বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্লেয়ার হার্টল্যান্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ব্লেয়ার হার্টল্যান্ড
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ব্লেয়ার রবার্ট হার্টল্যান্ড
জন্ম২২ অক্টোবর, ১৯৬৬
ক্রাইস্টচার্চ, ক্যান্টারবারি, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান
সম্পর্কইয়ান হার্টল্যান্ড (পিতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৭৫)
১৮ জানুয়ারি ১৯৯২ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২ জুন ১৯৯৪ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৮১)
৯ নভেম্বর ১৯৯২ বনাম জিম্বাবুয়ে
শেষ ওডিআই১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪ বনাম পাকিস্তান
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১৬ ৮৩ ৬৮
রানের সংখ্যা ৩০৩ ৩১১ ৩,৭৫৩ ১,৭০৫
ব্যাটিং গড় ১৬.৮৩ ২০.৭৩ ২৬.৪২ ২৬.২৩
১০০/৫০ ০/১ ০/২ ৫/১৯ ২/৯
সর্বোচ্চ রান ৫২ ৬৮* ১৫০ ১৬১
বল করেছে ১৮
উইকেট
বোলিং গড় ২২.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/১৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫/– ৫/– ৫২/– ১৯/১
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ অক্টোবর ২০২০

ব্লেয়ার রবার্ট হার্টল্যান্ড (ইংরেজি: Blair Hartland; জন্ম: ২২ অক্টোবর, ১৯৬৬) ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্লেয়ার হার্টল্যান্ড। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।

শৈশবকাল

[সম্পাদনা]

ক্যান্টারবারির সাবেক ক্রিকেটার ইয়ান হার্টল্যান্ডের সন্তান তিনি। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি প্রতিভাধর হকি খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ক্রাইস্টচার্চ বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। এখানে অবস্থানকালেই তার ক্রীড়া প্রতিভা ধরা পড়ে। ১৯ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ড ইয়ং ক্রিকেটার্সের সদস্য করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ঐ দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত ব্লেয়ার হার্টল্যান্ডের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। সচরাচর ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটি ওভার বোলিং করেছিলেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ক্যান্টারবারির পক্ষে একটি খেলায় অংশ নেন। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। একবার ৫৯ রানে বিদেয় নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাতের কবলে পড়ে রিটায়ার হার্ট হন। এরপর ঐ মৌসুমে আর কোন খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি তিনি। এছাড়াও, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে দুই মৌসুম নর্দাম্পটনশায়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলেছিলেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজস্ব চতুর্দশ খেলায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শতরানের সন্ধান পান ব্লেয়ার হার্টল্যান্ড। এরপর থেকে ক্যান্টারবারির পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে ১১ খেলার দশটিতে তার অংশগ্রহণ ছিল। পরের মৌসুমে নিউজিল্যান্ড এমার্জিং প্লেয়ার্সের পক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে খেলেন।

ক্যান্টারবারির পক্ষে এগারো মৌসুমে ৮৩টি প্রথম-শ্রেণীর ও ৬৮টি লিস্ট এ খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, ঘরোয়া একদিনের খেলায় সর্বাধিকসংখ্যক রান সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম তার এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টিমাত্র টেস্ট ও ষোলোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন ব্লেয়ার হার্টল্যান্ড। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২ জুন, ১৯৯৪ তারিখে নটিংহামে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৯১ সালে ইংল্যান্ড দল নিউজিল্যান্ড সফরে আসে। নিউজিল্যান্ড এমার্জিং প্লেয়ার্স দলের পক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। দুই ইনিংসে ৩৬ বল মোকাবেলা করে উভয় ইনিংসেই এক রান করে বিদেয় নেন তিনি।[] তাসত্ত্বেও, দুই সপ্তাহ পর নিজ শহর ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের প্রথম টেস্টে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করে। এক বছর পূর্বে শ্রীলঙ্কা সফরে রক্ষণাত্মক খেলোয়াড় ট্রেভর ফ্রাঙ্কলিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।[]

তবে, হার্টল্যান্ডের অভিষেক পর্বটি নিউজিল্যান্ডের ফলাফলে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে নেমে সফরকারীরা ৫৮০/৯ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। স্পিনার ফিল টাফনেল খেলায় এগারো উইকেট পান। তন্মধ্যে, হার্টল্যান্ড দুইবার তার বলে বিদেয় নেন। প্রথম ইনিংসে ২২ রান করেন। চতুর্থ দিন স্ট্যাম্প ফেলার পূর্বে তিনি ৪৫ রান সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ফিল টাফনেলের ছয় উইকেট লাভে যুক্ত হন এবং ইংল্যান্ড দল ইনিংস ও চার রানে বিজয়ী হয়।[][]

দ্বিতীয় টেস্টেও তাকে রাখা হয়। জোড়া শূন্য রান করেন। খেলায় তার দল ১৬৮ রানে পরাজিত হয়। তৃতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ২ রান করেন। তবে, জন রাইটঅ্যান্ড্রু জোন্সের মধ্যকার ২৪১ রানের জুটির কল্যাণে নিউজিল্যান্ড দল ৪৩২/৯ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে।

জিম্বাবুয়ে গমন

[সম্পাদনা]

ছয় ইনিংসের কোনটিতেই তিনি কোন অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা গমনার্থে তাকে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্য করা হয়। তবে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাকে খেলানো হয়নি। মার্ক গ্রেটব্যাচরড ল্যাথামকে ব্যাটিং উদ্বোধনে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ঐ সফরে একটিমাত্র ওডিআই খেলার সুযোগ হয় তার। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাঁচ রান তুললেও তার দল চার উইকেটে জয়লাভ করেছিল।

মার্ক গ্রেটব্যাচ ও রড ল্যাথামকে শ্রীলঙ্কা সফরে মাঠের বাইরে রাখা হয়। রাইটের সাথে হার্টল্যান্ডকে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামানো হয়। প্রথম ইনিংসে তিনি দিলীপ লিয়ানাগে’র বলে ৩ রানে বিদেয় নেন। পাঁচ অধিবেশন বাকী থাকতেই শ্রীলঙ্কা দল ৩৯ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা করে। দীর্ঘ চার ঘণ্টা জন রাইটের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ১১০ রান তুলেন। এ পর্যায়ে তিনি তার প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড দল ১৯৫/৫ তুললে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[][]

এরফলে, এক সপ্তাহ পর স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় টেস্টের জন্যে তাকে দলে রাখা হয়। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন তিনি। ২১ রান করেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫৭/০ থেকে ১০২ রানে অল-আউট হন। ফলো-অনে পড়ে তিনি আবারও ২১ রান সংগ্রহ করেন। নিউজিল্যান্ড দল ৩৬১ রান তুললেও শ্রীলঙ্কা দল নয় উইকেটে জয় পায় ও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[] তিনটি ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজের দুইটিতে অংশ নেন। এ পর্যায়ে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন তিনি।[] কিন্তু, উভয় খেলায় তার দল পরাজিত হলে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।[]

পাকিস্তানের মুখোমুখি

[সম্পাদনা]

নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী টেস্টেও তিনি খেলেন।[১০] নিজ দেশে পাকিস্তানের মুখোমুখি হন তিনি। আবারও তিনি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় তার দল। তিনি মাত্র ৯ রান তুলতে সমর্থ হন। ওয়াসিম আকরাম ৫/৪৫ ও ওয়াকার ইউনুস ৫/২২ নিয়ে স্বাগতিকদেরকে ৯৩ রানে গুটিয়ে দেন।[১১]

এরপর তাকে দলের বাইরে রাখা হয়। এক বছরেরও অধিক সময়ে আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি তিনি। আবারও তিনি দলে ফিরে পাকিস্তানেরই মুখোমুখি হন। দুই ইনিংসে ১৩ রান সংগ্রহ করেন। তাসত্ত্বেও, তার দল পাঁচ উইকেটে জয় পায়। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমের বাদ-বাকী সময়ও তিনি নিউজিল্যান্ড দলে খেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ১৪৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অপরাজিত ৬৮ রান তুলে ভূমিকা রাখেন। তবে, পরবর্তী এক টেস্ট ও সাতটি একদিনের আন্তর্জাতিকের কোনটিতেই ২৫-এর অধিক রান তুলতে পারেননি।

১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে নিউজিল্যান্ড দলে রাখা হয়। নয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, একটি টেস্টে অংশ নেন। পরবর্তীতে এটিই তার সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ৬ ও ২২ রান তুলেন। ঐ খেলায় তার দল ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়।[১২] পরবর্তী খেলায় ব্লেয়ার পোকককে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[১৩] ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে তিনি আরও পাঁচটি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। কোনটিতেই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। ম্যান্ডেলা ট্রফির পর তাকে বাদ দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হবার পর আরও দুই মৌসুম ক্যান্টারবারির পক্ষে খেলে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। নিকি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির এমা ও তেসা নাম্নী দুই কন্যা এবং বেঞ্জামিন নামীয় পুত্র রয়েছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Tour Match, England tour of New Zealand at Hamilton, Jan 3-5 1992 Match Summary"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. http://www.cricinfo.com/link_to_database/ARCHIVE/1990-91/SL_IN_NZ/SL_NZ_T3_01-05MAR1991.html
  3. "1st Test, England tour of New Zealand at Christchurch, Jan 18-22 1992 Match Summary _"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/55/55357.html
  5. "1st Test, New Zealand tour of Sri Lanka at Moratuwa, Nov 27-Dec 2 1992"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  6. https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/56/56647.html
  7. "2nd Test, New Zealand tour of Sri Lanka at Colombo, Dec 6-9 1992"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  8. "2nd ODI, New Zealand tour of Sri Lanka at Colombo, Dec 12 1992"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  9. "New Zealand in Sri Lanka Nov-Dec 1992 Results Summary"Cricinfo। ESPN। ১৫ মার্চ ১৯৯৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  10. http://www.cricinfo.com/db/NATIONAL/NZ/SERIES/ALL.html
  11. https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/56/56777.html
  12. https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/58/58946.html
  13. https://cricketarchive.com/Archive/Scorecards/59/59027.html

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]