দাত্তু ফাড়কর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Dattu Phadkar থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দাত্তু ফাড়কর
১৯৫২ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে দাত্তু ফাড়কর
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামদত্তত্রয়া গজানন দাত্তু ফাড়কর
জন্ম(১৯২৫-১২-১২)১২ ডিসেম্বর ১৯২৫
কোলাপুর, কোলাপুর রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৭ মার্চ ১৯৮৫(1985-03-17) (বয়স ৫৯)
মাদ্রাজ, তামিলনাড়ু, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম, ডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪১)
১২ ডিসেম্বর ১৯৪৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩১ ১৩৩
রানের সংখ্যা ১,২২৯ ৫,৩৭৭
ব্যাটিং গড় ৩২.২৪ ৩৬.০৮
১০০/৫০ ২/৮ ৮/২৯
সর্বোচ্চ রান ১২৩ ২১৭
বল করেছে ৫,৯৯৪ ২৬,২২১
উইকেট ৬২ ৪৬৫
বোলিং গড় ৩৬.৮৫ ২২.০৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩১
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/১৫৯ ৭/২৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২১ ৯২
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দত্তত্রয়া গজানন দাত্তু ফাড়কর (উচ্চারণ; মারাঠি: दत्तू फडकर; জন্ম: ১২ ডিসেম্বর, ১৯২৫ - মৃত্যু: ১৭ মার্চ, ১৯৮৫) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের কোলাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা, হিন্দু, মহারাষ্ট্র, মুম্বই ও রেলওয়েজ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফাস্ট মিডিয়াম কিংবা অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন দাত্তু ফাড়কর

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

বোম্বের রবার্ট মুনি হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর, এলফিনস্টোন কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১০ বছর বয়সে আন্তঃবিদ্যালয়ের খেলায় ১৫৬ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেলেন। ১৯৪১-৪২ মৌসুম থেকে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম পর্যন্ত বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। কলেজের পক্ষে অভিষেক খেলায় ২৭৪ রান তুলে তৎকালীন রেকর্ড গড়েন। এরপর আল্ফ গোভারের পরিচালনায় ক্রিকেট স্কুলে প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৪২-৪৩ মৌসুম থেকে ১৯৫৯-৬০ মৌসুম পর্যন্ত দাত্তু ফাড়করের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। এক দশককাল ভারতীয় ক্রিকেটে প্রকৃত অল-রাউন্ডার হিসেবে একনিষ্ঠ সেবা দিয়ে গেছেন। চল্লিশের দশকের শেষ দিক থেকে পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেছেন। দীর্ঘদেহী, আকর্ষনীয় শারীরিক গড়ন ছিল তার। আক্রমণধর্মী মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন দাত্তু ফাড়কর। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে উইকেটের উভয় দিকেই বলকে সুইং করানোয় দক্ষ ছিলেন। সচরাচর স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। তিনি তার সময়কালে অন্যতম সেরা ক্রিকেট তারকার পরিচিতি লাভ করেন।

১৭ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে দাত্তু ফাড়করের। ১৯৫০-৫১ মৌসুমে বোম্বে দলের অধিনায়কের মর্যাদা পান। ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলাটিতে সর্বমোট ২৩৭৬ রান উঠে। তিনি ১৩১ ও ১৬০ এবং ৩/১৪২ ও ৩/১৬৮ লাভ করেন।[১] ১৯৫০-৫১ মৌসুমে মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ প্রথম-শ্রেণীর রান ২১৭ সংগ্রহ করেন। এ পর্যায়ে বোম্বে দল ৭২৫/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে।[২] ইংল্যান্ডের পেশাদার ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে নেলসনসেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে রোচডেল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।

