শ্রীধর আচার্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শ্রীধরাচার্য থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শ্রীধর আচার্য (আনুমানিক ৮৭০ খ্রি. - ৯৩০ খ্রি.) একজন প্রাচীন ভারতীয় বাঙালি গণিতবিদ, সংস্কৃত পণ্ডিত এবং দার্শনিক[১] তিনি প্রাচীন ভারতের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংখ্যিয় গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক ছিলেন। ভারতবর্ষের হিন্দু আচার্যদের মধ্যে শূন্য (0) সম্বন্ধে শ্রীধর আচার্যের বিবৃতিই সর্বাপেক্ষা বিশদ। ভারতে তিনিই প্রথম পাটিগণিত থেকে বীজগণিতকে পৃথক করেন বলে ধারণা করা হয়।

ব্যক্তি জীবন[সম্পাদনা]

শ্রীধর আচার্যের জন্ম প্রাচীন বঙ্গের দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চলের ভুরিশ্রেষ্ঠ (ভুরশুট) গ্রামে যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলাতে অবস্থিত।

শ্রীধরাচার্য ন্যায়কন্দলী গ্রন্থের শেষে লিখেছেন।आसिद्दक्षिणराढ़ायां द्विजानां भुरिकर्मणां । भुरिसृष्टिरीति ग्रामो भुरिश्रेष्ठीजनाश्रय: ।।

তার পিতার নাম ছিল বলদেব আচার্য এবং মাতার নাম ছিল অচ্ছোকা দেবী। তার পিতাও একজন সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন।

অবদান[সম্পাদনা]

শ্রীধর দুটি বিখ্যাত গবেষণামূলক বই লেখেন যথা ত্রিশতিকা (পাটীগণিতসার নামেও পরিচিত) এবং পাটীগণিত । তার প্রধান কাজ পাটীগণিতসার কে ‘ত্রিশতিকা’ বলা হয় কারণ এই বইটিতে তিন শত শ্লোক আছে। এই বইটিতে সংখ্যা গণনা, পরিমাপ, প্রকৃত সংখ্যা, শূন্য, গুণন, ভাগ, বর্গ, ঘন, ভগ্নাংশ, তিন-এর নিয়ম (রুল অফ থ্রি), সুদকষা, অংশিদারিত্বের ব্যবসা, ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয় সহ গণিতের বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

ধারণা করা হয় তিনি অন্তত আরও তিনটি বই লেখেন যেগুলোর নাম ‘বীজগণিত’, ‘নবশতি’ এবং ‘বরাহপতি’। দ্বিতীয় ভাস্কর (১১৫০ সালের কাছাকাছি) , মাক্কিভট্টের (১৩৭৭সালের কাছাকাছি) এবং রাঘবভট্টের (১৪৯৩ সালে) লেখা থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।

• তিনি ‘শূন্য’ (০) সম্পর্কে ব্যখ্যা প্রদান করেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, “যদি কোন সংখ্যার সাথে শূন্য যোগ করা হয় তাহলে যোগফল ওই সংখ্যার সমান থাকবে; যদি কোন সংখ্যা থেকে শূন্য বিয়োগ করা হয় তাহলেও ওই সংখ্যার কোন পরিবর্তন হবে না; যদি কোন সংখ্যাকে শূন্য গুণ করা হয় তাহলে তার ফলাফল শূন্য হবে।” কোন সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে কি হবে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

• ভগ্নাংশের ভাগের ক্ষেত্রে তিনি লক্ষ্য করেন ভাজকের সাথে সাথে ভগ্নাংশটিও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্য শ্রীধর আচার্য কোন ভগ্নাংশকে ভাগের প্রসঙ্গে ভাজকের অন্যোন্যক দ্বারা গুণ করার প্রণালী বাতলে দিয়েছেন।

• তিনি বীজগণিত ও পাটিগণিতের ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

• গণিতের ইতিহাসে দ্বিঘাতসহ সমীকরণ সমাধানে তিনি প্রথম কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে একজন।

• তিনি দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানে নিচের গাণিতিক সূত্রটি প্রতিপাদন করেনঃ


এটি শ্রীধর আচার্যের সমীকরণ নামে পরিচিত। দ্বিঘাত সমীকরণের মাত্রা নির্ণয়ের এই সূত্রটি ‘শ্রীধর আচার্যের উপপাদ্য’ নামেও প্রচলিত।

প্রাচীন ভারতের এক বিখ্যাত গণিতজ্ঞ শ্রীধর আচার্যের(৭৫০ খ্রি. আনুমানিক )একচলবিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণের বীজ দুটি নির্ণয়ের সাধারণ সূত্রটি কে শ্রীধর আচার্যের সূত্র বলা হয়। তিনি পাটিগণিত ও বীজগণিত কে আলাদা বিষয় রূপে গণ্য করে পৃথক পুস্তক রচনা করেন পাটিগণিত এর বর্গমূল ঘনমূল নির্ণয়ের পদ্ধতি এবং তৈরাশিক পদ্ধতি তে সমস্যার সমাধান সম্পর্কে তার অবদানের কথা বিভিন্ন পুস্তক পাওয়া যায় । দুঃখের বিষয় তার লেখা মূল পাটিগণিত বই এর অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া গেলেও গণিত বীজগণিত বইটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "শ্রীধর আচার্য - ইন্দ্রনীল মজুমদার"বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী (Bijnan-O-Bijnani) (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-১০। ২০২১-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-৩০ 
  2. Sarkar, Aditi (২০১৯-০৯-১৭)। "শ্রীধর আচার্যের সূত্র ও তার প্রয়োগ"JUMP Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-৩০ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]