বিষয়বস্তুতে চলুন

সনদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্রিটিশ রাজের সময়ে আগ্রা ও আউধ সংযুক্ত প্রদেশের জারীকৃত একটি সনদ

সনদ শব্দটি বাংলাভাষায় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সনদ বা সনদপত্র দ্বারা সাধারণত শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত প্রমাণপত্র কে বোঝানো হয়ে থাকে। এটাকে শিক্ষাসনদও বলা হয়। সনদ দ্বারা দলিলও বোঝানো হয়। ইসলামে হাদিস বর্ণনায় দুটি অংশ থাকে। প্রথম অংশকে সনদ বা ইসনাদ এবং দ্বিতীয় অংশকে মাতন বলা হয়। মোঘল শাসনামলে প্রশাসনিক কাজে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কিংবা সম্রাট নির্ধারিত ব্যক্তির সিলমোহরসহ রাজকীয় ঘোষণাপত্রকে সনদ বলা হতো। এটা সম্রাটের স্বীকৃত দলিল বা প্রমাণপত্র যার দ্বারা কোন ব্যক্তি বা সংস্থাকে উপাধি, পদ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করা হতো।

ঐতিহাসিক ব্যবহার

[সম্পাদনা]

সাধারণত সম্রাটের দেয়া সনদ ফরমান নামে পরিচিত ছিলো। তিনি ফরমান জারির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতেন। সম্রাট ফররুখ সিয়ার ১৭১৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জন্য ফরমান জারি করেন। সম্রাট শাহ আলম ১৭৬৫ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রদান করেন। স্বাধীন সম্রাটের কাছ থেকে পাওয়া ফরমান সনদ-ই মিলকিয়াত নামে পরিচিত ছিলো। সকল প্রকার জমিদারী, জায়গীর, মদদ-ই-মাশ (জ্ঞান বা শিক্ষাচর্চার জন্যে জমি প্রদান), আলতমঘা (ধর্মীয় কাজে নিস্কর জমি প্রদান) ইত্যাদি কাজে সনদ প্রদান করা হতো। সুবাদার (সুবাহদার) ও দেওয়ানগন সম্রাটের প্রতিনিধি হিসেবে সম্রাটকে জানিয়ে এ ধরনের সনদ দিতে পারতেন। এসব সনদ সনদ-ই-মুত্তাবিক নামে পরিচিত ছিলো। কোম্পানী শাসনামলে দুই পক্ষের অধিকার ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কিত চুক্তিকে সাধারণভাবে সনদ বলা হতো।[] এদেশীয় কর্মচারীগণ কোম্পানির চুক্তিবদ্ধ কর্মকর্তাদেরকে সনদি সাহেব বলে ডাকতো। ব্রিটিশ আমলে কিছু শাসককে সনদ'স অব এডপশান দেয়া হয় যাতে শাসকেরা চাইলে শাসকেরা স্থানীয় অভিজাত পরিবার থেকে নিজেদের উত্তরসূরী মনোনীত করতে পারতো।[]

শিক্ষা সনদ

[সম্পাদনা]
আমেরিকার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্র সনদ গ্রহণ করছেন

একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে এই ধরনের শিক্ষা সনদ অর্জন করে থাকেন৷ অধিকাংশ সময়ে এই অর্জন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তের পর সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশে দশম শ্রেণী পাশ করার পরে জাতীয় ভাবে আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের একটি সনদ প্রদান করা হয় যাকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সনদ (এসএসসি নামে বহুল পরিচিত) বলা হয়।

চিকিৎসা সনদ

[সম্পাদনা]

চিকিৎসা সনদ বা ডাক্তারের সনদ[][] হচ্ছে চিকিৎসক প্রদত্ত একটি লিখিত পত্র যা একজন রোগীর স্বাস্থ্য ব্যাখ্যা করে।[] নির্দিষ্ট কিছু চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে কিংবা কর্মক্ষেত্রে অসুস্থতাজনিত কারণে অনুপস্থিত থাকলে চিকিৎসা সনদ প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়।[]

জন্মসনদ

[সম্পাদনা]
মেরি এলিজাবেথ উইনব্লাডের জন্মসনদ

জন্মসনদ শিশু জন্মের সমসাময়িক সময়ে প্রদান করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সরকারি পর্যায়ে জন্মসনদ প্রদানের ব্যবস্থা আছে। জন্মসনদ বিদ্যালয়ে ভর্তিসহ বিবিধ নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

মৃত্যু সনদ

[সম্পাদনা]
এডি অগাস্ট স্কনেইডারের মৃত্যুসনদ বা নিউইয়র্ক রাজ্য সরকার প্রদান করে

মৃত্যু সনদ সাধারণত ডাক্তার কর্তৃক হাসপাতালের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিনিধিরা দিয়ে থাকে। এতে ব্যক্তির মৃত্যু তারিখ, স্থান, মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা থাকে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Great Britain India Office. The Imperial Gazetteer of India. Oxford: Clarendon Press, 1908.
  2. Malleson, G. B. (১৮৭৫)। An historical sketch of the native states of India (1984 Delhi reprint সংস্করণ)। London। 
  3. "Employers should not question a doctor's certificate: AMA"। Workplaceinfo.com.au। ২০১৪-১২-০১। ২০১২-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-০৫ 
  4. "Doctor's certificate questioned after MP skips parliament"। Medical Observer। ২০১২-০৩-১৯। ২০১৪-১২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-১০ 
  5. S. Ashtekar (১ জানুয়ারি ২০০১)। Health and Healing: A Manual of Primary Health Care। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 576–। আইএসবিএন 978-81-250-1624-3। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  6. "Medical certificates"। Workplaceinfo.com.au। ২০১৩-০৪-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-১০