মুসলিম রাংরেজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুসলিম রংরেজ বা মুসলিম রাংরেজ হল উত্তর ভারতের মুসলিম রাজপুতদের একটি সম্প্রদায়। [১] এই সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে চলে আসেন এবং করাচি, সিন্ধু প্রদেশ ইত্যাদি স্থানে বসতি স্থাপন করেন।

ফার্সি ভাষায় রংরেজ (رنگریز) শব্দের অর্থ হল রঞ্জক। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে কাপড় রং করার পেশার সাথে যুক্ত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এরা অন্য বিভিন্ন ব্যবসা এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত। এই জনজাতির অনেকেই এখন নিজেদের মধ্য এশীয় অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বংশোদ্ভূত বলে দাবি করে এবং সম্ভবত এদের মধ্যে কিছু জনসংখ্যার অংশ তুর্কি বংশোদ্ভূত। তারা সম্ভবত হিন্দু রাজপুতদের বংশধর যারা ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদের পারিবারিক বংশতালিকার তথ্য অনুসারে জানা গেছে যে সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য বিদেশী বংশোদ্ভূত হতে পারে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা সম্প্রদায়ের অভিন্ন অংশ হয়েছে উঠেছে। [২] তারা এখন পোশাক রং করার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

দেখা গেছে ভারতের রাংরেজদের জিনগত বিশিষ্টতার সাথে পাঠান এবং সাইয়িদের মিল নেই। এর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে তারা পৌত্তলিক ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত এবং মুসলিম রাজপুত, মেওয়াতি বা কায়মখানির সাথে সম্পর্কিত। কারণ তাদের ত্বকের স্বর এবং মুখের বৈশিষ্ট্যগুলি এই কথার স্বপক্ষেই প্রমান দেয়।

তাদের প্রধান বসতি অঞ্চল তিনটি মহকুমায় বিভক্তঃ- লালগড়, নীলগড় এবং মুসলিম ছিপি। তারা উর্দু এবং হিন্দির অথবা স্থানীয় উপভাষায় কথা বলে। তারা কাপড় রং করা ও কাপড় ছাপানোর ব্যবসার সাথে যুক্ত। লালগড় এবং নীলগড় -এর নামকরন সাধারণত লাল ও নীল থেকে রঙ থেকে হয়েছে, যে অঞ্চলে এদের জনসংখ্যা উল্লেখনীয়ভাবে বেশি সেই অঞ্চলের নাম হয়েছে লালগড় অথবা নীলগড়। প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম ছিপি সম্প্রদায় বৃহত্তর রংরেজ সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র উপ-গোষ্ঠী যা আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। রংরেজ শব্দটি এখন সাব্বাগ শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এটি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হল বাগান। তারা সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়। তারা তাদের ধর্মীয় রীতি ও বিশ্বাস অনুযায়ী খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মতো উত্তর ভারতের বিভিন্ন সুফি সাধকের মাজারে গমন করে। [৩]

রংরেজ সম্প্রদায়ের লোকেদের প্রধানত উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি এবং রাজস্থান রাজ্যে দেখা যায়। [৪]

বেশ কিছু রংরেজ সম্প্রদায়ের লোকেরা দেশভাগের সময় পাকিস্তানে চলে গেছে। এখন সেখানে তারা মুহাজির সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. K S Singh, People of India Uttar Pradesh, volume XLII part three, page 1211, Manohar Publications
  2. K S Singh, People of India Uttar Pradesh, volume XLII part three, page 1201, Manohar Publications
  3. K S Singh, People of India Uttar Pradesh, volume XLII part three, page 1204, Manohar Publications
  4. K S Singh, People of India Uttar Pradesh, volume XLII part three, page 1041, Manohar Publications