বিষয়বস্তুতে চলুন

জ্যাক ফ্লাভেল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যাক ফ্লাভেল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
জন আলফ্রেড ফ্লাভেল
জন্ম(১৯২৯-০৫-১৫)১৫ মে ১৯২৯
ওয়াল হিথ, স্টাফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৪(2004-02-25) (বয়স ৭৪)
বারমাউথ, গাইনিড, ওয়েলস
ডাকনামম্যাড জ্যাক
উচ্চতা৫ ফুট ১০.৫ ইঞ্চি (১.৭৯ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪০৩)
২৭ জুলাই ১৯৬১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২ জুলাই ১৯৬৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০১
রানের সংখ্যা ৩১ ২০৩২
ব্যাটিং গড় ৭.৭৫ ৬.৫৩
১০০/৫০ -/- -/১
সর্বোচ্চ রান ১৪ ৫৪
বল করেছে ৭৯২ ৭২৭০০
উইকেট ১৫২৯
বোলিং গড় ৫২.৪২ ২১.৪৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ৮৬
ম্যাচে ১০ উইকেট ১৫
সেরা বোলিং ২/৬৫ ৯/৩০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ১২৮/-

জন আলফ্রেড ফ্লাভেল (ইংরেজি: Jack Flavell; জন্ম: ১৫ মে, ১৯২৯ - মৃত্যু: ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪) স্টাফোর্ডশায়ারের ওয়াল হিথ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন।[] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী উপস্থাপন করেছেন ‘ম্যাড জ্যাক’ ডাকনামে পরিচিত জ্যাক ফ্লাভেল

কাউন্টি ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

স্টাফোর্ডশায়ারের ওয়াল হিথ এলাকায় জন আলফ্রেড ফ্লাভেলের জন্ম।[] ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলাকালীন দুইবার ক্লাবের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। নতুন বল হাতে নিয়ে লেন কোল্ডওয়েলের সাথে উদ্বোধনী বোলিং জুটি গড়েন। ১৯৬০-এর দশকে স্মরণীয় ও ভীতিপ্রদ বোলিং আক্রমণ পরিচালনায় অগ্রসর হয়েছিলেন তিনি।[]

১৯৪৯ সালে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। এখানেই তিনি তার ডাকনাম ‘ম্যাড জ্যাক’ পান। পিঠের আঘাতের কারণে দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে দৌঁড়ানোর ভঙ্গীমা পরিবর্তন করেন। বলের নিখুঁততার দিকে নজর দেন ও বলে সিম আনয়ণের চেষ্টা চালান। বিশ বছর বয়সের উপযোগী ফাস্ট বোলিং ত্রিশ বয়সে অধিকতর কার্যকারিতা পায়। এ সময়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের অন্যতম সেরা ভীতিপ্রদ উদ্বোধনী বোলারের মর্যাদা পান। আটবার মৌসুমে শতাধিক উইকেট পান। ১৯৬১ সালে স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহিত করেন। ১৭.৭৯ গড়ে মৌসুমে নিজস্ব সর্বোচ্চ ১৭১ উইকেট দখল করে জাতীয় গড়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনবার হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছেন। ১৯৫১ সালে কেন্টের বিপক্ষে, ১৯৫৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ও ১৯৬৩ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে এ সফলতা পান। তন্মধ্যে, ল্যাঙ্কাশায়ারের খেলায় প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছিলেন।

তিনবার ইনিংসে নয় উইকেট পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ১৯৫৫ সালে ডোভারের চূড়ান্ত খেলায় কেন্টের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৯/৩০ পান। হ্যাস্টিংসে সাসেক্সের বিপক্ষে ৯/৯০ পান। কিন্তু, চা-বিরতিতে ইনিংস ঘোষণা করা হলে তিনি দশ উইকেট লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করার সক্ষমতার কারণে ৪০১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১৫২৯ উইকেট পেয়েছেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সময়কালে গড়ে প্রতি মৌসুমে ৯৭০ ওভার বোলিং করেছেন। ১৯৬০ সালে ১০৩৭ ও ১৯৬১ সালে ১২৪৫ ওভার করেছেন।

লেন কোল্ডওয়েলের সাথে অবিস্মরণীয় জুটি গড়ে ওরচেস্টারশায়ার দলকে উপর্যুপরী দুইবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও, ১৯৬০-এর দশকে তার দল দুইবার দ্বিতীয়, একবার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান দখল করে। ১৯৬৪ সালে ১০১ উইকেট ও ১৯৬৫ সালে ১৪.৯৯ গড়ে ১৩২ উইকেট পান। ১৯৬৪ সালে আঘাত থেকে ফিরে এসে ওরচেস্টারশায়ারকে শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখেন। ৭ থেকে ২৫ আগস্ট তারিখের মধ্যে ৫ খেলায় অংশ নিয়ে মাত্র ১১.৭১ গড়ে ছিচল্লিশ উইকেট পান। তন্মধ্যে, মিডলসেক্সের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় নয় উইকেট পান। ১৯৬৬ সালেও দলকে চ্যাম্পিয়নশীপের হ্যাট্রিক শিরোপার কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে যান। ৩৭ বছর বয়সে ১৪ গড়ে ১৩৫ উইকেট দখল করেন। এর পরের বছরই খেলার জগৎ থেকে অবসর নেন জ্যাক ফ্লাভেল।

কাউন্টি ক্রিকেটে একদিনের খেলার সূচনালগ্নে জ্যাক ফ্লাভেল অবসর নেন। এ পর্যায়ে ৯.৭৫ গড়ে তেত্রিশ উইকেট পান। বামহাতি ব্যাটসম্যান হওয়া তেমন চাঁপ অনুভব করেননি। তাসত্ত্বেও, ১৯৫৯ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ডাডলির খেলায় একমাত্র প্রথম-শ্রেণীর অর্ধ-শতকের সন্ধান পেয়েছিলেন। এছাড়াও, র‍্যাবিটধারী বব কার্টারের সাথে জুটি গড়ে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে দুইটি চারের মার মেরে ওরচেস্টারশায়ারকে নাটকীয়ভাবে এক উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন।[]

১৯৬৩ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত হন ও £৬,৪৮০ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন। এ সংগ্রহটি কাউন্টি দলের রেকর্ডস্বরূপ। ১৯৬৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন।

টেস্ট ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

মাত্র চারটি টেস্ট খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন জ্যাক ফ্লাভেল। ১৯৬১ ও ১৯৬৪ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজদেশে ঐ খেলাগুলোয় অংশগ্রহণ ছিল তার। দূর্ভাগ্যবশতঃ ঐ সময়ে ইংল্যান্ড দলে ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাদাম ও ফ্রাঙ্ক টাইসনের ন্যায় সেরা বোলারদের আধিপত্যবাদের কারণে তার খেলায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।[]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেছিলেন জ্যাক ফ্লাভেল। ২৭ জুলাই, ১৯৬১ তারিখে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার।

মূল্যায়ন

[সম্পাদনা]

১৯৬২ সালে টম গ্রেভেনি ওরচেস্টারশায়ারে যোগ দেন ও প্রথম মৌসুমেই জ্যাক ফ্লাভেলের বোলিং ভঙ্গীমার দিকে নজর রাখতে শুরু করেন। প্রথম স্লিপে দণ্ডায়মান অবস্থায় জ্যাকের প্রথম ওভারে বলের দিকে বিস্ময়াভূত অবস্থায় থাকতাম। উভয় পার্শ্বেই সচেতন থাকতাম। কেননা, তার হাতের ভঙ্গীমা খুব সহজেই বলে সিম আনয়ণ করতো। এটি সহজ পন্থা ছিল। স্বল্প দূরত্ব নিয়ে দৌঁড়ুতেন ও স্ট্যাম্পের এতোটা কাছে বল ফেলতেন যে মাঝখানের স্ট্যাম্পের মধ্যস্থানে আঘাত করতো।

পাঁচ ফুট সাড়ে দশ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন তিনি। তিনি ইংল্যান্ডের স্বর্ণযুগের পেস বোলারদের সময়কালে খেলার জগতে আসেন। এ সময়ে ইংরেজ দলে ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাদাম, ফ্রাঙ্ক টাইসন, পিটার লোডার, অ্যালেন মস ও অল-রাউন্ডার ট্রেভর বেইলি’র অবস্থান নিশ্চিত ছিল।

১৯৬৪ সালে ই.ডব্লিউ. সোয়ানটন মন্তব্য করেন যে, ব্রায়ান স্ট্যাদামের ন্যায় তিনিও সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারদের চেয়ে সেরা উদ্বোধনী বোলার ছিলেন।[]

১৯৬৮ সালে জন আরলট লিখেন যে, এক দশককাল কোল্ডওয়েল ও ফ্লাভেল জুটি ধারাবাহিকভাবে সেরা উদ্বোধনী জুটির মর্যাদা পেয়েছে। শুধুমাত্র সেরা বোলিংই নয়, বরং বলে নিখুঁততা, উদ্যমী ভূমিকা গ্রহণের ফলে ব্যাটসমানদের কিছুই করার ছিল না। পাশাপাশি তারা ওভারের পর ওভার দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং কার্য সম্পাদন করেছিলেন।

সর্বক্রীড়ায় প্রতিভাধর খেলোয়াড় ছিলেন জ্যাক ফ্লাভেল। ফুটবল খেলায়ও তার দক্ষতা ছিল। ১৭ বছর বয়সে পেশাদারী পর্যায়ে খেলার জন্যে ওয়েস্ট ব্রোমউইচ অ্যাবিয়ন দলের পক্ষে চুক্তিবদ্ধ হন। ১৯৪৮ সালে অ্যাল্ডারশটে আর্মি কাপের চূড়ান্ত খেলায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে দুইজন খেলোয়াড় নিহত হয় ও তার নিজের চুল পুড়ে গিয়েছিল।[]

৯৬৭ সালে নিউ রোড থেকে অবসর নেয়ার পর নিয়মিতভাবে গল্ফ খেলতেন। তিনি শৌখিন বামহাতি গল্ফার হিসেবে অনেকগুলো বছর সফলতার স্বাক্ষর রাখেন ও এনভিল গল্ফ ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর হিমলিতে গ্যারেজ ক্রয় করেন। পরবর্তীতে স্বীয় স্ত্রী মেরিকে সাথে নিয়ে ওল্ভারহাম্পটনের কাছাকাছি এলাকায় এটিকে দ্য রাফটার্স রেস্টুরেন্টে রূপান্তর করেন। এরপর গাইনেডের বারমাউথ এলাকায় অতিথিশালা পরিচালনা করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে ওয়েলসের বারমাউথ এলাকায় জ্যাক ফ্লাভেলের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 67আইএসবিএন 1-869833-21-X 
  2. Preston, Norman (editor); Wisden Cricketers' Almanack, One Hundred and Second Edition (1965); pp. 85, 535
  3. Timesonline.co.uk[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Findarticles.com
  5. Telegraph.co.uk

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]