মর্সিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মার্সিয়া থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মর্সিয়া (ফার্সি: مَرْثِیَه) হোসাইন ইবনে আলী এবং কারবালায় তার সহযোদ্ধাদের শাহাদাত ও বীরত্বের স্মৃতি স্মরণে রচিত শোকগীতি। মর্সিয়াগুলো মূলত ধর্মীয় বিষয়কেন্দ্রীক।[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

মর্সিয়া শব্দটি আরবি শব্দ মার্থিয়া (مارْثِيَّه; রুট R-TH-Y) থেকে এসেছে যার অর্থ হলো ট্র্যাজিক ঘটনা সম্পর্কে বা বিদেহী আত্মার জন্য শোকময় বিলাপ।[২] মর্সিয়া হল আহলে বাইত, ইমাম হোসাইন এবং কারবালার যুদ্ধের শাহাদাতের স্মরণে লেখা একটি কবিতা। এটি সাধারণত শোকপ্রকাশক কবিতা।[৩]

মর্সিয়াগুলো উর্দুতে প্রথম ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্য রাজ্যে ষোড়শ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়। এগুলো হয় দুই লাইনের একক চরণ আকারে কাসিদা হিসেবে অথবা চার লাইনের একক চরণ আকারে মুরাব্বাতে লেখা হয়েছিল।

সময়ের সাথে সাথে মুসাদ্দাস একটি মর্সিয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত রূপ হয়ে ওঠে। এই আকারে সুনিয়মিত বিন্যাস হিসেবে প্রতিটি স্তবকের প্রথম চারটি লাইনে একটি ছন্দের অন্ত্যমিল থাকে এবং বাকি দুটি লাইনের একটিতে অন্যটির ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়ে থাকে।[৪]

এই আকারটি ভারতীয় উপমহাদেশের লক্ষ্ণৌতে গুরুত্বপূর্ণ শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে বিশেষভাবে অনুকূল ভিত্তি খুঁজে পেয়েছিল, যেখানে কারবালার যুদ্ধে শহীদদের প্রশংসা করা এবং শোক প্রকাশ করাকে ধার্মিকতা এবং ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। মীর বাবর আলী আনিস এই ধারার সর্বসেরা ছিলেন।

উর্দুতে বিখ্যাত মর্সিয়া লেখকদের মধ্যে রয়েছেন মীর বাবর আলী আনিস, মির্জা সালামত আলী দবীর, আলী হায়দার তাবাতাবাই, নাজম আফান্দি, জোশ মালিহাবাদী এবং অন্যান্য। এই ধারার সুপরিচিত ফার্সি কবিদের মধ্যে রয়েছেন মুহতাশাম কাশানি, নবাব আহমদ আলী খান কেয়ামত এবং সামেত বোরুজেরদি। তুর্কি ভাষায় বাকী একটি গুরুত্বপূর্ণ মর্সিয়া রচনা করেছিলেন।

মীর বাবর আলী আনিস একজন প্রখ্যাত উর্দু কবি, সালাম, এলিজি, নোহা এবং চতুষ্পদী শ্লোক রচনা করেছিলেন। যদিও এলিজির দৈর্ঘ্য প্রাথমিকভাবে চল্লিশ বা পঞ্চাশ স্তবকের বেশি ছিল না, তবে তিনি একে একশ পঞ্চাশ বা তার চেয়েও দীর্ঘ দুইশ স্তবক বা ব্যান্ড এর উপরে নিয়ে গেছেন, কারণ মর্সিয়ার প্রতিটি স্তবকমুসাদ্দাস বিন্যাসে পরিচিত। মীর আনিস আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি এবং অবধি ভাষার শব্দভাণ্ডারকে দারুণভাবে অলংকৃত করতেন।[২] [৫] তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের উর্দুভাষীদের মধ্যে মহরমের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠেছিলেন। শিবলী নোমানী তার রচিত মোয়াজেনা আনিস ও দাবির (১৯০৭) সাহিত্যগ্রন্থে মীর আনিস সম্পর্কে প্রথম প্রধান এবং সমালোচনামূলক বক্তব্যে বলেছিলেন "আনিসের কাব্যিক গুণাবলী এবং যোগ্যতা অন্য কোনো কবির সাথে মেলে না"।

ছান্নু লাল দিলগীর (c 1780–c 1848) ছিলেন আরেক মর্সিয়া কবি যিনি নবাব আসাফ-উদ-দৌলার শাসনামলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে 'তারব' ছদ্ম উপনামে পরিচিত একজন গজল কবি ছিলেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে মর্সিয়ার দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে গোলাম হোসেন রাখেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় মর্সিয়াকে বলা হয় ঘবরায়ে গি জয়নাব, ঘবরায়ে গি জয়নাব ( উর্দু: گھبراۓ گی زینب گھبراۓ گی زینب‎‎ )[৬]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A History of Urdu literature by T. Grahame Bailey; Urdu Poetry in Lucknow in the 19th century
  2. "Poetry: Urdu Marsiya, Anees and his Poetry"। Archived from the original on আগস্ট ২২, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১৫ 
  3. "The Masters of Marsiya – Anees and Dabeer"। ২০১১-০১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১৫ 
  4. Naim 2004, পৃ. 1, 2।
  5. Marsiya by Shiraz e Hind on May 15th, 2010 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-১২-২১ তারিখে
  6. Chhannu Lal Dilgeer

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]