আল-বিরুনি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
AstroWizard (আলোচনা | অবদান)
মৃত্যুর স্থান
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
AstroWizard (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
| influences = [[আবু হানিফা দিনাওয়ারী]], [[আল সিজযি]], [[আবু নসর মনসুর]], [[আল বাত্তানী]]
| influences = [[আবু হানিফা দিনাওয়ারী]], [[আল সিজযি]], [[আবু নসর মনসুর]], [[আল বাত্তানী]]
| death_place = [[গজনি]], [[গজনভি রাজবংশ]]<br />(বর্তমানে [[আফগানিস্তান]])
| death_place = [[গজনি]], [[গজনভি রাজবংশ]]<br />(বর্তমানে [[আফগানিস্তান]])
| notable ideas = ইন্দোলজি প্রতিষ্ঠাতা, [[নৃবিজ্ঞান]], জিওডেসি
}}
}}
'''আবু রায়হান আল-বেরুনি''' বা '''আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি''' ([[ফার্সি ভাষা|ফার্সি]]: ابوریحان محمد بن احمد بیرونی; ৯৭৩–১০৪৮), ছিলেন [[মধ্যযুগ|মধ্যযুগের]] বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। তার পূর্ণ নাম "আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি"। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি '''আল-বেরুনি''' নামে পরিচিত। রুশীয় [[তুর্কিস্তান|তুর্কিস্তানের]] খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি [[আল-বেরুনি (শহর)|আল-বেরুনি শহর]] নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন [[গণিত]], [[জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান|জ্যোতিঃপদার্থবিদ]], [[রসায়ন]] ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু [[ভূগোল|ভূগোলবিদ]], ঐতিহাসিক, [[পঞ্জিকা|পঞ্জিকাবিদ]], [[দার্শনিক]] এবং [[চিকিৎসা বিজ্ঞান]], [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাতত্ত্ববিদ]] ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনির কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে [[ভারত|ভারতের]] জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, "আল-বেরুনি শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন।” <ref>দৈনিক নয়া দিগন্ত।</ref>"
'''আবু রায়হান আল-বেরুনি''' বা '''আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি''' ([[ফার্সি ভাষা|ফার্সি]]: ابوریحان محمد بن احمد بیرونی; ৯৭৩–১০৪৮), ছিলেন [[মধ্যযুগ|মধ্যযুগের]] বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। তার পূর্ণ নাম "আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি"। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি '''আল-বেরুনি''' নামে পরিচিত। রুশীয় [[তুর্কিস্তান|তুর্কিস্তানের]] খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি [[আল-বেরুনি (শহর)|আল-বেরুনি শহর]] নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন [[গণিত]], [[জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান|জ্যোতিঃপদার্থবিদ]], [[রসায়ন]] ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু [[ভূগোল|ভূগোলবিদ]], ঐতিহাসিক, [[পঞ্জিকা|পঞ্জিকাবিদ]], [[দার্শনিক]] এবং [[চিকিৎসা বিজ্ঞান]], [[ভাষাবিজ্ঞান|ভাষাতত্ত্ববিদ]] ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনির কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে [[ভারত|ভারতের]] জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, "আল-বেরুনি শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন।” <ref>দৈনিক নয়া দিগন্ত।</ref>"

১৬:৫৪, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আল-বিরুনি
১৯৭৩ সালে সোভিয়েত পোস্ট স্ট্যাম্পে আল বেরুনীর একটি কল্পিত ছবি
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মআনু. ৯৭৩
মৃত্যুআনু. ১০৫০ (বয়স ৭৭)
ধর্মইসলাম
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
আখ্যাসুন্নি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআশআরি
প্রধান আগ্রহপদার্থবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, তূলনামূলক সমাজতত্ত্ব, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, রসায়ন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব
উল্লেখযোগ্য ধারণাইন্দোলজি প্রতিষ্ঠাতা, নৃবিজ্ঞান, জিওডেসি
উল্লেখযোগ্য কাজতরিকা আল হিন্দ, কিতাবুত তাহফিম (অঙ্ক, জ্যামিতি, বিশ্বের গঠন), ইফরাদুল ফাল ফিল আমরিল আযলাল, যিজে আবকন্দ (জ্যতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে), আলাল ফি যিজে খাওয়ারাজিমি (যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে)
মুসলিম নেতা
যাদের প্রভাবিত করেন

