জঁ-জাক রুসো
জঁ-জাক রুশো | |
---|---|
যুগ | ১৮শ শতকের দার্শনিক (আধুনিক দর্শন) |
অঞ্চল | পাশ্চাত্য দার্শনিক |
ধারা | সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব |
প্রধান আগ্রহ | রাজনৈতিক দর্শন, সঙ্গীত, শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য |
উল্লেখযোগ্য অবদান | সাধারণ ইচ্ছা, বিশুদ্ধ প্রেম (amour-propre), সামাজিক চুক্তি, মানবতার স্বাভাবিক ভালত্ব |
ভাবগুরু | |
জঁ-জাক রুশো[ক][১][২] (ফরাসি: Jean-Jacques Rousseau, উচ্চারণ: [ʒɑ̃ ʒak ʁuso]; ২৮ জুন ১৭১২ – ২ জুলাই ১৭৭৮) ছিলেন একজন জেনেভান দার্শনিক, লেখক ও সুরকার। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সমগ্র ইউরোপ জুড়ে আলোকায়নের অগ্রগতির পাশাপাশি ফরাসি বিপ্লবের নানা দিক এবং আধুনিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত চিন্তাধারার বিকাশকে প্রভাবিত করেছিল।[৩] জন্মসূত্রে সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী হলেও রুশো ছিলেন ফরাসি জ্ঞানালোক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি এবং ইউরোপের প্রগতিবাদী ও গণতান্ত্রিক সমাজচেতনার প্রধান পৃষ্ঠপোষক।[৪]। তিনি আত্মজৈবনিক রচনাশৈলীতে আধুনিক ধারার সূত্রপাত করেন এবং তার লেখনীতে মন্ময়ী (subjective) চেতনার বিকাশের প্রভাব হেগেল ও ফ্রয়েডসহ অনুবর্তী অনেক চিন্তাবিদের মাঝেই সুস্পষ্ট। তার রচিত উপন্যাসগুলি ছিল একদিকে অষ্টাদশ শতকের জনপ্রিয় বেস্টসেলার এবং একই সাথে সাহিত্যে রোমান্টিকতাবাদের অন্যতম উৎস। তাত্ত্বিক ও সুরকার হিসাবে পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে।।
জীবন
[সম্পাদনা]১৭১২ সালে জেনেভাপ্রবাসী প্রোটেস্ট্যান্ট মতানুসারী এক ফরাসি পরিবারে রুশোর জন্ম হয়। জন্মকালেই মাতৃহারা এবং দশ বছর বয়সে পিতা-পরিত্যক্ত রুশো আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রতিপালিত হন। আত্মীয়রা পারিবারিক ঘড়ির ব্যাবসায় তাকে কাজে লাগাতে চাইলে ১৬ বছর বয়সে রুশো বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং ভবঘুরের মতো বিভিন্ন স্থানে বিচিত্র পেশায় জীবিকা উপার্জন করেন। ১৭২৮ সালের দিকে মাদাম দ্য ওয়ারেনের সংস্পর্শে আসেন, পরবর্তীকালে যাঁর সাথে রুশোর প্রণয় সম্পর্কও গড়ে ওঠে। তিনি ভদ্রমহিলার অনুপ্রেরণায় ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হন। নয়-দশ বছর তার কাছেই ছিলেন রুশো। তাদের মধ্যে একপর্যায়ে মনোমালিন্য হলে রুশো লিয়োঁ শহরে চলে যান ও সেখানে গৃহশিক্ষক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন। ১৭৪২ সালে প্যারিসে নিবাস গড়েন। প্রথম দিকে স্বরলিপি নকল করে উপার্জনের চেষ্টা করেন। এরপর মাদাম দুপাঁ নামের জনৈক অভিজাত মহিলার ব্যক্তিগত সহকারীর চাকরি লাভ করলে আর্থিকভাবে খানিকটা সচ্ছল হন। প্রতিভাবান রুশো অল্পদিনের মধ্যেই মারিভো (Marivaux), দিদেরো (Diderot), ফঁতনেল (Fontenelle) প্রমুখ নামককরা চিন্তাবিদের ঘনিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হন। দিদেরো তার বিশ্বকোষে লেখার সুযোগ করে দিলে লেখালেখির প্রথম স্বীকৃতি পান। ১৭৪৯ সালে দিজোঁ অ্যাকাডেমি "বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অগ্রগতি কি নৈতিকতাকে দূষিত করছে, না পবিত্র করেছে?" শীর্ষক প্রতিযোগিতামূলক রচনা আহবান করে। রুসো নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির পর তার নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন। ১৭৫০ এ রচনাটিই প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় এবং এরপর ভিন্ন মতাবলম্বী চিন্তাধারার লেখক হিসাবে রুশোর খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্যারিসের মার্জিত শহুরে অভিজ্ঞতা তার জন্য সুখকর ছিল না। সারল্য-আভিজাত্যের দ্বন্দ্ব, বঞ্চনা, ও ভাগ্যবিড়ম্বনা তাকে আরো স্পর্শকাতর, রুঢ়স্বভাবের এক খ্যাপাটে মানুষে পরিণত করে এবং তাকে সকল প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং শাসক ও সভ্যতার সমালোচক করে তোলে। ১৭৫৫ সালে রুশো রচনা করেন ‘মানব জাতির অসমতার উৎস’( Discourse on the Origin of Inequality) শীর্ষক আরেকটি নিবন্ধ, এ জন্য পুরস্কৃত না হলেও মুখবন্ধে দিজোঁ একাডেমীর নাম উদ্যোক্তা হিসাবে উল্লেখ করা আছে। লেখাটি রুশো তার জন্মস্থান জেনেভা প্রজাতন্ত্রকে উৎসর্গ করেন। প্যারিসের কৃত্রিমতায় অচিরেই তার অনাসক্তি ধরে যায়, ফলশ্রুতিতে শহর ছেড়ে অপেক্ষাকৃত গ্রামাঞ্চলের দিকে বসবাস শুরু করেন। এখানে থাকা অবস্থায়ই তার লেখা রোমান্টিক ধারার বিখ্যাত উপন্যাস Julie, ou la nouvelle Héloïse (১৭৬০) প্রকাশিত হলে নাগরিক জীবনে বীতশ্রদ্ধ এ গ্রন্থাকারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ জুড়ে। আমস্টার্ডাম থেকে প্রকাশিত হয় কালজয়ী রাষ্ট্রদর্শন সামাজিক চুক্তি Du Contrat Social, Principes du droit politique (১৭৬২), এবং শিক্ষাদর্শন এমিল Émile (১৭৬২) । গ্রন্থদ্বয় প্রকাশিত হলে রুশো একই সাথে গির্জা ও রাজতন্ত্রের রোষানলে পড়েন। ফরাসি আইনসভা এমিল বইটি পোড়ানোর ও রুশোকে গ্রেফতারের আদেশ দেয়। হল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডেও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় গ্রন্থটি। ১৭৬৬ সালের দিকে রুশো ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। দার্শনিক ডেভিড হিউম বন্ধুত্বের সুবাদে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেও বিতাড়িত পলাতক জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রুশোকে সন্দেহবাতিক মানুষে পরিণত করে। তার ধারণা জন্মে যে ইংরেজ সরকার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে এবং হিউমের সাথে তার মতান্তর ঘটে। ১৭৭০ সালে প্যারিসে ফেরত আসেন এবং আবার স্বরলিপি রচনায় আত্মনিবেশ করেন। তার স্বরলিপির প্রণালী ছিল স্বউদ্ভাবিত, ব্যাতিক্রমী ধরনের। তিনি লেখা শুরু করেন বিখ্যাত আত্মজীবনী। জ্যাঁ জ্যাক রুশোর বিখ্যাত উক্তি- ইংরেজি "Voice of the people is the voice of god." "Each from may be peculiarly adapted to some particular sets of conditions." "Man is born free but everywhere he is in chain."-Jean Jacques Rousseau.জীবনের শেষদিকে সন্দেহপ্রবণতা মানসিক বিকারের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সকলেই তাকে অপমানিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ ধারণা ক্রমেই রুশোর মাঝে বদ্ধমূল হতে থাকে এবং বন্ধুপ্রতিম দিদেরো, হিউম, গ্রিম প্রমুখ সকলকেই শত্রু ভাবতে শুরু করেন। ১৭৭৮ সালে ফ্রান্সের 'এরমনভিল' নামক স্থানে ২ জুলাই ভাগ্যবিড়ম্বিত এ চিন্তানায়কের জীবনাসান ঘটে।
