জৈবগ্যাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি গৃহস্থালী বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের সহজ স্কেচ

জৈবগ্যাস হলো পচনশীল জৈবপদার্থ থেকে তৈরি গ্যাস। সব প্রাণীরই মল হতে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ গ্যাস তৈরি করা যায়। পশুর গোবর ও অন্যান্য পচনশীল পদার্থ অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে পঁচানোর ফলে যে গ্যাস তৈরি হয় তাই হচ্ছে জৈবগ্যাস। তবে গৃহপালিত বা বাণিজ্যিকভাবে পালিত পশুপাখি এবং মানব মল সহজলভ্য বলে এগুলোই বেশি ব্যবহার করা হয়। এজাতীয় গ্যাসে অধিকাংশ পরিমাণই থাকে মিথেন গ্যাস (CH₄)।[১]এছাড়া রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), অল্প পরিমানে হাইড্রোজেন সালফাইট

(H₂S) এবং জলীয় বাষ্প (H₂O)। বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর অবশিষ্ট আবর্জনাটুকু উত্তম জৈব সার হিসেবে বেশ কার্যকরী।[২]

বায়োগ্যাস উৎপাদনের মূলনীতি[সম্পাদনা]

অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কোন জৈব পদার্থকে পচানো হলে সেখান হতে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে এনারবিক ডাইজেশন (Anaerobic digestion) বলে। যার মাধ্যমে কিছু অণুজীব জৈব পদার্থকে ভেঙে মূলত মিথেন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে।[৩]

বায়োগ্যাস তৈরির কাঁচামাল[সম্পাদনা]

যেকোন পচনশীল বস্তু বায়োগ্যাস তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমনঃ[৪]

  • মলমূত্র (মানুষ, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগী ইত্যাদি)
  • তরি-তরকারি, ফল-মূল ও মাছ-মাংসের ফেলনা অংশ
  • লতাপাতা, বিভিন্ন আবর্জনা ও কচুরিপানা

বিভিন্ন ধরনের বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্ট[সম্পাদনা]

বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য প্রধানত দুধরনের প্ল্যাণ্ট ব্যবহৃত হয়। এগুলো হল[৫]

  • ফিক্সড ডোম বায়োগ্যাস প্লাণ্ট
  • ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্লাণ্ট

এছাড়াও আরও কয়েক ধরনের বায়োগ্যাস প্ল্যাণ্ট রয়েছে। যেমন[৫]

  • বেলুন প্ল্যাণ্ট,
  • অনুভূমিক প্ল্যাণ্ট,
  • আর্থ পিট প্ল্যাণ্ট,
  • Biogas
    কমখরচে এবং স্বল্পতম সময়ে স্থাপনযোগ্য বেলুন বায়োগ্যাস বাঁ ফ্লেক্সিবল বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার।
    ফেরোসিমেন্ট প্ল্যাণ্ট।

বায়োগ্যাস ব্যবহারের সুবিধা[সম্পাদনা]

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বায়োগ্যাসের অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। যেমন[৬]--

  • অল্প জায়গায় এই প্লাণ্ট তৈরি করা যায়৷
  • এই প্লাণ্ট অনেকদিন টিকে থাকে এবং কাজ করে৷
  • আবর্জনা ও দুর্গন্ধমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে ওঠে৷
  • উপাদানগুলো পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায় না৷ মশা-মাছি জণ্মায় না৷
  • রাঁধুনীর শারীরিক ধকল কমে৷
  • জমির জন্য উন্নতমানের সার পাওয়া যায়৷
  • গ্রামের জীবনযাত্রায় আধুনিকতা আসে৷
  • বায়োগ্যাসের বর্জ্য জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷
  • জ্বালানির জন্য গাছপালার উপর চাপ কম পড়ে।
  • অনবায়নযোগ্য শক্তির উপর চাপ কমে।
  • টেঁকসই কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।
  • বায়োগ্যাসের কারণে বাড়িতে গবাদি পশুর খামার গড়তে উৎসাহিত হয়।
  • বায়োগ্যাসের বর্জ্য মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • বায়োগ্যাস ব্যবহার করলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের স্তর ক্ষয় কম হয়।
  • বায়োগ্যাসের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
  • এই শক্তি ব্যবহারের ফলে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় যা চাষের কাজে ব্যবহৃত হয়।

বায়োগ্যাস ব্যবহারের অসুবিধা[সম্পাদনা]

  • প্লাণ্ট তৈরি করতে এককালীন বেশকিছু টাকার দরকার হয়৷
  • কাঁচামালের জন্য নিজেদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী থাকতে হয়৷
  • বায়োগ্যাস প্লাণ্ট সাধারণভাবে তৈরি করা যায় না৷
  • শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে গ্যাসের উৎপাদন কমে যায়। (সমাধান » প্লাণ্টে গোবর দেওয়ার আগে গরম পানি ঢুকাতে হবে। প্ল্যাণ্টটা এমন জায়গায় বসানো ভালো, যেখানে সব সময় রোদ থাকে।)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "An Introduction to BIOGAS"। ২০১১-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৭ 
  2. "Organic Fertilizer from Biogas Plants"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৭ 
  3. "An Introduction to BIOGAS"। ২০১১-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৮ 
  4. "Biogas"। ২০১০-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৭ 
  5. "Biogas - Digester types"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৭ 
  6. "Benefits"। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]