শুয়াইব আল আরনাউত
শুয়াইব আল আরনাউত | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | আনু. 1928 |
মৃত্যু | ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ |
ধর্ম | ইসলাম |
অঞ্চল | মধ্যপ্রাচ্য |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
কাজ |
শুয়াইব আল আরনাউত ( ১৩৪৬–১৪৩৮ হি/১৯২৮ –২০১৬ খ্রি. ) ছিলেন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত একজন সিরীয় ইসলামি পন্ডিত, হাদিসবিশারদ, ফকিহ এবং রিজাল শাস্ত্রের বিখ্যাত আরব পণ্ডিত। তিনি একাধিক হাদিস গ্রন্থ তাহকিকের ( হাদিস যাচাই) জন্য একজন মুহাক্কিক ( গবেষক) হিসেবে মুসলিম বিশ্বে পরিচিত। তিনি ইমাম যাহাবির সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থ ২৫ খণ্ডে এবং ইমাম আহমদের মুসনাদ তাহকিক করে ৫০ খণ্ডে প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি একাধিক হাদিস গ্রন্থের তাহকিকের সাথে জড়িত ছিলেন।
জন্ম ও জ্ঞানার্জন
[সম্পাদনা]তার মূল নাম হল আবু ওসামা [১] শুয়াইব বিন মুহার্রম আল আলবানী আল আরনাউতি। তিনি দামেস্ক শহরে ১৩৪৬ হি./১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন [২] এবং নিজের পিতামাতার অধীনে বেড়ে ওঠেন, যারা একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় চেতনা লালন করতেন। পরিবারেই তিনি ইসলামের নীতিগুলি শেখেন এবং পবিত্র কুরআনের অনেকাংশ মুখস্থ করেন। তিনি অল্প বয়সেই আরবি ভাষা অধ্যয়ন শুরু করেন। দশ বছরেরও বেশি সময় তিনি দামেস্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানের ভাষা কোর্সে; যেমন ব্যাকরণ, রূপবিদ্যা, সাহিত্য ও অলঙ্কারশাস্ত্রে কাটান।
শিক্ষকবৃন্দ
[সম্পাদনা]তিনি সে সময়ের দামেস্কের নেতৃস্থানীয় অধ্যাপক এবং পণ্ডিতদের থেকে শরিয়া ও আরবি বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন, যাদের মধ্যে শেখ মুহাম্মদ সালেহ আল-ফার্ফর ও শেখ আরিফ আল-দুজি উল্লেখযোগ্য ছিলেন, যারা তৎকালীন সিরিয়ার মহান পণ্ডিতদের ছাত্র ছিলেন। তিনি তাদের কাছে আরবি ভাষা এবং অলঙ্কারশাস্ত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলি পড়েন; তার মধ্যে: শারহে ইবনে আকিল, কাফিয়া, আল জামাখশারীর আল-মুফাসাল, ইবনে হিশাম আল-আনসারির শাজারাতুয যাহাব, আসরারু বালাগাহ ও আবদুল কাহের আল-জুরজানির আল ই'জায উল্লেখযোগ্য।
যারা তাঁর সাথে পড়েছেন তাদের মধ্যে: শেখ সুলেমান আল গাওজি আল-আলবানি অন্যতম। আরবি ভাষার সাথে এই দীর্ঘ এবং কঠিন যাত্রার পর শায়খ ইসলামী আইনশাস্ত্র অধ্যয়নের দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি একাধিক শাইখের কাছে আইনশাস্ত্রের বই, বিশেষত হানাফী আইনশাস্ত্রের বই পড়েন, যেমন: ( মারাকিউল ফালাহ, আল-ইখতিয়ার, আল-কুদুরি ও হাশিয়া। তার আইনশাস্ত্রের অধ্যয়ন সাত দীর্ঘ হয়েছিল। এই সময়ে তিনি আইনশাস্ত্রের নীতি, কুরআনের ব্যাখ্যা, হাদীসের পরিভাষা ও নীতিশাস্ত্রের বইগুলি অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেই পর্যায়ে তার বয়স ছিল ত্রিশের বেশি।
হাদিস গবেষণা
[সম্পাদনা]আইনশাস্ত্র অধ্যয়নের সময় তিনি নিজের কিছু শায়খ ও সমসাময়িকদের মাঝে সহীহ ও দূর্বল হাদিস চেনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করেন, যার ফলে তিনি উলুমুল হাদিসের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন তদসম্পর্কিত বইপত্র পড়া শুরু করেন। তার পরে তিনি এই কঠিন বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষে তিনি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে আরবি ভাষা শিক্ষার পেশা ছেড়ে দেন এবং নিজেকে হাদিসশাস্ত্রে নিয়োজিত করেন।
