সংবিধিবদ্ধ আইন
অবয়ব
সংবিধিবদ্ধ আইন (ইংরেজি: Statutory Law) হলো এমন আইন যা একটি দেশের সংসদ বা আইনসভা দ্বারা গৃহীত এবং প্রণীত হয়। এই ধরনের আইনগুলি সাধারণত বিল আকারে উপস্থাপিত হয়, যা সংসদে আলোচনা এবং সংশোধনের পরে আইন হিসাবে গৃহীত হয়। সংবিধিবদ্ধ আইন একটি দেশের আইনের প্রাথমিক উৎসগুলির মধ্যে একটি এবং সাধারণত লিখিত আকারে থাকে, যা সাধারণ মানুষ ও বিচারকদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।
এ ধরনের আইন তৈরি হয় সংবিধান অনুযায়ী এবং বিশেষভাবে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়ম বা বিধান প্রদান করতে। এটি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে এবং বিচারিক সিদ্ধান্তের উপরও প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবিধিবদ্ধ আইন
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশ সংবিধান, ১৯৭২: এটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই সংবিধান বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামো, নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের নীতি, এবং সরকারের কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করে।
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০: এটি বাংলাদেশে অপরাধ ও দণ্ডের উপর প্রধান আইন। এই আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধের জন্য দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেমন খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, এবং প্রতারণা।[১]
- সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ : এই আইন সাক্ষ্য প্রমাণের বিধান ও নিয়মাবলী নির্ধারণ করে। আদালতে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণযোগ্য এবং কোন প্রমাণ অগ্রহণযোগ্য তা এই আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়।[২]
- ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮: এই আইন ফৌজদারি মামলার প্রক্রিয়া ও নিয়মাবলী নির্ধারণ করে। এটি পুলিশের তদন্ত, গ্রেফতার, জামিন, এবং বিচারিক কার্যক্রমের নিয়মাবলী নির্দেশ করে।[৩][৪][৫]
- বৈবাহিক আইন: বাংলাদেশে মুসলিম আইন, হিন্দু আইন, খ্রিস্টান আইন এবং বিশেষ বিবাহ আইনসহ বিভিন্ন বৈবাহিক আইন রয়েছে। এই আইনগুলো বিভিন্ন ধর্মের বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, এবং অন্যান্য পারিবারিক বিষয়ে নিয়মাবলী নির্দেশ করে।
- শ্রম আইন, ২০০৬: এই আইন বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার, সুরক্ষা, এবং কর্মপরিবেশের নিয়মাবলী নির্ধারণ করে। এটি শ্রমিকদের মজুরি, কাজের সময়, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, শ্রমিক সংগঠন, এবং বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান করে।[৬]
- ভূমি সংস্কার আইন: বাংলাদেশে বিভিন্ন ভূমি সংস্কার আইন রয়েছে, যা ভূমির মালিকানা, ভূমি অধিকার, এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নিয়মাবলী প্রদান করে। যেমন, ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৭২; ভূমি অধিগ্রহণ আইন, ১৯৮২ ইত্যাদি।[৭]
- পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫: এই আইন পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণীত হয়েছে। এটি পরিবেশগত মানদণ্ড, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) সম্পর্কিত নিয়মাবলী নির্ধারণ করে।
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮: এই আইন ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধ এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। এটি অনলাইন হুমকি, সাইবার অপরাধ, এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করে।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "The Penal Code, 1860"। ২০২৩-০৯-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।
- ↑ "The Acting Judges Act, 1867"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।
- ↑ "The Code of Criminal Procedure, 1898"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।
- ↑ "ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮.docx"। Google Docs। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৮।
- ↑ "ফৌজদারি কার্যবিধি - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৮।
- ↑ "বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬"। ২০২৪-০৮-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।
- ↑ "দানকর আইন, ১৯৯০"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।
- ↑ "বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৬।