যোনি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যোনি
মানুষের স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ ও সংলগ্ন স্থানের অঙ্কিত চিত্র
মানুষের ভালভা ও যোনিদেশের চিহ্নিত চিত্র। চিত্রের ভালভাটির যোনিকেশ নেই এবং লেবিয়াকে দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে উন্মুক্ত করে যোনির বিভিন্ন অংশ নির্দেশ করার উদ্দেশ্যে যোনিমুখ প্রদর্শন করা হয়েছে।
১: ক্লিটোরাল হুড
২: ক্লিটোরিস
৩: লেবিয়া মাইনরা
৪: মূত্রনালীর প্রবেশমুখ
৫: যোনির প্রবেশমুখ
৬: পেরিনিয়াম
৭: পায়ু
বিস্তারিত
পূর্বভ্রূণইউরোজেনিটাল সাইনাস এবং প্যারামেসোনেফ্রিক ডাক্টস
ধমনীইলিওলাম্বার ধমনী, যোনীয় ধমনী, মধ্য মলাধার ধমনী
লসিকাঊর্ধাংশ ইন্টারনাল ইলিয়াক লসিকা পর্ব, নিচের অংশে সুপারফিশিয়াল ইঙ্গুইনাল লসিকা পর্ব
শনাক্তকারী
লাতিন"sheath" বা "scabbard"
মে-এসএইচD014621
টিএ৯৮A09.1.04.001
টিএ২3523
এফএমএFMA:19949
শারীরস্থান পরিভাষা

যোনি (লাতিন: ভ্যাজাইনা) স্ত্রীদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা একই সঙ্গে প্রজননতন্ত্র এবং রেচনতন্ত্রের অংশ। যোনি নারীর প্রজননতন্ত্রের বহির্ভাগ। যৌনসঙ্গমকালে পুরুষ তার লিঙ্গ নারীর যোনীতে প্রবিষ্ট করে এবং অঙ্গচালনার মাধ্যমে বীর্য নিক্ষেপ করে। এই বীর্য নারীর জরায়ুতে অবস্থিত ডিম্ব নিষিক্ত করে মানব ভ্রূণের জন্ম দিতে সক্ষম। অন্যদিকে, নারীর মাসিক রজঃস্রাব কালে যোনীপথেই রক্তের নির্গমন হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় যোনীপথেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।[১]

বাংলায় যোনীর অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে যথা স্ত্রীযোনী, যোনিপথ, যৌননালী, জনননালী ইত্যাদি। যৌনাঙ্গ, যৌনকর্ম ইত্যাদি শব্দও যোনী থেকে উদ্ভূত। যোনী হলো স্ত্রী প্রজনানঙ্গ যা জরায়ু থেকে স্ত্রীদেহের বাইরের অংশ অবধি পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ফাইব্রোমাসকুলার (তন্তু-পেশিময়) নলাকার অংশ। মানুষ ছাড়াও অমরাবিশিষ্ট মেরুদণ্ডীমারসুপিয়াল প্রাণীতে, যেমন ক্যাঙ্গারু অথবা স্ত্রী পাখি, মনোট্রিম ও কিছু সরীসৃপের ক্লোকাতে যোনী বিদ্যমান। স্ত্রী কীটপতঙ্গ এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীরও যোনী আছে, যা মূলত ওভিডাক্টের শেষ প্রান্ত।

গঠন[সম্পাদনা]

মানুষের যোনী সারভিক্স থেকে ভালভা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নমনীয় ও মাংসল নালী।[২] শরীরভেদে পার্থক্য হলেও সাধারণত একটি অনুত্তেজিত যোনির দৈর্ঘ্য সামনের দিকে ৬ থেকে ৬.৫ সে.মি. (২.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি) এবং পেছনের দিকে ৯ সে.মি. (৩.৫ ইঞ্চি)।[৩] যৌন উত্তেজনার সময় যোনি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ উভয় দিকেই বৃদ্ধি পায়।[৪] এমত নমনীয়তার ফলেই এটি যৌনমিলন ও সন্তান জন্মদানের সময় সম্প্রসারিত হয়।[৫] যোনি, সুপারফিকাল ভালভা ও জরায়ুর গভীরের সারভিক্সকে সংযুক্ত করে।

