বিষয়বস্তুতে চলুন

কচ্ছপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কচ্ছপ
সময়গত পরিসীমা: ২১.৫–০কোটি Triassic to Recent
ফ্লোরিডা বক্স টার্টল টেরাপিনি ক্যারোলিনা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: মেরুদণ্ডী
শ্রেণী: সরীসৃপ
বর্গ: টেস্টুডিনিস
Suborders

ক্রিপ্টোডাইরা
প্লিউরোডাইরা
এবং text দেখুন

বৈচিত্র্য
১৪ টি জীবিত গোত্রে আনুমানিক ৩৬০ টি প্রজাতি।
কালো: স্থল কচ্ছপ, নীল: সামুদ্রিক কচ্ছপ

কচ্ছপ হল সরীসৃপের একটি ক্রম যা টেস্টুডিন নামে পরিচিত।এদেরকে প্রধানত এদের পাঁজর থেকে বিকশিত একটি শেল দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। আধুনিক কচ্ছপ দুটি প্রধান দলে বিভক্ত: পার্শ্ব-ঘাড়ের কচ্ছপ এবং লুকানো ঘাড়ের কচ্ছপ।এই দল দুটি মাথা প্রত্যাহার করার পদ্ধতিতে ভিন্ন। ভূমিতে বসবাসকারী কাছিম এবং মিঠা পানির টেরাপিন সহ ৩৬০টি জীবিত এবং সম্প্রতি বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এগুলি বেশিরভাগ মহাদেশে, কিছু দ্বীপে বসবাস করে।অন্যদিকে সামুদ্রিক কচ্ছপের বেশিরভাগ মহাসাগরে পাওয়া যায়। পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ অন্যান্য সরীসৃপদের মতো কচ্ছপেরা বাতাসে শ্বাস নেয় এবং পানির উপরে ডিম দেয়। তবে এর অনেক প্রজাতি পানিতে বা তার চারপাশে বাস করে। জেনেটিক প্রমাণ অনুযায়ী সাধারণত তাদের কুমির এবং পাখির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

কিছু প্রজাতির সাথে কচ্ছপের আকার পরিবর্তিত হতে পারে, যেমন গ্যালাপাগোস দৈত্যাকার কচ্ছপ, দৈর্ঘ্যে ১.২ মিটার (৩.৯ ফুট) এরও বেশি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যেখানে স্পেকল্ড কেপ কচ্ছপের মত খোলস থাকে যা শুধুমাত্র ৬.৮ সেন্টিমিটার (২.৭ ইঞ্চি) লম্বা হয়। []

কচ্ছপের খোলস বেশিরভাগই হাড় দিয়ে তৈরি। উপরের অংশটি গম্বুজযুক্ত ক্যারাপেস এবং নীচের অংশটি ফ্ল্যাটার প্লাস্ট্রন বা বেলি-প্লেট । এদের বাইরের পৃষ্ঠ কেরাটিন, চুল, শিং এবং নখর উপাদান দিয়ে তৈরি আঁশ দিয়ে আবৃত। ক্যারাপেস হাড়গুলি পাঁজর থেকে বিকশিত হয় যা পাশের দিকে বৃদ্ধি পায় এবং চওড়া সমতল প্লেটে বিকশিত হয় । এই চওড়া সমতল প্লেট শরীরকে ঢেকে দেয়। কচ্ছপ হল ইক্টোথার্ম বা "ঠান্ডা রক্তযুক্ত", যার অর্থ তাদের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা তাদের সরাসরি পরিবেশের সাথে পরিবর্তিত হয়। এরা সাধারণত সুবিধাবাদী সর্বভুক এবং প্রধানত সীমিত নড়াচড়া করে এবং গাছপালা ও প্রাণীদের খাওয়ায়। অনেক কচ্ছপ ঋতু অনুসারে স্বল্প দূরত্বে অভিবাসন করে। সামুদ্রিক কচ্ছপই একমাত্র সরীসৃপ যারা পছন্দের সমুদ্র সৈকতে ডিম পাড়ার জন্য দীর্ঘ দূরত্বে পাড়ি জমায়।

কচ্ছপ বিশ্বজুড়ে পৌরাণিক কাহিনী এবং লোককাহিনীতে উপস্থিত হয়েছে। কিছু স্থলজ এবং স্বাদু পানির কচ্ছপের প্রজাতিকে ব্যাপকভাবে পোষার জন্য রাখা হয়। কচ্ছপ শিকার করা হয়েছে তাদের মাংসের, ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং তাদের খোসার জন্য। মাছ ধরার জালে সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রায়ই দুর্ঘটনাক্রমে মারা যায়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কচ্ছপের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই চাপের ফলে, অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।

