মধুপুর গড়

স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৪′১৩″ উত্তর ৯০°৮′১০″ পূর্ব / ২৪.৫৭০২৮° উত্তর ৯০.১৩৬১১° পূর্ব / 24.57028; 90.13611
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মধুপুর গড়
মধুপুর জঙ্গল
ছবিটি মধুপুর জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা
ভূগোল
অবস্থানবাংলাদেশ
এলাকা৬০০ কিমি (২৩০ মা)
৪,২৪৪ কিমি (১,৬৩৯ মা)
বাস্তুসংস্থান
বাস্ততন্ত্রবন অধিদপ্তর
আধিপত্য প্রজাতির গাছশাল বা গজারি
প্রাণিকুলবন বিড়াল, গন্ধগোকুল, মুখপোড়া হনুমান, দেশি বন শুকর, মায়া হরিণ, বানর, মাছরাঙ্গা, বনমোরগ প্রভৃতি

মধুপুর গড় বা মধুপুর শালবন বা মধুপুর জঙ্গল বাংলাদেশের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত একটি বৃহৎ বনভূমি বা উত্থিত এলাকা। মধুপুর গড় অঞ্চলটি উত্তর দিকে জামালপুর জেলার দক্ষিণ অংশ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানা পর্যন্ত বিস্তৃত। টাঙ্গাইলগাজীপুর জেলা এবং ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকা এই গড় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। গড়টির উত্তর অংশ মধুপুর গড় এবং দক্ষিণাংশ ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত। মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত গড়ের অংশ নিয়ে মধুপুর জাতীয় উদ্যান এবং গাজীপুরের কিছু অংশ নিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান গঠিত হয়েছে।

মধুপুর বনটি ১৯৬২ সালে বনবিভাগের আওতায় আসার পর এ বনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুসারে, জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উদ্দেশ্য ১৯৮২ সালে এ বনের ৮৪৩৬৬ হেক্টর জায়গাকে মধুপুর ও ভাওয়াল নামে দুটি জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।[১]

গঠন[সম্পাদনা]

এ অঞ্চলের ভূমি সঞ্চয়ন সংলগ্ন প্লাবনভূমি থেকে সামান্য উঁচু যা হ্যালোইসাইট ও ইলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট।[২] এগুলো মিলে উত্তর-দক্ষিণে এটি প্রলম্বিত ভূভাগ গঠন করেছে যা স্মারক প্রত্নমৃত্তিকার অন্তর্গত। উত্তর-প্লাইসটোসিন যুগে এ অঞ্চলটিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বিভিন্নভাবে ক্ষয়ের কারণে বেশকিছু প্লাইসটোসিন সোপান আলাদা হয়ে গিয়েছে।[৩] পরে, এই সোপানগুলোই একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে ও খোলা স্থানে উর্বর পলিমাটিতে পূর্ণ হয়ে প্লাবনভূমির তৈরি হয়েছে।[২] মধুপুর কর্দম নামক অতিমাত্রায় বিচূর্ণিত ও জারিত লালচে বাদামি অবক্ষেপ বা আদি প্রস্তর দ্বারা গড়াঞ্চলটি গঠিত।[২] এই অবক্ষেপটি নতুন প্লাইসটোসিন যুগে জলবায়ুগত কারণে সৃষ্ট ও এটি বিভক্ত কয়েকটি প্লাইসটোসিন সোপানের সমন্বয়ে গঠিত।[৪] এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লাইসটোসিন চত্বর।[২] সঞ্চয়নজাত নদীজ পরিবেশ নিয়ে কর্দমটি গঠিত এবং এটি প্রায় ০.৯৭ থেকে ০.৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন।[২]

জীব বৈচিত্র‍্য[সম্পাদনা]

বানর, মধুপুর জাতীয় উদ্যান।
মধুপুর গড়ে অর্কিড জাতীয় ফুল।

মধুপুর গড় বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এবং জীব বৈচিত্রের দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ।[১] গড় এলাকায় ১৯০ প্রজাতির প্রাণি রয়েছে।[৫] মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৪০ প্রজাতির পাখি ও ২৯ প্রাতির সরিসৃপ পাওয়া যায়।[৫] উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে, মুখপোড়া হনুমান, লালমুখ বানর, মায়া হরিণ, শজারু, বুনো শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে মেঘ হু, মাছরাঙা, খয়ড়া গোছা পেঁচা, বনমোরগ প্রভৃতি। এছাড়া, পূর্বে মধুপুর গড়ে হাতি, বাঘ, চিতা ও ময়ূরের মত প্রাণীর বিচরণ ছিল।[৫] ১৮৬৮ থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত মধুপুর গড় থেকে ৪১৩টি হাতি শিকার করা হয়।[৬] এছাড়া বন বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, ভাওয়াল গড়ে ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যার মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

মধুপুর জঙ্গলে প্রায় ১৭৬ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে। এরমধ্যে ৭৩ প্রজাতির বৃক্ষ, ২২ প্রজাতির গুল্ম, ২৭ প্রজাতির ক্লাইম্বার, ৮ প্রজাতির ঘাস, ১ প্রজাতির পামগাছ ও ৪৫ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়া, বনবিভাগের উদ্যোগে বেশকিছু বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রোপণ করা হয়েছে।[৫] মধুপুর গড়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শাল বা গজারি গাছ যার ফলে এটি শালবন হিসেবেও পরিচিত। উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে শাল, মহুয়া, বহেড়া, আমলকী, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বত্থ, বট, সর্পগন্ধা, শতমূলী, জায়না, বিধা, হাড়গোজা, বেহুলা ইত্যাদি।[১] এছাড়া, আম, কাঁঠাল, জাম, পেয়ারা প্রভৃতি ফলজ উদ্ভিদ পুরো অঞ্চলজুড়েই পাওয়া যায়।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বংশী-নদীর-পাড়ে-মধুপুর-শালবন"এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  2. "মধুপুর কর্দম"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. "বাংলাদেশের মৃত্তিকা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  4. "প্রাকইতিহাস"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  5. "মধুপুর জাতীয় উদ্যান"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  6. "খেদা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]