আবু রায়হান আল-বেরুনি বা আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি (ফার্সি: ابوریحان محمد بن احمد بیرونی; ৯৭৩–১০৪৮), ছিলেন মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। তার পূর্ণ নাম "আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-বেরুনি"। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি আল-বেরুনি নামে পরিচিত। রুশীয় তুর্কিস্তানের খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি আল-বেরুনি শহর নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন গণিত, জ্যোতিঃপদার্থবিদ, রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক, পঞ্জিকাবিদ, দার্শনিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনির কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, "আল-বেরুনি শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন।” [১]"

জন্ম

তিনি একটি অতি সাধারণ ইরানি পারিবারে ৪ সেপ্টেম্বর(মতান্তরে ৩ সেপ্টেম্বর), ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রোজ বৃহস্পতিবার খাওয়ারিজমের শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। [২] তার বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছিলো আল-ইরাক বংশীয় রাজপতি বিশেষ করে আবু মনসুর বিন আলী বিন ইরকের তত্ত্ববধানে। তিনি সুদীর্ঘ ২২ বছর রাজকীয় অনুগ্রহে কাটিয়েছেন।

শিক্ষা

তিনি গণিতশাস্ত্র "আবু নাস -এর ইবন আলি ইবন ইরাক জিলানি এবং তদ্রূপ আরো কিছু বিদ্বান ব্যক্তির কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। অধ্যয়নকালেই তিনি তার কিছু প্রাথমিক রচনা প্রকাশ করেন এবং প্রখ্যাত দার্শনিক ও চিকিৎসাশাস্ত্রজ্ঞ ইবন সিনার সাথে পত্র বিনিময় করেন। আল বিরুনির মাতৃভাষা ছিল খাওয়ারিজিম আঞ্চলিক ইরানি ভাষা। কিন্তু তিনি তার রচনাবলি আরবিতে লিখে গেছেন। আরবি ভাষায় তার অগাধ পান্ডিত্য ছিল। তিনি আরবিতে কিছু কবিতাও রচনা করেন। অবশ্য শেষের দিকে কিছু গ্রন্থ ফার্সিতে অথবা আরবি ও ফার্সি উভয় ভাষাতেই রচনা করেন। তিনি গ্রিক ভাষাও জানতেন। হিব্রুসিরীয় ভাষাতেও তার জ্ঞান ছিল।

তিনি ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং শাহ আবুল হাসান আলি ইব্‌ন মামুন কর্তৃক সম্মানে গৃহীত হন। তিনি আলি ইব্‌ন মামুনের ইন্তেকালের পর তার ভ্রাতার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং অনেক নাজুক রাজনৈতিক কার্যকলাপ ছাড়াও রাজকীয় দৌত্যকার্যের দায়িত্বেও নিয়োজিত থাকেন। মামুন তার সৈন্যবাহিনী কর্তৃক ১০১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দে নিহত হওয়ার পর সুলতান মাহমুদ খাওয়ারিজম দখল করে নেন।গণিতবিদ আবু নাসের মানসুর ইবন আলি ও চিকিৎসক আবুল খায়ের আল-হুসায়ন ইবন বাবা আল-খাম্মার আল-বাগ দাদদির সাথে গজনি চলে যান। এখানেই তার জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। তখন হতে তিনি গাজনি শাহী দরবারে সম্ভবত রাজ জ্যোতির্বিদ হিসেবে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি কয়েকবার সুলতান মাহমুদের সাথে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমন করে ছিলেন। গজনির সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ভারতে প্রায় ১২ বছর অবস্থান করেন। এখানে সংস্কৃত ভাষা শেখেন এবং হিন্দু ধর্ম, ভারতীয় সভ্যতাসংস্কৃতি, দেশাচার, সামাজিক প্রথা, রাতিনীতি, কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় কিছু আঞ্চলিক ভাষায়ও জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি এই এক যুগের অধ্যায়ন ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দ্বারা রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল তারিকিল-হিন্দ

ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান

চাঁদের দশা উপর তার কাজ
পৃথিবীর পরিধি ও ব্যাসার্ধের উপর কাজ

আল-বিরুনি যে কত বড় ফলিত বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি যে কত উচ্চস্তরে স্থান লাভ করেছিলেন, এ সম্বন্ধে একটি ঘটনা উল্লেখই যথেষ্ট। একদিন সুলতান মাহমুদ গজনিতে তার হাজার বৃক্ষের বাগানে গ্রীষ্মবাসের ছাদে বসে আল বিরুনিকে বললন, এ বাড়ির চার দরজার কোন দরজাটি দিয়ে আমি বের হবো, আপনি তা গুনে ঠিক করে একটি কাগজ়ে লিখে আমার কম্বলের নিচে রেখে দিন। আল-বিরুনি তার আস্তারলব যন্ত্রের সাহায্যে অঙ্ক কষে তার অভিমত একটি কাগজ়ে লিখে সুলতান মাহমুদের কম্বলের নিচে রেখে দিলেন। তখন সুলতান রাজমিস্ত্রির সাহায্যে একটি নতুন দরজা সৃষ্টি করে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে দেখেন আল-বিরুনির কাগজে অনুরূপ কথাই লেখাঃ "আপনি পূর্ব দিকের দেয়াল কেটে একটি নতুন দরজা করে বেরিয়ে যাবেন"। কাগজের লেখা পাঠ করে সুলতান রেগে গিয়ে ছাদ থেকে আল-বিরুনিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন। নিচে মশামাছি প্রতিরোধের জন্য জাল পাতা ছিল। সুলতানের আদেশ কার্যকর হওয়ার পর আল-বিরুনি সেই জালে আটকে গিয়ে মাটিতে আস্তে পড়ার ফলে বেশি আঘাত পেলেন না। সুলতান আল-বিরুনিকে আবার ডেকে আনলেন এবং তার চাকরের কাছ থেকে আল বিরুনির দৈনিক ভাগ্য গণনার ডায়েরিটা নিয়ে সুলতান দেখলেন, তাতে লিখা আছে "আমি আজ উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে গেলেও বিশেষ আঘাত পাব না"। এ দেখে সুলতান আরো রেগে গিয়ে আল-বিরুনিকে জেলে পাঠালেন। এর পর আল-বিরুনিকে কারগার থেকে মুক্তির সুপারিশ করতে কেউ সাহস পেলেন না। ছয় মাস পর সুলতানের মনমর্জি বুঝে প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাসান একদিন আল-বিরুনির প্রতি সুলতানের নেক নজর আকর্ষণ করলেন। সুলতান মাহমুদের এ কথা স্বরণই ছিল না। তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে মুক্তি দিলেন।