জীবনবৃত্তান্ত

[সম্পাদনা]

জন্মগ্রহণ

[সম্পাদনা]

মেয়ে কচ্ছপরা ডিমের জন্য গর্ত করে এবং সেখানে ১ থেকে ৩০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। তারা সাধারণত রাতের বেলা ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার পর মা কচ্ছপ ডিমগুলোকে মাটি, বালি বা অন্য যেকোন জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেয়। মা কচ্ছপ ডিম পাড়ার পর ডিমগুলো প্রকৃতির দায়িত্বে রেখে চলে যায়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রজাতি বিশেষে ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। ডিমের আকার মায়ের আকারের উপর নির্ভর করে এবং carapace এবং plastron এর মাঝে অবস্থিত cloacal opening(পায়ুমুখ) এর প্রস্থ পরিমাপ করে এর মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। মেয়ে কচ্ছপদের plastron এ প্রায়ই “V” আকৃতির খাঁজ থাকে। এটি ডিম পাড়ার সময় সাহায্য করে থাকে। ডিম তায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পার হওয়ার পর বাচ্চা কচ্ছপ দাঁত দিয়ে ডিম কেটে বের হয়ে আসে। এটি বাসার মাটিতে গর্ত তৈরী করে এবং এখান থেকেই জীবন ধারণ শুরু করে। বাচ্চা কচ্ছপরা একটি ভ্রণথলে (embryonic sac) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা তাদের ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। শুধু মাত্র বাচ্চা কচ্ছপরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জন্য ভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তৃণভোজী কচ্ছপদের বাচ্চারা অতিরিক্ত আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে।

জীবনকাল

[সম্পাদনা]

কচ্ছপদের খোলসের উপরের অংশে যে সমকেন্দ্র (concentric rings) বিশিষ্ট রিং থাকে তা তাদের বয়সের একটি ধারণা দিয়ে থাকে; যেমনটা গাছের ক্ষেত্রে তাদের বর্ষবলয়ে দেখা যায়।

কিন্তু যেসব কচ্ছপ সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পেয়ে থাকে, তাদের খোলসে উল্লেখযোগ্য কোন রিং দেখা যায়না।কারণ, শরীরের বৃদ্ধি খাবার এবং পানি প্রাপ্ততার উপর নির্ভর করে।এছাড়াও কিছু কচ্ছপ এক বছরে একের অধিক রিং তৈরি করে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে দেখা যায় না। কচ্ছপরা সাধারণত মানুষেরই মত বাঁচে কিন্তু কিছু কচ্ছপদের ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচার কথা শোনা গেছে। এই কারণে তারা কোন কোন সংস্কৃতিতে দীর্ঘায়ুকে বোঝায়। এই পর্যন্ত রেকর্ডকৃত কচ্ছপদের মধ্যে সবথেকে দীর্ঘজীবী কচ্ছপ হচ্ছে Tu’i Malia। তাকে ১৭৭৭ সালে, ব্রিটিশ পরিব্রাজক Captain Cook তার জন্মের অল্প দিনের মধ্যেই উপহার দেন Tongan Royal Family কে। ১৯৬৫ সালের ১৯ মে ১৮৮ বছর বয়সে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ততদিন পর্যন্ত সে Tongan royal family এর তত্ত্বাবধানে ছিল।

ভারতের আলীপুর চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দাবী করেন “আদৃতা”(Adwaita) সবথেকে দীর্ঘায়ু প্রাণী। আদৃতা ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ মারা যায়। “আদৃতা” একটি Aldabra giant tortoise এবং Lord Wellesley তাকে ভারতে আনেন। ১৮৭৫ সালে Alipur Zoological Gardens প্রতিষ্ঠার সময় তাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কর্মকর্তাদের মতে রেকর্ড অনুসারে আদৃতার বয়স কমপক্ষে ১৫০ বছর কিন্তু অন্যান্য তথ্য উপাত্ত অনুসারে তার বয়স ২৫০বছর। আদৃতাকে Robert Clive এর পোষা প্রাণী বলে ধারণা করা হয়। Harriet ১৯৮৭ সাল থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত Australia Zoo এর একজন অধিবাসি ছিল। ধারণা করা হয়ে থাকে তাকে Charles Darwin তার জাহাজ বিগল (Beagle) এ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে John Clements Wickham তাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আসেন। ২০০৬ সালের ২৩শে জুন তার ১৭৬ তম জন্মদিনের কিছু পরে সে মারা যায়। Timothy একটি spur-thighed tortoise এটি প্রায় ১৬৫ বছর বয়সে মারা যায়। প্রায় ৩৮ বছর যাবত তাকে বৃটেনের Royal Navy এর বিভিন্ন জাহাজে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে বহন করা হয়। ১৮৯২ সালে যখন তার ৫৩ বছর বয়স তখন তাকে Devon এর Powderham Castle এ ফিরিয়ে আনা হয়। ২০০৪ সালে সে মারা যায়। তাকে যুক্তরাজ্যের সবথেকে প্রাচীন অধিবাসি বলে মনে করা হয়। সেন্ট হেলেনা (St. Helena) দ্বীপে থাকা এখনও পর্যন্ত জীবিত Seychelles(সেশেল্‌স) Giant tortoise প্রজাতির Jonathan এর বয়স আনুমানিক ১৭৬ বা ১৭৮ বছর। যদি এটা সত্য হয় তবে সে হবে বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাসরত সবথেকে দীর্ঘায়ু জীবিত প্রাণী।

