

এগুলির মধ্যে রয়েছে দ্বিমাত্রিক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক প্লট এবং ক্রিকেটের মাঠের ওভারহেড ভিউয়ের দুরত্ব,[৪] (যাকে সাধারণ ভাষায় ওয়াগন-হোইল বলা হয়) দেখিয়ে থাকে। অন্যান্য উপায়গুলোর মধ্যে খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে বা ম্যাচের স্কোরকৃত রান বা বোলিং করা ওভারের গ্রাফ তৈরী করে। কম্পিউটার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণকৃত এসব গ্রাফ গতিশীল, যা ম্যাচ বা ইনিংস চলাকালে উক্ত পরিসংখ্যান পরিবর্তন করা যেতে পারে। সাধারণভাবে ব্যবহৃত গ্রাফিক্স বিশেষত সীমিত ওভারের খেলার সময় ব্যবহার করা হয়, যাকে বলা হয় ওয়ার্ম গ্রাফ,[৫] যাতে ওভার বৃদ্ধির সাথে সাথে টীমের অবস্থান ও স্কোর বাড়তে থাকে। অপরভাবে একে ম্যানহাটান এর স্কাইলাইনের অনুরূপতার জন্য একে ম্যানহাটান চার্টও বলা হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Full Scorecard of Australia vs England 3rd Test 1933 - Score Report -- ESPNcricinfo.com" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  2. "Full Scorecard of Sri Lanka vs Bangladesh, Asian Test Championship, 2nd Match - Score Report ESPNcricinfo.com"ESPNcricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  3. "Full Scorecard of West Indies vs India 5th Test 1983 - Score Report - ESPNcricinfo.com"ESPNcricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  4. "Hawk-Eye Technology: What is it All About?- Technology News, Firstpost"Tech2। ২০১১-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  5. "ওর্ম গ্রাফের ডাটা সম্পাদনা, বল বাই বল" (পিডিএফ)kheljournal.com। ২০১৮-০৮-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 

বহিসংযোগ[সম্পাদনা]