টাইমড আউট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

টাইমড আউট হল ক্রিকেট খেলায় (ব্যাটসম্যানকে) আউট করার একটি পদ্ধতি। আগের ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে আগত ব্যাটসম্যান যখন প্রস্তুত হয়ে এসে পোঁছতে পারেন না তখন ঐ ব্যাটসম্যানকে এই প্রকার আউট দেওয়া হয়।[১] এই জাতীয় আউট হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র দুইবার এই আউট হয়েছে। ৬ নভেম্বর ২০২৩ আইসিসি বিশ্বকাপের (ভারত কর্তৃক আয়োজিত) বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ইতিহাসে প্রথমবার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে টাইম আউট দেয়া হয়।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

ক্রিকেটের আইন এর আইন ৪০-এর বিধানে বলা হয়েছে যে আগত ব্যাটসম্যানকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে যে শেষ উইকেটটি পড়ার তিন মিনিটের মধ্যে তাঁকে গার্ড নিতে হবে অথবা তাঁর সঙ্গীকে পরের বলটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করা হয় তবে আগত ব্যাটসম্যানকে আবেদন এর ভিত্তিতে টাইমড আউট দেওয়া হবে।

"আগত ব্যাটসম্যান" এমন কোনও ব্যাটসম্যান হতে পারেন যিনি এখনও ব্যাটিং করেননি। ক্রিকেটে কোনও নির্ধারিত ব্যাটিং অর্ডার নেই। আবেদন করার সময় যদি কোনও ব্যাটসম্যান মাঠে পা না রাখেন তবে ব্যাটিং অধিনায়ক এখনও ব্যাটিং করেননি এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে যে কোনও এক জনকে বেছে নিতে পারেন। [২] ফলে যদি পরবর্তী ব্যাটসম্যানটির কিছুটা বিলম্ব হয় তবে অধিনায়ক তাঁর সবচেয়ে খারাপ ব্যাটসম্যানটিকে (যিনি সাধারণত ১১ নম্বরের হয়ে থাকেন) ঐ আউটের জন্য বলিদান করবেন বলে আশা করা যায়।

যদি দীর্ঘায়িত বিলম্বে কোনও ব্যাটসম্যানই উইকেটে না আসেন তবে আম্পায়াররা বিবেচনা করবেন যে ব্যাটিং দল খেলতে অস্বীকার করছেন এবং আম্পায়াররা ম্যাচটি অন্য দলের হাতে পুরস্কার হিসাবে তুলে দেবেন। কিন্তু যদি অক্ষমতার (যেমন: আঘাত বা অসুস্থতায়) কারণে বাকি সমস্ত যোগ্য খেলোয়াড় ব্যাট করতে না পারেন তবে তাঁদের টাইমড আউট দেওয়া হয় না; পরিবর্তে ইনিংস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের নামে যথাযথভাবে "অনুপস্থিত অসুস্থ/আহত" ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিয়ম অনুসারে আইনটিতে বর্ণিত তিন মিনিটের পরিবর্তে একজন ব্যাটসম্যানকে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে মাঠে নামতে হয়। ফলে প্যাভিলিয়ন এ বসার পরিবর্তে পরবর্তী ব্যাটসম্যানটি বাউন্ডারির ঠিক পরেই অবস্থিত একটি বেঞ্চে অপেক্ষা করেন। এমনটি অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল এবং রাগবির মতো আরও কিছু দলগত খেলায় দেখা যায়।

অস্বাভাবিক আউট[সম্পাদনা]

এই নিয়মটির উদ্দেশ্য হল খেলায় কোনও অপ্রয়োজনীয় দেরি না করাকে নিশ্চিত করা। এই ব্যাপারটি সহজেই এড়ানো যায় এবং ব্যাটসম্যানের 'টাইমড আউট' হওয়া খুব অস্বাভাবিক ঘটনা ব'লে বিবেচনা করা যায়। নভেম্বর ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী টেস্ট ম্যাচ বা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ধরনের একটি নজির আছে এবং প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট এ সবশুদ্ধ কেবল ছয়টি উদাহরণ রয়েছে।

প্রয়োগ[সম্পাদনা]

টেস্ট ক্রিকেটে[সম্পাদনা]

২০০৬-২০০৭ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড এ খেলা চলছিল। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যান দ্রুতই আউট হন। শচীন তেন্ডুলকর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসাবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষের আঠারো মিনিটের জন্য তিনি ফিল্ডার হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন। তাই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে ব্যাটিং উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য আরও আঠারো মিনিট অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী ছিল। ছয় মিনিট বিলম্বে তখন সৌরভ গাঙ্গুলি পরবর্তী ব্যাটসম্যান হিসাবে মাঠে আসেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রেইম স্মিথ আগত ব্যাটসম্যানের জন্য "টাইমড আউট" এর আবেদন করেননি। [৩]

এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে[সম্পাদনা]

২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইতিহাসে প্রথমবার কোনো বল খেলার আগেই টাইম আউট হন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টাইম আউট হলেন তিনি।[৪]

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে[সম্পাদনা]

  1. অ্যান্ড্রু জর্ডান ১৯৮৭-৮৮ সালে পোর্ট এলিজাবেথ এ ইস্টার্ন প্রভিন্স বনাম ট্রান্সভ্যাল ম্যাচ [৫] – নট আউট হিসাবে সে দিন ফিরে গেলেও পরের দিন জর্ডান প্লাবিত রাস্তায় বাধা পেয়ে মাঠে দেরীতে পৌঁছোন।
  2. হেমুলাল যাদব – ত্রিপুরা বনাম ওড়িশা ম্যাচ কটক এ ১৯৯৭-৯৮ সালে – যাদব সীমানায় তাঁর টিম ম্যানেজারের সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত ছিলেন এবং ক্রিজে পৌঁছানোর চেষ্টা করেননি।
  3. ভ্যাসবার্ট ড্রেকস - বর্ডার বনাম ফ্রি স্টেট ম্যাচ ইস্ট লন্ডন এ ২০০২ সালে – ব্যাট করার সময় তখনও তিনি তাঁর নিজের দেশীয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিমানে ম্যাচে আসার পথে ছিলেন।
  4. এ জে হ্যারিস - নটিংহামশায়ার বনাম ডরহাম ইউসিসি ম্যাচ নটিংহ্যাম এ ২০০৩ সালে – হ্যারিস শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন এবং ক্রিজে হাঁটতে খুব বেশি সময় নিয়েছিলেন এবং আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে আউট দেওয়া হয়েছিল।
  5. রায়ান অস্টিন - কম্বাইন্ড ক্যাম্পাস অ্যান্ড কলেজ বনাম উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডস ম্যাচ কিংস্টাউন, সেন্ট ভিনসেন্ট এ ২০১৩-১৪ সালে – ১১ তম ব্যাটসম্যান অস্টিন প্রয়োজনীয় সময়ে ক্রিজে পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
  6. চার্লস কুনজে - ম্যাটাবেল্যান্ড টাস্কার্স বনাম মাউন্টেনিয়ার্স ম্যাচ বুলাওয়েও তে ২০১৭-১৮ সালে।

টি২০ ক্রিকেটে[সম্পাদনা]

  1. ২০২৩ আফ্রিকা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কাপের ম্যাচে ঘানা ও সিয়েরা লিওনের মধ্যকার মাচে দেরি করে মাঠে নামায় কোনো বল মোকাবেলা না করেই টি২০ ক্রিকেটে প্রথমবার টাইমড আউট হন গডফ্রেড বাকিভিয়েম[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Law 40 – Timed out"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. MCC Answers to Questions on Law 31
  3. Dileep Premachandran (৫ জানুয়ারি ২০০৭)। "Out of sight, out of time"ESPNcricinfoESPN Inc.। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৫ 
  4. "Bangladesh win tempestuous clash with Sri Lanka - as it happened"বিবিসি স্পোর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ নভেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০২৩ 
  5. This match was only recognised by Wisden as a first-class match in 2006, when matches played by non-white South Africans in the apartheid era were included in the record. Hence earlier lists do not contain this instance. See Setting the records straight, Wisden Cricketers' Almanack 2006
  6. Gardner, Ben (২০২৩-১২-১৮)। "Watch: Batters Given Out Obstructing The Field And Timed Out In Ghana-Sierra Leone Africa Cup T20I"Wisden (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-২৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • উইকিঅভিধানে টাইমড আউট-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।