সুলতান মাসউদ

ইউরোপীয় পন্ডিতদের মতে, আল-বিরুনি ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকোষ, তার প্রত্যেকটি গ্রন্থ ছিল জ্ঞানের আধার। ভারতীয় পন্ডিতরা আল-বিরুনিকে বলতেন জ্ঞানের সমুদ্র। কোনো অবস্থাতেই তার এসব অমূল্য গ্রন্থের পরিচয় কম কথায় দেয়া সম্ভব নয়। আল-বিরুনির ভারত থেকে গজনি প্রত্যাবর্তন করার কিছু দিন পর সুলতান মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর পুত্র সুলতান মাসউদ ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরহণ করেন। তিনি ১০৩০-১০৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সিংহাসনে ছিলেন। সুলতান মাসউদ আল-বিরুনিকে খুব সম্মান করতেন। আল-বিরুনি তার অণুরক্ত হয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম সুলতানের নামানুসারে রাখেন, কানুন মাসুউদী এবং তা সুলতানের নামে উৎসর্গ করেন। সুবিশাল গ্রন্থখানা সর্বমোট ১১ খণ্ডে সমাপ্ত। গ্রন্থটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সুলতান মাসউদ অত্যন্ত খুশি হয়ে একটি হাতির ওজনের পরিমাণ রৌপ্য বৈজ্ঞানিক আল-বিরুনিকে উপহার করেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করে বাহিক্য সন্তোষ প্রকাশ করে সব রৌপ্যই রাজকোষে ফিরিয়ে দেন। মন্তব্য করেন, তার এত ধনসম্পদের কোনো প্রয়োজন নেই।

কানুন মাসুউদী এর বিষয়

গ্রন্থটির প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে জ্যোতির্বিজ্ঞান, তৃতীয় খণ্ডে ত্রিকোণমিতি। এতে দু'টি তালিকা দেয়া হয়েছে। এখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলোচনার সাথে ত্রিকোণমিতিকে উচ্চস্তরে উন্নীত করার প্রচেষ্টায় তিনি যে সফলতা লাভ করেছেন তা প্রশংসনীয়। মাসউদের অণুরোধে অতি সরল পদ্ধিতে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় দিবারাত্রির পরিমণবিষয়ক একটি পুস্তকও তিনি প্রণয়ন করন। চতুর্থ খণ্ডে গোলাকার জ্যোতির্বিদ্যা (Spherical Astronomy); পঞ্চম খণ্ডে চন্দ্র, সূর্যের মাপ, গ্রহ এবং দ্রাঘিমা; ছষ্ঠ খণ্ডে সূর্যের গতি প্রকৃতি; সপ্তম খণ্ডে চন্দ্রের গতি প্রকৃতি; অষ্টম খণ্ডে চন্দ্রের দৃশ্যমান ও গ্রহণ; নবম খণ্ডে স্থির নক্ষত্র দশম খণ্ডে পাঁচটি গ্রহ নিয়ে এবং একাদশ জ্যোতিষ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এখানে তিনি মূল্যবান অর্থ উপস্থাপন করেন।

মৃত্যু

আল-বিরুনি ৬৩ বছর বয়সে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন। তার পরও তিনি ১২ বছর বেঁচেছিলেন। ১৩ই ডিসেম্বর ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে, ৪৪০ হিজরি ২ রজব তিনি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান।

গ্রন্থ

আল-বিরুনির সর্বমোট ১১৪টি গ্রন্থের উল্লেখ তিনি নিজে করেছেন। এর মধ্যে ১০৩টি গ্রন্থ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ১০টি অসম্পূর্ণ গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। আবু নাসের মানসুর ১২টি, আবু সাহল আ-মাসিহি ১২টি, আবু সাহল আল-মাসিহি ১২টি, আবু আলি আল-হাসন ইবন আলি আল-জিলি একটি পুস্তক তার নামে আরোপিত করে উল্লেখ করেছেন। ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮টি। উপরিউক্ত রিসালায় রচনার পরে তিনি আরো কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হতে প্রতীয়মান হয়, তার রচিত গ্রন্থের সর্বমোট সংখ্যা ১৮০টি। এগুলো তথ্য, তত্ত্ব ও পরিসরের দিকে হতে বিভিন্ন। কোনোটি পুস্তক, কোনোটি গবেষণামূলক সন্দর্ভ আবার কোনোটি বৃহদাকার গ্রন্থ, যাতে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার বিধৃত ধারণ করা হয়েছে।

সম্মননা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়।[৩]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক নয়া দিগন্ত।
  2. আল বেরুনী অরবন্ধ দ্রষ্টিব্য
  3. http://www.juniv.edu/hall/al-beruni-hall

বহিঃসংযোগ