শ্রম আইন ২০০৬
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার এবং সুরক্ষার জন্য একটি সামগ্রিক আইন। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা, শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে নিশ্চিত করা। আইনটি বিভিন্ন খাত যেমন কারখানা, শিল্প, নির্মাণ এবং অন্যান্য সেবা খাতে প্রযোজ্য।[১]
এই আইনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো শিশু শ্রম নিষিদ্ধকরণ। শ্রম আইন ২০০৬-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কোনো কাজের জন্য নিয়োগ করা যাবে না। ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট শর্তে এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে। তবে, বিপজ্জনক কাজগুলোতে তাদের নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইনটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) কনভেনশনগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যা শিশুশ্রম নির্মূলের উপর গুরুত্বারোপ করে। আইনটি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কাজের সময়, বেতন, ছুটি, এবং অন্যান্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানগুলোর উপর আলোকপাত করে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য, এই আইনটি শিক্ষা এবং উন্নতির জন্য সময় প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে মুক্তি, এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করে। বাংলাদেশে শিশু শ্রমের বাস্তবতা এবং আইনটির কার্যকরীতা একটি চ্যালেঞ্জ। এই আইনের বাস্তবায়নে আরও সচেতনতা, পরিবীক্ষণ এবং প্রশাসনিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে যাতে শিশুশ্রম পুরোপুরি নির্মূল করা যায়।[২]
অধ্যায় ১: প্রারম্ভিক
[সম্পাদনা]প্রথম অধ্যায়টি বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর সূচনামূলক বিধান এবং আইনের প্রযোজ্যতা বর্ণনা করে। এই অধ্যায়ের মাধ্যমে আইনটির নামকরণ, কার্যকারিতা এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনের নাম “বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে এবং এটি সমগ্র বাংলাদেশে অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই আইনের প্রযোজ্যতা থেকে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। যেমন সরকারি দপ্তর, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস, সমরাস্ত্র কারখানা এবং মুনাফার জন্য পরিচালিত নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো এই আইনের আওতায় আসে না। এছাড়াও, অসুস্থ, অক্ষম, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ বা এতিমদের জন্য পরিচালিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই আইনের আওতাভুক্ত নয়, যদি এগুলো মুনাফার উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয়। এছাড়াও, ব্যক্তিগত কৃষি খামার, গৃহপরিচারক এবং পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহেও এই আইন প্রযোজ্য নয়। অধ্যায়টি শ্রমিক, প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংজ্ঞায়িত করেছে। সংজ্ঞার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক, কর্মঘণ্টা, মজুরি, কারখানা, প্রতিষ্ঠান, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শ্রমিকদের অধিকার এবং সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।[২]
অধ্যায় ২: নিয়োগ ও চাকুরীর শর্তাবলী
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু হলো শ্রমিকদের নিয়োগ এবং চাকরির শর্তাবলী। এই অধ্যায়ে শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, চাকরির শর্তাবলী, এবং তাদের জন্য প্রযোজ্য নীতিমালা সংক্রান্ত বিধানাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রমিকদের শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে।[২]
- শিক্ষানবিশ: যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং শিক্ষানবিশীকাল শেষ করেননি।
- বদলী শ্রমিক: স্থায়ী শ্রমিক বা শিক্ষানবিশের অনুপস্থিতির সময় বদলী হিসেবে কাজ করেন।
- সাময়িক শ্রমিক: সাময়িক প্রকৃতির কাজের জন্য অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক।
- অস্থায়ী শ্রমিক: অস্থায়ী ধরনের কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত শ্রমিক, যা অল্প সময়ে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- শিক্ষাধীন শ্রমিক: প্রশিক্ষণ নেওয়া শ্রমিক, যাদের ভাতা প্রদান করা হয় প্রশিক্ষণকালে।
- স্থায়ী শ্রমিক: যাদের স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হয় এবং শিক্ষানবিসীকাল সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
- মৌসুমী শ্রমিক: যারা মৌসুমভিত্তিক কাজের জন্য (যেমন চিনি কল বা চাতাল) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগের সময় একটি নিয়োগপত্র এবং ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান বাধ্যতামূলক। এছাড়া, মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকদের জন্য সার্ভিস বই সংরক্ষণ করা, যাতে তাদের চাকরির মেয়াদ, মজুরি এবং অন্যান্য সুবিধার তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। যদি শ্রমিকের চাকরি ছাঁটাই বা বরখাস্তের কারণে শেষ হয়, তবে মালিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই অধ্যায়ে শ্রমিকের চাকরি ছাঁটাই, লে-অফ এবং বরখাস্তের নিয়মাবলী বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। যদি কোনও শ্রমিক অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তাকে বরখাস্ত করা যেতে পারে। তবে, শ্রমিকদের শাস্তির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে এবং শ্রমিককে নিজের পক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া আবশ্যক। এই অধ্যায়ের মূল লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যাতে তারা ন্যায্য নিয়োগ, শর্তাবলী এবং শাস্তি সংক্রান্ত নিয়মগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন।[২]
অধ্যায় ৩: কিশোর শ্রমিক নিয়োগ
[সম্পাদনা]তৃতীয় অধ্যায়ে মূলত শিশু ও কিশোর শ্রমিকদের নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও বিধি বিবৃত হয়েছে। এই অধ্যায় অনুযায়ী, কোনো শিশুকে কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেওয়া যাবে না। কিশোরদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে কিছু কাজ করার অনুমতি রয়েছে, তবে এজন্য কিশোরের কাজ করার সক্ষমতা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। এই প্রত্যয়নপত্র কাজ করার সময় কিশোরকে সঙ্গে রাখতে হবে।[২]
ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক যন্ত্রপাতির কাজে কোনো কিশোরকে (কিশোর বলতে কিশোর ও কিশোরী, উভয়কেই বুঝান হয়েছে) নিয়োগ করা যাবে না। সরকার সময় সময় গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা প্রকাশ করবে এবং এসব কাজে কিশোরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[২]
এছাড়া, কিশোরদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরদের কর্মঘণ্টা সীমাবদ্ধ করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে তারা অতিরিক্ত কাজের চাপ বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য না হয়। উল্লেখ যোগ্য বিষয়গুলো হল:
- দৈনিক এবং সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা: কোনো কিশোরকে কারখানা বা খনিতে দৈনিক ৫ ঘণ্টার বেশি এবং সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে দেওয়া যাবে না। অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে দৈনিক ৭ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সর্বাধিক ৪২ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। এভাবে কর্মঘণ্টা সীমাবদ্ধ করার উদ্দেশ্য হলো, কিশোরদের অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিরত রাখা এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ ও ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা।
- অধিকাল কাজ: যদি কোনো কিশোরকে অধিকাল কাজ করতে হয়, তবে কারখানা বা খনিতে সপ্তাহে সর্বাধিক ৩৬ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। অধিকাল কাজের সময়ও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।
- রাতের কাজ: কিশোরদের জন্য রাত ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটি করা হয়েছে তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সময় নিশ্চিত করার জন্য।
- পালা সংক্রান্ত বিধি: কোনো কিশোরকে একাধিক পালায় কাজ করতে দেওয়া যাবে না। একদিনে একটি রীলেতেই কাজ করতে হবে এবং ত্রিশ দিনের মধ্যে পালের পরিবর্তন একবারের বেশি করা যাবে না। এই নিয়মটি কর্মস্থলে কিশোরদের উপর অতিরিক্ত চাপ এড়ানোর জন্য প্রণীত হয়েছে।
- সাপ্তাহিক ছুটি: কিশোরদের সাপ্তাহিক ছুটি প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে, এবং তাদের ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি সংক্রান্ত বিধানের কোনো প্রকার স্থগিতাদেশ দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি দিতে হবে, যা কিশোরদের বিশ্রামের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
- একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজের বাধা: একই দিনে কোনো কিশোরকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। এটি নিশ্চিত করে যে, কিশোররা অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক চাপের শিকার না হয় এবং তাদের কাজের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।[২]
অধ্যায় ৪: প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা
[সম্পাদনা]এই অধ্যায়ে মহিলাদের প্রসূতি অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা এবং কল্যাণের জন্য বেশ কিছু বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।
- কর্মে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা: সন্তানের জন্মের পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কোনো মহিলাকে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না এবং তিনি নিজেও এই সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারবেন না। এছাড়াও, সন্তান জন্মের আগে দশ সপ্তাহের মধ্যে বা পরে কোনো শারীরিকভাবে কষ্টকর কাজেও তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
- প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা প্রাপ্তি: প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক সন্তানের জন্মের আগে এবং পরে আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী, তবে তিনি প্রসূতির পূর্ববর্তী ছয় মাস ধরে সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকলে এই সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এই সময়কালে তাদের মজুরি প্রদান করতে মালিক বাধ্য থাকবেন।
- সুবিধা প্রদানের পদ্ধতি: মালিকের কাছে সন্তানের জন্মের প্রমাণ পেশ করে মহিলারা তাদের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন। সুবিধাটি নগদে প্রদান করা হবে, এবং সন্তানের জন্মের আগে ও পরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই সুবিধা কার্যকর থাকবে।
- মৃত্যুর ক্ষেত্রে সুবিধা: যদি কোনো মহিলা সন্তানের জন্মের সময় বা পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে মারা যান, তবে সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি বা মৃত মহিলার মনোনীত ব্যক্তি এই সুবিধা পাবেন।
- চাকরির সুরক্ষা: সন্তান জন্মের আগের ছয় মাস ও পরে আট সপ্তাহের মধ্যে কোনো মহিলা শ্রমিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বা ডিসচার্জ করা যাবে না। যদি তা করা হয়, তবে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন না।[২]
অধ্যায় ৫: স্বাস্থ্য রক্ষা ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]পঞ্চম অধ্যায়টি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিধান প্রদান করে। এ অধ্যায়ে প্রতিষ্ঠানকে সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন মেঝে, সিড়ি এবং অন্যান্য স্থান ঝাড়ু দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করার পাশাপাশি সপ্তাহে একবার মেঝে ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। নর্দমা ও পায়খানা থেকে আসা দূষিত বাষ্প থেকে পরিবেশ মুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
