বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা হল ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে (১২৯৭ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত এবং গণিতজ্ঞ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক সম্পাদিত একটি পঞ্জিকা। ১৮৯০ সাল থেকে এই পঞ্জিকা অদ্যাবধি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।[১]
নবপ্রণীত পঞ্জিকা[সম্পাদনা]
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সকল পঞ্জিকাই প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ সূর্যসিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হত। কিন্তু সূর্যসিদ্ধান্তের কিছু ত্রুটির কারণে সেই গ্রন্থ অনুসারে নির্ণীত তিথি, নক্ষত্র, ইত্যাদির সময়ের সাথে মহাকাশে ঘটিত প্রকৃত তিথি নক্ষত্রের সময়ের কিছু পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছিল। তখন গণিতজ্ঞ মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সূর্যসিদ্ধান্তের সংস্কার ঘটিয়ে নৌসারণী অনুসরণে একটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত পঞ্জিকা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয় দৃকসিদ্ধ "বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা"। তার এই পঞ্জিকা প্রকাশের পরামর্শদাতারা ছিলেন প্রসিদ্ধ সংস্কারবাদী পঞ্জিকাকার ওড়িশার মহামহোপাধ্যায় চন্দ্রশেখর সিংহ সামন্ত,পশ্চিম ভারতের লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক, শাস্ত্রবিদ পণ্ডিত বাপুদেব শাস্ত্রী, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য, মারঠি পণ্ডিত কেতকর, বাংলার মহামহোপাধ্যায় মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন, শশধর তর্কচূড়ামণি, আচার্য যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি প্রমুখ পণ্ডিত ব্যাক্তিবর্গ। বিশিষ্ট আইনজীবী, গ্রন্থকার ও বিদ্যানুরাগী সারদাচরণ মিত্র এই পঞ্জিকা প্রণয়নের কাজে মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্নকে সাহায্য করেছিলেন। [২]
স্বীকৃতি[সম্পাদনা]
১৯৫২ সালে ভারত সরকারের উদ্যোগে গঠিত "পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি" (Calendar Reform Committee) ভারতীয় পঞ্জিকাগুলিতে সংস্কারসাধন করে ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে যে নতুন "রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গ" প্রণয়ন করে সেই পঞ্জিকার বিজ্ঞানভিত্তিক গণনার সাথে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার গণনা সম্পূর্ণ এক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ। উভয় পঞ্জিকাতেই নির্ভুল ভাবে তিথি, নক্ষত্র, ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই যে, ভারত সরকার গঠিত পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির সম্পাদক নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পুত্র অরুণকুমার লাহিড়ীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার ১৭,বৃন্দাবন মল্লিক ফার্স্ট লেনে "অ্যাস্ট্রো রিসার্চ ব্যুরো" তৈরি করে ষষ্ঠীচরণ জ্যোতির্ভূষণের সহায়তায় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রকাশনার ভার গ্রহণ করেছিলেন। [৩] পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই পঞ্জিকাকে স্বীকৃতি প্রদান করে এটি গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন), রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সকল শাখা, সৎসঙ্গ, তারকেশ্বরের তারকনাথ মন্দির, কাঞ্চী মঠ, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সমস্ত অনুষ্ঠান "বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা" অনুসারেই পালিত হয়। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, বর্তমান, দৈনিক স্টেটসম্যান, সংবাদ প্রতিদিন, আজকাল সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে তারিখ ও দিনপঞ্জী ইত্যাদি উল্লেখ করে থাকে।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- Bisuddha Siddhanta Panjika Software 5000 BC to 5000 AD for your PC and mobile
- Bengali calendar according Vishuddha Siddhanta Panjika following Indian Standard Time
- Bengali calendar according Vishuddha Siddhanta Panjika following Bangladesh Standard Time[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৫৬৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭৭৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "বিশুদ্ধতা'র সংগ্রাম চলছে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৫।