শাশ্বত বঙ্গ
শাশ্বত বঙ্গ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে একটি গ্রন্থ। যা বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে এটি বিবেচিত হয়।[১] এটি বাঙালি সমাজের চিন্তাধারা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। গ্রন্থটির ভাষা ও বিশ্লেষণ সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাশক্তিকে উৎসাহিত করে, যার কারণে এটি বাংলা সাহিত্যের প্রগতিশীল রচনার একটি নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। গ্রন্থটিতে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের চিন্তাভাবনাগুলোর প্রতিফলন হিসেবে দেখানো হয়েছে।[২][৩][৪]
বিবরণ
[সম্পাদনা]রচনা ও বিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]শ্বাশ্বত বঙ্গ-এরএর লেখক কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০)[৫], যিনি বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ ছিলেন। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় বাংলা ১৩৫৮ সনে (খ্রিস্টীয় ১৯৫১ সাল) কলকাতা থেকে। এতে একটি কবিতাসহ ৭৫টি প্রবন্ধ সঙ্কলিত হয়েছে, যার বিষয়বস্তু বাঙালি সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং চিন্তাধারা। কাজী আবদুল ওদুদের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে 'নবর্পয্যায়', 'রবীন্দ্রকাব্য পাঠ', 'সমাজ ও সাহিত্য', এবং 'নজরুল প্রতিভা' অন্তর্ভুক্ত।[১][২][৬]
গ্রন্থটির প্রবন্ধগুলোতে লেখক কাজী আবদুল ওদুদ রামমোহন রায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এবং বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের নেতাদের চিন্তাভাবনা ও প্রভাবকে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করেন।[১][৭][৮]
পটভূমি ও সাহিত্যিক প্রভাব
[সম্পাদনা]শাশ্বত বঙ্গ গ্রন্থের প্রবন্ধগুলো মূলত বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সমাজ এবং সংস্কৃতির বিশ্লেষণ নিয়ে গঠিত। কাজী আবদুল ওদুদ বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, যা ১৯২০-এর দশকে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের অধীনে পরিচালিত হয়। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলিম সমাজের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে জাগিয়ে তোলা। গ্রন্থটির প্রবন্ধগুলো এই আন্দোলনের চিন্তাভাবনাগুলোর প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।[১]
শাশ্বত বঙ্গ বাংলা নবজাগরণের প্রভাব এবং বাঙালি সমাজের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে রচিত। উনিশ শতকের বাংলায় রেনেসাঁসের প্রভাব এবং রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের যে ধারাটি শুরু হয়েছিল, তা গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। পাশাপাশি, মুসলিম সমাজের ভেতরে সংস্কার এবং সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে কাজী আবদুল ওদুদের বিশ্লেষণ স্থান পেয়েছে।[১][৬]
গ্রন্থটি কেবল বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নয়, বরং সমগ্র সমাজের ভাবনা এবং উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে ভারতীয় সমাজের ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক চিন্তাভাবনার একটি মেলবন্ধন দেখা যায়।[১][২][৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "শাশ্বত বঙ্গ - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ ক খ গ Satkhira, কর্তৃক Daily (২০১৮-০৬-০৬)। "কাজী আবদুল ওদুদের 'শাশ্বত বঙ্গ'- কবির রায়হান"। ডেইলি সাতক্ষীরা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ "প্রাচীন বাংলায় মুসলিম আগমন নিয়ে নানা অভিমত"। banglanews24.com। ২০২১-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ Discussion on Kazi Abdul Odud held on Department of Bengali, Govt. Rajendra college Faridpur . Date : 10-3-2013
- ↑ "শাশ্বত বঙ্গ"। www.prothoma.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ ক খ গ Azadi, Dainik (২০২১-০৫-১৮)। "কাজী আবদুল ওদুদ : মুক্তবুদ্ধি ও মুক্ত সংস্কৃতির আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ"। দৈনিক আজাদী (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ Kazi Abdul Oduder songkhipto Jibonponji,porishistho,Nirbachito probondho Edition : Mossamot Selina khatun .,Lecturer,Bengali,Eden Govt. Mohila college
- ↑ শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ২২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9।