বায়ু চলাচল এবং তাপমাত্রার ক্ষেত্রে, প্রতিটি কর্মস্থলে যথাযথ বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন। বিশেষ করে, তাপমাত্রা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে তা কর্মীদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়। যেখানে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বেশি তাপ সৃষ্টি হয়, সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার সময় ধূলা-বালি, ধোঁয়া বা অন্যান্য দূষিত পদার্থ উৎপন্ন হলে, সেগুলোর জমে যাওয়া বা কর্মীদের শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, বর্জ্য পদার্থ অপসারণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কৃত্রিমভাবে বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ব্যবহৃত পানির মান নিশ্চিত করতে হবে, এবং যদি কোনো পরিদর্শক মনে করেন যে পানি যথাযথভাবে শোধন করা হয়নি, তাহলে তিনি মালিককে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। অতিরিক্ত ভিড়ের ক্ষেত্রে, কর্ম-কক্ষে এমন পরিমাণ লোক রাখতে হবে যাতে কর্মীদের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে এবং তাদের স্বাস্থ্য হানিকর না হয়। যদি পরিদর্শক মনে করেন যে অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে, তাহলে তিনি সেই কর্মক্ষেত্রে লোকসংখ্যা সীমিত করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আলোর ব্যবস্থায়, প্রতিটি কর্মস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে শ্রমিকরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন এবং তাদের চোখের উপর চাপ না পড়ে। পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার স্থানে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানে শৌচাগার ও প্রক্ষালন কক্ষের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত আবর্জনা বাক্স ও পিকদানীর ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক, যা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।[২]
অধ্যায় ৬: নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]ষষ্ঠ অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু হলো প্রতিষ্ঠান ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এখানে ভবন, যন্ত্রপাতি, অগ্নিকাণ্ড, বিপজ্জনক গ্যাস এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন বিধান রয়েছে। প্রথমে, কোনো পরিদর্শকের যদি মনে হয় যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভবন বা যন্ত্রপাতি শ্রমিকদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, তাহলে তিনি মালিককে লিখিতভাবে সেই সমস্যাগুলো মেরামত বা প্রতিস্থাপন করার নির্দেশ দিতে পারেন। যদি অবিলম্বে মেরামত না করা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে, তবে সেই যন্ত্রপাতি বা ভবনের অংশটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিকল্প বহির্গমনের ব্যবস্থা এবং যথাযথ অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম থাকতে হবে। এছাড়া, জরুরি অবস্থায় সঠিকভাবে বহির্গমনের পথ চিহ্নিত করা, দরজা খুলতে সহজ হওয়া, এবং নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন মহড়া আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি ব্যবহারে নিরাপত্তার জন্য শ্রমিকদের আটো-সাটো পোশাক পরিধান করতে হবে এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে হবে। চলমান যন্ত্রপাতির যেকোনো বিপজ্জনক অংশ মজবুতভাবে ঘিরে রাখতে হবে যাতে শ্রমিকরা আঘাতপ্রাপ্ত না হন। এছাড়া, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির জন্যও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিপজ্জনক ধোঁয়া বা গ্যাস নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যেখানে প্রয়োজন, শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। বয়লার, ধোঁয়াপথ, বা গর্তের মতো স্থানে কাজ করার সময় নিশ্চিত করতে হবে যে, সেগুলি যথেষ্ট শীতল বা নিরাপদ অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত গরম পরিবেশ বা দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের সময় বিশেষ সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা না মানলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাই দায়ী থাকবেন।[২]
অধ্যায় ৭: স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য বিধি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশেষ বিধান
[সম্পাদনা]সপ্তম অধ্যায়ে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিশেষ বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার যদি মনে করে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম শ্রমিকদের জন্য শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে, তাহলে সেই পরিচালনাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় এবং সেখানে মহিলা, কিশোর, ও শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া শ্রমিকদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় এবং কাজের ধরন অনুযায়ী সু-রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে মালিককে দুই কর্মদিবসের মধ্যে পরিদর্শককে নোটিশ পাঠাতে হবে। গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সরকার, ফায়ার সার্ভিস, এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া, বিধি অনুযায়ী বিপজ্জনক বা অস্বাস্থ্যকর কাজ পরিচালিত হলে সেই কাজের ক্ষতিকর প্রভাবগুলির বিষয়ে শ্রমিকদের অবহিত করতে হবে। যদি কোনো শ্রমিক কোনো নির্দিষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত হন যা দ্বিতীয় তফসিলে উল্লিখিত, তবে মালিক, সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, বা নির্দিষ্ট চিকিৎসককে পরিদর্শককে অবহিত করতে হবে। এছাড়া, সরকার সেই তফসিলে নতুন ব্যাধি সংযোজন বা অপসারণের ক্ষমতা রাখে। দুর্ঘটনা বা ব্যাধি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রয়োজন হলে, সরকার একটি বিশেষজ্ঞকে তদন্তের দায়িত্বে নিয়োগ করতে পারে। এই তদন্তের ফলাফল সরকারি রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হয়। পরিদর্শকের অধিকার রয়েছে প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা সংগ্রহ করার এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য যেকোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে মালিককে নির্দেশ দেওয়ার।[২]