চিন্তা ও দর্শন
[সম্পাদনা]মানুষ ও সভ্যতা
[সম্পাদনা]রুসোর মতে, প্রকৃতি মানুষকে যেভাবে ও যে উদ্দেশ্যে গড়ে, সমাজের দোষে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ললিতকলা ও বিজ্ঞানের বেদীমূলে সৃষ্ট সভ্যতার উপর তার কোন আস্থা ছিল না। মানব উৎকর্ষর সাথে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের বিকাশ সম্পর্কিত রেনেসাঁস ও আলোকময়তা মতবাদের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে রুসো বলেন:
সমাজ ও সমাজের বিলাসিতা থেকেই জন্ম নেয় মানববিদ্যা, প্রযুক্তি, ব্যবসাবাণিজ্য, পাণ্ডিত্য এবং সেই সব বাহুল্য যা শিল্পের বিকাশ ঘটায় কিন্তু একই সাথে সমাজকে সমৃদ্ধ ও ধ্বংস করে...বিখ্যাত জাতিসমূহের প্রাচুর্য তাদেরকে যে ক্লেদাক্ত দুঃখ-দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয় এই হচ্ছে তার কারণ। একদিকে শিল্প ও মানববিদ্যা যতই উন্নতি লাভ করে, অন্যদিকে করের বোঝায় জর্জরিত শ্রমে-ক্ষুধায় কাতর অনাদৃত কৃষক ততই রুজির সন্ধানে শহরমুখী হয়। আমাদের নগরগুলি যতই দৃষ্টিনন্দন হয় ততই গ্রামাঞ্চল বিরান হতে থাকে। অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়ে। নাগরিক হয় ভিখারি বা ডাকাত, আর ওদের জীবনের ইতি হয় ফাঁসির মঞ্চে বা আবর্জনাস্তুপে। এভাবে রাষ্ট্র একদিকে ফুলেফেঁপে ধনী হয়, অন্যদিকে হয় জনশূন্য বিরান। প্রবল প্রতাপ, সাম্রাজ্য এভাবে অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলে সমৃদ্ধির সৌধ আর ডেকে আনে জনজীবনে অবলুপ্তি।[৫]
রুসো "আদি পাপে" (Original sin) বিশ্বাস করতেন না। তার মতে মানুষের দুর্দশা ও দুর্বলতার কারণ আদি পাপ নয়, বরং এটা হয়েছে তার আপন প্রকৃতির সাথে পরিবেশের দ্বন্দ্ব এবং অসঙ্গতির ফলে। মানুষ জন্মসূত্রে যে সম্ভাবনা নিয়ে আসে, তা অর্জনের প্রয়াস থেকেই তার মাঝে দেখা দেয় চাহিদা ও উচ্চাকাঙ্খা। অন্তহীন সে চাহিদা পূরণে অন্যের সাথে সে নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত হয়। সমকালীন সমাজ কাঠামো ব্যক্তির বিকাশের পথে অন্তরায়, যা মানুষকে মানুষের মুখোমুখি করে দেয়, তাকে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। আদিম মানুষ ছিল স্বাচ্ছন্দ্য, সুখী ও আত্মসমাহিত। সঞ্চিত রাখার মতো সম্পদ ছিল না বলেই আদিম মানুষের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।
সমাজ ও রাষ্ট্র
[সম্পাদনা]রুসোর মতবাদঃ প্রকৃতি সাম্য ধারণার উপর নির্ভরশীল, যেখানে মানুষ মাত্রই সমান, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তৃপ্ত। প্রকৃতির সেই সুখী ও সৎ মানুষকে সমাজ ব্যবস্থা দুর্নীতিপ্রবণ ও দুর্দশাগ্রস্ত করেছে। রুসো সেই সমাজ ব্যবস্থার একাধারে সমালোচক এবং সমাধানে প্রয়াসী। সমাধান হবে ব্যক্তি ও সমাজের যৌথ পরিবর্তনের দ্বারা। ব্যক্তির উদ্ধার হবে শিক্ষায়, যার বিবরণী আছে এমিল বইটিতে। আর সমাজের উদ্ধারসাধন সম্ভব যদি মানুষ সমাজবন্ধনের গোড়ার কথা মনে রাখে। যার আলোচনা আছে সামাজিক চুক্তি গ্রন্থে। ব্যক্তি তার নিজস্ব স্বাধীনতা খানিকটা বিসর্জন দেয় রাষ্ট্র-সমাজ গঠনে, কিন্তু সে কারো গোলাম নয়। রুসোর মতে, মানবিক জ্ঞানের উন্নতি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের ফলে শ্রমের শ্রেণীবিভক্তি সূচিত হয় এবং মানবজাতির প্রাকৃতিক সুখকর অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ধনী-দরিদ্র বিভাজন সৃষ্টি করে, যার পরিণতিতে রাষ্ট্রীয় সমাজ অত্যাবশ্যক হয়ে যায়। এ সমাজ সংগঠন তথা রাষ্ট্র মানুষের কৃত্রিম জীবনের ফল।
যে পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাজের সৃষ্টি হয়েছে তা হচ্ছে একটি "সামাজিক চুক্তি" (Social Contract)। এ চুক্তি কেনো নিরঙ্কুশ শাসক তৈরি করে না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সমস্ত অধিকারকে সামাজিক চুক্তির দ্বারা সমষ্টির নিকট সমুদয়ভাবে সমর্পণ করে। আবার সকল নাগরিক একটা সার্বভৌম কাঠামোর সমান অধিকারী হিসাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অধীনে তা পুনরায় লাভ করে। প্রত্যেকে নিজেদেরকে সমর্পণ করবে অথচ ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছে নত হবে না। ক্ষমতা এখানে ব্যক্তিবিশেষের নয়, পরস্পরের। এভাবে একক ব্যক্তির ইচ্ছা সামষ্টিকভাবে একটি "সাধারণ ইচ্ছায়" (General will) পরিনত হয়। এই সাধারণ ইচ্ছাই রাষ্ট্রীয় জীবনে মানুষের নিয়ামক। রাষ্ট্র হচ্ছে পূর্ণ রাজনৈতিক সংস্থা, সর্বোচ্চ এবং সার্বভৌম সাধারণ ইচ্ছার প্রকাশ, আর সরকার হচ্ছে সাধারণ ইচ্ছাকে কার্যকরী করার জন্য সম্প্রদায়ের দ্বারা নির্বাচিত লোকের সমষ্টি।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]রুসো তার শিক্ষাদর্শন গল্পের ঢঙে এমিল বইটিতে বিবৃত করেছেন। বইটিতে এমিল নামের একটি বালকের বেড়ে ওঠার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। রুসো তাকে শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে নিয়ে যান, যে শহরে মানুষ শুধু কায়-মনে খারাপ অভ্যাসগুলিই আয়ত্তে আনে। কেননা তার মতে শিক্ষার উদ্দেশ্যই হল নিষ্ঠাবানরূপে বাঁচতে শেখা। শিশুর বিকাশ রুসো তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। বারো বছর পর্যন্ত ১ম ভাগ, যে সময়ে তার মাঝে বিশ্লেষণাত্মক জটিল চিন্তাকাঠামো গড়ে ওঠেনি, শিশু তখন অনেকটা পশুতুল্য। বারো থেকে ষোল পর্যন্ত ২য় ভাগ, যখন তার মাঝে যৌক্তিকতার বিকাশ হয়। ষোল-পরবর্তী সামনের দিকে শেষ ভাগ যখন সে সাবালকত্ব লাভ করে।
ফরাসি বিপ্লবে অবদান
[সম্পাদনা]রুশোকে ফরাসি বিপ্লবের মূল কারিগর মনে করা হয়। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জাগ্রত করতে সক্ষম হন।তিনিই প্রথম উল্লেখ করেন, "মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন, কিন্তু সমাজ তাকে শৃঙ্খলিত করে। (Man is born free but everywhere he is in chains)" তিনি উল্লেখ করেন পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে স্বাধীন ছিল। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানার ধারণা সৃষ্টি হলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতারণা ও অতৃপ্ত বাসনা মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। তাই মানুষ ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে সামষ্টিক ইচ্ছার কাছে সর্মপন করে। এভাবেই রাষ্টের সৃষ্টি। তাই জনতার অধিকার রয়েছে বিপ্লবের দ্বারা রাজতন্ত্রের পতন ঘটাবার। "লা কস্তা সোসিয়াল" গ্রন্থে উল্লেখিত এই বাণী ফরাসি জনগণকে বিপ্লবে অনুপ্রাণিত করে। তাই রুশোকে ফরাসি বিপ্লবের মূল প্রবক্তা বলা হয়।
রচনাবলি
[সম্পাদনা]রুসো বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। এগুলির মধ্যে আছে উপন্যাস, নাটক, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সংগীত, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ক গ্রন্থ।
- Julie, ou la nouvelle Héloïse (১৭৬০)
- Le Devin du Village (১৭৫২)
- Émile ou de l'éducation (১৭৬২)
- Du contrat social (১৭৬২)
- Les Confessions (১৭৭০)
- Discours sur l'origine et les fondements de l'inégalité parmi les hommes (১৭৫৪)
- Discours sur les sciences et les arts (১৭৫০)
বাংলায় অনুবাদ
[সম্পাদনা]- সামাজিক চুক্তি – অনুবাদ: ননীমাধব চৌধুরী
- রুশোর সোসাল কন্ট্রাক্ট – অনুবাদ: সরদার ফজলুল করিম
- মানব জাতির অসমতার উৎস এবং ভিত্তি – অনুবাদ: মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ
- আমি রুশো বলছি - অনুবাদ: সরদার ফজলুল করিম
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এই ফরাসি নামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Wells, John C. (২০০৮)। Longman Pronunciation Dictionary (3তম সংস্করণ)। Longman। আইএসবিএন 978-1-4058-8118-0।
- ↑ Jones, Daniel (২০১১)। Roach, Peter; Setter, Jane; Esling, John, সম্পাদকগণ। Cambridge English Pronouncing Dictionary (18তম সংস্করণ)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-15255-6।
- ↑ Jean-Jacques Rousseau ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে, in the Historical Dictionary of Switzerland.
- ↑ মো. আবদুল ওদুদ (2nd Edition, 2014)। রাষ্ট্রদর্শন। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা 334। আইএসবিএন 978-98-43300-90-4। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য); - ↑ রশিদ, মোহাম্মদ হারুন উর (১৯৯৯)। মানব জাতির অসমতার উৎস এবং ভিত্তি। বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৭১। আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৯৩৮৪-০ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Du contrat social (MetaLibri)
- ১৭১২-এ জন্ম
- ১৭৭৮-এ মৃত্যু
- সুইজারল্যান্ডীয় দার্শনিক
- ফরাসি দার্শনিক
- দার্শনিক
- শিক্ষার দার্শনিক
- ১৮শ শতাব্দীর দার্শনিক
- আলোকিত যুগ
- আত্মজীবনীকার
- রোমান ক্যাথলিক দার্শনিক
- ১৮শ শতাব্দীর স্মৃতিকথাকার
- সংস্কৃতির দার্শনিক
- অর্থশাস্ত্রের দার্শনিক
- সাহিত্যের দার্শনিক
- বিজ্ঞানের দার্শনিক
- প্রোটেস্ট্যান্ট
- প্রজাতন্ত্রবাদী
- রোমান্টিকতা
- সামাজিক দার্শনিক
- ১৮শ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক