আদম সুরত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আদম সুরত
সুলতানের চিত্রকর্ম প্রথম রোপণ অনুসারে চলচ্চিত্রের পোস্টার
সুলতানের চিত্রকর্ম প্রথম রোপণ অনুসারে চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকতারেক মাসুদ
প্রযোজকক্যাথরিন মাসুদ
চিত্রনাট্যকারতারেক মাসুদ
কাহিনিকারতারেক মাসুদ
উৎসএস এম সুলতানের জীবন
শ্রেষ্ঠাংশেএস এম সুলতান
বর্ণনাকারী
সুরকারপুলক গুপ্ত
চিত্রগ্রাহকমিশুক মুনীর
সম্পাদকনজরুল ইসলাম
প্রযোজনা
কোম্পানি
অডিওভিশন
পরিবেশকঅডিওভিশন
মুক্তি
  • ১৯৮৯ (1989)
স্থিতিকাল৪৭ মিনিট[১]
দেশবাংলাদেশ
ভাষা

আদম সুরত বাংলাদেশী আধুনিক চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবন-কাজ নির্ভর ১৯৮৯ সালের প্রামাণ্যচিত্র। এটির চিত্রনাট্য রচনা এবং পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ[২] এটি মাসুদের অভিষেক প্রামাণ্যচিত্র।[৩][৪] সুলতানের দৈনন্দিন কর্ম ও শিল্পজীবন চিত্রায়নের পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্রে।

প্রামাণ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজনা করেছেন ক্যাথরিন মাসুদ। চিত্রগ্রহণ করেছেন মিশুক মুনীর এবং সম্পাদনা করেছেন নজরুল ইসলাম। বাংলা ও ইংরেজি ধারাবর্ণনা করেছেন যথাক্রমে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং আলমগীর কবির

পটভূমি[সম্পাদনা]

১৯৮২ সালে শিল্পী এস এম সুলতান বিষয়ক আহমদ ছফা রচিত একটি লেখা মাসুদকে এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে।[৫] সে সময়ে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বৃত্তি পান, এবং সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও নথিপত্রের জটিলতায় তা সম্ভব হয় নি।[৫] সে সময় মাসুদ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভসের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স সদ্য শেষ করে চলচ্চিত্র বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের পরিকল্পনা করেন।[৬] যদিও এবারো চিত্রগ্রাহক এবং তৎকালীন মাসুদের শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের উৎসাহে শেষ পর্যন্ত তিনি বিদেশে অধ্যয়নেয় বিষয় বাদ দেন।[৬] অধ্যয়নের জন্য জমানো সমস্ত অর্থব্যায়ে, সুলতানের ওপর তথ্যচিত্রের কাজ শুরু করেন।[৬] ১৯৮২ সাল থেকে টানা সাত বছর ধরে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মাসুদ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন।[৭][৩] প্রাথমিক অবস্থায় শিল্পী সুলতান স্বভাববশত গণমাধ্যম বা ক্যামেরার সামনে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন:

আমি বরং নিমিত্ত, আমাকে উপলক্ষ করে আপনারা বাংলার কৃষকের ওপর ছবি বানান। আমি আপনাদের সঙ্গে ক্যাটালিস্ট হিসেবে থাকব।

এস এম সুলতান, চলচ্চিত্রযাত্রা, মাসুদ, ২০১২, পৃ. ১৪[৮]

তথ্যচিতের উপস্থাপনায় প্রাথমিক ধারণাগুলি ছিলো সুলতানের দৈনন্দিন জীবন, বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচত্রি।

আদম সুরতের চিত্রগ্রাহক হিসেবে শুরুতে আনোয়ার হোসেনের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময় তিনি ইউনেস্কোর স্টিল ফোটোগ্রাফির একটি অ্যাসাইনমেন্টে আফ্রিকায় চলে যান।[৯] ফলে পূর্বে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসাবে কাজ করার কথা থাকলেও মিশুক মুনীর মূল চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন।[৯]

এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের সময় তারেক মাসুদের সাথে ক্যাথরিন শেপিয়ারের (পরবর্তীতে ক্যাথরিন মাসুদ) পরিচয় হয়।[১০] ১৯৮৯ সালে তারা বিয়ে করেন।[১১]

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

নং.শিরোনামরচয়িতাশিল্পীদৈর্ঘ্য
১."যদি মনে পড়ে সে দিনের কথা" মেঘদূত 
২."যাদু ভারে নায়না" আবদুল করিম খাঁন 
৩."নাইন্‌থ সিম্ফনি"লুডভিগ ফান বেটোফেন  
৪."নবীজির খাস মহলে" শাহ আলম দেওয়ান, নাসিমা বয়াতি 
৫."সৃজন ছন্দে নাচে আনন্দে"কাজী নজরুল ইসলামতানভীর আলম সজীব 

মুক্তি[সম্পাদনা]

প্রামাণ্যচিত্রটি ১৬ মিলিমিটার প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়, ফলে প্রযুক্তিগত কারণে এটি সেই সময়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখানো সম্ভব হয়নি।[১২][১৩] ১৯৮৯ সালে এটির প্রথম প্রদর্শনী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দেশে এবং দেশের বাইরের টেলিভিশন মাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে ঢাকার গ্যোটে ইনস্টিটিউটে প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী করা হয়।[১৪]

ডিভিডি[সম্পাদনা]

২০১৪ সালের বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত "তারেক মাসুদ উৎসব"-এ আদম সুরত প্রামাণ্যচিত্রের ডিভিডি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এই ডিভিডি সুলতানের ওপর নির্মিত এক সমৃদ্ধ দলিল। দুটি ডিস্ক ও একটি বই সমৃদ্ধ এই সংকলনে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, শিল্পী সুলতানের আঁকা চিত্রসমগ্র, অডিও সম্মেলন, চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের আলোকচিত্র এবং সুলতানকে নিয়ে রচিত বিভিন্ন লেখা।[৩]

ডিজিটাল রুপান্তর[সম্পাদনা]

১৬ মিলিমিটার প্রযুক্তিতে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি ২০০৯ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. চলচ্চিত্রলেখা ২০১৩, পৃ. ১৪।
  2. মালিক, জামাল, সম্পাদক (২৭ নভেম্বর ২০০৭)। "Madrasas, Masud and The Clay Bird: Bangladeshi art cinema towards heterogenizing Islam"। Madrasas in South Asia: Teaching Terror? [মাদ্রাসা, মাসুদ এবং দ্য ক্লে বার্ড: বাংলাদেশের শিল্পী চলচ্চিত্র ইসলাম হেটারোজেনাইজিংয়ের (heterogenizing) দিকে এগুচ্ছে] (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: রুটলেজ। আইএসবিএন 9781134107629। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৫ 
  3. ক্যাথরিন, মাসুদ (১১ ডিসেম্বর ২০১৪)। "আদম সুরত ও তারেক মাসুদ"ঢাকা: দৈনিক সমকাল। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (ছাপা সংস্করণ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২১ 
  4. দেয়া (১৩ আগস্ট ২০১৩)। "অকাল প্রয়াত নক্ষত্র স্মরণে"। priyo.com। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৫, ২০১৫১৯৮২ সালে নির্মাণ শুরু করা ও ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া "আদম সুরত" ছিল তার প্রথম তথ্যচিত্র। 
  5. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১১।
  6. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১২।
  7. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১৫।
  8. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১৪।
  9. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১৩।
  10. বার্গান, রোনাল্ড (১৫ আগস্ট ২০১১)। "Tareque Masud obituary" [তারেক মাসুদের মৃত্যুসম্বন্ধীয়]। দ্য গার্ডিয়ান। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৮By that time, he had met and married the Chicago-born Catherine Shapere, with whom he formed a close working relationship. 
  11. "একনজরে তারেক মাসুদ"প্রথম আলো আর্কাইভ। ১৮ আগস্ট ২০১১। ২০২০-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. রহমান, পাভেল। "আদম সুরত থেকে রানওয়ে"। রাইজিংবিডি.কম। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২, ২০১৫ 
  13. "২২ বছর পর 'আদম সুরত'"। প্রিয়.কম। ৬ ডিসেম্বর ২০১৩। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৯ 
  14. মাসুদ, ক্যাথরিন, সম্পাদক (জুন ২০১২)। তারেক মাসুদ: জীবন ও স্বপ্ন। কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫: প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৪২। আইএসবিএন 978-984-33-3891-4 
  15. বিনোদন প্রতিবেদক (৬ ডিসেম্বর ২০১৩)। "২২ বছর পর 'আদম সুরত'"দৈনিক প্রথম আলো। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (প্রিন্ট সংস্করণ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২১ 

উৎস[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]