বিপ্লব কুমার দেব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিপ্লব কুমার দেব
ত্রিপুরার ১০ম মুখ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৮ মার্চ ২০১৮[১] – ১৪ মে ২০২২[২]
গভর্নরসত্যদেব নারায়ন আর্য
পূর্বসূরীমানিক সরকার
উত্তরসূরীমানিক সাহা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1971-11-25) ২৫ নভেম্বর ১৯৭১ (বয়স ৫২)
রাজধর নগর, উদয়পুর, গোমতী জেলা, ত্রিপুরা, ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় জনতা পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীনীতি দেব
সন্তান২ (১ ছেলে এবং ১ মেয়ে)

বিপ্লব কুমার দেব (জন্ম ২৫ নভেম্বর ১৯৭১) একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ৭ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির ত্রিপুরা রাজ্য সভাপতি ছিলেন। দেব ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের ২৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরাতে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে তিনি ত্রিপুরার দশম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।[৩] তিনি ১৪ মে ২০২২ তারিখে পদত্যাগ করেন।[২][৪]

প্রাথমিক জীবন এবং পটভূমি[সম্পাদনা]

বিপ্লব কুমার দেব ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুরের রাজধর নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা জন্মের পূর্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের চাঁদপুর জেলা থেকে শরণার্থী হিসেবে ভারতে চলে এসেছিলেন। ১৯৬৭ সালের ২৭ জুন থেকে তাঁর বাবা ভারতের নাগরিক। তিনি শৈশব ও বিদ্যালয়ের দিনগুলো ত্রিপুরায় অতিবাহিত করেন এবং নয়াদিল্লিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পূর্বে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৫ বছর অনুপস্থিতির পর তিনি পরে ত্রিপুরায় ফিরে আসেন।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

বিপ্লব দেব ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্য ইউনিটের সভাপতি নির্বাচিত হন, তিনি বিজেপির দীর্ঘমেয়াদী রাজ্য সভাপতি সুধীন্দ্র দাসগুপ্তের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়ে দেব তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ত্রিপুরা উপজাতি অঞ্চল স্বশাসিত জেলা পরিষদ থেকে তার প্রচারণা শুরু করেন যা তৎকালীন শাসক সি.পি.আই (এম) এর ভিটে মাটি বলে মনে করা হতো। ৮ আগস্ট ২০১৭ শালে বিপ্লব দেব দীর্ঘ বাম বিরোধী নেতা সুদীপ রায় বর্মনের নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়কদের যারা ২০১৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন তাদের দলত্যাগ করিয়ে বিজেপি দলে যোগদান করাতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেব ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় বিজেপি দলকে নেতৃত্ব দেন এবং একটানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে অফিসের দায়িত্ব অর্জনের চেষ্টা করেন।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব[সম্পাদনা]

বিপ্লব দেব ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচন পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি ত্রিপুরা রাজ্যেকে একদিন মডেল স্টেট বানাবেন এবং ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়ন করবেন। তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগের বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন। দেব ত্রিপুরার কর্মচারীদের প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি নির্বাচিত হলে সপ্তম বেতন কমিশন বাস্তবায়ন করবেন। তিনি ত্রিপুরার নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন এবং সারা ভারত থেকে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীদের নিয়ে আসেন ত্রিপুরায় বিজেপি দলের হয়ে প্রচার করতে এবং বিজেপি দল তার সহযোগী পার্টি ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আই.পি.এফ.টি) দলের সাথে ২৫ বছর পর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বচনে সম্ভাব্য ৬০ টি আসনের মধ্যে ৪৪ টি আসনে জয়ী হয়ে বামফ্রন্টকে পরাজিত করে। বিপ্লব দেব ২০১৮ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বনমালিপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায় কে ৯,৫৪৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হন। বিপ্লব কুমার দেব ৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে ত্রিপুরার দশম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

বিপ্লব কুমার দেব সুশ্রী নিতী দেবকে বিয়ে করেন। যিনি বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জির সম্পর্কে ভাতিজীর আত্মীয়তা রয়েছে। তাদের একজন পুত্র এবং একটি কন্যা সন্তান আছে।

বিতর্কিত মন্তব্য[সম্পাদনা]

বিপ্লব কুমার দেব বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। পৌরাণিক যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার কিংবা গৌতম-বুদ্ধের পায়ে হেঁটে সাগরপার নিয়ে মন্তব্য করে আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।[৫] [৬]

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বিপ্লব দেব দাবি করেন মহাভারত যুগ থেকে ইন্টারনেট এবং উপগ্রহ বিদ্যমান ছিল যা সমগ্র দেশব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি করে।

তিনি দাবি করেন মুঘলরা ত্রিপুরার সংস্কৃতিতে বোমা বর্ষণ করতে চেয়েছিল।

বিপ্লব দেব বলেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জলিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনাটির জেরে ব্রিটিশদেরকে এনার "নোবেল প্রাইজ" ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নিয়েও তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়াররা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য সঠিক নয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় শুধুমাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের বসা উচিত।

তিনি ডায়ানা হেডেনকে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা প্রদানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও বলেন যে আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা একটি প্রহসন এবং তিনি দাবি করেন যে টানা পাঁচ বছর ভারতীয় মহিলাদের মিস ওয়ার্ল্ড এবং মিস ইউনিভার্স শিরোপা প্রদানের সিদ্ধান্তটি অংশগ্রহণকারীদের মার্কেটিং পরিচালিত ছিল নাকি তাদের সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://www.thehindu.com/elections/tripura-2018/tripuras-fisrt-bjp-government-to-take-charge-on-march-8-manik-sarkar-resigns/article22924572.ece
  2. "Tripura Chief Minister Biplab Deb Resigns A Year Ahead Of Elections"NDTV। ১৪ মে ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২২ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১ 
  4. Mathew, Liz (১৪ মে ২০২২)। "Biplab Kumar Deb steps down as Tripura CM ahead of 2023 polls"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২২ 
  5. https://www.eastmojo.com/news/2020/11/04/six-times-tripura-cm-biplab-deb-courted-controversy/
  6. https://www.opindia.com/2018/08/fact-check-was-biplab-deb-really-off-the-mark-when-he-said-ducks-raise-oxygen-level-in-water