যদি একজন মহিলা সোজা হয়ে দাঁড়ান তবে যোনীর শেষপ্রান্ত সামনে-পেছনে জরায়ুর সাথে ৪৫ ডিগ্রীর বেশি কোণ উৎপন্ন করে। যোনির শেষপ্রান্তটি ভালভার একটি কডাল প্রান্ত। এটি মূত্রনালীর পেছনে অবস্থিত। যোনির উপরের এক চতুর্থাংশ রেকটোউটেরিন পাউচ দ্বারা মলাধার থেকে পৃথক। যোনির সদর অংশের নাম মন্স ভেনেরিস। ভালভার ভেতরের দিক সহ যোনির রং হালকা গোলাপী এবং এটি মেরুদণ্ডী প্রাণীতে সবচেয়ে বেশি মিউকাস ঝিল্লী বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। যোনির বাকি তিন চতুর্থাংশ অঞ্চল উঁচু-নিচু অংশের দ্বারা সৃষ্ট ভাঁজে পরিপূর্ণ, এই ভাঁজকে রূগী বলে। যোনির পিচ্ছিলতা বার্থোলিনের গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি যোনির প্রবেশ মুখে এবং সারভিক্সের কাছে অবস্থিত একটি গ্রন্থি। যৌনমিলনের সময় প্রয়োজনীয় পিচ্ছিলকারক তরল ক্ষরিত করার মাধ্যমে এটি লিঙ্গপ্রবেশজ্বনিত ঘর্ষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখে। কোনোরকম গ্রন্থির সম্পৃক্ততা না থাকলেও যোনির দেয়াল আর্দ্রতা ছড়ায়। প্রতি মাসে ডিম্বক্ষরণের সময় সারভিক্সের মিউকাস গ্রন্থিগুলো বিভিন্ন রকম মিউকাস ক্ষরণ করে। এর ফলে যোনীয় নালিতে ক্ষারধর্মী অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় এবং এটি যৌনমিলনের মাধ্যমে প্রবিষ্ট পুরুষের শুক্রাণুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

যোনিচ্ছদ[সম্পাদনা]

অনেক স্ত্রী প্রাণীতে যোনিচ্ছদ যোনির প্রবেশদ্বার ঢেকে রাখে, যতোক্ষণ না এটি যৌনমিলন বা অন্য কোনো কারণে ছিঁড়ে না যায়। এটি মূলত যোজক কলার একটি পাতলা ঝিল্লী। এটি যোনির শুরুর দিকে অবস্থিত। যোনিপথে কোনোকিছু প্রবেশের ফলে, পেলভিক পরীক্ষার সময়, কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা কিছু সুনির্দিষ্ট কাজের ফলে, যেমন: ঘোড়ায় চড়া, বা জিমন্যাস্টিক্‌সের ফলেও এই কলাটি ছিঁড়ে যেতে পারে। যোনিচ্ছদ না থাকাটা যৌনমিলন সংঘটিত হবার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রমাণ দেয় না, কারণ সবসময় এটি যে যৌনমিলনের ফলেই ছিঁড়বে—এমন নয়। আবার একই ভাবে বলা যায়, এটি থাকাটা খুব জোরের সাথে প্রমাণ করে না যে যৌনমিলন একেবারেই হয়নি।[৬] হালকা যৌনমিলনের ফলে যোনিচ্ছদ না ছেঁড়াটা সম্ভব, আর যদি ছিঁড়েও যায় তবে তা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিস্থাপিতও করা সম্ভব। অর্থাৎ নারীর কুমারীত্ব, যোনিচ্ছদ থাকা বা না-থাকার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে না।

যোনীর শারীরবৃত্তীয় ভূমিকা[সম্পাদনা]

যোনির বিভিন্ন রকম জৈবিক ভূমিকা রয়েছে।

মূত্র ত্যাগ[সম্পাদনা]

স্ত্রীদেহে রেচনতন্ত্রের তথা মূত্রতন্ত্রের শেষাংশ হলো যোনী। এই পথেই মূত্র শরীর থেকে নির্গত হয়।

জরায়ুজ ক্ষরণ[সম্পাদনা]

যোনিপথের মাধ্যমে জরায়ুতে উৎপন্ন রজঃস্রাবের রক্ত ও মৃতটিস্যু (কলা) বেরিয়ে যায়। আধুনিক সমাজে, রজঃস্রাবের মাধ্যমে নির্গত এই তরল শোষণ বা সংগ্রহে ট্যাম্পোন, মেন্সট্রুয়াল কাপ, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রভৃতি সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়।

যৌনমিলন[সম্পাদনা]

যোনীর প্রবেশমুখে বেশকিছু স্নায়ুর প্রান্তদ্বার উন্মুক্ত, আর এগুলোর মাধ্যমে একজন নারী যৌনমিলনের সময় যৌনসুখ অনুভব করতে পারেন। কোনোভাবে এটি উত্তেজিত হলে কিছু মহিলা এটা উপভোগ করতে পারেন। যৌন উত্তেজনার সময়, বিশেষ করে মাব বা উত্তেজিত হলে যোনির দেয়াল নিজে থেকেই পিচ্ছিল হতে শুরু করে; এর ফলে যৌনমিলনের সময় সৃষ্ট ঘর্ষণ হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা যায় ভগ্নাঙ্কুরের (ক্লাইটোরিস) অংশ যোনি এবং ভালভাতেও বিস্তৃত হতে পারে।[৭]

উত্তেজিত হলে যোনীপথের দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ৮.৫ সে.মি. (৪ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পায়, কিন্তু এই বৃদ্ধি প্রবিষ্ট শিশ্নের চাপের ওপর ভিত্তি করে আরও বাড়তে পারে।[৮] যখন একজন মহিলা পুরোপুরি উত্তেজিত হন তখন সারভিক্স পেছনের দিকে গুটিয়ে যাওয়ায় যোনিগহ্বর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে পূর্বের চেয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পায়।[৯] যোনির অভ্যন্তরীণ গাত্রাবরণ মিউকাস ঝিল্লির নরম ও নমনীয় ভাঁজ বিশিষ্ট। পুরুষের প্রবিষ্ট শিশ্নের আকার অনুযায়ী এটি প্রসারিত বা সঙ্কুচিত হতে পারে।

জি-স্পট[সম্পাদনা]

এটি যোনির একটি কামোত্তেজক অংশ। যোনির ভেতর অংশে (শুরুর অংশ থেকে প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার ভিতরে) এর অবস্থান। কিছু মহিলা যৌনমিলনের সময় তীব্র যৌনসুখ অনুভব করেন যদি জি-স্পট ভালোভাবে উত্তেজিত হয়। সম্ভবত জি-স্পট রাগমোচন (শীর্ষসুখ) নারীর বীর্যপাতের কারণ[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। বেশ কিছু প্রখ্যাত ডাক্তার ও গবেষক মনে করেন জি-স্পটের যৌনসুখটা আসলে আসে স্কিনি গ্রন্থির মাধ্যমে। এই গ্রন্থিটি যোনির ভেতরের অন্য কোনো অংশের তুলনায় পুরুষের প্রোস্টেটের সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।[১০][১১][১২] অবশ্য কিছু গবেষক জি-স্পট থাকার ব্যাপারটাই স্বীকার করেন না।[১৩]

শিশু প্রসব[সম্পাদনা]

শিশু প্রসবের সময় মাতৃদেহের জরায়ু থেকে বাইরের পৃথিবীর স্বাধীন জীবনে আসার জন্য যোনি রাস্তা হিসেবে কাজ করে। শিশু জন্মদানের সময় যোনিকে প্রসব নালিকা (birth canal) বলা হয়। এসময় যোনির ব্যাস তার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় এবং আরও বেশি নমনীয় হয়ে ওঠে।