রঞ্জী ট্রফিতে ৪৬.৮২ গড়ে ১৯২০ রান ও ১৬.৬১ গড়ে ২১৬ উইকেট পেয়েছেন।

১৩টি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন দাত্তু ফাড়কর। ১৯৪৯-৫০ মৌসুম থেকে ১৯৫০-৫১ মৌসুম পর্যন্ত সফররত কমনওয়েলথ দলের বিপক্ষে দশটি টেস্টে অংশ নেন তিনি। তন্মধ্যে, শেষ সিরিজে ভারত দল চার জন অধিনায়ককে দল পরিচালনায় আমন্ত্রণ জানায়। ফাড়কর শেষ টেস্টে এ দায়িত্বে ছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একত্রিশটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন দাত্তু ফাড়কর। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে কলকাতায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ভারত দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে মনোনীত হন। মূলতঃ সংরক্ষিত সীম বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া গমন করেছিলেন। বলের তুলনায় ব্যাট হাতেই সেখানে তিনি অধিক ভূমিকা রাখেন। রে লিন্ডওয়ালকিথ মিলারের বল দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেই ক্ষান্ত হননি; আক্রমণাত্মক ঢংয়ে স্ট্রোক মেরেছেন। সিডনিতে অনুপযোগী উইকেটে অভিষেক ঘটা ঐ টেস্টে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫১ রান তুলেন। এরপর, বল হাতে ৩/১৪ পান। অ্যাডিলেড ওভালে ছয় নম্বরে নেমে ১২৩ রান তুলেন। বিজয় হাজারের সাথে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ডসংখ্যক ১৮৮ রান তুলেন। ঐ সফরে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন। ৫২.৩৩ গড়ে ৩১৪ রান তুলে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষ স্থানে ছিলেন। চার-টেস্টের ঐ সিরিজের প্রত্যেক টেস্টেই কমপক্ষে একটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

এরপর থেকেই ভারত দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড, ১৯৫৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে পাকিস্তান গমন করেন। নিজদেশে ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৫১-৫২ মৌসুমে ইংল্যান্ড, ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে পাকিস্তান, ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড, ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি[সম্পাদনা]

১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ভারত গমনে আসে। মাদ্রাজের এম. এ. চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন তিনি। ৭/১৫৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এটিই তার সেরা বোলিং ছিল। তবে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারদের তোপের মুখে ভারত দল পরাজয়বরণ করে। সিরিজের শেষ টেস্টে ভারতের জয়ের জন্য ৩৬১ রানের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ছয় রান বাকী থাকতে পরাজিত হয়। ঐ ইনিংসে দাত্তু ফাড়কর ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।

১৯৫১-৫২ মৌসুমে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে তিনি ১১৫ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়াও খেলায় চার উইকেট নিয়ে আদর্শ অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটান। শোচনীয়ভাবে ভারত দল পরাভূত হলেও স্বল্পসংখ্যক ভারতীয় ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে ব্যক্তিগত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। হেডিংলিতে ভারত দল কোন রান সংগ্রহ বাদেই চার উইকেট হারালে ষষ্ঠ উইকেটে দাত্তু ফাড়কর ও বিজয় হাজারে ১০৫ রানের জুটি গড়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭০-এর দশকে ভারতের জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৬৮ সালে এমসিসি কর্তৃপক্ষ তাকে আজীবন সদস্যের মর্যাদা প্রদান করে। বোম্বেভিত্তিক টাটা এন্ড সন্স ও রেলওয়েজে চাকরি করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দাত্তু ফাড়করের পুত্র সুহাস ফাদকর বিদর্ভ দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন ও ১৯৮০-এর দশকে দলের অধিনায়কত্ব করেন। কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কলকাতার বেহালা এলাকায় সানি প্রিপারেটরি স্কুল নামীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুল পরিচালনায় অগ্রসর হন।

১৭ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে ৫৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে চেন্নাই এলাকায় দাত্তু ফাড়করের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
জ্যাক পেটিফোর্ড
পেশাদার
নেলসন ক্রিকেট ক্লাব

১৯৫১, ১৯৫৩–১৯৫৪
উত্তরসূরী
রে লিন্ডওয়াল