১৯৫৮ সালে শায়খ জুহাইর আল শাবিশের দামেস্কের অফিসে তার গবেষণার সূচনা হয়, যেখানে তিনি বিশ বছর ধরে হাদিস যাচাই ও সংশোধন বিভাগের প্রধান ছিলেন। এসময়ে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সত্তরটিরও বেশি খণ্ড যাচাই বা তদারকি করেছিলেন। তারপর ১৯৮২ সালে আম্মানে মুয়াস্সাসাতুর রিসালা প্রকাশনীর সাথে কাজ করার ইচ্ছা করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ দিন গবেষণারত ছিলেন।
শেখ বাশার আওয়াদ মারুফ সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থের ভূমিকায় শুয়াইব আর্নাউতের কাজ ও গবেষণা সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন।
গবেষণাকর্ম
[সম্পাদনা]একক, অংশদারী এবং একজন তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে, শায়খ শত শত খণ্ড রচনায় যুক্ত ছিলেন। তার সকল রচনা এবং গবেষণাকর্ম প্রসিদ্ধ আরবি প্রকাশনী আল মাকতাবাতুল ইসলামি ও মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ-এর অধীনে প্রকাশিত হয়েছে।
আল মাকতাবাতুল ইসলামির অধীনে:
[সম্পাদনা]- আল-বাগাভীর শরহু সুন্নাহর ব্যাখ্যা; ১৬ খন্ড।
- ইমাম নববির রওয়াতুত তালিবিন; শায়খ আবদুল কাদির আরনাউতের সাথে সহ-লেখক হিসেবে; ১২ খণ্ডে।
- ইবনে মঞ্জুর রচিত মুহাদ্দিদুল আগানী; ১২ খন্ডে।
- ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলী রচিত আল-মুবদি 'ফি শারহিল মুকনি'; ১০ খণ্ডে।
- ইবনে জাওজির আল-মা'সির ফি ইলমত তাফসির; এটি শায়খ আব্দুল কাদির আল আর্নাউতের সাথে সহ-লেখক হিসেবে; ৯ খণ্ডে।
মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ'র অধীনে:
[সম্পাদনা]- ইবনে কাইয়িম কর্তৃক রচিত যাদুল মা’আদ; শায়খ আব্দুল কাদির আল-আর্নাউতের সাথে সহ-লেখক হিসেবে; ৫ খণ্ডে।
- ইমাম আয-যাহাবির সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থ; ২৫ খণ্ডে। [৩]
- সুনান আত-তিরমিজী; ১৬ খণ্ডে।
- সুনানে নাসাই; ১২ খণ্ডে।
- আল দারাকুতনী রচিত সুনান আল দারাকুতনী; ৫ খণ্ডে।
- মুসনাদে আহমাদ; ৫০ খণ্ডে।
- বাশার আওয়াদ মারুফের সহযোগিতায় ইমাম আয-যাহাবির তারিখুল ইসলাম।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]তিনি ২৬ মুহাররম, ১৪৩৮ হিজরি মোতাবেক ২০১৬ সালের বৃহস্পতিবারে আম্মানে মারা যান। [৪]
নোট
[সম্পাদনা]তাহকিক অর্থ পান্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করা অর্থাৎ কোনো গ্রন্থের নাম, লেখকের নাম, লেখকের চিন্তার সাথে গ্রন্থের সামঞ্জস্যতা ইত্যাদি যাচাই করা।
হাদিসের গ্রন্থ তাহকিকের অর্থ হল, গ্রন্থের নির্ভরযোগ্য পাণ্ডুলিপি যাচাই করা; গ্রন্থ বর্ণনাকারীদের জীবনী ও তাদের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা; গ্রন্থে বর্ণিত হাদিস ও আসারের মান নির্ণয় করা; হাদিসসমূহের সমস্ত সনদ একত্র করে বর্ণনাকারীদের অবস্থা বিবেচনা করে হাদিসের হুকুম (সহিহ, জঈফ, হাসান) বর্ণনা করা ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ … من رجالات دمشق: الشيخ شعيب الأرنؤوط عـقـل حـر وعطاء مستمر / د. محمد حسان الطيان ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-১০-২৮ তারিখে
- ↑ كتاب: (المحدث شعيب الأرناؤوط، جوانب من سيرته وجهوده في تحقيق التراث)، تأليف: إبراهيم الكوفحي، صادر عن دار البشير بعمان، الطبعة الأولى، 1423هـ - 2002م.
- ↑ ইমাম আয-যাহাবি (১৯৮৫), سير أعلام النبلاء (আরবি ভাষায়) (1st সংস্করণ), বৈরুত: Muʼassasat al-Risālah, ওসিএলসি 4770539064, Wikidata Q113078038
- ↑ المحدث شعيب الأرناؤوط في ذمة الله، موقع السبيل ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-১০-৩০ তারিখে