অধ্যায় ৮: কল্যাণমূলক ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]অষ্টম অধ্যায়ে কল্যাণমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান দেয়া হয়েছে। প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং ১৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সের সংখ্যা একটি থেকে কম হতে পারবে না। বড় প্রতিষ্ঠানে ডিসপেনসারী ও চিকিৎসা কক্ষ স্থাপনেরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যেখানে ৫,০০০ জন বা ততোধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকলে একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের চিকিৎসা ও সুস্থতার দায়িত্ব মালিককে নিতে হবে, বিশেষত পেশাগত দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার ক্ষেত্রে। ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে সেইফটি রেকর্ড বই এবং ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে সেইফটি কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। এছাড়া গোসলখানা, ক্যান্টিন, খাবার কক্ষের ব্যবস্থা, এবং ৪০ জনের বেশি মহিলা কর্মী থাকলে শিশু কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে ছোট শিশুদের দেখাশোনার জন্য প্রশিক্ষিত মহিলা থাকবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা থাকে তবে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। চা-বাগান এবং সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানে বিনোদন, শিক্ষা, চিকিৎসা, এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক। সংবাদপত্র শ্রমিক ও তাদের নির্ভরশীলদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ১০০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে গ্রুপ বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি করার বিধানও উল্লেখ করা হয়েছে।[২]
অধ্যায় ৯: কর্মঘন্টা ও ছুটি
[সম্পাদনা]প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের দৈনিক কর্মঘণ্টা সাধারণত আট ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা যাবে। ছয় ঘণ্টার অধিক কাজ করলে এক ঘণ্টার বিশ্রাম বিরতি এবং পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে আধা ঘণ্টার বিরতির বিধান রয়েছে। সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে দেওয়া যাবে না, তবে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা গড়ে ৫৬ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।সাপ্তাহিক ছুটির ক্ষেত্রে, কারখানার শ্রমিকরা প্রতি সপ্তাহে একদিন এবং দোকান কর্মীরা দেড় দিন ছুটি পাবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে সাপ্তাহিক ছুটি উৎসব ছুটির সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে। নৈশ-পালায় কাজের ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামের বিধান রয়েছে, এবং যানবাহনে ক্রমাগত অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধিকাল কাজের জন্য শ্রমিকদের দ্বিগুণ ভাতা প্রদানের বিধান রয়েছে। মহিলা শ্রমিকদের জন্য রাতে কাজ করার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং একই দিনে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অনুমতি নেই। কর্মঘণ্টা ও ছুটির বিষয়ক নোটিশ প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এবং মালিকেরা কাজের সময়ের তালিকা প্রণয়ন করে তা অনুমোদনের জন্য পরিদর্শকের কাছে জমা দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটির বিধান অনুযায়ী প্রতি ১৮ দিনের কাজে একদিন ছুটি মঞ্জুর করা হবে, যা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চা-বাগান ও সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য ভিন্ন হতে পারে। এছাড়া, বার্ষিক উৎসব ছুটির জন্য এগার দিন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং ছুটির সময় মজুরী হিসাব করে প্রদানের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে।[২]
অধ্যায় ১০: মজুরী ও উহার পরিশোধ
[সম্পাদনা]দশম অধ্যায়ে মজুরী ও এর পরিশোধ সংক্রান্ত বিধানগুলো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মজুরীর সংজ্ঞা ধারা ১২০ এ দেওয়া হয়েছে, যেখানে নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী প্রদেয় বোনাস, ছুটির জন্য পারিশ্রমিক, এবং অবসানজনিত অর্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মজুরী পরিশোধের দায়িত্ব মালিকের উপর থাকে, তবে ঠিকাদারের নিযুক্ত শ্রমিকের ক্ষেত্রে মালিক দায়বদ্ধ থাকেন। মজুরীকাল এক মাসের বেশি হবে না এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে মজুরী পরিশোধ করতে হবে। অবসানজনিত ক্ষেত্রে ত্রিশ দিনের মধ্যে মজুরী পরিশোধ করতে হবে। মজুরী প্রচলিত মুদ্রা, ব্যাংক চেক, বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পরিশোধ করা যাবে। মজুরী কর্তনের ক্ষেত্রে এই আইনে নির্দিষ্ট শর্তাবলী প্রযোজ্য, যেমন অনুপস্থিতি, মালিকের সম্পত্তির ক্ষতি ইত্যাদির জন্য কর্তন করা যেতে পারে। শ্রমিকের চাহিদা অনুযায়ী তাদের পাওনাদি আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। মজুরী থেকে যেকোনো অনুমোদিত কর্তন ধারা ১২৫ অনুযায়ী করা হবে এবং এতে জরিমানা, অনুপস্থিতির জন্য কর্তন, বাসস্থান বা সেবার জন্য কর্তন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মজুরী থেকে কর্তন করা হলে শ্রমিককে তদান্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে, এবং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মজুরী থেকে সেবার জন্য কর্তন করা হলে তা সরকারের শর্ত অনুযায়ী হবে। এছাড়া, শ্রমিকদের কোন কর্জ বা অগ্রিম প্রদান করা হলে সেটি সরকারের নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী কিস্তিতে আদায় করা হবে। মজুরী পরিশোধে বিলম্বের কারণে শ্রমিক আদালতে অভিযোগ করতে পারেন, এবং শ্রম আদালত সেই অনুযায়ী আদেশ দিতে পারে। মজুরী আদায়ে দেরি হলে শ্রমিককে পঁচিশ শতাংশ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। মৃত বা নিখোঁজ শ্রমিকের মজুরী তাদের মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীর নিকট প্রদান করা হবে, এবং কোনো দাবির ক্ষেত্রে শ্রম আদালতে আবেদন করা যাবে।[২]
অধ্যায় ১০: মজুরী বোর্ড
