কাজী আবদুল ওদুদ
কাজী আবদুল ওদুদ | |
---|---|
জন্ম | পাংশা ফরিদপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ২৬ এপ্রিল ১৮৯৪
মৃত্যু | ১৯ মে ১৯৭০ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৭৬)
পেশা | অধ্যাপনা, সাহিত্যিক |
ভাষা | বাংলা |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | প্রেসিডেন্সি কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
সময়কাল | (১৯১৭ - ১৯৭০) |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | হিন্দু মুসলমানের বিরোধ (১৯৩৫) নজরুল প্রতিভা (১৯৪৯) শাশ্বত বঙ্গ (১৯৪৬) |
দাম্পত্যসঙ্গী | জামিলা খাতুন (বি. ১৯১৬–১৯৫৪) |
কাজী আবদুল ওদুদ (২৬ এপ্রিল ১৮৯৪ - ১৯ মে ১৯৭০) ছিলেন একজন কৃতী অধ্যাপক, চিন্তাশীল বাঙালি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, বিশিষ্ট সমালোচক, নাট্যকার ও জীবনীকার। বিশের দশকে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ এবং "শিখা" পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন তিনি।[১]
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]কাজী আবদুল ওদুদ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার (বর্তমান রাজবাড়ী জেলার) পাংশায় একটি নিম্ন - মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সগীরুদ্দীন ওরফে কাজী সৈয়দ হোসেন কাজী। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর তিনি আইএ এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বি এ পাশ করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা থেকে এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।[১]
অবদান
[সম্পাদনা]১৯২৬ সালে তিনি ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি অজ্ঞতা থেকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন কিছু তরুণ লেখকদের সঙ্গে।[২] তার সংবাদপত্র শিখা আন্দোলনের বেগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছিল।[৩] আবুল হুসেন ও কাজী মোতাহার হোসেন এই আন্দোলনে যোগ দেন।[৪] কাজী আবদুল ওদুদ ঘনিষ্ঠভাবে বাঙালি মুসলিম সাহিত্য আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি 'শিশির কুমার পদক' লাভ করেন।[৩] প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, প্রবন্ধকার হিসাবে খ্যাত ওদুদ বাংলার পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের মুক্তচিন্তা ও অসাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণা জাগ্রত করার জন্য সাহিত্য সাধনার আত্মনিয়োগ করেন। তার গল্প সংকলন "মীর পরিবার" এম.এ পাশ করার আগেই ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তার ২৩/২৪ বৎসর বয়সে লেখা গল্পগুলি থেকে মুসলমান সমাজের যে ছবি পাওয়া যায় তা পাঠককে নতুনত্বের স্বাদ দেয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার উপন্যাস "নদীবক্ষে" সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
উপন্যাসখানিতে মুসলমান চাষি গৃহস্থের যে সরল জীবনের ছবিখানি নিপুণভাবে পাঠকের কাছে তুলিয়া দিয়াছেন তাহার স্বাভাবিকত্ব,সরসত্ব ও নতুনত্বে আমি বিশেষ আনন্দ লাভ করিয়াছি।
[১] ওদুদের সাহিত্যিক সত্তার যথার্থ প্রকাশ ঘটেছে মুক্ত বুদ্ধি ও মনীষাদীপ্ত সহজ স্নিগ্ধ গদ্য রচনায়। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি পবিত্র কোরআন - কোরানের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন। [৫]
পেশা
