বিষয়বস্তুতে চলুন

শামসুন্নাহার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শামসুন্নাহার
বাংলাদেশ পুলিশ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
২০০১
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1973-11-01) নভেম্বর ১, ১৯৭৩ (বয়স ৫২)
ফরিদপুর ,বাংলাদেশ
জাতীয়তা বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীমো. হেলাল উদ্দিন
সন্তানশামশাদ আবদুল্লাহ স্বচ্ছ (ছেলে)
শায়রা আমেনা সৌম্য (মেয়ে)
পিতামাতামো.শামসুল হক ভোলা মাস্টার (পিতা)
আমেনা বেগম (মাতা)
বাসস্থানঢাকা
শিক্ষাবিএ (অনার্স) রাষ্ট্রবিজ্ঞান
এমএ রাষ্ট্রবিজ্ঞান.
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
যে জন্য পরিচিতনারী পুলিশ কর্মকর্তা
পুরস্কারসাত বার জাতিসংঘ শান্তি পদক-(২০০৯-২০১৪)
নারী পুলিশ পদক (২০১৬)
রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক-(২০১৮)

শামসুন্নাহার বাংলাদেশের পুলিশ প্যারেডে নেতৃত্বদানকারী প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা । তিনি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার (২০১৫-২০১৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে সাত বার জাতিসংঘ শান্তি পদক (২০০৯ -২০১৪), নিজ দেশে দায়িত্বপালনে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (২০১৮), সাহসী নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নারী পুলিশ পদক (২০১৮) ও দুই বার আইজি ব্যাজ প্রাপ্ত হন। [][] নিউজিল্যান্ডের সুপরিচিত সাময়িকী দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনে শামসুন্নাহারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে তাকে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও রুচিশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

শামসুন্নাহার ফরিদপুরের সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শামসুল হক ভোলা মাস্টার একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী। মা আমিনা বেগম "রত্নগর্ভা" সম্মানে ভূষিত। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশবে তিনি কিছুদিন গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। পরবর্তীতে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে শামসুন্নাহার বিবাহিত। স্বামী মো. হেলাল উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী ও ব্যবসায়ী। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। [][]

প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা

[সম্পাদনা]

শামসুন্নাহার নিজ জেলা ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং সারদা সরকারি সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । এখান থেকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএসএস সম্মান ও ১৯৯৮ সালে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল পাশ করে স্কলারশীপ নিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০২১ সালে বাংলাদেশে "পুলিশ প্রশাসনে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংস্কার" বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।[] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকাবস্থায় বিএনসিসি-তে নাম লেখান। তখন সেরা ১০ ক্যাডেটের একজন হিসেবে রাইডার ফ্লাইংয়ে সুযোগ পান। বিএনসিসি-তে থাকার সময় প্যারেড করেছেন, অস্ত্র ধরেছেন। বিএনসিসির পোশাক, নিয়মশৃঙ্খলা দেখে পুলিশ বিভাগে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়। সে দিক থেকে বিসিএস পরীক্ষায় তার প্রথম পছন্দ ছিলো পুলিশ[][]

কর্মক্ষেত্র অবদান

[সম্পাদনা]

২০তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে মানিকগঞ্জ জেলায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৫ অক্টোব ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার ও ২৬ আগস্ট ২০১৮ থেকে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। [] পেশাগত ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। এ দেশগুলো হচ্ছে : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালী, ভ্যাটিকান সিটি, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, দুবাইকাতার। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দু’বার [] দেশের প্রথম নারী হিসেবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ও র‌্যাবসহ ১৩ টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দেন এই নারী পুলিশ। [১০][১১] নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তার কার্যালয়ে তিনি নারী সেল গঠন করেন। এতে প্রতিনিয়ত বিচারপ্রার্থীরা এসে ভিড় করে এবং মামলাবিহীন পারিবারিক কলহসহ নারী ও শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে মীমাংসা করেন।[১২][১৩]

শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ

[সম্পাদনা]

২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পেয়ে পূর্ব তিমুরে পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘে উচ্চপদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন সাতবার জাতিসংঘ শান্তি পদক।

সংস্কৃতি চর্চা

[সম্পাদনা]

শামসুন্নাহার পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সঙ্গীত চর্চাও করেন। তিনি চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমীতে গান পরিবেশন করে দর্শকনন্দিত হয়েছেন। [১০] সুযোগ পেলেই সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। তার সর্বাধিক পছন্দ নজরুলগীতি। এছাড়া তিনি ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী,

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]

শামসুন্নাহার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে সাত বার জাতিসংঘ শান্তি পদক (২০০৯ -২০১৪), সাহসী নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নারী পুলিশ পদক (২০১৬), নিজ দেশে দায়িত্বপালনে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (২০১৮) ও দুই বার আইজি ব্যাজ প্রাপ্ত হন। []

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 3 "সাফল্য গাথা : পুলিশ প্যারেড নেতৃত্বে এসপি শামসুন্নাহার"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৯
  2. "এসপির মহানুভবতার গল্প"দৈনিক সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৯
  3. ডেস্ক, পুলিশ নিউজ (২৮ অক্টোবর ২০২১)। "ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনের চোখে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কর্মকর্তা এআইজি শামসুন্নাহার"news.police.gov.bd (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০২১ {{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: |শেষাংশ= প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "নারীর নেতৃত্বে প্রথম পুলিশ প্যারেড"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৯
  5. "এআইজি শামসুন্নাহারের পিএইচডি ডিগ্রি লাভ"Bangla Tribune। ১২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০২১
  6. "এসপি শামসুন্নাহারের এক দিন"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৯
  7. "গাজীপুরের এসপি শামসুন্নাহার পিপিএম। তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে এবারের চ্যালেঞ্জার। The Challenger"এটিএন বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  8. "এসপি হারুনকে অশ্রুসিক্ত বিদায়, যোগ দিলেন শামসুন্নাহার"। বাংলাদেশ টুডে। ২৬ আগস্ট ২০১৮। ৫ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৯
  9. "পুলিশ সপ্তাহ: এবারও প্যারেডের নেতৃত্ব দেন এসপি শামসুন্নাহার"বাংলা ট্রিবিউন। ২৩ জানুয়ারি ২০১৭। ১৪ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৯
  10. 1 2 "প্যারেডে অধিনায়কত্ব ও গাড়ি-চালনা নারী পুলিশ এই প্রথম"। যুগান্তর। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। {{সংবাদ উদ্ধৃতি}}: |সংগ্রহের-তারিখ= এর জন্য |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)
  11. "নারীদের আশ্রয়স্থল এসপি শামসুন্নাহার"জাগো নিউজ। ১১ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৯
  12. "নন্দিনী এসপি শামসুন্নাহারের গল্প (সাক্ষাতকার)"নাগরিক টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  13. "A saviour for justice seekers"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