যৌনস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা[সম্পাদনা]

যোনি নিজেই নিজেকে পরিষ্কার রাখে; তাই কোনো অতিরিক্ত পরিচর্যার দরকার হয় না। যোনি অভ্যন্তরে জলপ্রবাহ চালনা করে ধৌতকরণ বা ডুশিং ডাক্তাররা সাধারণত নিরুৎসাহিত করেন।

যোনীয় রোগ[সম্পাদনা]

যোনীয় রোগের লক্ষণ হিসেবে যেগুলো দেখা যায়, তার মধ্যে আছে ফোঁড়া, তরলক্ষরণ, সূতিকা, জেনিটাল ওয়ার্ট (যৌনাঙ্গীয় আঁচিল) এবং বিভিন্ন যৌনরোগ :

ফোঁড়া[সম্পাদনা]

যোনিগাত্র এবং গোড়ার অংশে ফোঁড়ার উদ্ভব সচারচর দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি বার্থোলিনের ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। ছত্রাকটি দেখতে অনেকটা মটরদানার মতো, এবং বার্থোলিনের গ্রন্থিতে বাধার সৃষ্টির কারণে এর সৃষ্টি। এর ফলে এটি যোনির প্রবেশমুখে ক্ষরিত তরল পৌঁছতে বাধা দেয়। এ ধরনের সমস্যা ছোটোখাটো শল্যাচিকিৎসা বা সিলভার নাইট্রেট নামীয় রাসায়নিকের দ্বারা সহজেই দূর করা যায়। এরকম ছোটোখাটো ফোঁড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে হার্পিস সিমপ্লেক্স নামক রোগ। সে ক্ষেত্রে ফোঁড়ার সংখ্যা একাধিক হয় এবং একপর্যায়ে ফোঁড়া ফেটে অভ্যন্তরস্থ তরল বেরিয়ে পড়ে। এর ফলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।

সহায়ক চিত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Self-Exam: Vulva and Vagina"Our Bodies Ourselves (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-৩০ 
  2. "womenshealth.gov Glossary - Vagina"www.womenshealth.gov। ২০০৮-১০-১৪। ২০০৫-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-৩০ 
  3. Gray's Anatomy
  4. "The sexual response cycle"EngenderHealth। ২০০৭-১০-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৩ 
  5. http://www.metrokc.gov/HEALTH/famplan/flash/grades11-12/G1112-L17.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে Metrokc.gov
  6. Rogers DJ, Stark M (১৯৯৮)। "The hymen is not necessarily torn after sexual intercourse"BMJ317: 414। পিএমআইডি 9694770পিএমসি 1113684অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  7. Mascall S (জুন ২০০৬)। "Time for Rethink on the Clitoris"। BBC News। 
  8. "Does size matter"TheSite.org। ২০০৭-০২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-১২ 
  9. "do big penises hurt?"AskMen.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-১৪ 
  10. Kuhn, Lauren; Crooks, Robert; Baur, Karla Our sexuality (১৯৯৬)। Study guide for Crooks and Baur's Our sexuality, sixth edition। Internet Archive। Pacific Grove, Calif. : Brooks/Cole Pub. Co.। আইএসবিএন 978-0-534-32096-6 
  11. Jannini E, Simonelli C, Lenzi A (২০০২)। "Sexological approach to ejaculatory dysfunction."। Int J Androl25 (6): 317–23। ডিওআই:10.1046/j.1365-2605.2002.00371.xপিএমআইডি 12406363 
  12. Jannini E, Simonelli C, Lenzi A (২০০২)। "Disorders of ejaculation."। J Endocrinol Invest25 (11): 1006–19। পিএমআইডি 12553564 
  13. Hines, T. M. (২০০১)। "The G-spot: a modern gynecologic myth"American Journal of Obstetrics and Gynecology185 (2): 359–362। আইএসএসএন 0002-9378ডিওআই:10.1067/mob.2001.115995পিএমআইডি 11518892 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]