লিঙ্গ দ্বিরূপতা

[সম্পাদনা]

কচ্ছপদের অনেক প্রজাতির নারী ও পুরুষ আলাদা; যদিও বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে নারী পুরুষের পার্থক্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিছু প্রজাতির পুরুষদের ঘাড় মেয়েদের থেকে লম্বা থাকে। আবার কিছু প্রজাতির মেয়েদের নখর পুরুষদের থেকে বড় হয়ে থাকে। অধিকাংশ কচ্ছপ প্রজাতিতে পুরুষদের থেকে মেয়েরা আকারে বড় হয়ে থাকে। পুরুষের খোলসের উপরের অংশ প্রজননে সহযোগিতা করার জন্য ভিতরের দিকে বাকানো থাকে। কচ্ছপদের লিঙ্গ নিরূপণের সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের লেজ লক্ষ্য করা। সাধারণত মেয়েদের নিচের দিকে বাকানো ছোট লেজ থাকে অন্যদিকে পুরুষদের উপর দিকে বাকানো তুলনামূলক ভাবে বড় লেজ থাকে।

সাধারণ তথ্য

[সম্পাদনা]

বড় কচ্ছপরা শুকনো জমিতে খুব ধীরে চলে, প্রায় ০.২৭ কিমি./ঘণ্টা। কচ্ছপের নথিভুক্ত দ্রুততম গতি ৫ মাইল/ঘণ্টা।

খাবার

[সম্পাদনা]

অধিকাংশ ডাঙ্গায় বসবাসকারী কচ্ছপ তৃণভোজী। তারা ঘাস, আগাছা, পাতা, ফুল এবং কিছু ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। যদিও কিছু সর্বভূক কচ্ছপও এই পরিবারে আছে। পোষ্য কচ্ছপরা সাধারণত ঘাস, পাতা, আগাছা এবং কিছু ফুল খায়। কিছু প্রজাতি তাদের বাসস্থানে প্রাপ্ত কীটপতঙ্গ এবং মৃতদেহও খেয়ে থাকে। তৃণভোজী কচ্ছপদের অতিরিক্ত আমিষ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং খোলস বিকৃতিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে। যেহেতু প্রত্যেক প্রজাতির কচ্ছপের পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে তাই তাদের খাবার নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করা দরকার।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্মে কূর্ম অবতার ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। মৎস্য অবতারের মত কূর্ম অবতারও সত্য যুগের। ভগবান বিষ্ণু শরীরের উপরের অংশ মানুষের এবং নিচের অংশ কচ্ছপের রূপ ধারণ করেন। তাকে প্রথাগত ভাবেই চতুর্ভূজ রূপে দেখা যায়। তিনি মহাপ্রলয়ের পর সাগরের নিচে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকেন। সমুদ্র মন্থনের সময় তার পিঠে মন্দার পর্বত স্থাপন করে মন্থনের কাজ সম্পন্ন হয়। প্রাচীন চীনে কচ্ছপের খোলস ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহার করা হত।প্রাচীন গ্রিক দেবতা হার্মিস এর প্রতীক কচ্ছপ।

বিপন্নপ্রায়

[সম্পাদনা]

নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর–ডোবা ভরাট, ঝোপ-ঝাড় বিনষ্ট, পানি দূষণ, খাদ্যাভাব ও মানুষের আক্রমণে পরিবেশের বন্ধু কাট্রা কচ্ছপ হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ২৭০ প্রজাতির কচ্ছপের মধ্যে প্রায় ১শ’ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নদী – পুকুরের পানি পরিস্কারকারী কচ্ছপ সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী। পৃথিবীতে ৫ হাজার ৩শ’ প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে ৪৫ ভাগ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]


তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. encyclopedia of LIFE। Miles Kelly। ২০১৭। পৃষ্ঠা 211আইএসবিএন 978-1-78617-327-0 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]