[সম্পাদনা]একাদশ অধ্যায় মজুরী বোর্ডের গঠন ও কার্যক্রম সম্পর্কিত বিধানাবলী নির্ধারণ করে। নিম্নতম মজুরী বোর্ড প্রতিষ্ঠা (ধারা ১৩৮) অনুযায়ী, সরকার একটি নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করবে, যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, একজন নিরপেক্ষ সদস্য, মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একজন সদস্য থাকবে। নির্দিষ্ট শিল্পের ক্ষেত্রে আরও দুইজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, যারা সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিক এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বোর্ডের সদস্যগণকে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত করা হবে। ধারা ১৩৯ অনুযায়ী, সরকার প্রয়োজনীয় তদন্তের ভিত্তিতে নিম্নতম মজুরী হার সুপারিশ করার জন্য মজুরী বোর্ডকে নির্দেশ দিতে পারবে। বোর্ড এই নির্দেশ প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ পেশ করবে এবং মেয়াদী কাজ ও ঠিকা কাজের জন্যও সুপারিশ করবে। ধারা ১৪০ অনুযায়ী, সরকার মজুরী বোর্ডের সুপারিশ প্রাপ্তির পর সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নিম্নতম মজুরী হার ঘোষণা করতে পারবে। সরকার যদি মনে করে যে সুপারিশ ন্যায্য নয়, তাহলে তা পুনঃবিবেচনার জন্য বোর্ডের কাছে ফেরত পাঠানো যাবে। একবার প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হলে, সেটি চূড়ান্ত এবং কোনো আদালতে এর উপর আপত্তি তোলা যাবে না। ধারা ১৪১ অনুযায়ী, মজুরী সুপারিশ প্রণয়নকালে বোর্ড জীবনযাত্রার খরচ, উৎপাদন খরচ, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন ও ঝুঁকি, এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করবে। ধারা ১৪২ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের মধ্যে মজুরী হারের পুনঃনির্ধারণ করা হবে। সংবাদপত্র শিল্পের জন্য সংবাদপত্র মজুরী বোর্ড (ধারা ১৪৩) গঠন করা যেতে পারে, যা সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে। ধারা ১৪৫ অনুসারে, বোর্ডের সিদ্ধান্ত সরকারী গেজেটে প্রকাশ করা হবে এবং তা কার্যকর হবে। মজুরী বোর্ডের সিদ্ধান্ত সমস্ত মালিকদের উপর বাধ্যতামূলক হবে (ধারা ১৪৮) এবং কোনো মালিক মজুরী বোর্ডের সুপারিশ করা হারের কম মজুরী প্রদান করতে পারবেন না (ধারা ১৪৯)।[২]
অধ্যায় ১২: দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ
[সম্পাদনা]দ্বাদশ অধ্যায়টি দুর্ঘটনাজনিত কারণে জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত বিধানাবলী নির্ধারণ করে। কোনো শ্রমিক চাকরির সময় দুর্ঘটনার ফলে শরীরে আঘাত পেলে, মালিক তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। তবে, মালিকের পক্ষে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না যদি আঘাতের ফলে শ্রমিক তিন দিনের বেশি সময় কর্মক্ষমতা না হারায় অথবা যদি আঘাতের মূল কারণ মাদক সেবন, নিরাপত্তা বিধি অমান্য করা, বা কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার না করা হয়। যদি শ্রমিকের জখমের ফলে মৃত্যু ঘটে, তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ পঞ্চম তফসিল অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে, তা সম্পূর্ণ বা আংশিক হোক, তফসিলের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হবে। এছাড়া, অস্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে, মাসিক ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে, যা অক্ষমতার সময়কাল অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। ক্ষতিপূরণ হিসাব করার জন্য শ্রমিকের মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয় পূর্ববর্তী বারো মাসের কাজের ভিত্তিতে, যদি সে মালিকের অধীনে বারো মাস ধরে কাজ করে থাকে। তবে, যদি শ্রমিক এক মাসের কম সময় ধরে কাজ করে থাকে, তাহলে সমমানের অন্য শ্রমিকের মজুরির গড় হিসাবে মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হবে। শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হলে ক্ষতিপূরণ পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি শ্রমিকের মৃত্যুর ফলে ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রয়োজন হয়, তখন মালিককে আদালতে অর্থ জমা দিতে হবে, এবং আদালত তা শ্রমিকের পোষ্যদের মধ্যে বণ্টন করবে। যদি কোনো মালিক দেউলিয়া হয়ে যান, তাহলে বীমাকারী ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। এমন ক্ষেত্রে বীমাকারীর অধিকার শ্রমিকের পক্ষে স্থানান্তরিত হবে, যেন বীমাকারী মালিকের স্থান গ্রহণ করেছেন। যদি কোনো শ্রমিক চাকরির সময়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে, যেমন ক্ষতিপূরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা, অক্ষমতার পরিমাণ, বা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ, তা শ্রম আদালত দ্বারা নিষ্পত্তি করা হবে। ক্ষতিপূরণের দাবির ক্ষেত্রে শ্রম আদালতে আবেদন করতে হলে তা দুর্ঘটনা ঘটার পর যত দ্রুত সম্ভব আদালতে জমা দিতে হবে। শ্রমিকের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়ে যদি যথাসময়ে নোটিশ প্রদান না করা হয়, আদালত দাবিটি বিবেচনা করতে পারে যদি নোটিশ দিতে না পারার যথেষ্ট কারণ থাকে। দুর্ঘটনার পর তিন দিনের মধ্যে মালিককে শ্রমিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং শ্রমিককে চিকিৎসকের কাছে হাজির হতে হবে। যদি শ্রমিক নিজে চিকিৎসা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, তবে তার ক্ষতিপূরণের অধিকার সাময়িকভাবে স্থগিত থাকতে পারে।[২]
ত্রয়োদশ অধ্যায়: ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্প সম্পর্ক
[সম্পাদনা]ত্রয়োদশ অধ্যায়টি ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্প সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। এই অধ্যায়ের অধীনে শ্রমিকরা তাদের নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং এতে যোগদান করতে পারে। ট্রেড ইউনিয়ন মূলত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা এবং মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গঠিত হয়। এই অধ্যায়ের অধীনে মালিকদের জন্যও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং এতে যোগদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। এই অধ্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র, রেজিস্ট্রিকরণের জন্য দরখাস্ত, রেজিস্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা, গঠনতন্ত্রের নিয়মাবলী, এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বিধানও রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নিয়মাবলী, শ্রমিকদের যোগ্যতা, এবং মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধির ভূমিকা সম্পর্কেও বিশেষ বিধান রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলাকালে কোনো শ্রমিক বা কর্মকর্তার চাকুরির শর্তাবলী পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া, এই অধ্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন গঠন, ট্রেড ইউনিয়নের চাঁদা আদায় পদ্ধতি, অংশগ্রহণকারী কমিটির কাজ ও সভার নিয়মাবলী, এবং শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।[২]
