তিনসুকিয়া গণহত্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিনসুকিয়া গণহত্যা
তিনসুকিয়া গণহত্যা আসাম-এ অবস্থিত
তিনসুকিয়া গণহত্যা
স্থানখেরবাড়ি, তিনসুকিয়া জেলা, আসাম, ভারত
তারিখ১ নভেম্বর, ২০১৮ (UTC+০৫:৩০)
লক্ষ্যবাঙালি হিন্দু
হামলার ধরনগণহত্যা
ব্যবহৃত অস্ত্রআগ্নেয়াস্ত্র
নিহত৫ জন পুরুষ
আহত
হামলাকারী দলইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (স্বাধীন) (সন্দেহভাজন)

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সন্দেহভাজন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (স্বাধীন) বা আলফা (স্বাধীন) জঙ্গিরা আসামের তিনসুকিয়া জেলার খেরবাড়ি গ্রামের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে পাঁচ জন বাঙালি হিন্দুকে হত্যা করে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এই গণহত্যার নিন্দা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা করে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য এনআরসি কর্মসূচিকে দায়ী করেন।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

১৩ অক্টোবর আলফা (ইন্ডিপেনডেন্ট) গুয়াহাটিতে একটি নাতিতীব্র বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এনআরসি কর্মসূচিতে নাম না ওঠা বাঙালি হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদী বাঙালি হিন্দু সংগঠনগুলির হুমকি দেয়।[১] আলফা দাবি করে বাঙালি হিন্দু সংগঠনগুলি আসামের স্থানীয় অধিবাসীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে এবং আসামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

গণহত্যা[সম্পাদনা]

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলা খেরবাড়ি গ্রামে ছয়-সাতজন বাঙালি হিন্দু যুবক একটি দোকানে বিশ্রাম করছিলেন এবং লুডো খেলছিলেন। সন্ধ্যে সাড়ে আটটা নাগাদ পাঁচ-ছয় জন অপরিচিত বন্দুকবাজ সেখানে উপস্থিত হয় এবং সেই যুবকদের ঘিরে ধরে। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ধোলা-সাদিয়া সেতুর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে। বন্দুকবাজেরা সেই যুবকদের একটি সারে বসতে বাধ্য করে। ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ সেই বন্দুকবাজেরা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সেই যুবকদের উপর গুলি বর্ষণ করে। সাতজনের মধ্যে দু'জন সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। অপর দু'জন সংকটজনকভাবে আহত হন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনসুকিয়া গণহত্যা কাণ্ডে মৃতদের মধ্যে অনন্ত বিশ্বাস (১৮), অবিনাশ বিশ্বাস (২৩) ও শ্যামলাল বিশ্বাস (৬০) একই পরিবারের সদস্য। অপর দু'জনের নাম সুবল দাস (৬০) ও ধনঞ্জয় নমশূদ্র (২৩)। আহত ব্যক্তির নাম সহদেব নমশূদ্র।[২][৩]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এই গণহত্যার নিন্দা করেন। শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেবও এই গণহত্যার নিন্দা করেন।[৪] পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে এর জন্য এনআরসি প্রক্রিয়াকে দায়ী করেন।

সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এই গণহত্যার প্রতিবাদে ২ অক্টোবর দুপুর ১টায় কলকাতায় একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। লোকসভা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন। যাদবপুর অঞ্চলের ৮বি বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হয় হাজরা মোড়ে। সেখানে আয়োজিত জনসভাতেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় "বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে নিরাপরাধ বাঙালিদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা" করেন। তৃণমূল কংগ্রেস উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা করে। অন্যদিকে অল আসাম বেঙ্গলি ইউথ স্টুডেন্টস ফেডারেশন ১২ ঘণ্টার তিনসুকিয়া বনধের ডাক দেয়।[৫]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Saha, Abhishek (১৪ অক্টোবর ২০১৮)। "At least three hurt in Guwahati blast, ULFA says warning for Hindu Bengali outfits"The Indian Express। Guwahati। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  2. "Tinsukia shootout: 'There were 5 to 6 armed men in army uniform'"The Times of India। ২ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. "আসামে ৫ বাঙালিকে হত্যা"bdnews24.com। ৪ নভেম্বর ২০১৮। ৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৮ 
  4. "Bloodbath In Assam: ULFA Militants Murder Five Bengalis in Tinsukia"Barak Bulletin। ১ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৮ 
  5. "Trinamool Calls for Protests Across Bengal Today Over Assam Killings"। ২ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৮