[সম্পাদনা]১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) যোগদান করেন। পরবর্তীতে সাহিত্য সমাজের পত্রিকা "শিখা"-য় তার মুক্তিচিন্তা ও বুদ্ধিভিত্তিক বিভিন্ন লেখার জন্য ঢাকার নবাব পরিবার কর্তৃক নিগৃহীত হয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। শিক্ষাবিভাগের অধীন তিনি কলকাতা পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এ চাকরি নেন। দেশবিভাগের সঙ্গে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে শিক্ষকতার জন্য প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কাজী আবদুল ওদুদ দেশভাগকে কখনো মেনে নিতে পারেন নি। সেকারণে তার স্ত্রী, পুত্র ,কন্যা সকলেই ঢাকায় থেকে গেলেও তিনি কখনো ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়েন নি। আমৃত্যু থেকে গিয়েছিলেন তাঁর পার্ক সার্কাস অঞ্চলের ৮ বি তারক দত্ত রোডের বাড়িটিতে। তাঁর বাড়ির-ই আরেক তলায় থাকতেন রফিউদ্দিন আহমদ, যিনি হুগলীর খানাকুল, রামমোহনের জন্মস্থানে একাধিক বছর দারাশিকোহ এবং রাজা রামমোহন-কে স্মরণ করে মেলার আয়োজন করতেন। দেশভাগের পর হিন্দু-মুসলমানের ভিতর ক্ষত নিরাময়ের উদ্দেশে কাজী আবদুল ওদুদ, অন্নদাশঙ্কর রায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, গৌরী আইয়ুব, বিচারপতি মাসুদ প্রমুখেরা আয়োজন করতেন এই মেলা। রফিউদ্দিনের ভাই রবিউদ্দিন আহমদ ও ছিলেন কলকাতায় ওদুদের শেষ জীবনের নিঃসঙ্গ যাপনের অন্যতম সঙ্গী।[৬]
বিবাহ
[সম্পাদনা]১৯১৬ সালে তিনি তার চাচার বড় মেয়ে জামিলা খাতুনকে বিয়ে করেন। জামিলা খাতুন ১৯৫৪ সালে মারা যান।[৭]
প্রবন্ধ
[সম্পাদনা]- শাশ্বত বঙ্গ(১৯৫১)
- সমাজ ও সাহিত্য (১৯৩৪)
- রবীন্দ্রকাব্য পাঠ (১৩৩৪)
- হিন্দু-মুসলমান বিরোধ (১৯৩৫)
- নব পর্যায় (২খণ্ড)
- কবিগুরু গ্যেটে (১৯৪৬,এটি ২ খণ্ডে বিভক্ত)
- নজরুল প্রতিভা(১৯৪৯)
- মোহাম্মদ ও ইসলাম(১৯৬৬)
অন্যান্য বই
[সম্পাদনা]- শাশ্বত বঙ্গ, (১৯৫১)
- মির পরিবার (গল্প), ১৯১৮
- মানব বন্ধু (নাটক), ১৯৪১
- পথ ও বিপথ (নাটক), ১৩৪৬
- তরুণ (গল্প), ১৯৪৮
- আজাদ (উপন্যাস), ১৯৪৮
- নদীবক্ষে (উপন্যাস), ১৯৫১
তার সম্পাদনায় সংকলিত জনপ্রিয় বাংলা অভিধান – ব্যবহারিক শব্দকোষ (১৯৫৩)।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ বসু, অঞ্জলি (আগস্ট ২০১৬)। বসু, অঞ্জলি; সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র, সম্পাদকগণ। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ১ (পঞ্চম সংস্করণ, তৃতীয় মুদ্রণ সংস্করণ)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 978-81-7955-135-6।
- ↑ Nirbachito probondho ,Kollol prokashoni আইএসবিএন ৯৮৪ ৬১৭ ০০৯ ২
- ↑ ক খ Discussion on Kazi Abdul Odud held on Department of Bengali , Govt. Rajendra college Faridpur . Date : 10-3-2013
- ↑ Kazi Abdul Wadud : Somaj cheytona ,Dr. Sahin Afjal .First publish : Ekushey Boimela 2005
- ↑ শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ২২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9।
- ↑ "মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগম" - কুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনীতি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১২।
- ↑ Kazi Abdul Oduder songkhipto Jibonponji ,porishistho ,Nirbachito probondho Edition : Mossamot Selina khatun .,Lecturer ,Bengali ,Eden Govt. Mohila college
- ১৮৯৪-এ জন্ম
- ১৯৭০-এ মৃত্যু
- বাঙালি কথাশিল্পী
- বাংলাদেশী পুরুষ লেখক
- ২০শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক
- বাঙালি লেখক
- বাংলা সাহিত্য
- বাংলা ভাষার লেখক
- বাঙালি মুসলিম
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
- ভারতীয় লেখক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় লেখক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় প্রাবন্ধিক
- ভারতীয় পুরুষ প্রাবন্ধিক
- ভারতীয় নাট্যকার
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নাট্যকার
- ভারতীয় পুরুষ নাট্যকার
- ভারতীয় জীবনীকার
- ঢাকা কলেজের শিক্ষক
- পশ্চিমবঙ্গের লেখক
- ভারতীয় সাহিত্য সমালোচক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক