বিন্দেশ্বর পাঠক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিন্দেশ্বর পাঠক
জন্ম(১৯৪৩-০৪-০২)২ এপ্রিল ১৯৪৩
মৃত্যু১৫ আগস্ট ২০২৩(2023-08-15) (বয়স ৮০)
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাএম.এ. (সমাজবিজ্ঞান ১৯৮০), এম.এ. (ইংরেজি ১৯৮৬), পিএইচডি (১৯৮৫), ডি.লিট. (১৯৯৪)
মাতৃশিক্ষায়তনবেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণভারতে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল
এবং সামাজিক সংস্কার প্রতিষ্ঠা করা

বিন্দেশ্বর পাঠক (২রা এপ্রিল ১৯৪৩ - ১৫ই আগস্ট ২০২৩)[২] ছিলেন একজন ভারতীয় সমাজবিজ্ঞানী এবং সামাজিক উদ্যোক্তা।[৩] তিনি সুলভ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা। এটি একটি ভারত ভিত্তিক সমাজসেবা সংস্থা যারা শিক্ষার মাধ্যমে মানবাধিকার, পরিবেশগত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শক্তির অপ্রচলিত উৎসের ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সংস্কারের প্রচারে কাজ করে। তিনি ভারতীয় রেলওয়ের স্বচ্ছ রেল মিশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।[৪] তাঁর কাজকে সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রগামী বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিধি ক্ষেত্রে। এই সংগঠনের সাথে কাজের জন্য তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ২০১৭ সালের জন্য লোক প্রশাসন, শিক্ষাক্ষেত্র এবং ব্যবস্থাপনায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।[৫] তিনি ১৯৯১ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত হন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

বিন্দেশ্বর পাঠক ১৯৬৪ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হন।[৬] তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১৯৮৫ সালে পিএইচডি অর্জন করেন।[৭] একজন বিশিষ্ট লেখক এবং বক্তা, বিন্দেশ্বর পাঠক বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত হল দ্য রোড টু ফ্রিডম। তিনি সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অগ্রগতির বিষয়ে সম্মেলনে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিধি জন্য আন্দোলন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৬৮ সালে বিহার গান্ধী শতবর্ষ উদযাপন কমিটির ভাঙ্গি-মুক্তি (মেথরমুক্তি) সেলে যোগদানের সময় মেথরদের দুর্দশার কথা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। সেই সময়ে, তিনি তাঁর পিএইচডি-র অংশ হিসাবে মেথর পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে সারা ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। গবেষণার সেই পর্বের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে, তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার সংকল্প করেছিলেন। শুধুমাত্র মেথরদের প্রতি সহানুভূতি থেকেই নয় বরং তিনি বিশ্বাস করেন যে ময়লা ফেলা একটি অমানবিক প্রথা যা শেষ পর্যন্ত আধুনিক ভারতীয় সমাজে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ভাগলপুরের সাংসদ ছিলেন।

তিনি ১৯৭০ সালে মানবিক নীতির সাথে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সমন্বয়ে সুলভ আন্তর্জাতিক সমাজসেবা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[৮][৯] সংস্থাটি শিক্ষার মাধ্যমে মানবাধিকার, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, শক্তির অপ্রচলিত উৎসের ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক সংস্কারের প্রচারে কাজ করে। সংস্থাটিতে ৫০,০০০ স্বেচ্ছাসেবক আছেন। সুলভ শৌচালয়কে তিনি গাঁজন প্ল্যান্টের সাথে সংযুক্ত করে বায়োগ্যাস তৈরির উদ্ভাবনীমূলক ব্যবহার করেছেন। এটি তিনি তিন দশকেরও বেশি আগে পরিকল্পনা করেছিলেন। এটি এখন সারা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্যানিটেশনের জন্য একটি শব্দ হয়ে উঠছে। তাঁরর প্রকল্পের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল যে গন্ধমুক্ত জৈব-গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি, এটি ফসফরাস এবং অন্যান্য উপাদান সমৃদ্ধ পরিষ্কার জলও নির্গত করে যা জৈব সারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাঁর স্যানিটেশন আন্দোলন পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধ করে।

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

বিন্দেশ্বর পাঠক ইন্ডিয়া লিডারশিপ কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা সত্য ব্রহ্মার কাছ থেকে ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স সোশ্যাল রিফমার অফ দ্য ইয়ার ২০১৭ পুরস্কার গ্রহণ করছেন

বিন্দেশ্বর পাঠক ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণ প্রাপক।[১০] ২০০৩ সালে, তাঁর নাম বৈশ্বিক ৫০০ রোল অফ অনারে যুক্ত করা হয়েছিল। বিন্দেশ্বর পাঠক এনার্জি গ্লোব পুরস্কার,[১১] এবং সেরা অনুশীলনের জন্য দুবাই আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০০৯ সালে তাঁকে স্টকহোম ওয়াটার পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের জুন মাসে, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগে প্যারিসে ফরাসি সিনেট থেকে তিনি লিজেন্ড অফ প্ল্যানেট পুরস্কারও পেয়েছিলেন।[১২] পোর্ট লুইসে চতুর্থ বিশ্ব ভোজপুরি সম্মেলনে তাঁকে অন্তঃরাষ্ট্রীয় ভোজপুরি সম্মান প্রদান করা হয়।[১৩]

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে, তাঁকে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিতর্ক সমিতি দ্য কেমব্রিজ ইউনিয়নে একটি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।[১৪] বক্তৃতাটি শিক্ষার্থীরা ভালভাবে গ্রহণ করেছিল। সেখানে ডাঃ পাঠক শিক্ষার্থীদের স্যানিটেশন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী কাজে যোগদানের আহ্বান জানান।[১৫]

২০১৪ সালে, তিনি "সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব" এর জন্য সর্দার প্যাটেল আন্তর্জাতিক পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন।[১৬]

২০১৬ সালের এপ্রিলে, নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিও ২০১৬ সালের ১৪ই এপ্রিলকে বিন্দেশ্বর পাঠক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।[১৭]

২০১৭ সালের ১২ই জুলাই, নতুন দিল্লিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনের উপর তাঁর বই দ্য মেকিং অফ আ লিজেন্ড প্রকাশিত হয়েছিল।[১৮]

২০২০ সালে, সামাজিক উদ্ভাবক হিসাবে তাঁর কাজের বিবরণ দিয়ে একটি অনুপ্রেরণামূলক বই 'নমস্তে, বিন্দেশ্বর পাঠক!' প্রকাশিত হয়েছিল।

৮ম বার্ষিক ইন্ডিয়া লিডারশিপ কনক্লেভে তাঁকে ২০১৭ সালের ভারতীয় বিষয়ক সমাজ সংস্কারক হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল।[১৯] ২০১৮ সালের জুনে তিনি জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ইনকর্পোরেশন দ্বারা সংস্কৃতি এবং সম্প্রদায়ের জন্য নিক্কেই এশিয়া পুরস্কারে সম্মানিত হন।[২০]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০২৩ সালের ১৫ই আগস্ট, রাজধানী নতুন দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করার সময়ে বিন্দেশ্বর পাঠক অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকে দিল্লির এইমসে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Dr. Bindeshwar Pathak, A Profile"। Sulabh International। ২৩ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৪ 
  2. "স্বাধীনতা দিবস পালনের সময় বুকে ব্যথা, প্রয়াত সুলভ শৌচালয়ের রূপকার বিন্দেশ্বর পাঠক"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৬ 
  3. Faheem, Hadiya and Purkayastha, Debapratim (২০১৯)। "Sulabh International: Providing Sustainable Sanitation Solutions|Leadership and Entrepreneurship|Case Study|Case Studies"www.icmrindia.org। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  4. "Bindheswar Pathak Brand Ambassador of Swachh Rail Mission"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ১ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৮ 
  5. "Pres Kovind presents Lal Bahadur Shastri National Award to Bindeshwar Pathak"Business Standard India। ১০ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৮ 
  6. Banaras Hindu University (২০২০)। "Notable BHU Alumni"Banaras Hindu University। ১৪ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  7. Profile of a national crusader ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০০৭ তারিখে.
  8. Indian Sanitation Innovator and Social Reformer ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ জুলাই ২০১০ তারিখে.
  9. Profile, Aims & Objectives ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০০৭ তারিখে.
  10. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  11. Sulabh founder gets Energy Globe Award ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে.
  12. "News: India News"The Times of India। ২০১৩-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. "Mohallalive.com"mohallalive.com। ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  14. "Sulabh founder invited to Cambridge"The Hindu। ১৩ ডিসেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৩ 
  15. "Join me, Sulabh founder urges Cambridge students"। Deccanherald.com। ২২ জানুয়ারি ২০১১। ২৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৩ 
  16. "NRI Award, Sardar Patel Award, Sardar Ratna, Pravasi Bharatiya Award, International Award"sardarpatelaward.org। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০ 
  17. "April 14 declared as 'Bindeshwar Pathak Day' by New York Mayor"Indian Express। ১৬ এপ্রিল ২০১৬। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  18. "Book on Narendra Modi, The Making of a Legend, launched by Amit Shah, Mohan Bhagwat in Delhi"। ১২ জুলাই ২০১৭। ১৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  19. "Sulabh Swachh Bharat"sulabhswachhbharat.com। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  20. "सुलभ शौचालय के जनक "डॉ बिंदेश्वर पाठक को निकेई एशिया पुरस्कार" के साथ सम्मानित किया गया"atulyabihar.com। ২১ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]