অধ্যায় ১৪: বিরোধ নিষ্পত্তি, শ্রম আদালত, শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল, আইনগত কার্যধারা, ইত্যাদি
[সম্পাদনা]চতুর্দশ অধ্যায়ে শিল্প বিরোধ, ধর্মঘট, শ্রম আদালত, এবং আপীল প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের মাধ্যমে শিল্প বিরোধ কিভাবে উত্থাপিত ও নিষ্পত্তি করা যায়, তার নানাবিধ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্প বিরোধ উঠলে তা যৌথ দরকষাকষি, সালিস (Conciliator), মধ্যস্থতা (Arbitration), এবং শ্রম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত, বিরোধ শুরু হলে মালিক বা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি বিরোধের সম্ভাবনা সম্পর্কে লিখিত নোটিশ প্রদান করবে, যার পর আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না আসে, তাহলে বিষয়টি সালিসের কাছে প্রেরণ করা হবে। সালিসির মাধ্যমে যদি সমাধান না আসে, তাহলে মধ্যস্থতা বা শ্রম আদালতে পাঠানো হবে। ধর্মঘট ও লক-আউট শুরু করার নিয়মাবলীও এই অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ধর্মঘট বা লক-আউট শুরু করার জন্য নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয় এবং সালিসী কার্যক্রম চলাকালে ধর্মঘট বা লক-আউট শুরু করা যায় না। জনস্বার্থে সরকারও ধর্মঘট বা লক-আউট নিষিদ্ধ করতে পারে, বিশেষত যদি তা জনজীবন বা জাতীয় স্বার্থের জন্য হানিকর হয়। শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার নিয়ম, আদালতের ক্ষমতা এবং আদালতে কিভাবে মামলা পরিচালিত হবে তা এই অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রম আদালত একটি দেওয়ানী আদালত হিসাবে কাজ করবে এবং অপরাধমূলক বিষয়গুলোও এর আওতায় বিচার করা যাবে। শ্রম আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের প্রক্রিয়াও এখানে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাছাড়া, শ্রম আদালতের সিদ্ধান্ত কিভাবে কার্যকর হবে, আপিল প্রক্রিয়া, এবং পক্ষগণকে কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে তা নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।[২]
অধ্যায় ১৫: কোম্পানীর মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহন
[সম্পাদনা]পঞ্চদশ অধ্যায়ে শ্রমিকদের জন্য কোম্পানির মুনাফায় অংশগ্রহণের নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অধ্যায়টি মূলত কোম্পানিগুলির আর্থিক মুনাফা থেকে শ্রমিকদের জন্য অংশীদারিত্ব ও কল্যাণ তহবিল গঠনের জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে। প্রথমেই, অধ্যায়টি প্রযোজ্য কোম্পানিগুলি নির্ধারণের জন্য কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে, যেমন পরিশোধিত মূলধন বা স্থায়ী সম্পদের মূল্য। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণকারী কোম্পানিগুলি শ্রমিকদের জন্য অংশগ্রহণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন করতে বাধ্য। এছাড়া, সরকার কিছু বিশেষ ক্ষেত্রেও এই অধ্যায় প্রযোজ্য করতে পারে, যেমন শতভাগ রপ্তানীমুখী শিল্প বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগকারী শিল্প। এই অধ্যায়ের অধীনে, অংশগ্রহণ তহবিল এবং কল্যাণ তহবিলের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও প্রতিষ্ঠানের নিয়মাবলী নির্ধারণ করা হয়েছে। কোম্পানির নীট মুনাফার একটি অংশ এই তহবিলে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে অংশগ্রহণ তহবিলে ৮০%, কল্যাণ তহবিলে ১০%, এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে ১০% মুনাফা জমা দিতে হবে। এই অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণ ও অংশীদারিত্বের কাজে ব্যবহৃত হবে। তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে, যেখানে শ্রমিকদের প্রতিনিধি এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিরা থাকবেন। ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান কাজ হবে তহবিলের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনে সরকার থেকে নির্দেশ গ্রহণ করা। অধ্যায়টিতে আরো বলা হয়েছে যে, যদি কোন কোম্পানি বা ট্রাস্টি বোর্ড তহবিলের জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলী প্রতিপালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে সরকারের মাধ্যমে অর্থ জরিমানা আরোপ করা হবে। এছাড়া, তহবিল ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক বিষয়ে সরকারের কাছে আপত্তি জানানো যেতে পারে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। অংশগ্রহণ তহবিলের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। কোম্পানি এই তহবিলের অর্থ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করতে পারবে এবং উক্ত অর্থের উপর নির্ধারিত হারে সুদ প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক সুবিধাভোগী শ্রমিক সমান অনুপাতে এই তহবিল থেকে সুবিধা পাবেন। তবে, শ্রমিককে নূন্যতম ছয় মাসের চাকরি পূর্ণ করতে হবে, তবেই তিনি এই সুবিধার যোগ্য হবেন। অবশেষে, কল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কোন কোন সুবিধা প্রদান করা হবে তা ট্রাস্টি বোর্ড নির্ধারণ করবে, এবং তহবিল থেকে প্রদত্ত সুবিধা আয়করের আওতামুক্ত থাকবে। এই অধ্যায়টি শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও কোম্পানির সাথে তাদের অংশীদারিত্বের বিষয়ে একটি মজবুত কাঠামো প্রদান করে।[২]
অধ্যায় ১৬: ডক শ্রমিকগণের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা
[সম্পাদনা]ষোড়শ-ক অধ্যায়টি মূলত চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের ডক-শ্রমিক ব্যবস্থাপনা বোর্ডের বিলুপ্তি এবং সেই প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এখানে বোর্ডগুলোর বিলুপ্তির সাথে সম্পর্কিত কার্যক্রম এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের বিস্তারিত বিধান রয়েছে। প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে গঠিত ডক-শ্রমিক ব্যবস্থাপনা বোর্ড বিলুপ্ত হবে এবং সেই সাথে বোর্ডের রেজিস্ট্রিকৃত সমস্ত ডক-শ্রমিকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে, বোর্ডগুলোর বিলুপ্তির পরও তাদের অধীনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট বন্দরের কর্তৃপক্ষের অধীনে স্থানান্তরিত হবেন এবং তাদের পূর্বের শর্ত অনুযায়ী বন্দরে কাজ চালিয়ে যাবেন, যতক্ষণ না সেই শর্ত পরিবর্তন করা হয়। এই কর্মকর্তাদের আত্মীকরণে ১৯৮৫ সালের Surplus Public Servants Absorption Ordinance[৩] এর বিধান প্রযোজ্য হবে। বিলুপ্ত ডক-শ্রমিক ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি, কল্যাণ তহবিল এবং লিকুইড ফান্ড চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে হস্তান্তরিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ফান্ডগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। একই সাথে বোর্ডের অধীনে থাকা সমস্ত সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ অর্থ, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত অর্থ, দলিল-পত্রও বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে স্থানান্তরিত হবে। তারা এই সমস্ত সম্পদের নতুন অধিকারী হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবে। বিলুপ্তির অব্যবহিত আগে বোর্ডের সব ধরনের ঋণ, দায় এবং দায়িত্ব, সেই সাথে সম্পাদিত চুক্তিগুলোও চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে চলে যাবে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ এগুলো বহন করবে। বোর্ড বিলুপ্তির পূর্বে যেসব মামলা বা আইনগত কার্যধারা চলমান ছিল, সেগুলোও বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে এবং তারা সেই মামলাগুলোর শুনানী ও নিষ্পত্তির দায়িত্ব নেবে। এই উপধারার বিধানগুলো কার্যকর করতে গিয়ে যদি কোনো অস্পষ্টতা বা সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সরকার আদেশের মাধ্যমে সেই অস্পষ্টতার ব্যাখ্যা প্রদান করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।[২]
অধ্যায় ১৮: শিক্ষাধীনতা
[সম্পাদনা]এই অধ্যায়ে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভবিষ্য তহবিল গঠনের নিয়মাবলী এবং চা-বাগান শ্রমিকদের জন্য একটি পৃথক ভবিষ্য তহবিল গঠনের নিয়মাবলী বর্ণিত হয়েছে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শ্রমিকদের সুবিধার্থে ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে পারে। এই তহবিল গঠনের পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী প্রণীত বিধি মানতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে শ্রমিকরা দাবি জানায়, তবে মালিক প্রতিষ্ঠানটি তহবিল গঠনের জন্য বাধ্য থাকবে, বিশেষত যদি শ্রমিকদের তিন-চতুর্থাংশ এমন একটি তহবিলের দাবিতে লিখিত দরখাস্ত করে। ভবিষ্য তহবিল গঠনের জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে, যেখানে শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি থাকবেন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন। তহবিল পরিচালনার জন্য যে বোর্ড গঠন করা হবে, তার সদস্যরা দুই বছরের মেয়াদে পদে থাকবেন। ট্রাস্টি বোর্ড তহবিল পরিচালনা করবে এবং তহবিলের আয়-ব্যয় হিসাব নিরীক্ষা করবে। তহবিলের একটি অংশ বিশেষ বিনিয়োগে ব্যবহার করা হবে, যেমন মিউচ্যুয়াল ফান্ড সার্টিফিকেট বা সরকারি ঋণপত্র। এছাড়া, চা-বাগান শ্রমিকদের জন্য বিশেষভাবে একটি ভবিষ্য তহবিল থাকবে, যার পরিচালনাও একটি ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে হবে। এই তহবিলে চা-বাগানের শ্রমিক এবং মালিকপক্ষ থেকে চাঁদা জমা করা হবে। ভবিষ্য তহবিলটি দেউলিয়া আইনের আওতায় থাকবে না এবং কোনো শ্রমিকের দায়মুক্তি বা মৃত্যু হলে তার তহবিলের অর্থ বিশেষভাবে তার মনোনীত ব্যক্তির উপর ন্যস্ত হবে। তাছাড়া, সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য একটি পৃথক ভবিষ্য তহবিল গঠন করা হবে, যেখানে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।[২]
অধ্যায় ১৯: অপরাধ, দন্ড এবং পদ্ধতি
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ অধ্যায়ে বিভিন্ন অপরাধের জন্য যে দণ্ড এবং পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ধারা ৩৩-এর অধীন শ্রম আদালতের আদেশ অমান্য করার দণ্ড, যা অনুসারে আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হলে তিন মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। শিশু এবং কিশোর নিয়োগের অপরাধের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ধারা ৩৫ লঙ্ঘন করে শিশু সম্পর্কে কোন চুক্তি করলে পিতা-মাতা বা অভিভাবক এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। মালিক কর্তৃক চতুর্থ অধ্যায়ের বিধান লংঘন করে মহিলাদের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হলে পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং সেই দণ্ড থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিতে পারবে আদালত। অনুমোদিত অনুপস্থিতির সময়ে মহিলারা কাজ করলে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত হবেন। শক্তি চালিত যন্ত্রপাতি বিক্রয় বা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ধারা ৬৭ লঙ্ঘন করলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। যদি মালিক একাদশ অধ্যায়ের অধীনে ঘোষিত নিম্নতম মজুরীর কম হারে মজুরী দেন, তবে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং আদালত পার্থক্য অর্থ পরিশোধের আদেশ দিতে পারেন। দুর্ঘটনার নোটিশ দিতে ব্যর্থ হলে সাংঘাতিক শারীরিক জখমের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা পর্যন্ত, আর প্রাণহানির ক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়াও, অসৎ শ্রম আচরণ বা এন্টি-ট্রেড ইউনিয়ন বৈষম্যের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত দণ্ড, বেআইনী ধর্মঘট বা লক-আউটের জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ঢিমে তালের কাজে অংশ নেয়ার জন্যও একই দণ্ড প্রযোজ্য হবে। ভবিষ্য তহবিল বা ট্রেড ইউনিয়নের তহবিল আত্মসাৎ করার জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং আর্থিক দণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। অ-রেজিস্ট্রিকৃত ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা, বা ট্রেড ইউনিয়নের দ্বৈত সদস্য পদ গ্রহণের জন্যও যথাক্রমে তিন মাস এবং এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মিথ্যা সক্ষমতা পত্র ব্যবহার করলে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা দণ্ড, মিথ্যা বিবরণ দেওয়ার জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এইসব বিধানসমূহের মাধ্যমে শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।[২]
অধ্যায় ২০: প্রশাসন, পরিদর্শন, ইত্যাদি
[সম্পাদনা]বিংশ অধ্যায়ে প্রশাসন, পরিদর্শন এবং অন্যান্য বিষয়গুলির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমেই, ধারা ৩১৭ অনুসারে সরকার একজন শ্রম পরিচালক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত শ্রম পরিচালক, যুগ্ম শ্রম পরিচালক, উপ শ্রম পরিচালক, সহকারী শ্রম পরিচালক এবং শ্রম কর্মকর্তা নিযুক্ত করবে। শ্রম পরিচালকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা কাজ করবেন এবং শ্রম পরিচালকের কাজের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রিকরণ, যৌথ দর কষাকষি প্রতিনিধি নির্ধারণ, এবং শিল্প বিরোধে সালিস হিসাবে দায়িত্ব পালন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শ্রম পরিচালক লিখিত আদেশের মাধ্যমে তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের উপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করতে পারবেন। সরকার একজন প্রধান পরিদর্শক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপ-প্রধান পরিদর্শক, সহকারী প্রধান পরিদর্শক এবং অন্যান্য পরিদর্শক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিদর্শকদের কাজের মধ্যে রয়েছে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা যানবাহনে প্রবেশ, পরিদর্শন এবং সেখানে রক্ষিত রেজিস্টার বা দলিল-দস্তাবেজ পরীক্ষা করা, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবানবন্দী গ্রহণ করা। তারা শ্রম আদালতে অভিযোগ দাখিল করতেও সক্ষম হবেন। প্রধান পরিদর্শক বা তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা শ্রমিকদের নিয়োগ, মজুরী এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নথিপত্র পরীক্ষা করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান চালাতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলির মালিকদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথি সরবরাহ করতে হবে। সরকার একজন চা-বাগান শ্রমিক ভবিষ্য তহবিল নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত করবে, যিনি তহবিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকবেন এবং চা-বাগানের শ্রমিকদের নিয়োগ এবং মজুরীর হিসাব পরীক্ষার জন্য চা-বাগানে প্রবেশ করতে পারবেন। সকল বোর্ড তাদের হিসাব রক্ষণ করবে এবং মহা হিসাব নিরীক্ষকের মাধ্যমে নিরীক্ষা সম্পন্ন করবে। নিরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর নিরীক্ষা রিপোর্ট বোর্ডের নিকট পেশ করতে হবে এবং সরকারকে পাঠাতে হবে। নিরীক্ষা রিপোর্টে উল্লিখিত ত্রুটি বা অনিয়ম সংশোধন করতে হবে। সরকার জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য ও সেইফটি কাউন্সিল গঠন করবে, যার চেয়ারম্যান হবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী। এই কাউন্সিলের কাজ হবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং সেইফটি নিশ্চিত করার জন্য দিক নির্দেশনা প্রদান করা।[২]
অধ্যায় ২১: বিবিধ
[সম্পাদনা]একবিংশ অধ্যায়ের বিভিন্ন বিধানগুলো গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এবং নিয়মাবলী বর্ণনা করে, যা শ্রমিকদের অধিকার এবং মালিকদের দায়িত্ব নিশ্চিত করে। প্রথমেই বলা হয়েছে যে, সরকার, প্রয়োজন অনুসারে নির্দিষ্ট শর্তে মালিক, প্রতিষ্ঠান বা শ্রমিকদের কিছু বিধান থেকে অব্যাহতি দিতে পারে, তবে এ ধরনের অব্যাহতি জনস্বার্থে হতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে, কাজ শুরু করার পূর্বে মালিককে প্রধান পরিদর্শককে নোটিশ দিতে হবে, যেখানে প্রতিষ্ঠান এবং এর পরিচালনার তথ্য দেওয়া থাকবে, যেমন মালিকের নাম, ঠিকানা, ব্যবহৃত শক্তির ধরন, এবং সম্ভাব্য শ্রমিকের সংখ্যা। প্রতিষ্ঠান যদি কোনো নতুন ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করে, তবে সেই তথ্য সাত দিনের মধ্যে প্রধান পরিদর্শককে জানাতে হবে। কারখানা নির্মাণ বা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে, মালিককে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নকশা অনুমোদন করতে হবে এবং রেজিস্ট্রিকরণ ও লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফিস প্রদান করতে হবে। যদি প্রধান পরিদর্শক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নকশা অনুমোদন না করেন, তবে মালিক সরকারের কাছে প্রতিকার চাইতে পারেন। যদি পরিদর্শক কোনো মালিকের উপর নির্দিষ্ট আদেশ জারি করেন, তবে সেই আদেশের বিরুদ্ধে মালিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করতে পারবেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ স্থগিত রাখা যেতে পারে। মৌসুমী কারখানাগুলি, যেগুলি নির্দিষ্ট মৌসুমে বা প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করে উৎপাদন করে, তাদের বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে এবং মৌসুমের বাইরেও নিয়মিত কার্যক্রম চালানো সম্ভব না হলে সেই কারখানাগুলি মৌসুমী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের পাওনা, শ্রমিকের আবেদন অনুযায়ী সরকারী দাবী হিসেবে বা অন্যান্য পন্থায় আদায় করা যাবে। শ্রমিকদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য মালিক কোন অর্থ আদায় করতে পারবেন না, এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবেন না। মহিলাদের প্রতি কাজের জায়গায় শালীন আচরণ বজায় রাখা আবশ্যক এবং কোনো অসামাজিক বা অশ্লীল আচরণ করা যাবে না। সরকার নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী, আইন অনুসারে বিভিন্ন বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং শ্রমিক, মালিক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, সমান কাজের জন্য নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সমান মজুরী প্রদান করতে হবে এবং কোনোরূপ বৈষম্য করা যাবে না। সরকার এই আইনের অধীনে ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের এবং মালিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে এবং এই প্রশিক্ষণের ব্যয় সরকার ও মালিক যৌথভাবে বহন করবে।[২]