বিষয়বস্তুতে চলুন

মুহাম্মদ আল-হাশিমি আল-তিলিমসানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ ইবন আল-হাশিমি ইবন আবদ আল-রহমান আল-তিলিমসানি (আরবি: محمد الهاشمي التلمساني) (১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ – ১৯ ডিসেম্বর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ; ২২ শাওয়াল ১২৯৮ হিজরি – ১২ রজব ১৩৮১ হিজরি) ছিলেন জন্মসূত্রে একজন আলজেরীয় ও (বাসস্থান সূত্রে) সিরীয় সুফি সাধক এবং পণ্ডিত, যাকে কেউ কেউ "ধর্ম নবায়নকারী (মুজাদ্দিদ)" ও সমসাময়িক শারানী বলে মনে করেন।[]

জীবনী

[সম্পাদনা]

শায়খ আল-হাশিমির পিতা-মাতা বংশ সূত্রে হাসান ইবনে আলীর সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন এবং আলজেরিয়ার টেমসেন সংলগ্ন সাবদা শহরে বসবাস করতেন। তার পিতা একজন আলেম ও বিচারক ছিলেন। ভাই-বোনের মধ্যে শায়খ আল-হাশিমি ছিলেন সবার বড়।[]

১৯১১ খ্রিস্টাব্দ, ১৩২৯ হিজরি সালের রমজান মাসে ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকারের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে আল-হাশিমি তার শিক্ষক (শায়খ) মুহাম্মদ ইবনে ইয়াল্লাসের সঙ্গে সিরিয়ায় গমন করেন। তারা কিছুদিন দামেস্কে অবস্থান করেন কিন্তু আল-হাশিমিকে সেখানকার প্রশাসন তুরস্ক চলে যেতে বাধ্য করলে তিনি তুরস্কের আদানায় ২ বছর অবস্থান করেন। এরপর তিনি পুনরায় দামেস্কে ফিরে আসেন ও তার শিক্ষকের সংস্পর্শে দামেস্কে বসবাস শুরু করেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দামেস্কেই অবস্থান করেন।[]

অধ্যয়ন

[সম্পাদনা]

শায়খ আল-হাশিমি নিম্নলিখিত পন্ডিতদের সাথে বাহ্যিক বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন: হাদীসের মহান পণ্ডিত বদর আল-দীন আল-হাসানী, শায়খ আমিন সুওয়াইদ, শায়খ জাফর আল-কাত্তানি, শায়খ নাজিব কিওয়ান, শায়খ তাওফিক আল-আয়্যুবি, শায়খ মুহাম্মদ আল-আত্তার যাদের কাছ থেকে তিনি আইনশাস্ত্র শিখেছিলেন এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আল-কাফি যার কাছ থেকে তিনি মালিকি আইনশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন।[]

সুফিবাদের ক্ষেত্রে, তিনি প্রথমে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াল্লাসের একজন শিষ্য ছিলেন। যিনি আল-হাশিমিকে তরিকার সাধারণ শিক্ষাসমূহ অন্যদের শেখানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ/১৩৪৬ হিজরি সালে, ইবনে ইয়াল্লাসের মৃত্যুর পর, বিখ্যাত শায়খ আহমাদ আল-আলাউই দামেস্কে হয়ে মক্কা হতে ফেরত আসার পথে আল-হাশিমিকে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন।[] শায়খ আল-হাশিমি পরবর্তীতে পূর্ব ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন এলাকায় আলাউইয়ার প্রধান প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন, যেখানে আজও তার অনেক শিক্ষার্থী ও আধ্যাত্নিক উত্তরসূরিরা, শাধিলিইয়া-দারকাউইয়া-হাশিমিয়া তরিকা নামে পরিচিত তরিকায় শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন।[] তার চারজন প্রধান শিষ্য চমৎকার প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন। তারা হলেন শায়খ মুহাম্মাদ আল-নাবান (১৯০০–১৯৭২), শেখ আবদুল কাদির ঈসা (১৯১৮–১৯৯২), শাইখ মুহাম্মাদ সাঈদ আল-কাদির (১৯০০–১৯৭২) এবং আবদ আল-রহমান আল-শাঘুরি (১৯১২–২০০৪)।[]

তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে, তিনি মাত্র নয়টি রচনা প্রকাশ করেছিলেন যার মধ্যে রয়েছে উপদেশমূলক কবিতা এবং কয়েক পৃষ্ঠার ছোট গ্রন্থ। এখানে তিনি শুধুমাত্র দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করেন: সুফিবাদ এবং দার্শনিক ধর্মতত্ত্ব (ফিকহ )।[]

  • সুন্নাতের অনুসারীদের একটি ধর্ম ( ‘আকিদা আহল আল-সুন্না ওয়া-নামুহা' - একটি আদর্শ ধর্মতাত্ত্বিক পাঠ)
  • সুন্নাতের অনুসারীদের একটি ধর্ম বইটির উপর একটি যাচাইকরণ ব্যাখ্যা
  • জান্নাতের চাবিকাঠি (সুন্নাতের অনুসারীদের একটি ধর্ম রচনারটির উপর একটি ব্যাখ্যা)
  • সুখের পথ (বিশ্বাসের দুটি সাক্ষ্যের ব্যাখ্যা)
  • বিস্তৃত গবেষণা গ্রন্থ (আধুনিক শিক্ষার দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জের উত্তরে লেখা, সৃষ্টি এবং স্রষ্টার বিস্ময় বিষয়ক রচনা)
  • "জ্ঞানতত্ত্বের দাবা"-এর উপর লিখিত ব্যাখ্যা ( মুহিদ্দীন ইবনে আরাবির লেখা শাতারঞ্জ আল-আরিফিনের সুফি ব্যাখ্যা)
  • সঠিক সমাধান (সুফী শিষ্যত্ব বিষয়ক)
  • বিক্ষিপ্ত মুক্তা, দশটি প্রশ্নের উত্তর (সুফিবাদ বিষয়ক)
  • সংজ্ঞাপূর্ণ এবং ন্যায়সঙ্গত শব্দের উপর গ্রন্থ (মুসলিমদের ঐক্যে বিষয়ক)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Guezzou, Mokrane, Shaykh Muḥammad al-Hāshimī: His Life and Works, Viator Books, Leicester, 2009.
  2. See The Life of Sīdī Shaykh Muḥammad al-Hāshimī al-Tilimsānī ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে.